
সে এক একা নির্জনতা
সে এক একা নির্জনতা!নিঃসীম দ্বীপের মতো।যেন মাঝ সমুদ্রের জল শান্ত অঞ্চল!একা এবং একার মতো।চেয়েছিলাম বিরহী অভিমানের মতো নির্জনতা!ভোরের রোদ্দুরের মতো নির্জনতা পেলাম কই!শহরের প্রকষ্টে প্রকষ্টে ঘুণ পোকা।কুরে কুরে খেয়েছে সমস্ত নির্জনতা।সমস্ত সম্বন্ধ,সম্পর্ক,সাহচার্যগুলো গনগনে চিৎকার ঝগড়াতে বারুদ ঠাসার মতো,কেবল একটু আগুন তাহলেই দাবানল।বনে জঙ্গলেও নেই আমার ব্যাভিচারের মতো নির্জনতা।সেখানে গাছচোর, মধুচোর আর শিয়ালের হুক্কা-হুয়া।শিকারীর ফাঁদ পেতে বসে থাকার মতো বা সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার আগের মুহূর্তের স্তব্ধতার মতো নির্জনতা চেয়েছিলাম।কিন্তু!ভয়ঙ্কর কিচির মিচির পৃথিবীতে আমরা!
কাল রাতে সমস্ত হৈচৈ এর কবিতাগুলোকে জলের বালতির মধ্যে ডুবিয়ে দিয়েছি।সারারাত ওদের মাথা ঠাণ্ডা হোক।সকালে উঠে যখন দেখব-অক্ষরবৃত্ত দলবৃত্ত নিটোল বরফের মতো নির্জন!কাব্যধ্যান ছেড়ে আশ্রম থেকে বেরিয়ে এসে কৃত্তিবাস আমার মাথায় হাত রাখবে।জীবনানন্দ একবার বাঁকা চোখে তাকাবে ঠিক বসন্তের রোদ ঈষৎ বেঁকে যেভাবে পড়ে কিশোরীর গালে।আমি তখন নিরব নির্জনে সঙ্গমে যাবো।সঙ্গমের শেষ শীৎকারে যে নিরবতা নিয়ে অবনত হয় দুটি মানুষ একে অপরের প্রতি,ঠিক সেই নিরব নির্জনতা নিয়ে আবার ভোরের রোদে শিউলির মালা গাঁথবে আমার অক্ষরবৃত্ত দলবৃত্তরা।
এক কাপ গরম কফির ধোঁয়ার নির্জনতা নিয়ে আমি হোসে সারামাগোর “ব্লাইন্ডনেস”বা মার্কেসের “লাভ ইন দি টাইম অফ কলেরা” মহামারীর চূড়ান্ত উপন্যাস পড়ব আমার ইজিচেয়ারে নির্জনতার গায়ে হেলান দিয়ে।অবশ্য মাঝে মাঝে আমার টোলের পন্ডিত ঠাকুরদার হুঁকোটা যেটা বাবা যত্ন করে স্মৃতির মাদুলি করে রেখেছে,সেটাতে সুড় সুড় টান দেব আর ভাবব-“কবিতা কখন কবিতা হয়ে ওঠে- এই মেঘাচ্ছন্ন প্রশ্নটা কবিতা পাঠকদের কাছে প্রতারণা ছাড়া আর কি,এই প্রশ্নটাই মাঝে মাঝে ধূসরতার দিকে ঠেলে দ্যায় কবিতা পাঠকদের।আর “মাল্টিডাইমেনশনাল ভাবুক” এটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আধো ঘুমে দেখব জীবনানন্দ জেব্রাক্রসিং পেরোচ্ছে।আর জেব্রাক্রসিংটা নির্জনতা বাড়াচ্ছে নিরবতা বাড়াচ্ছে, নৈঃশব্দ্য নিয়ে ট্রামটা এগিয়ে আসছে,এগিয়ে আসছে ধান খেতের ইঁদুরের কুঁইকুঁই,প্যাঁচার নির্জন চিৎকার ট্রাম লাইনে আছড়ে পড়ল।ট্রাম লাইন জুড়ে লাশকাটা ঘরের রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে – হঠাৎ তন্দ্রা ভেঙে দেখি সিলভিয়ার বিষণ্ণ অবসাদ আমার ইজিচেয়ার ঘিরে আমার সর্বাঙ্গ ঘিরে!আসলে আমি তখন বরফ শীতল মৃত্যুর নির্জনতার অন্তরঙ্গ সঙ্গমে!
0 Comments