প্রত্যাবর্তন ~ রবীন বসুর অণুগল্প


রবীন বসুর অণুগল্প 
প্রত্যাবর্তন 

আজ আবার।আবার তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। মাঝরাতে  ওয়াশরুমে শাওয়ারের তলায়  দাঁড়ায় মোহনা। অবিরল জলধারায় সে কিছু ধুয়ে ফেলতে চাইছে। জালি দিয়ে ঘসে ঘসে গা থেকে কী যেন তুলছে। বা তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই সেই ঘৃণ্য অবলেপ মালিন্য সে তুলতে পারছে না। পরাজয়ের গ্লানি একরাশ লজ্জা নিয়ে তাকে কুঁকড়ে দিচ্ছে। শিরশির ঘৃণায় সারা শরীর বমি করতে চাইছে।

দু' বছরের বিয়ে।স্বামী সুপ্রতীম পেশায়  মনোরোগ চিকিৎসক।আন্তর্জাতিক জার্নালে গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল লেখেন। সভা-সমিতি চ্যানেলে মতামত রাখেন।অথচ বাড়ি ফিরে মনের হদিস তো দূরের কথা,শারীরিক অসুস্থতাও গ্রাহ্য করেন না।প্রতি রাতে বন্য মহিষ বা বরাহের মত সুঁচলো শিং দিয়ে শিকারকে যেন ছিন্নভিন্ন করে এক আদিম ভোগে তৃপ্ত হয়। 

য়্যুনিভারসিটির সহপাঠী অলোকেশের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করেছে দু'বছর। ও পিএইচডি করতে চলে গেল জার্মানি। মোহনাও চাকরির পরীক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। শেষমেশ একটা বেসরকারি ব্যাঙ্কে ঢুকে অলোকেশকে মেল করেছিল। ও জানিয়েছিল তার এখন দেশে ফেরার কোন ইচ্ছেই  নেই। আপাতত পোস্ট ডক্টরেট করছে। পরে এখানেই চাকরি। বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। মা চাইছিল মোহনার বিয়েটা হয়ে যাক। নেটে নানা ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট সার্চ করে বাবা-মা তার জন্য পাত্র পছন্দ করেছিল।একমাত্র ছেলে, নিজেদের বনেদি বাড়ি। প্রফেসর-ডাক্তার। সুদর্শন। মায়ের পীড়াপীড়িতে বিয়েতে মত দিয়েছিল।

কিন্তু বিয়ের নামে প্রতিনিয়ত এই বলাৎকার,এই গার্হস্থ্য নরক তার আর সহ্য হচ্ছে না। লজ্জা আর অপমানে সে কাউকে বলতেও পারছে না। বাবা-মাকে তো নয়-ই। এখন দেয়ালে পিঠ ঢেকে গেছে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মোহনা ড্রয়িংয়ে বসে ছিল কতক্ষণ।শীতার্ত এক অনুভূতি তাকে অন্ধকার সুড়ঙ্গের উষ্ণতায় ডাকছে। সে প্রাগৈতিহাসিক জীব হয়ে হাঁটু ভেঙে হামাগুড়ি দেয়।

একসময় ভোর হয়। পাখি ডাকে। মহিমা তার মনের মধ্যেকার শীতার্ত রক্তাক্ত পাখিটাকে মুক্তি দিতে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ল। বাইরে উজ্জ্বল আলো। আঁচলটা গায়ে জড়িয়ে নিল ভালো করে।

কলিংবেল বাজল। এত সকালে কে এল? সীমাদেবী দরজা খুলে দেখেন, মেয়ে মহিমা। 

"কীরে, তুই? এত সকালে !"

"আমি ফিরে এলাম, মা। একেবারে।"

   সাহিত্যিক রবীন বসু
১৮৯/৯, কসবা রোড, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ








1 Comments