দেবজিৎ সাহা🔸পূর্ব বর্ধমান🔸
পার্কের ঐ কৃষ্ণচূড়া গাছটা সিধুর খুব পছন্দের জায়গা।যখনই আসে নবনীতা কে নিয়ে ঐ গাছটার নীচেই সিধু বসে।পলিটিক্যাল সায়েন্স এ মাস্টার্স সিধুর সাথে চাকরির কোচিং নিতে গিয়েই আলাপ
সোসিওলজির এম এ প্রথম বর্ষের ছাত্রী নবনীতার।সিধুর মধ্যে একটা প্রতিবাদী ভাবমূর্তিই নীতাকে আকৃষ্ট করেছিল। সিধুর ভাবনা চিন্তাকে সে যথেষ্ট মর্যাদা দেয়। কিন্তু সিধুর একটা কিছু না হলে সম্পর্কের বৃত্তটা পূর্ণ হতে পারছে না।সিধু লড়াই করছে কিন্তু এই ব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে অন্ধকারে প্রতিদিন একটি লক্ষ্যভ্রষ্ট ঢিল ছোড়ার মতোই সমস্ত প্রচেষ্টাই বিফল হচ্ছে। এদিকে নীতার ও তো সময় এগোচ্ছে।পড়াশুনা দিয়ে সময় আটকে রাখা হচ্ছে। নীতার বাবা উচ্চপদস্থ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী সুতরাং যে কোনো মুহূর্তে ভালো দাম দিয়ে মূল্যবান রত্ন কেনা তার কাছে কোনো ব্যাপারই নয়।মেয়েকে বি. এড করিয়েই এসব ভাবনায় লীন হবে,এই ভাবনাই ভেবে রেখেছে। তাই নীতা ও সিধুর হাতে তিন বছরের এক সুযোগ, যে সুযোগে সমাজ বিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান একযোগে এই লড়াইয়ে ।
আজকে পার্কে এসেই সিধু নীতাকে বললো জানো আমাদের পরিণতি মনে হয় ঐ বাজ পড়া নারকেল গাছটার মতোই হবে ।আমরা দাঁড়িয়ে থাকলেও আমাদের সজীবতা থাকবে না। নীতাও কাঁদো কাঁদো হয়ে এক অশনিসংকেত যেন দেখতে পাচ্ছে।যাই হোক একথা ওকথা বলতে বলতে ওরা হেঁটে এসে পড়লো ঐ লাল কৃষ্ণচূড়ার নীচে। যেখানে লাল ফুল ছড়িয়ে রয়েছে দুই জনের বসার সেই জায়গাটায়।ওখানে বসে ঐ লাল গাছটার দিকে তাকালে ওরা যেন বাড়তি শক্তি পায়।গাছটির নীচে বসে নীতার চোখের জল গাল বেয়ে নামতেই সিধু বলে উঠলো না তুমি কোনোদিন আমার থেকে আলাদা হবে না ।আমি পারবোই ।আমাকে পারতেই হবে। টুপটাপ কৃষ্ণচূড়ার ঝরে পড়া সেদিনের জন্য এক আশার সঞ্চার করে দুই অসহায় হৃদয় কে বেশ কিছুটা রসদ দিলো। মাঝে বেশ কিছুদিন ওদের দেখা হয়নি।মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়েছে।প্রতিদিন বিকেলে কালবৈশাখীর ঝড় বৃষ্টি,তাছাড়া নীতা চারদিন ছিল না।কোলকাতায় এক আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল।এক প্রকার নিমরাজি হয়েও তাকে যেতে হয়েছিল।কাজেই প্রায় এক সপ্তাহ পরে আবার আজ দেখা হবে।সকাল থেকেই বেশ একটা উদগ্ৰীব ভাব উভয় দিকেই।বিকেল হতে না হতেই সাইকেল নিয়ে দুজনেই হাজির।আজ নীতাকে বেশ সুন্দর লাগছে।একটা কালো বাটিকের চুড়িদার ওর পড়নে।সিধুর সেই সাদামাটা পাঞ্জাবীটা।পার্কে ঢুকে ওরা তো অবাক ।গত দুদিনের ঝড় বৃষ্টিতে অনেক গাছই উপড়ে গেছে।অনেক গুলির ডালপালা ভেঙে গেছে।বোঝা যাচ্ছে এরা লড়াই করতে পেরেছে তাই টিকে আছে।হঠাৎ দুজনেই মনে অজানা এক আতঙ্ক অনুভব করলো।এতদিন পর দেখা হয়েও যেন কথা বলতে ভালো লাগছে না।হাঁটতে হাঁটতে ঐ খানে সেই কল্পতরু কৃষ্ণচূড়ার কাছে। কিন্তু কোথায় গোড়া থেকে পুরোপুরি উপড়ে গেছে গাছটি।ছেঁড়া লাল ফুলের পাপড়িতে চারিদিক ভর্তি।খানিকক্ষণ ওরা দুজনেই স্থির, যেন ওদের বন্ধনের শক্তি আজ শিথিল হয়ে পড়ছে। আজ আর বসতে ইচ্ছা করছে না। ওদের স্বপ্নকে শক্তি দেবার একমাত্র সম্বল আজ ভূলুণ্ঠিত।এক অজানা দুঃখে ভরাক্রান্ত হৃদয়ে সিধু এগোতেই নীতা দৃঢ় ভাবে সিধুর হাত জাপটে ধরলো। কৃষ্ণচুড়ার শিকড়টা কিন্তু মাটিতে এখনো লেগে আছে ।
0 Comments