হৃদস্পন্দন

  • Home


  • Download

  • Social

  • Feature


খেলা শেষে 
দেবদাস কুন্ডু 

দিনের শেষ আলোয় খেলাগুলি ঢলে পড়ে 
মৃত্যু আঙিনায়
শবদেহের ভিতর জেগে ওঠে কর্নফুলি নদী
চোখের দৃপ্তিতে হেসে ওঠে কোন নগ্ন নারী
আকন্দ ফুলের রঙ মেখে এসে দাঁড়ায় 
পূর্ব জন্মের আত্মীয়রা। বলে, কেমন আছো?
যাদের হাতে তুলে দিয়ে ছিলাম পদ্ম
যোনির রক্ত মেখে সেই হাতগুলি
দিনকে করেছে রাতের মত অন্ধকার
বুকের মাঝখানে এসে দাঁড়ায় অলকানন্দ
যন্ত্রণার বালুকনা গুলি ছড়িয়ে দিয়ে হাসে
বলাকার মতো শুভ্রতা নিয়ে প্রেম ঝড়ে পড়ে
পুরনো বাড়ির নীলচে উঠোনের শুস্কতায়
তবু তোমার হাতের সচলতায় প্রতিদিন
হৃদযন্র ধরে মেঘ মল্লারের গান
জোনাকিরা আলো নিভিয়ে আমাকে শোনায়
মৃত্যুর পরোয়ানা। 
আমি সন্ন্যাসীর মতো নিরাসক্ত পথচারী 
স্বর্গের পথ ধরবো বলে হাঁটি যৌবন হারানো
কোন নারীর বুকে। 

কবি দেবদাস কুণ্ডু 
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত




শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি কবিতা

বৃক্ষ থেকে বনভূমি

আমি তো লিখছি, লিখেই চলেছি 
ঘুম ভাঙানোর গান।
আমি যে রচনা করেই চলেছি 
সময়ের অভিধান। 

আমি তো সত্য আড়াল করি না, 
চাই না মুখোশ পরতে।
চাইছি তোমারও সন্ততিদের 
শান্তির দিন গড়তে। 

আমাকে দমাতে শুধু বারবার
শাখা কেটে ফেল তুমি;
অজস্র বীজ ছড়িয়ে দিয়েছি
আগামীর বনভূমি। 

আত্ম সমর্পণ

এবার হয়তো শিখে যাব ঘোলা জলে
সাঁতার কেটে অভিমুখে ভেসে থাকা।
এবার হয়তো স্তব্ধ রইবে কথা,
সোজাই দেখব যা কিছু রয়েছে বাঁকা।

এবার হয়তো আর্তনাদের মাঝে
শিখে নেব গান চালিয়ে উদোম নাচা।
কতদিন আর দল ছুট হয়ে একা
লড়াই চালিয়ে থাকা যাবে বলো বাঁচা?

যেতে তো চাইনি, তোমরাই ঠেলে দিলে
কোকোনদ থেকে পঙ্কিল জলাশয়;
এখনও রয়েছি মনে মনে সেইখানে,
এমন থাকার কী বা আর মানে হয়?

এমনি করেই অগ্নিবলয় মাঝে
ভয় অভিমান দু'চোখ বুজিয়ে দিল;
যখন আসবে নিজের মরার পালা,
তখন ভাবব এটাই হওয়ার ছিল।

সাহিত্যিক শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
সোদপুর, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ



তাই স্বপ্ন দেখবো ব'লে
আশিস মুখার্জ্জী

একটা সেলোটেপ দিতে পার , 
সেলোটেপ
খুব দরকার,  
খুউউব 
একটু জুড়তে চাই আমার একটা ছিঁড়ে যাওয়া 
স্বপ্ন,  হঠাৎ করেই দমকা বিপর্যয়ে ধড়মড়িয়ে 
জেগে ওঠায় , না দেখা 
সেই স্বপ্ন ,
কি গো পারবে দিতে 
সেলোটেপ , স্বপ্ন জুড়তে পারে 
এমনই এক 
সেলোটেপ।
আচ্ছা তবে না হয় করে নেব সেলাই 
ইচ্ছে মতন রঙিন সুতোয় 
কিন্তু মেশিন 
থাক ওটা দামী হয়ে যাবে , 
বরং পারলে একটু আঠা লাগিয়ে 
দিও আমার এই ছেঁড়া স্বপ্নের কানাচে,  
আবার ফিরে পেতে চাই স্বপ্নটা 
তাই আজও রয়েছি পেতে 
দুচোখে।

কবি আশিস মুখার্জ্জী 
নিউ আপার চেলিডাঙ্গা, আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান


স্বপ্ন যেমন
অভিষেক ঘোষ

বাস্তু-প্রতিম দেহের ভিতে মন-প্রতিমা
পচেছে কাঠ, ঠুনকো দড়ি, নেইকো ক্ষমা।

যেমন প্রায়ই ঘটতে থাকে রাত্রে ঘুমে,
স্বপ্নগুলো প্রসব ব্যথায়, পোয়াতি মে। 

চিত্রিত এক হরিণ যেন আঁস্তাকুড়ে
অবসন্ন গ্লানির শিকল দিয়েছে ছুঁড়ে। 

ঘুরতে থাকে আবর্ত এক, নেই আকূতি
অবদমনে মরচে রঙের আত্মাহুতি। 

"আয় খেতে দিই" ডাকছে কোনো ক্ষীণ বুড়িমা
ঘ্রাণের মধ্যে বারুদ-বিধুর শুকনো ট্রমা। 

মরিচ-গুঁড়ো আলুর উপর কালচে যেমন,
স্বপ্ন আমার গভীর ঘুমে স্বাদ আনে তেমন। 

কবি অভিষেক ঘোষ 
কসবা, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ



আলোর খোঁজ
গার্গী চৌধুরী 

তোমার প্রতিটি খন্ড অতৃপ্তি ঘোচাতে ছুটে চলে একাধিক প্রান্তে।
দূর থেকে “ব্রাউনিয়ান মোশন “
কখনো সম্পর্ক,ভোগ্য পণ্য
যাযাবরের মতো তেপান্তর।
একেকটা খন্ডের একক রকম চাহিদা,
অবিরাম ছুটে চলা,
অফুরন্ত উচ্ছাসে সমস্ত,
খন্ড নিয়ে আনন্দে বিহ্বল তুমি
তবু কিরকম একটা শূন্যতা।
স্তূপাকার অতৃপ্তির ছায়া সরিয়ে একদিন তুমি 
জানলে তোমার গহ্বরে
জ্বলছে আনন্দ -প্রদীপ,
হয়নি কখনো খোঁজ  করা।
শিখার ওমটুকু ছিল 
জীবনী স্পৃহা,
আগুনটা হলোনা জ্বালা।

কবি গার্গী চৌধুরী 
৭৪, বিবেক পার্ক, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ




মাটির পরশ 
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

শব্দের বুক থেকে ছিটকে পড়া বাজির আলোয়
ভাতের গন্ধ থাকে না
মাটির প্রদীপ বেচতে থাকা ছেলেটার বুক জুড়ে
পড়ে থাকে মায়ের কাশির আওয়াজ
ঝিকিমিকি টুনি বাল্বে সাজানো ফ্ল্যাটে
মাটির প্রদীপ জ্বলে না
আলোর বন্যা তাদের ঘরের সর্বত্র
ফ্যালফ্যাল চোখে কান্না চেপে বোকা ছেলেটা ভাবে
তাহলে মাটি কোথায় এদের জীবনে...

কবি দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় 
উত্তর পাড়া, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ







গৌতম কুমার গুপ্ত'র দুটি কবিতা 

সাকিন

এখন কেউ বলে না
           অমুক বাড়ি আছো

ঘুলঘুলিতে রেখে যায় খড়
ফেরারী মন

                         ঠিকানা পরম্পরা

যাযাবর এই মনের খোঁজ থেকে
রোদ চুরি যায়
                           মূলতঃ 
                           শূণ্য হয় প্রহর,নামচা

দরজা বন্ধ,অনাত্মীয় দিবসযামিনী

ঘুম 

ঘুম নেই চোখে পাথর বিছানা।কি হল দেশকাল মরীচিকা মরুভূমি। শুধু বিছানায় নির্ঘুম একটানা। হাত পা ছুঁড়ি অন্ধ তাগিদ।পাশবালিশের মুগ্ধ মোহের ওম।মৈথুনে যার সুখের আবেশ। তবু আঙ্গুলের ফাঁকে স্বপ্নের সুতো।টেনে ছিঁড়ে ফেলি হতমান রাত।ঘুমে নির্ঘুমে কাটে বসবাস।এখনই অন্ধ হয়ো না চোখ। দ্যাখো ঘুম ফিরে আসে নবারুণ দেশে।ঘুম পেয়েছির দেশে আমাদের বারোমাস।

কবি গৌতম কুমার গুপ্ত 
সুভাষপল্লী, বেনাচিতি, দুর্গাপুর


ছবি 
মীরা মুখোপাধ্যায় 

"I wiped the dust from my mother's face"
                                              Louise Gluck

এ বাড়িতেই আমার প্রপিতামহীর ছবি ছিলো,
বার্ণ এন্ড শেফার্ডে তোলা
ছবিটার কথা আর মনে পড়ছে না।
পিতামহীর ছবির কথাটা
আবছা হলেও মনে করতে পারি 
নক্সা পাড় সাদা শাড়ি, আধঘোমটা
বিষন্ন যুবতী এক...
ছবিটা হারিয়ে গেছে।

মা চলে গেছেন, ছবিতে পুরু ধুলো জমেছে
আমি হাতের পাতায় ঘসে ধুলো মুছি।
আর কিছু দিন পর এ ছবিটাও হারিয়ে যাবে আর
আমার ছবির কাঁচে এরকমই ধুলো জমবে
তারপর সেটাও একদিন...

কবি মীরা মুখোপাধ্যায়
তেলিপুকুর, ডাক শিমুরালী, নদীয়া


সে প্রেম পবিত্র
প্রেমাংশু শ্রাবণ

নাভিপদ্মে মেলেছে প্রেমের পাপড়ি
শিশিরবিন্দু লুকিয়ে লুকিয়ে চেটে নিচ্ছে
সে প্রেমের সুস্বাদু নির্যাস।

সূচনায় আবেদনের ইচ্ছাপত্র---
আমিও পাঠাই বসন্ত সকালে।

হারিয়েছি মন,ভেঙেছে হৃদয়ের তান
সে প্রেম থেকেছে অধরা
জোটেনি তাৎক্ষণিকও দেখা

আমরা মানুষ-পাপী আত্মা।
সে প্রেম পবিত্র
পবিত্র পাত্র ছাড়া নিজেকে করে না অর্পণ।

কবি প্রেমাংশু শ্রাবণ 
যশোর, বাংলাদেশ






মুক্তি দাশের অণুগল্প 
লিভ টুগেদার 

আজ উৎপলদের গৃহপ্রবেশ। অবশ্য বিশাল মাল্টি-কমপ্লেক্সের তিনতলার উত্তর-পূর্ব কোনে সাড়ে-আটশ’ স্কোয়ারফিটের টু-বিএইচকে ফ্ল্যাটকে যদি ‘গৃহ’ বলা যায়! 

উৎপল আমার ছোটবেলার বন্ধু। দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার কাছাকাছি একটা রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের কমচারি। বছর সাতেক হলো বিয়ে করেছে। 

বউ শর্মিলা কাছেই বাচ্চাদের আধা-ইংরেজি স্কুলে পড়ায়।  একটিমাত্র মেয়ে স্নেহা। ফাইভ-প্লাস। ভীষণ জলি। আমার মেয়ে ঝিলিকরেই বয়সী। শুধু মাথা গোঁজার মতো নিজস্ব একটা ঠাঁই ছিল না। ব্যাংক থেকে লোনের সুবাদে এবার তাও হয়ে গেল।

নরেন্দ্রপুরের সুগমপার্কে ছিমছাম ফ্ল্যাট। পরিচ্ছন্ন নিরিবিলি পরিবেশ। ওদের নতুন ফ্ল্যাটের গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠানে আজ আমরাও নিমন্ত্রিত। তবে আয়োজন খুবই সীমিত। অল্প কয়েকজনকে ডাকা হয়েছে। উৎপলের ব্যাংকের  কিছু কলিগ, দু’চারজন নিকট-আত্মীয় আর বন্ধুদের মধ্যে তিন-চারজন। আর আমরা আড়াইজন। মানে আমি, তৃণা এবং আমাদের একমাত্র মেয়ে ঝিলিক।

সকাল দশটার মধ্যেই আমরা সপরিবারে উৎপলদের ফ্ল্যাটে হাজির। আমাদের দেখে উৎপল-শর্মিলা হইহই করে উঠল। তৃণার হাত ধরে শর্মিলা জোর করে ধরে  নিয়ে গেল ভেতরের ঘরে। আমরা ড্রইংরুমে সোফায় গা এলিয়ে দিলাম। উৎপলের মেয়ে স্নেহা এসে টানতে টানতে নিয়ে গেল ঝিলিককে। ওরা পূর্ব-পরিচিত। এবং বন্ধুও।

সারা-দুপুর পুজো-আচ্চা, গল্প-আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া সারতে সারতে ঘড়ির কাঁটা একসময় যখন চারের ঘর ছুঁইছুঁই, আমরা উঠে পড়লাম। অতিথি-অভ্যাগতরা ইতিমধ্যে অনেকেই বিদায় নিয়েছেন। এবার তো আমাদেরও উঠতেই হয়। কিন্তু ঝিলিক কোথায় গেল? গলা চড়িয়ে দু’বার ‘ঝিলিক ঝিলিক’ ডাকতেই শর্মিলা মুচকি হেসে ফোড়ন কাটল, ‘বাব্বা, আপনার তো দেখছি মেয়ে অন্ত প্রাণ! মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে কী করবেন?'

তারপর একটু থেমে বলল,  'দেখুন না, ওরা দু’টিতে হয়তো ব্যালকনিতে বসে খেলছে। আহা! কতদিন পর দুইবন্ধুতে দেখা হল বলুন তো!’

সবাই মিলে ব্যালকনিতে গেলাম। সত্যিই ওরা খেলছে। দুটি শিশু মনযোগ দিয়ে আপনমনে খেলছে। পুতুল নিয়ে খেলছে। একটা পুতুলকে রঙিন-রুমালের শাড়ি পরানো হয়েছে। আর একটা পুতুলের গায়ে ছেলেদের পোশাক। নিশ্চয়ই ওরা বিয়ে-বিয়ে খেলছে। দৃশ্যটি মুহূর্তে ওদের, বিশেষ করে তৃণাকে, খুব নস্ট্যালজিক করে তুলল। ছোটবেলায় ওরাও তো এরকমই পুতুল নিয়ে বিয়ে-বিয়ে খেলত।

আমি এবার গলা খাঁকারি দিয়ে এগিয়ে গেলাম। বললাম, ‘কিগো, তোমরা দুই বন্ধুতে কী করছ? বিয়ে-বিয়ে খেলছ বুঝি? বাঃ! খুব ভাল, খুব ভাল!’

পাশ থেকে মুখ বাড়িয়ে খুশিখুশি গলায় তৃণা বলল, ‘জানিস, আমরাও না ছোটবেলায়…’

ওকে থামিয়ে দিয়ে ঝিলিক গম্ভীরভাবে কেটে কেটে বলল, ‘আমরা মোটেই বিয়ে-বিয়ে খেলছি না, মাম্মি!’

তৃণা উৎসুক হল। বলল, ‘ওমা! তবে কী খেলছিস?’

এবার ফিক করে হেসে দিয়ে স্নেহা বলল, ‘আমরা লিভ-টুগেদার লিভ-টুগেদার খেলছি, আন্টি!’

সাহিত্যিক মুক্তি দাশ 
১৩৫, অঘোর সরণী, রাজপুর, কলকাতা




দালান জাহানের দুটি কবিতা 

দুঃখ নদী 

আমাদের রাত অথবা শহরের মাঝখানে 
সবসময় দাঁড়িয়ে থাকে অদৃশ্য হাত...
সেই হাত সকালের দুঃখ পিষে 
উঁচু করে পাহাড়ের নীল কুয়াশা। 
আমরা যারা দাঁড়িয়ে দেখি 
ছিন্নভিন্ন প্রাসাদগুলোর সুরতহাল 
কানে তুলো এঁটে পালিয়ে যাই কোণে 
পীথাগোরাসের জটিল পদ্য মাথায় বাঁধি না
যতোক্ষণ না আমাদের চোখ দিয়ে বের হয়
ত্রিকোণমিতির দুঃখ নদী 
ততোক্ষণ আমরা কাঁদি না। 
ততোক্ষণ আমরা কাঁদি না। 

অন্ধকার 

তোমার টেবিলের উপর রাখা 
এক টুকরো কাঁচা মাংস আমার ঈশ্বর নয়
যে তোমরা তাকে 
ইচ্ছে মতো ফ্রাই করে খাবে। 

সম্পাদনার বাজার থেকে কেনা 
অন্ধের পাঠ্য পুতুল আমার ঈশ্বর নয়
যে তাকে নিয়ে তোমরা ইচ্ছে মতো 
রক্ত-রঙ খেলবে। 

আমার ঈশ্বর 
অবিনশ্বর 
অভিভাজ্য 
এক সত্তার নাম...

অথচ তোমরা তাকে ভাগ করেছো 
তোমাদের দৃষ্টির অন্ধকার দিয়ে। 

কবি দালান জাহান
বোয়ার সেন্ট্রাল আফ্রিকা








পাঁচ রঙ্গ
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

১.

কতটা সমুদ্রভক্ষ্য তোমার আরাব
ছিঁড়ে নেয় দিনলিপি অথবা আকাশ
যন্ত্রণার খইগুলি মগজ পোড়ায়।

২.

একটি এলিজি ভেঙে কথা আর সুর
কাগজকুচির মতো টুকরো ব্যথা
বিরহরাগিনী জানি বরফছুরি
বেহালার ছড় টানে কৃতঘ্ন হাত।

৩.

প্রতিদিন সৌরচক্র জড়ায় শরীর
মানবিক বোধগুলি সূর্যশিকার
ফাঁদ পাতা পাখিগুলো নেশার বাহন
বিরামে অধ্যাত্মবোধ যাপনকৌশল
ব্লু প্রিন্ট ছকে নেয়া দানব হুংকার।

৪.

তারাদের প্রতীক্ষা মহাজাগতিক
একটি খণ্ডে যত নাচনকোঁদন
কল্পনার হাত দিয়ে কালপুরুষ ছুঁই
সুযোগ মিললে টানি ধনুক ও তির।

৫.

সেই চাঁদ আকাশ ও ঝুরো মেঘ
জ্যোৎস্নার ওড়াউড়ি কালো মথ
বামন বেঁধানো হাসি তবুও নিখাদ
চাঁদের উপল পেলে সাদা ফুল পাখি। 

            কবি জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
গোপেশ্বরপল্লি, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া












সিদ্ধার্থ সিংহ'র 
ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা 

জন্ম : ১৩, জানুয়ারি ১৯৩৮
মৃত্যু : ৭, নভেম্বর ২০১৯

'যারা হাটকে যারা বাঁচকে, ইয়ে হ্যায় নোবেল মেরি জান'--- যিনি লিখেছিলেন এই শিরোনাম। 

নবনীতাদির বাড়িতে কবে যে প্রথম গিয়েছিলাম, এখন আর মনে নেই। না, তখনও সিঁড়ি-লাগোয়া ইস্পাতের চ্যানেলে বসানো ইলেক্ট্রিকে টানা চেয়ারে করে তিনি ওঠানামা করতেন না।
তার পর মাঝে মাঝেই যেতাম 'সানন্দা' পত্রিকার জন্য কবিতা আনতে।
আমি তখন লীলা মজুমদার, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে অনেকগুলো সংকলন যুগ্ম ভাবে সম্পাদনা করে ফেলেছি। 
আনন্দ প্রকাশন থেকে আমাকে একদিন বলা হল, আমাদের কয়েকটা সংকলন করে দিন...
আমি বেশ কয়েকটা সংকলন করে দিলাম। হঠাৎ একদিন মনে হল, অনেক বিখ্যাত লেখকই তো কবিতা দিয়ে লেখালিখির জীবন শুরু করেছিলেন, আবার অনেক প্রথিতযশা কবিও এমন এক-একটা গল্প লিখে ফেলেছেন, যেগুলো যে কোনও প্রথম সারির গল্পকারের গল্পকেও হার মানাবে। আমি যদি সেই সব কবিদের গল্প নিয়ে একটা বড়সড় সংকলন করি, তা হলে সেটা নিশ্চয়ই বাংলা সাহিত্যে একটা মাইলস্টোন হয়ে থাকবে। তাই না?
আমি না-হয় মূল কাজটা করলাম, কিন্তু সঙ্গে তো একজন সিনিয়ার কাউকে চাই। তখনই আমার মাথায় এল নবনীতাদির কথা। নবনীতাদিকে বলতেই, উনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু সমস্যা হল, লেখক তালিকা নিয়ে।
আমি যাঁদের সঙ্গে এর আগে এবং পরবর্তিকালেও, যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছি, তাঁদের মধ্যে যেমন ছিলেন চৌরঙ্গী-খ্যাত ঔপন্যাসিক শংকর, তেমনি ছিলেন সম্পাদকদের সম্পাদক, লেখকদের লেখক, লালবাঈ-খ্যাত রমাপদ চৌধুরীও। কিন্তু না, তাঁদের কারও সঙ্গেই লেখক-তালিকা নিয়ে আমার কখনও কোনও সমস্যা হয়নি। আমি যে লেখক তালিকা তৈরি করতাম, সবাই তা একবাক্যে মেনে নিতেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল নবনীতাদির সঙ্গে। এবং ওই সমস্যা, আমার সম্পাদনার জীবনে সেই প্রথম। 
নবনীতাদি জানতেন, সম্পাদনায় আমার হাতেখড়ি হয়েছে রমাপদবাবুর কাছে। রমাপদবাবুকে উনি খুব ভাল করেই চিনতেন। রমাপদবাবুর কালীঘাটের বাড়িতে তাঁর ছোট মেয়েকে নিয়ে তিনি প্রায়ই আসতেন। সেই লোকটার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক, উনি তা ভাল করেই জানতেন। তবু...
যে দু'টি মানুষ রমাপদবাবুর অত্যন্ত কাছের ছিলেন, তার মধ্যে একজন আমি আর অন্য জন হলেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি। এ সব জানার পরেও তিনি আমার লেখক-তালিকা নিয়ে ঘোরতর আপত্তি জানালেন। 
না, উনি কোন কোন নাম বাদ দিতে চেয়েছিলেন এবং কোন নামগুলো ঢোকাতে চেয়েছিলেন, সেই নামগুলো আমি আর উল্লেখ করতে চাই না। কারণ, তাঁরা অনেকেই স্বনামধন্য এবং কেউ কেউ জীবিতও। আর তার থেকেও বড় কথা, তাঁদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বেশ মধুর। ফলে...
আমি শুধু নবনীতাদিকে বলেছিলাম, সম্পাদনার ক্ষেত্রে আমার কিছু পলিসি আছে। 
আমি তাঁদের লেখাই রাখব, যাঁদের বই ইন্ডিভিজুয়ালি তাঁদের নামে বিক্রি হয়। এবং তাঁদের লেখাই রাখব, যাঁরা সময়ের বিচারে এর মধ্যেই উতরে গেছেন। রাখব তাঁদেরই, যাঁরা ইতিমধ্যেই প্রয়াত হয়েছেন। তার সঙ্গে এও বলেছিলাম, জীবিত লেখকদের লেখা রাখার ব্যাপারে আমি একেবারেই পক্ষপাতি নই। রাখলে প্রথিতযশা সাহিত্যিকদের লেখাই রাখব। কারণ, বিখ্যাত সব লেখকদের কাছ থেকেই আমার লিখিত অনুমতি নেওয়া আছে। 
আমি যখন আমার সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়তে নারাজ, তখন তিনি বললেন, তা হলে একটা কাজ করো, তুমিই যখন সব ডিসিশন নিচ্ছ, আমার নামটা আর রেখো না। আমি সঙ্গে সঙ্গে ওঁর মুখের দিকে তাকিয়েছিলাম। আমাকে ও ভাবে তাকাতে দেখে তিনি বলেছিলেন, আর রাখলেও, তোমার নামটা আগে রাখো, আমার নামটা পরে। 
আমি যখন যাঁর সঙ্গে যৌথ ভাবে কোনও সংকলন সম্পাদনা করেছি, খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার নামটা সব সময় তাঁদের পরেই রেখেছি। কিন্তু এ কী বলছেন তিনি! 
তিনিও নাছোড়বান্দা। তাঁর জায়গা থেকে তিনিও কিছুতেই সরবেন না। অগত্যা দু'জনকেই কিছুটা সমঝোতা করতে হল। অবশেষে পঞ্চাশ জন কবির এক-একটা অনবদ্য গল্প নিয়ে প্রকাশিত হল--- কবির কলমে গল্প।
নবনীতাদি, মানে নবনীতা দেবসেন থাকতেন দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্থান পার্কে। তাঁর বাড়ির নাম--- ভালো-বাসা। সেখানেই ১৯৩৮ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহন করেন। বাবা ছিলেন বিখ্যাত কবি নরেন্দ্র দেব। মা রাধারাণী দেবী। 
এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, লিলুয়ার যে 'দেবালয়' বাড়িতে নরেন্দ্র দেব আর রাধারাণীর বিয়ে হয়েছিল, সেটা ছিল বেশ বড় বাড়ি। ছিল বিশাল পুকুর। অনেকখানি জায়দা নিয়ে বাগান। সেখানে সব রকমের শাক-সবজিই হত। মাছও কিনতে হত না। বাড়িতে মুরগিও ছিল। ফলে বাজারও যেতে হত না খুব একটা। উপরন্তু যে বড় বড় ঘাস হত, সেগুলো রঘুভাই, মানে নবনীতাদিকে যিনি মানুষ করেছিলেন, সেই গুনিয়া ভাইয়ের দাদা--- সে-ই ঘাস কেটে আস্তাবলে গিয়ে বিক্রি করে দিয়ে আসতেন।
সেই বাড়ি বিক্রি করেই হিন্দুস্থান পার্কের এই বাড়ি কেনা হয়। তত দিনে প্রথম সন্তানকে খুইয়েছেন নরেন্দ্র-রাধারাণী। জন্মের মাত্র কয়েক দিন পরেই সেই ছোট্ট প্রাণ চিরতরে নিভে গেছে। ভেঙে পড়ছে রাধারাণীর শরীরও। তাই নতুন বাড়িতে আলো-বাতাস খেলার পর্যাপ্ত অবকাশ রেখেছিলেন নরেন্দ্র। একদিন সেই দুঃসময় কেটে গেল। কোল আলো করে এল তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান--- খুকু। হ্যাঁ, জন্ম হল নবনীতার। কিন্তু রঘুভাইয়ের কাছে লিলুয়ার ওই বাড়ির গল্প শুনলেও, কেমন যেন বিশ্বাস হত না তাঁর। মনে হত রূপকথা। তাই অনেক বড় হওয়ার পরে তিনি একবার বাবা-মায়ের স্মৃতি বিজরিত সেই বাড়িটি দেখতেও গিয়েছিলেন।
যে বাড়িতে তাঁর মা রাধারাণী দেবী, দাদা-জামাইবাবুরা উপস্থিত থাকা সত্বেও, তিনি নিজের বিয়েতে নিজেই নিজেকে সম্প্রদান করেছিলেন। 
আসলে মাত্র তেরো বছর বয়সে রাধারাণীর প্রথম বিয়ে হয়। সংসার কী— তা বুঝে ওঠার আগেই, বিয়ের এক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এশিয়াটিক ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন তাঁর স্বামী সত্যেন্দ্রনাথ। সে সময় তাঁর শ্বশুরবাড়ি, বিশেষ করে তাঁর শাশুড়ি তাঁ পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। পরে, আরও পরে, যখন তিনি পুরোমাত্রায় লেখালিখি করছেন, তখন 'কাব্য-দিপালী’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদনা করতেন নরেন্দ্রনাথ দেব। সেই কাজে সাহায্য করতে গিয়েই তাঁর সঙ্গে একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে রাধারাণীর। এর চার বছর পরেই দু’জনের বিয়ে। 
প্রথম বিয়ের বৈধব্যের পর রাধারাণী নতুন জীবনে আনীতা হচ্ছেন দেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নতুন নামকরণ করেছিলেন--- নবনীতা। কিন্তু রাধারাণী দেবী তা প্রত্যাক্ষ্যাণ করেন। তিনি বলেন, আঠাশ বছর ধরে যে নামটা বয়ে বেড়াচ্ছি, যে নামে ইতিমধ্যে দু'-দুটো বই বেরিয়ে গেছে, সে নাম আর পাল্টাব না। 
তাই নরেন্দ্র দেব আর রাধারাণীর যখন কন্যা সন্তান হল, তখন তাঁদের মেয়ের মাত্র তিন দিন বয়সে, সেই মেয়ের উদ্দেশে একটি চিঠি পাঠান রবীন্দ্রনাথ। তাতে তিনি লেখেন, যেহেতু প্রত্যাখ্যান করার মতো তুমি অত বড় হওনি, তাই তোমার নাম দিলাম--- নবনীতা। 
তারও কিছু দিন আগে, মানে এই নবনীতার জন্মেরও আগে, আরও অনেকের মতোই আরও একজন অবশ্য তাঁর নামকরণ করেছিলেন। তাঁর নাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি তখন শেষ শয্যায়। সেই অবস্থাতেই বলেছিলেন, বলেছিলেন, তোমাদের যদি ছেলে হয়, তাঁর নাম রেখো, দেবদত্ত। আর মেয়ে হলে--- অণুরাধা। ছোট রাধা তো, তাই অণু, অণুরাধা। যদিও তিনি আর দেখে যেতে পারেননি এই মেয়েকে। কারণ, তার তিন দিন আগেই তিনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। 
কিন্তু না। শরৎচন্দ্রের দেওয়া মেয়ের সেই নাম আর রাখা হয়নি ওঁদের। স্থায়ী হল,  রবীন্দ্রনাথের দেওয়া নামটাই। নবনীতা। তাঁর নামের প্রসঙ্গে উঠলেই নবনীতা তাই বলতেন, এই নাম তাঁর 'না চাহিতে পাওয়া ধন।'
বাড়ির সাহিত্য আর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা। গোখেল মেমোরিয়াল স্কুলে পড়াশোনা। পরে লেডি ব্রাবোর্ন, প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং যাদবপুরে। তারও পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিসটিংশন নিয়ে আবারও এম এ। পি এইচ ডি করেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পোস্ট ডক্টরেট ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
১৯৭৫ থেকে ২০০২ সাল অবধি তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপিকা ছিলেন এবং বেশ কিছু কাল বিভাগীয় প্রধানও ছিলেন। এ ছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপেরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও বেশ কিছু দিন তিনি পড়িয়েছেন। তাঁকে তুলনামূলক সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট জন হিসেবেই গণ্য করা হয়। 
শুধু পড়াশোনাই নয়, পড়াশোনার বাইরেও খেলাধুলোর প্রতি ছিল তাঁর অপরিসীম আগ্রহ। দারুণ জিমন্যাসটিক জানতেন। বাসকেটবল খেলতেন। সাঁতার কাটতেন। ইন্টার স্কুল স্পোর্টসে তাঁর ছিল বাঁধা পুরস্কার।
একবার কলকাতা বইমেলায় দেখা হতেই কথায় কথায় জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী বই কিনলেন? 
উনি বলেছিলেন, বইমেলায় বই কিনে তো আমাদের কোনও লাভ নেই। এখানে টেন পার্সেন্ট দেয়। বাইরে থেকে কিনলে তো টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ফাইভ পাই। আব্দার করলে কেউ কেউ আবার আরও বেশি দেয়। বইমেলায় এলে একটাই লাভ। বহু পাঠক-পাঠিকাদের সঙ্গে দেখা হয়। আলাপ হয়। এই বইমেলাকে কেন্দ্র করেই কত জনের সঙ্গে যে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, কী বলব!
যে বাড়িতে শুধু বাবা মা-ই নন, পিসি, মাসি, কাকা, জেঠা এবং বাবা-মায়ের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই লেখেন, সে বাড়ির বাচ্চাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ছোটরা তো পড়াশোনা করে। খেলাধুলো করে। বড়রা কী করে? তারা তো বলবেই--- বড়রা শুধু লেখে।
নবনীতারও তাই মনে হয়েছিল। ফলে ছোটবেলাতেই কলম তুলে নিয়েছিলেন তিনি। 
তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়েছিল তাঁদের স্কুলের ম্যাগাজিন--- 'সাধনা'য়। একই সঙ্গে ছাপা হয়েছিল বাংলা এবং ইংরেজি ছড়া ছাড়াও, কাল বৈশাখী ঝড় নিয়ে একটি প্রবন্ধ। তাঁর প্রথম বাণিজ্যিক কাগজে লেখা প্রকাশিত হয় মাত্র বারো বছর বয়সে--- ভারতবর্ষে।
বাংলা ও ইংরেজি ছাড়াও হিন্দি, ওড়িয়া, অসমিয়া, ফরাসি, জার্মান, সংস্কৃত এবং হিব্রু ভাষাও তিনি বেশ ভাল ভাবেই জানতেন।
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রথম প্রত্যয়' প্রকাশিত হয় ১৯৫৯-এ। এবং প্রথম উপন্যাস 'আমি, অনুপম' ১৯৭৬-এ। কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, ভ্রমণ কাহিনি, উপন্যাস মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৮। তার মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য--- নব-নীতা, দেশান্তর, দ্বিরাগমন, অভিজ্ঞান, ট্রাকবাহনে ম্যাকমাহনে, সীতা থেকে শুরু, নবনীতার নোট বই। এ ছাড়াও আছে--- ভ্রমণের নবনীতা, রঙ্কিণীর রাজ্যপট এবং অন্যান্য, অ্যালবাট্রস, হে পূর্ণ তব চরণের কাছে, তিতলি, স্বপ্ন কেনার সদাগর, পলাশপুরের পিকনিক। 
তিনি দীর্ঘ দিন ‘রামকথা’ নিয়ে কাজ করছেন। সীতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রামকথার বিশ্লেষণ করেছেন। ‘চন্দ্রাবতী রামায়ণ’ তাঁর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ।
কথা বলতে যেমন তিনি ভালবাসতেন, তেমনি ভালও বাসতেন মানুষকে৷ আপন করে নিতে জানতেন। 
১৯৬০-এ বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ (পরবর্তী কালে নোবেলজয়ী) অমর্ত্য সেনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। যদিও এনগেজমেন্ট হয়েছিল বিদেশে। ১৯৫৯ সালে। সেই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল তাঁদের বাড়ির উল্টো দিকে, পশ্চিমবঙ্গের এক সময়ের দাপুটে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু আর বিখ্যাত অভিনেতা পাহাড়ি সান্যালের বাড়িতে। এই বিয়ের অনুষ্ঠান করার জন্যই পাশাপাশি এই দুই বাড়ির মাঝখানের পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।
বিয়ের পরে তিনি যখন বিদেশে, সে সময় নবনীতা দেব থেকে তিনি প্রথম প্রথম নবনীতা ডি সেন লিখতে শুরু করেন। নাম হিসেবে নবনীতা, পদবি হিসেবে দেব, আর মধ্য নাম হিসেবে ডি। পরে আর 'ডি' নয়, পুরোপুরি--- নবনীতা দেবসেন।
তাঁদের দুটি মেয়ে। বড় মেয়ে অন্তরা। পেশায় সাংবাদিক ও সম্পাদক। আর ছোট মেয়ে নন্দনা। অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী। এ ছাড়াও তাঁদের একটি মেয়ে আছে। পালিতা। যদিও তাঁদের সেই বিয়েটা টেকেনি। বিয়ের ষোলো বছর পর ১৯৭৬ সালে সেটা ভেঙে যায়। 
পড়াশোনা এবং পড়ানোর ব্যস্ততার মধ্যেও কিন্তু নবনীতার কলম কখনও থেমে থাকেনি। একের পর এক লিখে গিয়েছেন কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, উপন্যাস। রম্যরচনাতেও ছিল তাঁর নজরকাড়া মুন্সিয়ানা। শুধু লেখালিখি নয়, আকের সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর সঙ্গে 'সংলাপ' নামে একটি পত্রিকাও চালু করেছিলেন তিনি। যত্ন সহকারে সম্পাদনাও করতেন।
তাঁর ক্ষোভ ছিল, ইন্ডিয়ান লিটেরেচার বলতে ভারতীয়দের লেখা শুধু ইংরেজি বইগুলোকেই কেন বোঝাবে? বাকি ভাষাগুলোকে এ ভাবে আঞ্চলিক করে দেওয়ার প্রবণতা কেন? তিনি একবার বলেছিলেন, এর পর তো রবীন্দ্রনাথ, প্রেমচাঁদও ব্রাত্য হয়ে যাবেন!
বলেছিলেন, ইংরেজিতে লিখলেই, সেটা যেন অত্যন্ত উচ্চমার্গের। লেখার মান যাই হোক না কেন, ওগুলোকেই পুরস্কার দিতে হবে। আর ওগুলোকে পুরস্কার দেওয়ার ফলে, বাংলা-সহ অন্যান্য ভাষাতেও যে অসামান্য এক-একটা সাহিত্য সৃষ্টি হচ্ছে, তা লোকচক্ষুর আড়ালেই চলে যাচ্ছে। লোকে ভাবছে, ওই ইংরেজিগুলোই বুঝি মূল ভারতীয় সাহিত্য। ফলে বিশ্বসাহিত্যের কাছে সত্যিকারের যে ভারতীয় সাহিত্য, তার মান ক্রমশ নেমে যাচ্ছে। বুঝতে পারি না, ভারতীয় সাহিত্য বলতে ওগুলোকেই তুলে ধরা হচ্ছে কেন? লীলা মজুমদার কি কম বড় মাপের লেখিকা? এখনও তাঁর লেখা পড়লে মুগ্ধ হয়ে যাই। 
ওঁর মনে হত, সিনেমা জগতের কাস্টিং কাউচের মতো আমাদের লেখালিখির জগতেও ওই সব ঢুকে পড়েছে। পুরুষরাই ডমিনেট করার চেষ্টা করছে মহিলা কবি-সাহিত্যিকদের। তাই তিনি গড়ে তুলেছিলেন, 'সই'য়ের মতো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন। যেটা মেয়েদের নিয়ে, মেয়েদের জন্য এবং মেয়েদের দ্বারাই পরিচালিত হয়। 
আফসোস করতেন, প্রকৃতির ওপর মানুষের অত্যাচার নিয়েও। প্ল্যাস্টিক ব্যবহার নিয়ে, বন কাটা নিয়ে, জলাশয় ভরাট নিয়েও সোচ্চার ছিলেন তিনি। মাঝে মাঝে বিড়বিড় করে বলতেন, ঋতুগুলো সব পাল্টে যাচ্ছে!
আত্মজীবনী মূলক রম্যরচনা ‘নটী নবনীতা‘ গ্রন্থের জন্যে তিনি ১৯৯৯ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান। ২০০০ সালে পদ্মশ্রী সম্মান ছাড়াও পেয়েছেন মহাদেবী বর্মা ও ভারতীয় ভাষা পরিষদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও অজস্র পুরস্কার।
শুধু ভারতের তাবড় তাবড় কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গেই নয়, উমবের্তো একো, জাক দেরিদা, গুন্টার গ্রাস, নাদিন গর্ডিমার অ্যালেন গিনসবার্গ, কার্লোস ফুয়েন্তেস মার্গারেট অ্যাটউডের মতো দেশ-বিদেশের বিখ্যাত কবিনসাহিত্যিকদের সঙ্গেও তাঁর ছিল দারুণ সখ্যতা। আর সে জন্যই বোধহয় তিনি ছিলেন একদম ভয়ডরহীন অত্যন্ত স্মার্ট একজন মহিলা। স্মার্ট না হলে যে শিরোনাম লেখার আগে সদ্য লিখতে আসা বেপরোয়া, উদ্ধত ছেলেমেয়েরাও দশ বার ভাববে, ভাবলেও লিখতে সাহস পাবে কি না সন্দেহ, তিনি তা অবলীলায় লিখে দিতেন। 
১৯৯৮ সালে অমর্ত্য সেন যখন নোবেল পেলেন, তার প্রায় বাইশ বছর আগেই তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে। তবু সেই নোবেল পুরস্কারের ধাক্কা সামলাতে হয়েছিল অমর্ত্য সেনের  প্রথমা স্ত্রী  এই নবনীতাকেও। সে বছর একটি নামকরা সাহিত্য পত্রিকার পুজো সংখ্যায় তিনি লিখেছিলেন এক অসামান্য রম্যরচনা। আর তার শিরোনাম? এখনও চমকে দেবে বহু মানুষকে। তিনি লিখেছিলেন--- যারা হাটকে যারা বাঁচকে, ইয়ে হ্যায় নোবেল মেরি জান। 
এত ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেও একটা মানুষ যে এত রসিক, এত মন খোলা, দিলদার হতে পারেন, নিজেকে নিয়ে, এমনকী, নিজের ক্যানসার হয়েছে জানার পরেও, নিজের আসন্ন মৃত্যু নিয়েও কেউ যে এত মজা করতে পারেন, তা একমাত্র নবনীতাকে সামনে থেকে না দেখলে বা তাঁর লেখার নিমগ্ন পাঠক না হলে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবে না। 
এই তো মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার কয়েক দিন আগে তিনি একটি দৈনিক পত্রিকায় লিখেছিলেন--- যে সব মানুষ আমাকে একবারও চোখে দ্যাখেনি, দূর দূর গ্রাম থেকে ছুটে আসতে চাইছে একবার শেষ দ্যাখা দেখতে— আরে, এটাই শেষ দ্যাখা, তোমায় কে বলল? এই যে এত লম্বা জীবনটা কাটালুম, তার একটা যথাযথ সমাপন তো দরকার! পাঁজিপুঁথি দেখে, শুভ দিন, শুভ লগ্ন স্থির করে, স্বজনবান্ধবকে নেমতন্ন খাইয়ে তবে তো শুভযাত্রা!
নিজেকে নিয়ে, নিজের মৃত্যুকে নিয়ে এ ভাবে রসিকতা করার মতো স্পর্ধা বোধ হয় একমাত্র তাঁকেই মানায়৷ 
আসলে নবনীতা হল এমন এক জন, যাঁর পুরো পরিবারটাই বিখ্যাত! বাবা বিখ্যাত, মা বিখ্যাত, স্বামী বিখ্যাত, মেয়েরাও যথেষ্ট খ্যাতিমান। 
কিছু দিন আগে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে কলকাতায় এসেছিলেন অমর্ত্য সেন। নবনীতাদি শুধু আমাকেই যেতে বলেননি, আমার ছেলেকেও নিয়ে যেতে বলেছিলেন। এসেছিল নবনীতাদির মেয়ে-জামাইও। দারুণ জমে উঠেছিল সে দিন।
নবনীতাদি চলে যাওয়ার দু'দিন আগেও গিয়েছিলাম 'ভালো-বাসা'য়। আমার সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত 'ভারত বিচিত্রা'র সম্পাদক নান্টু রায়। না, ওঁর তখন ওঠার মতো অবস্থা ছিল না। আমি নবনীতাদিকে লাস্ট দেখেছিলাম, সদ্য নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন ওঁকে দেখতে গিয়েছিলেন, সে দিন।
তিনি একদিন আফসোস করে বলেছিলেন, আমি খুব ঘুরতে ভালবাসি। যদিও সারা পৃথিবী উনি যে কত বার ঘুরেছেন, তার কোনও ঠিক নেই। নবনীতা ছিলেন এক বর্ণময় চরিত্র। 
দীর্ঘ দিন হাঁপানিতে ভুগেছেন। ইনহেলার নিয়ে ঘুরতেন। অথচ শরীর নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলতেন, না না, ও কিছু না। আসলে, শারীরিক কোনও সমস্যাকেই উনি বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইতেন না। এই যেমন, আলাস্কার মতো জায়গায় ওঁর মতো একজন হাঁপানি রোগী দুম করে ঘুরতে চলে গেলেন। একবার নয়, একাধিকবার আলাস্কায় গিয়েছিলেন তিনি। ভাবা যায়! 
তবু কথায় কথায় বলতেন, আমার খুব ইচ্ছে ছিল ইজিপ্টে যাওয়ার। সাউথ আফ্রিকা যাওয়ার। কায়রো যাওয়ার। অবশ্য কায়রো বিমানবন্দর অবধি আমি গিয়েছি। কিন্তু নেমে ঘোরা হয়নি। আর এখন যা পায়ের অবস্থা, মনে হচ্ছে আন্দামানও আমার দেখা হবে না! 
কিছু দিন আগে নবনীতাদির বাড়িতে আমার এক বাংলাদেশি লেখক-বন্ধুকে নিয়ে আচমকাই হাজির হয়ে ছিলাম ভরদুপুরে। আমি ফোন-টোন না করে এ রকমই হুটহাট চলে যেতাম। সে দিনও গিয়েছিলাম। অনেকক্ষণ গল্প হল। উঠে আসার সময় আমার সেই বন্ধুটি বলল, দিদির সঙ্গে একটা ছবি নিয়ে নিই...
না, তরুণরা কেউ কিছু বললে উনি কাউকেই নিরাশ করতেন না। কিন্তু সে দিন তিনি বললেন, না, আজ থাক। ছবি তুলে কী হবে? আর ক'দিন পরে তো এমনিই ছবি হয়ে যাব। 
সে দিন এই কথাটার মানে বুঝিনি। আজ বুঝতে পারছি। ভীষণ ভাবে বুঝতে পারছি।

সাহিত্যিক সিদ্ধার্থ সিংহ
২৭/পি, আলিপুর রোড, কলকাতা

নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

  • আগস্ট (3)
  • জুলাই (22)
  • জুন (8)
  • নভেম্বর (15)
  • অক্টোবর (5)
  • সেপ্টেম্বর (81)
  • আগস্ট (66)
  • জুলাই (55)
  • জুন (56)
  • মে (57)
  • এপ্রিল (46)
  • মার্চ (15)
  • জানুয়ারী (14)
  • ডিসেম্বর (73)
  • নভেম্বর (103)
  • অক্টোবর (97)
  • সেপ্টেম্বর (101)
  • আগস্ট (120)
  • জুলাই (88)
  • জুন (76)
  • মে (63)
  • এপ্রিল (11)

🔴বিজ্ঞপ্তি:

পাঁচ মাসের বিরতি কাটিয়ে আবার ও ফিরছি আমরা। খুব শীগ্রই আসছে আমাদের প্রত্যাবর্তন সংখ্যা।

অনুসরণ করুণ

এক মাসের সর্বাধিক পঠিত পোস্টগুলি:

  • শেষ শোকসংগীত ~ গোবিন্দ মোদকের কবিতা
  • দুটি কবিতায় ~ গৌতম কুমার গুপ্ত
  • ব্রাত্য ~ বিদ্যুৎ মিশ্র'র কবিতা
  • দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প
  • আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা
  • গুচ্ছ কবিতায় ~ অসীম মালিক
  • সুমিত রায়ের গল্প
  • সে প্রেম পবিত্র~ প্রেমাংশু শ্রাবণের কবিতা
  • সুব্রত মাইতির কবিতা
  • তিনটি কবিতায় ~ রাগীব আবিদ রাতুল

বিষয়সমূহ

  • Poetry speaks 2
  • অণু কথারা 21
  • আবার গল্পের দেশে 8
  • উৎসব সংখ্যা ১৪২৭ 90
  • একুশে কবিতা প্রতিযোগিতা ২০২১ 22
  • এবং নিবন্ধ 3
  • কবিতা যাপন 170
  • কবিতার দখিনা দুয়ার 35
  • কিশলয় সংখ্যা ১৪২৭ 67
  • খোলা চিঠিদের ডাকবাক্স 1
  • গল্পের দেশে 17
  • ছড়ার ভুবন 7
  • জমকালো রবিবার ২ 29
  • জমকালো রবিবার সংখ্যা ১ 21
  • জমকালো রবিবার ৩ 49
  • জমকালো রবিবার ৪ 56
  • জমকালো রবিবার ৫ 28
  • জমকালো রবিবার ৬ 38
  • দৈনিক কবিতা যাপন 19
  • দৈনিক গল্পের দেশে 2
  • দৈনিক প্রবন্ধমালা 1
  • ধারাবাহিক উপন্যাস 3
  • ধারাবাহিক স্মৃতি আলেখ্য 2
  • পোয়েট্রি স্পিকস 5
  • প্রতিদিনের সংখ্যা 218
  • প্রত্যাবর্তন সংখ্যা 33
  • প্রবন্ধমালা 8
  • বিশেষ ভ্রমণ সংখ্যা 10
  • বিশেষ সংখ্যা: আমার প্রিয় শিক্ষক 33
  • বিশেষ সংখ্যা: স্বাধীনতা ও যুবসমাজ 10
  • ভ্রমণ ডায়েরি 1
  • মুক্তগদ্যের কথামালা 5
  • রম্যরচনা 2
  • শীত সংখ্যা ~ ১৪২৭ 60

Advertisement

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

মোট পাঠক সংখ্যা

লেখা পাঠাবার নিয়মাবলী:

১. শুধুমাত্র কবিতা, মুক্তগদ্য অথবা অণুগল্প পাঠাবেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য বিষয়ক লেখা সম্পূর্ণ আমন্ত্রিত। ২. লাইনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ৩. লেখা মেইল বডিতে টাইপ করে পাঠাবেন। ৪. লেখা মৌলিক ও অপ্রকাশিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্য কোনো ব্লগ, ওয়েবজিন অথবা প্রিন্টিং মিডিয়ায় প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ৫. মেইলে আপনার লেখাটি সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত, কথাটি উল্লেখ করবেন। ৬. লেখার সাথে আবশ্যিক ভাবে এক কপি ছবি ও সংক্ষিপ্ত ঠিকানা পাঠাবেন।  ৭. লেখা নির্বাচিত হলে এক মাসের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে। এক মাসের মধ্যে কোনো উত্তর না এলে লেখাটি অমনোনীত ধরে নিতে হবে। ৮. আপনার লেখাটি প্রকাশ পেলে তার লিঙ্ক শেয়ার করাটা আপনার আবশ্যিক কর্তব্য। আশাকরি কথাটি আপনারা মেনে চলবেন। আমাদের মেইল- hridspondonmag@gmail.com
blogger-disqus-facebook

শান্তনু শ্রেষ্ঠা, সম্পাদক

আমার ফটো
পূর্ব বর্ধমান, India
আমার সম্পূর্ণ প্রোফাইল দেখুন

সাম্প্রতিক প্রশংসিত লেখা:

সুজিত রেজের কবিতা

সুজিত রেজের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন

© হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন। শান্তনু শ্রেষ্ঠা কর্তৃৃক পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে প্রকাশিত।

Designed by OddThemes | Distributed by Gooyaabi Templates