হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা



চার অক্ষর

দু অক্ষর চার অক্ষর এত তার তেজ
তার কাছে সভ‍্যতার সংকট
শ্রম ক্লান্তি সব নিছক মেসেজ
তার পাশে দাঁড়িয়ে একদিন জ‍্যোৎস্না একেছি
অস্থির বাতাসে অশরীর পুড়েছি
চুপি চুপি, তার কাছে
চিরকাল মূর্খ হয়ে আছি
যেন আলোবরফের পাহাড়
গড়েছি লিখেছি ফের নতুন করে আকাশ গঙ্গার দেশ,যার ভেতরে আগুন বাহিরের জের
আরও গেলে ধুলোবালি,ছাই
তার পর যেতে যেতে অভিনয় অভিযোগ সব কিছু স্থির, বিশালাকার সফলতা তুমিও অধীর...

অন্তিম প্রবাহ

যদি চাও সবটুকু দেবো ঢেউ হয়ে সুর হয়ে কদমগাছ হয়ে যেমন লক্ষীছাপ অঞ্জলি তুলে দেয়,সূর্য যেমন অস্ত যেতে যেতে জ্বলে উঠে
কেমন করে হলো এসব?কেমন করে ?
তুমি কি জানো না অন্তিম প্রবাহ কাকে বলে ?
হিমযুগ ঘেঁটে আজও হাড়গুলি নড়ে
যেন শকুনির পাশা যেন সভ‍্যতার পাঁচটি মুন্ডু
বিশ্বাসের উলুখড় নড়ে
বুকের ভেতর সর্পচিহ্ন 
মেসেঞ্জারে আর কি কি ছিল
টুইটারে ইনস্টাগ্রামে...বলোনি তো আগে...

যমুনা তো ছিল না

ছোটবেলায় লেখালেখির অভ‍্যাস ছিল ?
স্কুল বাংক করে সিনেমা দেখার ?

ছিল ? 

জানলায় পর্দা উড়ে গেলে হাওয়ায় হাওয়ায়
অন্যের ব‍্যালকনিতে তাকানোর অভ‍্যেস
ছিল নাকি !
তাহলে কেস তো জন্ডিস ই ছিল ব্রো...

তুমি নি:শ্বাসের বায়ু
তুমি উদ্ধারের আঙুল
তুমি আমার ঘাতক
তুমিই আমার প্রাণ
বাই ডিফল্ট স্বপ্নে এসব বলার অভ‍্যেস ও ছিল
তাহলে...

হোলির দিন আবীর টাবির
কিংবা স্বরস্বতী পুজোর রাতে অন্ত‍্যাক্ষরী
...জনান্তিকে বলে রাখি, তখন তো ডেট ফেট ছিল না...
ভ‍্যালেনটাইন ডে ফেও না...

আজ এতদিন পর চোদ্দো তলায় ল‍্যাপটপের
সামনে তবে কেন, তবে কেন বৌদ্ধ যুগের ভাঙা
মূর্তির মতো নি:শব্দ সংকেত
অঝোর ধারায় ধুয়ে যাচ্ছে
যমুনা তো ছিল না
সোনার হরিণ, বকুল গাছ...
কৃষ্ণচূড়া?কদমগাছ না হয় ছিল ,ছিল না ?

দয়ার সাগর

ছিটেফোঁটা বাংলা পড়িনি তবু এই মুখে লেগে আছে বর্ণপরিচয়,বিদ‍্যাসাগর এটাই তোমার জয়
প্রবল নৈরাজ্যের মাঝে এখনো ব‍্যাকরণ কৌমুদী
চাল ডাল নুনের যোগান,আমার জন্য খরস্রোতা
নদী তুমি যে দয়ার সাগর কত কাজ সেখানে বিধবা বিবাহ কিছু বেশি কিছু কম
চারিদিকে মুগ্ধ ফুল চারিদিকে বকুল
তোমার দুশো বছর পূর্তিতে তাই এই পুণ্য ধামে আমরাও হাটি দুদশ কদম...

বোঝাপড়ার জন্য

শুধু এই বোঝাপড়া টুকুর জন্য তুমি জন্মভূমি
নাড়ি ছিড়ে এনেছো পৃথিবীতে, জননী
সুখ দু:খ ঘৃণা থেকে সুখবর বিযুক্ত করেছি বহু দিন, আমি এখন নিজের রক্তে দেখি বিষ
পাপস্পৃহা,অষ্টপ্রহর প্রার্থনা করি
এনোনা আর কখনো এনোনা আমায়
এই মরা পৃথিবীর শরীরের লতাতন্তু খুলে দেখেছি
হতাশা তার ও প্রবল
শুধুমাত্র প্রকাশটুকু নেই
কে থাকবে আর কে থাকবে না
এইসব নিয়ে তারো বেড়েছে দেনা
বিগত সময়ের কাছে আগামীর
জেনেছি বহু পরে একটি ধুলিকনা
সরাবার সাধ‍্য নেই কারো,যোগ‍্যতা তো কোন ছার,মাই ফুট...

কতদিন চেয়েছি

কতদিন চেয়েছি তোমার হাতে ভোরের রজনীগন্ধা তুলে দেব
তুলে দেব আস্ত একটা বিকেল
রাইনো মারিয়া রিলকে
যে বিকেলে তুমি পড়বে ডুইনো এলিজি...
পবিত্র চোখের জল আমি তুলে নেবো দুহাতে
আমি যত বৃষ্টি হই 
তুমি তত সাগর,আধার 
নদী নালা পার হয়ে রোদ্দুর চলে গেছে
কবেই ছায়া নিয়ে বসে আছি দুজনায়
ভেজা ঠোঁট ক্রমশঃ অস্থির
শূন্য এসে খেয়ে নেয় সব...

ঘরে ফেরার সময়

বহু দিন মানুষের কাছে কাটালাম এবার ঘরে ফেরার পালা,আজ আমি শাল সেগুন
সুন্দরী গরান লতাগুল্মের সঙ্গে কাটাবো
পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যাস্ত দেখবো
কতদিন আমাদের নতুন পুকুরের জলে ডুব দিয়ে গেড়ি গুগলি প‍্যাকাল মাছ তুলে আনা হয় নি
চিৎসাতার ডুবসাতার সব অপেক্ষা করে আছে
নির্লিপ্ত অথচ নিবিড়
অযাচিতভাবে হরিণ শিশুর দল পায়ে মুখ ঘষছে
ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমার দুচোখ
আর চন্দ্রমল্লিকার সংসার জুড়ে আছে শুধুই লাবণ্য,  ডাকাত মেঘগুলো সব

এদিকেই আসছে, হৈ হৈ বৃষ্টিদৃশ্যের মাঝে মৌনমিছিল, বুঝলাম এই হলো আমার সঠিক পথ,এতদিন ভুলেছিলাম এই আমাদের ঘরবাড়ি
এতদিন ভুল পথে হেঁটে গেছি
সুরা সুন্দরীদের কাছে

কবি হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়
   মালঞ্চ, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান



























0 Comments