হৃদস্পন্দন

  • Home


  • Download

  • Social

  • Feature


অন্তরা দাঁ এর মুক্তগদ্য

ফিরে ফিরে আসা

সব আসা আর যাওয়া শুধু ফিরে ফিরে বারবার দুয়ারে দাঁড়ায় ! তবু চৌকাঠ পেরোতে পারে কই? ফিরে যে আসে, সে, যে ফিরে গেছে সে নয়। অন্য একজন, তার দুঃখকাতরতা নিয়ে গভীর অভিনিবেশে এসে দাঁড়ায় শূন্য আঙিনায় অথবা রিক্ত হাতে যে নেড়েছিলো বিদায়ের আঙুল সে একদিন অতুল ঈশ্বর্য করতলে সোনামুঠি করে, তুচ্ছ করে ফিরে যাওয়ার গূঢ় বেদনার মুহূর্ত, তখন আর হাজার অনুরোধেও সে ফিরে তাকায় না ফেলে আসা পথের দিকে।  এই দোলাচলই তো জীবন,বহমানতা, গন্তব্য বদলে বদলে যায়।
ফেরা হয়না নিজের কাছেও। যে আমি ফিরতে চেয়েছিল সে হয়তো বদলে যায় অথবা ফিরতে চাইলেও সে আর কোনোদিন রাস্তা খুঁজে পায় না, ঘুরে মরে অবাক ভুলভুলাইয়ার সুড়ঙ্গে!

মুকুলিত বালিকাবয়েস কথা দিয়েছিল ফিরে আসবে, আসেনি। চলে গেছে সে তার আলতা-রাঙা নূপুরের ছমছম সুর তুলে কোন দূরে পাড়াগাঁর মেঠোপথে বেতসলতায় জড়িয়ে-মড়িয়ে। কিম্বা শহরের পিচগলা দুপুরের তেষ্টায়, ইস্কুল কেটে সিনেমাহলের অন্ধকার ফিসফিসে, ইউনিফর্ম লুকোনোর অমোঘ চেষ্টায়, চটপটি আর আলুকাবলির অবাধ স্বেচ্ছাচারে, কুলের আচারের প্রতুলতায়, ফুচকার টকজলের নিষিদ্ধ হাতছানিতে, হঠাৎ বড় হয়ে যাওয়ার অননুভূত স্পর্শে!
শৈশবের কচি তালশাঁসের মত নির্মল সময়ে লাগে কৈশোরের জারুল ফুলের পাপড়ির মত ফিনফিনে ইচ্ছের বাতাস, শিরশিরিয়ে ওঠে শরীর, সেই নিঃস্তব্ধ ডাহুক ডাকা দুপুর, ইস্কুলবাড়ির ছুটির ঘন্টা, কাঁচা আম-ছেঁচার অম্ল-মধুর আস্বাদ, সাদা-কালো ছায়াছবির মত, সত্যজিৎ রায়ের 'পথের পাঁচালি' র মত, বন্ধক রাখা যায় নষ্ট্যালজিয়ার কাছে কিন্তু ফেরানো যায় না। শুধু মেঘ করে আসে মনখারাপের সন্ধেয়, যখন বাড়ি খালি করে সবাই অনুষ্ঠানে গেছে, বা কোন জলসায়, লোডশেডিং চলছে, বিদ্যুৎচমকের আলোয় উদ্ভাসিত চেনা পথঘাটের অচেনা গন্ধ, তখন পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসে অতুলপ্রসাদ, তখন হঠাৎই ভীষণ মনকেমন করে, অতীত উঠে এসে পাশটিতে বসে। তখন আর কেউ থাকে না, ছোট্টবেলার সেই হ্যারিকেনের আলোর রূপকথা ছাড়া!

প্রথম প্রেম বলেছিল ফিসফিসিয়ে যে করেই হোক ঠিক ফিরে আসবে, আসেনি। এক ঝড়ের রাতে বাতাসে কুটি কুটি করে উড়িয়ে দিতে হয়েছিলো সব প্রেমের কবিতা, ডায়েরির পাতায় লেখা ইচ্ছেপত্র, গোলাপের শুকনো পাপড়ি আর হৃদয়ভাঙার টুকরো-টাকরা। ঝড়ের শেষে ভোরের ক্ষমাসুন্দর আলোয় স্মিত হাসিতে যে আমায় দু'হাতে জড়িয়ে নিয়েছে বুকে, তার নাম বিরহ। সে প্রেমেরই নামান্তর তবু প্রেম নয়। ফিরে আসেনি সে প্রেম, যাকে আমি গোপন স্পর্শকাতরতার মত লালন করেছি হৃদয়ে যেন অসাবধানে সরে যাওয়া লিঙ্গত্বক, মায়ের বিভাজিকায় ঘামের গন্ধের মত পবিত্র! আমার করতল শুধু হাতড়ে হাতড়ে গেছে কারোর হাত। পুরনো কলঘরে শ্যাওলার মত বিপদসংকুল চাহিদাদের পাশ কাটিয়ে যখন ভেবেছি নিজেকে নিরাপদ, আবছায়া হয়ে এসেছে সাধ, প্রবল বিদ্রুপে তছনছ হতে হতে ভেবেছি — প্রেম মানে সর্বনাশ!

ফিরে আসেনি অমল আনন্দ কিম্বা গভীর দুঃখবোধ। কল্পনার এক দিগন্তঘেঁষা মাঠ ছিলো আমাদের, গোল্লাছুটের ঘর কাটা, সবুজ মেখে গোল গোল করে উড়তো সস্তা ছিটের ফ্রক, চোরকাঁটা বিঁধে থাকতো ইচ্ছেডানার নরম মজ্জায়। চার আনার কটকটে চিনির মাছ লজেন্সের স্বর্গীয় মিষ্টি স্বাদ জিভে তখনও লেগে থাকতো। পুজোর চারটিদিনের জন্য বরাদ্দ একখানিই নতুন জামার খইয়ের মাড়ের গন্ধ স্মৃতির আকাশে মাঝেমধ্যেই উড়াল দেয় পরিযায়ী সাইবেরিয়ান হাঁসের মত, তাদের পাখসাট থেকে ঝরে পড়া মুহুর্তেরা মৃত তারাদের মত নিনির্মেষে চেয়ে থাকে বিস্মৃতির ধুলো মেখে। সেই আনন্দ কখন বদলে গেছে গভীর বিষাদে। একে একে খ'সে গেছে প্রিয় মুখ, অতল চোখের আশ্রয়। আবেগের রাধানাম লিখেছি যে বুকের ভেতর তারই মালা জপি নিশিদিন, কন্ঠীবদল হলো, সপ্তপদী গমনের পথে হারিয়ে গেলো চোখের তারায় ধরা মানুষের হাসিটুকু, বাসরশয্যায় সে তখন একা! সাজঘর তাকে নববধূ করেছে অথচ বুকের গভীরে ঢেলেছে ময়ূরকন্ঠী জেলির মত তীব্র বিষ, পোড়া ধূপের ছাইয়ে লেখা হয়ে গেছে তখন অনাগত ভবিষ্যতের পান্ডুলিপি। অমল আনন্দ কখন বদলে গেছে সস্তা সুখে, সে সুখের চাবিকাঠি বাঁধা আছে বহুতল ফ্ল্যাটের ঝাঁ চকচকে মেঝেয়, শালীন পর্দার ঘেরোটোপে,পাঁচতারা হোটেল-রেঁস্তোরার কন্টিনেন্টাল ডিশের ফ্লেভারে, এনিভারসারিতে পাওয়া ডায়মণ্ড রিংএর উজ্জ্বলতায় কিম্বা একটা হলিডে ট্রিপের গায়ে যে আলস্য লেগে থাকে ঠিক সেরকমটি। এক হলুদ-বসন্ত পাখির পালকের মত মসৃণ নরম ফাগুনের মাসে আমার ঠাকুর্দা তার পৈতৃক ভিটের একখানা ছোট আলোবাতাসহীন ঘরে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেলো। কী শান্ত শীতল নিঃশব্দ পদচারণা মৃত্যুর অথচ নির্মম সেই পরিণতি বোঝার আগে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো ছ'ফুট, ফরসা ধবধবে,সারাক্ষণ সাদা ধুতি-পাঞ্জাবী পরা আমার ঠাকুর্দা। শুধু দুঃখ নয়,এক গভীর বিষাদ আমায় ছেয়ে রেখেছিল দীর্ঘ সময়। আজ, জীবনের উপান্তে এসে দেখি আনন্দ আর বিষাদ একটাই কয়েনের দুটি দিক। জড়ামড়ি করে থাকে, তবু তারা যেন দুটি সতীন, একে অপরকে ভেঙিয়ে চলে প্রত্যহ।

ফিরে আসে না কিছু, তবু আজকাল ঘুম না এলে শেষ রাতে বারান্দায় এসে বসি, পশ্চিম আকাশে তখনও তারারা বাসরশেষের কাজল মুছে টুপ করে স্নান করতে নামবে যেন সাগরতীরে। পূব আকাশ ফুটি ফুটি করছে আলোর ইশারায়। কে যেন এসে বসে পাশটিতে, তার মুখ আমি কোনোদিন দেখতে পাইনা, সে এসে যেন তার হিমশীতল আঙুল আমার রাতজাগা চোখে বুলিয়ে বলে
— কষ্ট? খুব কষ্ট তোমার?
আমি ব্যগ্র হয়ে বলি
— ভারী কষ্ট আমার জানো...
কত কী যে বলে যাই, সে আমার নিজেরও মনে থাকে না।
সে আমায় বলে
— ফিরে চলো...
আরও একটা দিন ফিরে আসে, প্রায় আগের দিনটির মত, তবু আগের দিন সে তো নয়। আমার ফেরা হয় না...
তবু জানি একদিন আমি ফিরব, সে আমি এই আমি নয়, আলো কমে আসছে, কুঁচকে আসছে ত্বক, যৌবন ছেড়ে যাচ্ছে, শরীরের ভেতর থেকে উদগ্র হচ্ছে উপবাসের গন্ধ...
যে ফিরবে সে আমি নয়।

গদ্যকার অন্তরা দাঁ
কাঁটাপুকুর উত্তর, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ








সমর সুরের কবিতা

রাধাকৃষ্ণচূড়া

ট্রেনে যেতে যেতে দেখি
এই গ্রামে কোথাও কৃষ্ণচূড়া নেই।
সবুজ ধানের ক্ষেতে রাধিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে 
একটি রাধাচূড়া 
তার দিকে অপলক চেয়ে থাকি।
পরবর্তী স্টেশন মাঝের গ্রাম বলে মেয়েটি আড়াল হয়ে গেল
এখানে ক্রশিং,ট্রেনটি দাঁড়াবে দু'চার পাঁচ মিনিট
আহা ! দেখি এই স্টেশনে একটি কৃষ্ণচূড়া ভরিয়ে রেখেছে সুরে সুরে
'তোমায় গান শোনাবো তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখো'
একটিই জীবন 
তবু অন্তিম স্টেশন চলে আসে দ্রুত।

কবি সমর সুর 
            শ্যামা প্রসাদ পল্লী, রাণাঘাট, নদীয়া




সূর্য মণ্ডলের কবিতা 

ডুব সাঁতার 

ডুব দিয়েছি গহীন জলে
উথালপাতাল ঢেউ...
জলের নীচে ভাবতে থাকি
টের পাইনি কেউ
কোথায় ছিল পানকৌড়ি 
শুকনো মরা ডালে?
ডোবার কথা রটিয়ে দিল
আকাশ জলস্থলে।
মেঘের শুধু নদীর কানে
বলা, গোপন কথা
হাওয়া যখন জানল শেষে 
পূর্ণ হল কলা !...

কবি সূর্য মণ্ডল 
পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত







 




 




 


শৌভিক চট্টোপাধ্যায়ের গল্প 

প্রভাকরকাকু

গল্পটা ঠিক গল্প গল্প নয়।গাল গল্প তো একেবারেই নয়।আবার সবটা সত্যিও নয়।অন্যদিকে মিথ্যে হওয়ার প্রশ্নও নেই।তাই গল্পটা অনেকটা জীবনের মত বলা চলে।
     তখন ফাল্গুন মাস।রাঢ় বাংলার এদিকটায় সচরাচর পলাশ টলাশ দ্যাখা যায় না।যেটুকু যা পলাশ ফুল বিছিয়ে থাকে তা মানুষের মনে মনে।তবে গুলঞ্চ গুলমোহর কৃষ্ণচূড়া ঢেলে দেয় সারা দেহের সবটুকু নির্যাস।দিয়াদের সারাবাড়ি ফুলের মধুকরী গন্ধে একেবারে ম ম করছে।খুশিতে ঝলঝল করছে এবাড়ির ঘরদোর উঠান বারান্দা।ছোট্ট একটা সাজানো গোছানো বেশ পরিপাটি বাড়ি ওদের।দিয়ার বাড়িতে সাকুল্যে চারটি ঘর।প্রত্যেকটিতেই উপচে আসা পরিপাট্য।
       এখন দিয়াদের বাড়িতে ব্যস্ততা তুঙ্গে।দিয়ার বাবা রামতনু বন্দ্যোপাধ্যায় সজ্জন মানুষ বলেই এলাকায় পরিচিত। রামতনুবাবুর নিশ্বাস নেওয়ার ফুরসত নেই।মায়েরও ঘর গেরস্থালীর কাজে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। দিয়ার মনে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।পাত্রটিকে তার বেজায় পছন্দ।বেশ লাগে মানুষটিকে।দুজনের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে। খুব যে মতের মিল রয়েছে এমনও নয় আবার মতের পুরোপুরি অমিল হচ্ছে এমনটাও নয়।বেশ ব্যলান্সড্ একটা সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে ওদের মধ্যে।ওর হবু শ্বশুরবাড়িও বেশ সুপরিচিত। তারা একেবারেই ধনকুবের নন তবে চলে যায় একপ্রকার। সাম্য দিয়ার হবু বরের একটি কোচিং ক্লাস রয়েছে। কখনসখন টার্ণওভার কত জিজ্ঞেস করলে সাম্য বলে,'ধুর!আমার আবার টার্ণওভার। আই অ্যাম নেক্সট্ টু বিশুদ্ধ ভিখারি!'তবে দিয়ার বাবা রামতনুবাবু নিজের পরিচিতি এবং অল্পবিস্তর প্রভাব খাটিয়ে নিঃশব্দে প্রাক বৈবাহিক রেইকিটা ঠিকই করিয়ে নিয়েছেন।এবং এই সামাজিক গোয়েন্দাগিরি টুকু অনেক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাই করিয়ে নেন।এটা স্বাভাবিক। রামতনুবাবু যা খোঁজখবর নিয়েছেন তাতে তাঁর মেয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই থাকবে।এই নিশ্চয়তাটুকুই বাবামায়েরা প্রার্থনা করেন।এটুকুই আনন্দ দেয় ওদের।সেই আনন্দ থেকে অজস্র আনন্দদানা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে নেমে আসে দিয়ার ওপর।আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব সকলেই এই বিবাহে যারপরনাই খুশি এবং উন্মুখ হয়ে আছে কবে সেই বিবাহের দিন!
             সেদিন আকাশ কিছুটা মেঘলা।শীতের শেষ আর বসন্তের শুরুতে এমন একটুআধটু বৃষ্টি হতেই পারে।হঠাত বাড়িতে হাজির বাবার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু প্রভাকরকাকু।ধোপদুরস্ত চেহারা।সর্বদা গুঁজে প্যান্ট শার্ট পড়ে থাকেন।দেখলেই মনে হবে এইমাত্র মঞ্চ থেকে অভিনয় সেরে নামলেন।শেয়ার বাজারের এজেন্ট।নিজে কিছু উপার্জন করেছেন আর কিছু শ্বশুরালয় সূত্রে ম্যানেজ করেছেন।লোকটা বকে বেশি তবে খুব একটা ক্ষতিকারক নন মোটেই।
       'দিয়া মা কোথায় গেলি রে!আয় মা আয়! আসব আসব করে আসাই হচ্ছিল না।বৌদি একটু চা করুন...!''কথা গুলো একনিশ্বাসে বলে নিলেন।
'আয় প্রভাকর আয়।শুনেছিস তো সব। বস অনেক কথা জমে আছে।দিয়া নিচে আয় মা!দ্যাখ কাকু এসেছেন।'
দিয়া এসে দাঁড়ায়।একটু স্বলজ্জ যেন।
'আয় মা বস!'
দিয়া সোফায় বসে।
'তোর বিয়ে এ যে কত বড় আনন্দের দিন!কী বলব।তা তুই নিজে পাত্রকে দেখেছিস তো!'
'হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়।ওদের আলাপ হয়েছে সম্প্রতি!'রামতনুবাবুই দিয়ার হয়ে উত্তর দেন।
'শুনেছি ছেলেটিতো বিশেষখারাপ নয়।তা ছেলের ইনকামটিনকাম!শুনেছি তো কোচিং না কী যেন!'
'হ্যাঁ ওর কোচিং ক্লাস আছে আর হ্যান্ডসাম... '
'হ্যান্ডসাম কি দেখতে খারাপ সে কথা বলছি না মা!আমি বলছিলাম ইনকাম আসলে সারাজীবনের ব্যাপার তো!'
'আমিও ইনকামই বলছি কাকু।হ্যান্ডসাম আরনিং!'
'চাকরিবাকরি তো করে না তাই চিন্তা... '
'কার চিন্তা? আপনার?'
'নাহ্!আমার কেন তোর বাবারও চিন্তা হবে.. '
'বাবার তেমন কোনও চিন্তা নেই চিন্তাটা আপনার।'
'নাহ্!মানে আমিও তো তোর বাবার মতই!'
'ভাগ্যিস বাবা নন!'
'আজকের দিনে চাকরি করাটা জরুরি ছিল রে মা।সরকারি হলেই ভালো হয়!'
'আপনিও চাকরি করেননা কাকু! কাকিমা যদি আপনাকে এই বয়সে ছেড়ে দেয় কী হবে কাকু!',
দিয়া মেরুদন্ড সোজা করে সোফা ছেড়ে উঠে আসে নিজের ঘরে।প্রভাকরকাকুর কথা গুলো শুনে এই কথা গুলোই শুনিয়ে দিতে চেয়েছিল ও কিন্তু পারেনি।রাগে হিলহিল করছিল সারা শরীর।ঘরে এসেই ফোন করে সাম্যকে।এই সমস্ত অপমান বন্যার জলের মত নেমে এসেছিল সাম্যর কাছে।সাম্য বড় শান্ত স্বভাবের মানুষ।ধৈর্য তার অসীম।সে বলেছিল 'শান্ত হও!ক্ষমা করতে শেখো!'

২

বছর পাঁচেক পরের কথা।ওরা দুজন এখন ঘোর সংসারী। তখন বিকেল।সাম্য নিজের ক্লাসে ব্যস্ত।দিয়া রান্নাঘরে পরিচারিকাদের কিছু নির্দেশ দিচ্ছিল।ওর ফোনটা বাজছে। বেজেই চলেছে।খুব বিরক্তির সঙ্গে ফোনটা তোলে।
'হ্যালো..'
'দিয়া বলছিস?'
'বলছি।আপনি?'
'আমি প্রভাকরকাকু!'
'ক্যা কাকু?'
'প্রভাকরকাকু।রামতনুর বন্ধু ভুলে গেলি মা!'
'আচ্ছা বুঝেছি।না না আপনাকে ভুলি কী করে বলুন!'সেইদিনকার সমস্ত কথা হুড়মুড় করে মনে পড়ে গেল আবার।মাথার ভিতর একটা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি পুনরায় জেগে উঠতে পারে।
'বলছি খুব টানাটানি যাচ্ছে রে।বলতেও খারাপ লাগছে সাম্যকে বলনা কিছু টাকা আমার মাধ্যমে শেয়ারে ইনভেস্ট করতে।ও অন্যদের মাধ্যমে ইনভেস্ট করেই আমার মাধ্যমে করলে আমার দুটো পয়সা হত!'
দিয়ার মনে পড়ে সাম্য বলেছিল ধৈর্য রাখতে।

শৌভিক চট্টোপাধ্যায়  
কালনা, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ












অর্ঘ্য দে'র কবিতা 

চৈত্র দিন 

আমার গায়ে বয়সের জামা, 
আশ্রয় নিয়েছি সংসারে।
চৈত্রের ধুলোয় আবছা চলাচল 

ঘষা কাচের মতো দিন, 
সাদা-কালো অভিজ্ঞতাদের উল্টেপাল্টে দেখি, 
ফাঁকে-ফাঁকে উদাসী হাওয়া; ইমন। 

কোনও হাঁকডাক নেই, 
কোনও রকম চঞ্চলতা অর্থহীন 
বৈশাখী মেঘের ছায়ায় গিটার বাজায় তরুণ। 

কবি অর্ঘ্য দে 
চুঁচুড়া, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ 





আলোলিকার কবিতা 

অবাধ্য স্বপ্নেরা 

আমিত্বের আঁশটে গন্ধ মেখে 
পুড়ছি প্রতি সায়াহ্নে 
আমার একলা ক্ষত, এলোমেলো চিন্তা
যেন দিক হারানো পাখির নিশ্চুপ ব্যর্থতা!
উষ্ণতা নেই প্রেমে, উপবাসী মন

তোমার ক্লোরোফিল বুকে অবাধ্য স্বপ্নের উঠোন
তবু ব্যাকরণ মানে না
কেঁপে ওঠা অহল্যা শরীর

বৃষ্টিস্নাত শালিকের মত গা ঝেড়ে উঠে বসি
উন্মত্ত অশ্বের আঘাতে ছিন্নভিন্ন স্বপ্নের পাপড়ি,
দেখি ভাবনারা পড়ে আছে ধূসর বিছানায়।

শীতল নির্জনতায়
নক্ষত্রের মত চুপ তুমিও

কবি আলোলিকা 
উল্লাস, বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ 





শ্রাবণী গুপ্ত'র কবিতা 

প্রশ্ন 

আমি কি তোমার কাছে চেয়েছি শুদ্ধতর আলো!

অথবা শোকের অজুহাতে গেছি কি নিবিড়ে নেমে
তত, যতটা গহীনে গেলে ভিন্নতর তোমায় জানা যায়,গাছের শিকড়ে নেমে যেভাবে নিজেকে চেনে
পুন্যবতী জল!

আমি কি তেমন করে আলেয়াপ্রবাহে দিয়েছি ভাসিয়ে, যেভাবে আলোররেখা ভেসে যায় অনন্তের টানে…

তবে কেন মানুষীর কাছে সমূহ অলীক কথা রাখো
তবে কেন লিখে যাও ব্যর্থতার এমনতর নাম!

কবি শ্রাবণী গুপ্ত 
তারাবাগ কোয়ার্টার, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ




যাজ্ঞসেনী গুপ্ত কৃষ্ণার কবিতা 

যুদ্ধক্ষেত্র - এক

দিনের কুঁড়িগুলো ফুটে ওঠার আগেই
পেট খসা নাজায়েজ বাচ্চা সন্ধ্যের কুয়ায়।
আমি কোনো যাচনায় না গিয়ে 
পুরোনো ট্রেঞ্চের গায়ে হেলান দিয়ে 
আঙুলের বারুদ কামড়ে রাষ্ট্রীয় জায়েজ খুঁজি, খুঁজি কার্তুজের খোলে লেগে থাকা
সৈনিকের আপাদমস্তক  বাধ্য নফর। 
আজও অদূরে ঘাসের উপর টাটকা রক্তের অপরাধ, 
খুনের পরে  চাকুর রক্ত মুছে গেছে ঘাসে
পরিপাটী খাপ ভরে পড়ে আছে ভরা পেটে

যুদ্ধক্ষেত্র - দুই 

সব ব্যথা নিভিয়ে যদি ঘুমোনো যেত একঘুমে ইহকাল -

১২ টা ৫৭য় শেষবার সাইরেন বেজে যায়...
মাথার ভেতর চাঁদের দুপিঠ। একপিঠে  টাঁড় মাঠে শববাহী গাড়ি অপেক্ষারত, অন্য পিঠে শান্তিরক্ষকের কালো ভ্যান ; 
নির্দেশ আসে পালানোর -
পালাই বা না পালাই দুদিক অমোঘ  

শেষমেশ আকাশরথ রওনা দিলে 
মাটিতে চাকার দাগে দ্বিতীয়বার বারুদনখর - এতটাই ছিল হত্যালিপ্সা

অথচ আমার মাত্র  অন্ধগলি ঘুরে দু-চারখানা দানাপানির আশা
২৬/৪/২২

কবি কৃষ্ণা মালিক 
সেহারা বাজার, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ 




নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

  • আগস্ট (3)
  • জুলাই (22)
  • জুন (8)
  • নভেম্বর (15)
  • অক্টোবর (5)
  • সেপ্টেম্বর (81)
  • আগস্ট (66)
  • জুলাই (55)
  • জুন (56)
  • মে (57)
  • এপ্রিল (46)
  • মার্চ (15)
  • জানুয়ারী (14)
  • ডিসেম্বর (73)
  • নভেম্বর (103)
  • অক্টোবর (97)
  • সেপ্টেম্বর (101)
  • আগস্ট (120)
  • জুলাই (88)
  • জুন (76)
  • মে (63)
  • এপ্রিল (11)

🔴বিজ্ঞপ্তি:

পাঁচ মাসের বিরতি কাটিয়ে আবার ও ফিরছি আমরা। খুব শীগ্রই আসছে আমাদের প্রত্যাবর্তন সংখ্যা।

অনুসরণ করুণ

এক মাসের সর্বাধিক পঠিত পোস্টগুলি:

  • শেষ শোকসংগীত ~ গোবিন্দ মোদকের কবিতা
  • দুটি কবিতায় ~ গৌতম কুমার গুপ্ত
  • ব্রাত্য ~ বিদ্যুৎ মিশ্র'র কবিতা
  • দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প
  • আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা
  • গুচ্ছ কবিতায় ~ অসীম মালিক
  • সুমিত রায়ের গল্প
  • সে প্রেম পবিত্র~ প্রেমাংশু শ্রাবণের কবিতা
  • সুব্রত মাইতির কবিতা
  • তিনটি কবিতায় ~ রাগীব আবিদ রাতুল

বিষয়সমূহ

  • Poetry speaks 2
  • অণু কথারা 21
  • আবার গল্পের দেশে 8
  • উৎসব সংখ্যা ১৪২৭ 90
  • একুশে কবিতা প্রতিযোগিতা ২০২১ 22
  • এবং নিবন্ধ 3
  • কবিতা যাপন 170
  • কবিতার দখিনা দুয়ার 35
  • কিশলয় সংখ্যা ১৪২৭ 67
  • খোলা চিঠিদের ডাকবাক্স 1
  • গল্পের দেশে 17
  • ছড়ার ভুবন 7
  • জমকালো রবিবার ২ 29
  • জমকালো রবিবার সংখ্যা ১ 21
  • জমকালো রবিবার ৩ 49
  • জমকালো রবিবার ৪ 56
  • জমকালো রবিবার ৫ 28
  • জমকালো রবিবার ৬ 38
  • দৈনিক কবিতা যাপন 19
  • দৈনিক গল্পের দেশে 2
  • দৈনিক প্রবন্ধমালা 1
  • ধারাবাহিক উপন্যাস 3
  • ধারাবাহিক স্মৃতি আলেখ্য 2
  • পোয়েট্রি স্পিকস 5
  • প্রতিদিনের সংখ্যা 218
  • প্রত্যাবর্তন সংখ্যা 33
  • প্রবন্ধমালা 8
  • বিশেষ ভ্রমণ সংখ্যা 10
  • বিশেষ সংখ্যা: আমার প্রিয় শিক্ষক 33
  • বিশেষ সংখ্যা: স্বাধীনতা ও যুবসমাজ 10
  • ভ্রমণ ডায়েরি 1
  • মুক্তগদ্যের কথামালা 5
  • রম্যরচনা 2
  • শীত সংখ্যা ~ ১৪২৭ 60

Advertisement

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

মোট পাঠক সংখ্যা

লেখা পাঠাবার নিয়মাবলী:

১. শুধুমাত্র কবিতা, মুক্তগদ্য অথবা অণুগল্প পাঠাবেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য বিষয়ক লেখা সম্পূর্ণ আমন্ত্রিত। ২. লাইনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ৩. লেখা মেইল বডিতে টাইপ করে পাঠাবেন। ৪. লেখা মৌলিক ও অপ্রকাশিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্য কোনো ব্লগ, ওয়েবজিন অথবা প্রিন্টিং মিডিয়ায় প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ৫. মেইলে আপনার লেখাটি সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত, কথাটি উল্লেখ করবেন। ৬. লেখার সাথে আবশ্যিক ভাবে এক কপি ছবি ও সংক্ষিপ্ত ঠিকানা পাঠাবেন।  ৭. লেখা নির্বাচিত হলে এক মাসের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে। এক মাসের মধ্যে কোনো উত্তর না এলে লেখাটি অমনোনীত ধরে নিতে হবে। ৮. আপনার লেখাটি প্রকাশ পেলে তার লিঙ্ক শেয়ার করাটা আপনার আবশ্যিক কর্তব্য। আশাকরি কথাটি আপনারা মেনে চলবেন। আমাদের মেইল- hridspondonmag@gmail.com
blogger-disqus-facebook

শান্তনু শ্রেষ্ঠা, সম্পাদক

আমার ফটো
পূর্ব বর্ধমান, India
আমার সম্পূর্ণ প্রোফাইল দেখুন

সাম্প্রতিক প্রশংসিত লেখা:

সুজিত রেজের কবিতা

সুজিত রেজের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন

© হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন। শান্তনু শ্রেষ্ঠা কর্তৃৃক পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে প্রকাশিত।

Designed by OddThemes | Distributed by Gooyaabi Templates