
প্রদীপ দে'র ছোটগল্প
অবশ্যম্ভাবী
সুনন্দা আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না।আনন্দে চোখের কোণে অশ্রু বারি ঝরে পড়লো।নিম্নাঙ্গ অবশ হয়ে রয়েছে। জ্ঞান সবে ফিরেছে, হসপিটালের বেডে তার শীর্ণকায় শরীরটা এলিয়ে পড়ে রয়েছে। চোখ খুলতেই দুদিনের প্রিয় নার্স টি তাকে জানান দিয়েছে তার একটি পুত্র সন্তান হয়েছে। সে যে চোখ খুলেছিলো হয়তো বা অজান্তে ,তা নিমেষেই বুঁজে যেতে চেয়েছিলো এক অসহ্য যন্ত্রনার স্বাক্ষী হিসাবে, না উল্টো হলো সেই চোখই আনন্দে মেলে ধরলো,আনন্দ স্বরুপ বারিপাতও ঘঠালো। সামনের জানালা দিয়ে চোখ চলে গেল বাইরে। বাইরে তখন গোধুলী আলোয় আলোকসম্পাত। যতোদূর দেখা যায়, মন দেখতে চাইলো,শরীরের কষ্টকে এড়িয়ে গিয়েই। সামনে মাঠ,কিশোরদের খেলা ভাঙ্গার সময়, আর্ধেক হয়ে গেছে তা, নিতান্তই জীবনযাপনের প্রয়োজনে যার অর্ধেকটাই চলে গেছে লোহালক্কড় আর ইট -সিমেন্ট - বালির প্রলেপযুক্ত হয়ে দন্ডায়মান বিশালাকার অর্ধসম্পূর্ণ এক অট্টালিকায়। সুনন্দা জানে এই ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি হওয়া নিয়ে কতো ঘটে যাওয়া ঝামেলার কথা,পাড়া প্রতিবেশীদের আপত্তির কথা, শিশু কিশোরদের দিয়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলানোর ব্যাপার, রাজনৈতিক তৎপরতায় নগদ লেনদেন,সর্বোপরি প্রতিবাদী মঞ্চের বয়স্ক নেতার অস্বাভাবিক মৃত্যু, যা দিয়ে তার শেষ,না অন্যদিকে আবার শুরু জিতে যাওয়ার প্রক্রিয়া। পাশের পাড়ায় থাকে সুনন্দা,ও সব জানে এই কলকাটি নাড়ার ইতিহাস, শুধু চুপ করে থাকার প্রয়াসে,তার শরীরে বেড়ে ওঠা সন্তানের দায়ে,তার যে খুবই কাছের, নিজের স্বামীর কাছে হেরে যাওয়ার,ধাক্কা খাওয়ার ফল তাকে পীড়ন করেছে, শরীরে আর মনে। ডাক্তার ও পারেনি তাকে ঠিক রাখতে, আটমাসে বাথরুমে অসুস্থতায় ঢলে পড়ে সে,যার ফল হতে পারতো মিসক্যারেজিং। তারপর আর কিছু মনে নেই, সব কালো কালো অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছিলো, দুদিন বাদে আজ এই গোধুলি বেলায় যার অবসান হলো।
নার্স পুত্র সন্তান নিয়ে এলো,- " এই যে বৌদি, দেখুন আপনার পুত্র সন্তান।"
সুনন্দা অন্যমনস্কতা কাটিয়ে তার বেঁচে যাওয়া সন্তানের প্রথম মুখ দেখলো, আনন্দদায়ক কিন্তু অবশ্যম্ভাবী,এযে একেবারে অবিকল তারই স্বামীর অবয়ব!
সুনন্দা চোখ বন্ধ করে নিলো, এটাতো সে চায়নি, কন্যা সন্তান হলে যদি বা এড়ানো যেতো সেই অভিশাপ, যা অসহায় প্রতিবেশীদের অনেকেই নীরবে বর্ষণ করেছিলো তার পরিবারের প্রতি, এযে তাই হলো তারই অভিশপ্ত স্বামীরই উত্তরাধিকার হয়ে। তার স্বামী যে একজন নামকরা প্রতিষ্ঠিত প্রোমোটার কাম ডেভেলপার, নিখিল সম্মাদার।
0 Comments