হৃদস্পন্দন

  • Home


  • Download

  • Social

  • Feature


হৃদস্পন্দন সম্পর্কিত কিছু কথা 
অনিন্দ্য দত্ত 

খুব বেশিদিন হয়নি এই ওয়েব ম্যাগাজিন  বার হচ্ছে নেট দুনিয়ার অলীক পাতায়। বছরখানেক হবে বোধহয়।কিন্তু প্রথম থেকেই এই পত্রিকা শেরউড বনে লিটিল জনের মতো,বড় বড় রবিনহুড পত্রিকার চোখে চোখে তাকিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে,  
"কেউ আমাকে দুর্বল ভেবোনা,আমি এসেছি,আমি আছি।"

আর কিছু দিন পরেই শারদ উৎসব।
বাঙালির জীবনের সবচেয়ে আদরের, সবচেয়ে আগ্রহের জিনিস,যখন ঘর থেকে  মানুষ বাইরে যায়,বাইরে থাকা আদরের মানুষ ফিরে আসে ঘরে। সেই মহামিলনের ক্ষণে,বাঙালি তার নানা জমে থাকা কথা, প্রিয়জনের সাথে বিনিময় করতে চায়,তাই সেইসব কথা ফুটে ওঠে ছাপার অক্ষরে,ক্ষুদ্র,বিরাট নানা পত্রপত্রিকায়।
কিন্তু,গত প্রায় দুই বছরের উপর বিশ্বজুড়ে  চলছে এক অতিমারীর সন্ত্রাস,যাতে বলি হয়েছেন চেনা অচেনা কত না প্রিয় মানুষ,  আজ এই সংক্রমণের প্রকোপ কমে এলেও, ভয়ের ঢেউ এর পর ঢেউ বার বার ধাক্কা মারছে আমাদের। উপদ্রুত হচ্ছে আমাদের সুজলা সুফলা শান্তিপূর্ণ উপকূল। 

মোরা,তাইতে কি ভয় মানি, 
জানি বন্ধু জানি
তোমার আছে যে হাতখানি।
আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার তরণী,তার সুযোগ্য কান্ডারী সম্পাদক শান্তনুর হাত ধরে ঠিকই নোঙর করবে সু- সাহিত্যের সুরম্য উপত্যকায়।
কারণ সেই তরণী যে আমাদের স্বপ্ন  দেখিয়েছে,এক নতুন প্রতিশ্রুত দেশের, আমাদের সবাইকার হৃদস্পন্দন এ অনুরণিত হয়ে উঠেছে সেই যাত্রাপথের  আনন্দগান।

সূচিপত্র:

কবিতা-

তৈমুর খান ~ সুজিত রেজ~ উদয়ন চক্রবর্তী ~ প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ ~ দীপক জানা ~ দ্রোণ মুখোপাধ্যায় ~ গৌতম কুমার গুপ্ত ~ অভিনন্দন মাইতি ~ বিমল মণ্ডল ~ নাসিম বুলবুল ~ অসীম মালিক ~ অমিত চক্রবর্তী ~ অসিকার রহমান ~ প্রেমাংশু শ্রাবণ ~ দীপক বেরা ~ নিমাই জানা ~ সুধাংশুরঞ্জন সাহা ~ কাঞ্চন রায় ~ জয়শ্রী সরকার ~ পলাশ দাস ~ লক্ষ্মণ দাস ঠাকুরা ~ অনুশ্রী যশ ~ অনঞ্জন ~ শ্রীমন্ত সেন ~ হামিদুল ইসলাম ~ বিকাশ চন্দ ~ অসীম বিশ্বাস ~ শুভ্রাশ্রী মাইতি ~ প্রনবরুদ্র ~ লিটন শব্দকর ~ মানস চক্রবর্ত্তী ~ চিত্তরঞ্জন গিরি ~ শর্মিষ্ঠা ঘোষ ~ সায়ন্তি হাজরা ~ খায়রুল ইসলাম ~ অশোক কুমার দত্ত ~ সুমনা ভট্টাচার্য্য ~

গুচ্ছ কবিতা-
             মহম্মদ সামিম ~ দালান জাহান

অনুবাদ কবিতা-
               অভিষিক্তা ঘোষ

অণু কবিতা-
           অনন্য বন্দ্যোপাধ্যায়

মুক্তগদ্য-

বিকাশ রঞ্জন হালদার ~ অন্তরা দাঁ

প্রবন্ধ- 
          সৌম্য ঘোষ

নিবন্ধ-
   বারিদ বরন গুপ্ত ~ সুদীপ ঘোষাল

ভ্রমণ কাহিনি -
              অদিতি ঘোষ দস্তিদার

রম্যরচনা- 
            প্রবীর দে

বড় গল্প-

সিদ্ধার্থ সিংহ ~ ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়

ছোটগল্প-

পাভেল ঘোষ ~ শৌভিক চট্টোপাধ্যায় ~  সুষ্মিতা রায়চৌধুরী ~ সৌমিত্র চৌধুরী ~ হেমন্ত সরখেল ~ নিশিকান্ত রায় ~ শর্মিষ্ঠা ~ পীযূষকান্তি সরকার ~ আবীর গুপ্ত ~ দেবদাস কুন্ডু ~ শুভ্র শোভন রায় অর্ক ~ অমৃতা বিশ্বাস

অণুগল্প-

রবীন বসু ~ বিশ্বদীপ ঘোষ ~ সমাজ বসু ~ দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় ~ মুক্তি দাশ ~ মিনতি গোস্বামী

চলচ্চিত্র সমালোচনা-
                          অভিষেক ঘোষ
বিশেষ রচনা-
             সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

*প্রচ্ছদ শিল্পী: মানসী হাজরা 



তৈমুর খানের দুটি কবিতা 

১.

বাবার ক্ষেত 

বাবার ক্ষেত পাহারা দিচ্ছি 
এই রাত নেমে আসছে 
রাতের বিষণ্ণ ডানা 
ঢেকে দিচ্ছে মৃদু প্রদীপ 
শস্যগুলো হাত বাড়াচ্ছে : 
কোলে নাও! একবার আদর করো! 

চারিদিকে কুহক ছড়িয়ে পড়ে 
ধ্রুব তারাটির চোখে চেয়ে থাকে বাবা 
আমিও সারারাত জেগে মাটির উত্তাপ চাই 
মাটির শরীরে...

২.

কেরোসিন 

কেরোসিন ফুরিয়ে গেছে 
দৈন্যের লম্ফু নিভে যাবে 
আলোতে কী দেখতাম আমি 
অন্ধকারে কী দেখব তবে ? 

হা করা রোশনি সব 
কেউ কারো কাছেই থাকে না 
ডোমনির মতো দেহ দেয় 
দেহে বিদ্ধ করার মতো লিঙ্গ কই ? 

পেছন ফিরেই গেছি 
দূর্বাজলে শ্যামর়াধা খই 
তাই নিধি 
নিধিকে বসাই কোলে 
কেরোসিন নেই বলে 
মনে মনে রোদ 

সব জানে কেউ কেউ 
হাঁসের গলায় ডাকা ভাষা 
শুনতে পাই 
শুনেও বুঝি না 
নষ্ট সব অর্থ এর 
নির্জনে বসাই... 

কবি তৈমুর খান রামরামপুর (শান্তিপাড়া), বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ






মহম্মদ সামিমের গুচ্ছ কবিতা

করতলে রাখো মেঘ

কত শিহরন ছিল,হিম হিম শরতের রাত
স্মৃতি এক কোলাহলময় আলোর বাহার

বারবার জিতে এসেছ আমার কাছে
ধনুক নামিয়ে রেখে নদীর জলের পাশে
শান্ত ছায়াবীথির কাছে এসে বসো,তন্ময় 
ছেঁড়াখোঁড়া ডানা গুটিয়ে আহত বুলবুলিটি
মনমরা আলোর উপর ঠোঁট রাখে
হাওয়াকে নির্জন হতে দেখি
গির্জার ঘন্টা বাজে,লাজুক নৌকোখানি
মেঘের ভিতর জল ভেঙে ভেঙে পেরিয়ে যায়
মায়ার জীবন,অবসন্ন ইহজন্ম

পরবাস

ঘুম নেই চোখে। প্রবাসী জীবনের অনুক্ত রাত
জানলা দিয়ে নরম আলো আসছে চাঁদের। 
আকাশ দেখা যায় না তেমন।  
জেগে আছ তুমি আর এই শহরের নিঝুম পথঘাট,
গগনচুম্বী বাড়িগুলি পর পর সাজানো,
মিটমিট জ্বলছে, যেন জোনাকির গৃহস্থালি। 

একটি অচেনা পাখি ডাকছে কখন থেকে
যেমন ডেকেছিল শেষ বিকেলে,চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে
শেষ ট্রেনে ফিরে যাওয়ার আগে। 
বিষণ্ণ ছায়ার নীচে তুমি একা
জমানো দীর্ঘশ্বাস দিয়ে নিজের ব্যথার ভার 
কমিয়ে নিচ্ছ
ভাবছ,আপন দেশে কেউ এখনও এই হিরণ্য জ্যোৎস্নার ভিতর
একটি হলুদ পাখির ডাক শুনবে বলে অপেক্ষা করছে,আজও। 

জ্যোতির্ময়ী

এই পথে হাঁটে না কেউ
মানুষের পায়ের ছাপ নেই
মাঝে মাঝে জলের ঢেউ এসে মুছে দিয়ে যায়
ঘাসে জমে থাকা ধূসর ধুলো
শ্যাওলা হয়ে গেছে ইট,আবহমান মান্দাস 
পাথরের ফাঁকে ফাঁকে লতাপাতা ও ঝুমকো ফুল 
খড়ের কাঠামো জেগে আছে
একটি মাছরাঙা,ধ্যানের সম্রাট,চেয়ে আছে জল
দাঁড় টেনে বহু জীবনের শিরদাঁড়া 
ম্লান হয়ে নিভে এসেছে এই পথের স্তব্ধতায়

বোধন শেষে চলে গেছে সবাই
মাটির চোখ,স্থির,শক্তিরূপেন,এইসব আত্মগত করে,মোহনায়। 

সিলমোহর  

এই আসা যাওয়ার মাঝে আমরা পথিকমাত্র
পথচারী মানুষের চোখ দেখি, ঘোলাটে কুসুমের মত
বেঁচে আছে অর্ধেক, বাকিটা ঢেলে দিয়েছে সংসারে
নিদারুণ কোনও যাপনের অন্তঃস্রোতে
মাঝে মাঝে মুখোমুখি হয়ে যায় দুটি পথ
চিৎকার করে না কেউ, চুপিসারে কানে কানে বলে ওঠে —
‘কোথায় ডুবেছে প্রাণ,হে অসহায় !’

নির্জন চুম্বনের দিন শেষ
আসা যাওয়ার মাঝে দেখা হয়ে যায় আমাদেরও
অর্ধেক আয়ুষ্কাল জেনেও বাকি পথটুকু হেঁটে যায়,বিপরীতমুখী। 

মনে রেখো অরণ্য 

নিঝুম চারপাশ,আগাছায় ঢেকেছে রেলিং  
বন্ধ দরজার ভিতর চুপিচুপি আসে হৈচৈ দুপুর
মাস্টরমশাই-এর সাইকেলটি হেলানো ছিল দেওয়ালে
ছাপখানি রয়ে গেছে,যেমন থাকে প্রতিটি বিচ্ছেদে
পুরনো চাকায় লেগেছিল কাদা,ঝরে গেছে। 
কোলাহল নেই,বাসনের আওয়াজ নেই
শুভ্রা দিদিমণির নামতা মুখস্থ নেই
কতদিন ছুটির ঘন্টার দৌড় নেই

ব্ল্যাকবোর্ডের উপর জেগে আছে লাবণ্যডানা
ফয়েজ স্যার চেয়ারে বসে বসে দেখছেন,
বল্লালদীঘি প্রাথমিক বিদ্যালয়,এই দুপুরে 
নীলকণ্ঠ পাখি হয়ে উড়ে যাচ্ছে সুদূর 
নীরব চারপাশ,ঘাসের সবুজে লেগে আছে স্মৃতি

এখন ছুটি
প্রতিটি ছেলেবেলা বিভূতিভূষণের বাড়ি বেড়াতে গেছে। 

কবি মহম্মদ সামিম
পূর্ব খন্যান,খন্যান (ইটাচুনা), হুগলি





গেরস্থালি
অনুশ্রী যশ

তোমার বুকের ভেতর একটা গ্রাম আছে 
কান পেতে শুনি ... 
কারা যেন অনর্গল কথা বলে চলেছে
তাদের গেরস্থালির ঠুং ঠাং আওয়াজ 
বড্ড সংসারী করে তোলে আমায় । 

সারারাত ছলাৎ ছলাৎ জলকাটার শব্দ 
দেহাতি শ্যাওলায় ঢেকে গেছে 
খেজুর গাছের গুঁড়ি বাঁধা ঘাট 
তারই উপর কলমি লতার মতো নিঃশব্দ
 দুটি পায়ের পিছন পিছন নকশিকাঁথা আঁচল
নেমে গেল সিঁড়ি বেয়ে ... 

তোমার মুখের উপর... তোমার চোখের উপর 
তার হরিদ্রাভ আলো।

কবি অনুশ্রী যশ 
সুহারি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ








নক্ষত্রজন্ম
শুভ্রাশ্রী মাইতি

সন্ধ্যার উঠোনে বসে গল্প শোনাতেন বাবা আমাদের, নক্ষত্রের
সেসব গল্পে আলোআঁধারি আকাশের গায়ে 
সহজিয়া শিকড়ের নরম জল-মাটি স্নেহে 
মাথা তুলে দাঁড়াত সনাতনী তপোবন ছায়া, পুরাণের...

সত্যের হোমাগ্নি জ্বেলে নিশ্চল সাধনায় বসতেন রাজপুত্র ধ্রুব
পাঁচটি ঝলমলে তারাসুন্দরী আলোর আঁচল দুলিয়ে কানাকানি করত
সুন্দরী ক্যাসিওপিয়ার গালভরা অহংকারের না-মুড়ানো নটেগাছকথা।
রাজকন্যা এন্ড্রোমিডার শিকলবাঁধা বন্দীত্বে টুপটাপ
বেদনজল ঝরাতো রাতের আকাশ...
সপ্তর্ষিমন্ডলের আলোময় ঋষিরা অনন্ত ছায়াপথ বেয়ে
হেঁটে আসতেন আমাদের গল্পের আসরে ধুলো পায়ে... 

অমনি রাতের আকাশটা কখন যেন হয়ে উঠত বোনের নিকষ কালো শ্লেট
বাবার আঙুলগুলো সাদা চকখড়ি হয়ে অন্ধকারের গায়ে
একে একে ফুটিয়ে তুলতো আলোয় ফেরার গল্পকথা
গল্প শুনতে শুনতে নক্ষত্রজন্ম হত আমাদের জোছনা মেখে...


কবি শুভ্রাশ্রী মাইতি
মহিষাদল, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ





অসীম মালিকের গুচ্ছ কবিতা 

অভিযোগ

১)

অবস্থান বদলে গেলে,
আমার অভিযোগ,
তোমার মুখেও -
সমুদ্রের ফেনা।

কেবল তারিখ বদলে
ঝালমুড়ির ঠোঙায়
পুনরায় হেডলাইন হয়।

যা গণতন্ত্রের কফিনে পোঁতা
আরও একটি পেরেক।

২)

প্রচারের আলো শুষে,
যে যার পতাকা তলে দাঁড়ায়।
ঘটনার পুনর্নিমাণ হয়,
কিন্তু অভিযোগ মাতৃত্ব পায়না।

৩)

মায়ের কাছে,
ছেলের অভিযোগ গুরুত্ব পায়।
কিন্তু রাষ্ট্রের কাছে
নাগরিকের অভিযোগ সমান গুরুত্ব পায় কি !
রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়ে
প্রতিটি বাবাই কেন রাষ্ট্র নায়ক হয়ে যায়?
অশোকচক্রের দিকে তাকিয়ে
কেন বাবা হয়না !

৪)

অভিযোগ বিস্ময়চিহ্ন হলে
বুঝতে হবে
আমরা আর মায়ের শাসনে নেই।
বড় হয়েছি।
কিন্তু বড় হয়নি আঁতুড়ঘর।

তাই অভিযোগ ঘুড়ি হয়ে ওড়ে
রাষ্ট্রের হাতে।

৫)

তোমার গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ
চোখের জলে রঙিন হলে
বুঝতে হবে তুমি বিরোধী।

তখন দিনলিপির পাতায় জন্ম নেয়না,
নতুন কোনও শিরোনাম।
শুধু ভাঁজ হয়ে যাওয়া শিরদাঁড়ায়
লেখা হয় নতুন তারিখ।

কবি অসীম মালিক 
শীতলপুর, আরামবাগ, হুগলী 





পাভেল ঘোষের ছোটগল্প 
দাহ

যখন কন্ট্রাক্টরকে জিজ্ঞাসা করে জয়পুর মোড় বাসস্টপে নামলাম,গোধূলির আলো তখন ম্লান হতে বসেছে।
বাসটা চোখের আড়াল হতেই দেখি,সামনে খোলা মাঠ যেন 'সবুজ সমুদ্র'। একটা রাস্তা বাস স্টপ থেকে এঁকেবেঁকে কোনো গ্রামের ঠিকানায় অজগর সাপের মত চলে গেছে। আকাশে টুকরো টুকরো মেঘেদের দল গোধূলির আলোয় স্নান সেরে নিয়েছে কিছুক্ষন আগে। সন্ধ্যার এই মেঘগুলোকে বাবা বলতেন 'মনখারাপিয়া মেঘ'। 'আগামী আঁধার' ওদের গা থেকে আলো শুষে নিচ্ছে বলে ওরা এইসময় বড় অভিমানী থাকে।
পাখিরা ঘরে ফেরার তাগিদে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে উড়তে উড়তে নিজেদের বাসভূমিতে ফিরছে।
এই প্রাকৃতিক দৃশ্যান্তরে অবশ্য কোনো হেলদোল নেই আমার। এখানে আসাটা স্রেফ কয়েক মুহূর্তের সম্মতির ফসল।
তাও আপনাদের চুপি চুপি বলি,'খাওয়ার লোভে...!'
কি অবাক হচ্ছেন? তাহলে খুলেই বলি।

গত পরশু অফিসে বিক্রম হঠাৎ বলে বসলো,"আমি পরশু আসছি না অনিরুদ্ধ….।"
আমি কারণ জানতেই বললো,"আমার পিসেমশাইয়ের ওইদিন শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান,সারাদিন ওখানে...!"
শুনেই চোখ কান বুজে লজ্জার মাথা খেয়ে বলে বসলাম,"তাহলে তো জোর খাওয়া দাওয়া.…!"
"তা হবে..! পিসেমশাই মাছ খেতে খুব ভালোবাসতেন, তাই তিন চার রকম মাছের পদ হবে শুনেছি..."
বিক্রমের কথা শুনে আমার ভিতরের পেটুকেশ্বর জেগে উঠলো। প্রস্তাবটা নির্লজ্জের মত দিয়েই বসলাম ওকে,"তাহলে কি পরশু যাবো বিকুভাই..?"
"আসতে পারিস,আপত্তি নেই। তবে একটু পাড়া গাঁ..! মানিয়ে নিতে হবে কিন্তু.."
"রসনার তৃপ্তির জন্য আমি নরকে যেতেও রাজী..! শুধু কিভাবে যেতে হবে বল..?"
"আমাদের অফিসের সামনে দিয়েই কাটোয়াগামী বাসে উঠে কট্রাক্টরকে বলবি,জয়পুর মোড় যাবো। ব্যাস...! বাস থেকে নেমে দেখবি, সামনেই একটা  আঁকাবাঁকা পথ সোজা  চলে গেছে পিসিদের গ্রামের দিকে ...। মিনিট কুড়ি ওই পথ ধরে হাঁটলেই  গ্রামটা। নামটাও বেশ মিষ্টি...'সোনাইমুড়ি'। পথ শেষে একটা দুর্গামন্দির পড়বে। ওখানে কাউকে বলবি,রণিদের বাড়ি যাবো। ঠিক আছে.?"
এক নিঃশ্বাসে বলে গেল বিক্রম।
"কতক্ষন লাগবে যেতে?"
"ঘন্টা দেড়েক ...! অফিস থেকে টিফিন আওয়ারেই চলে যাবি। ফেরার লাস্ট বাস সাড়ে সাতটায়..! আরাম'সে বাড়ি ফিরতে পারবি..!"
বিক্রমের কথায় নিশ্চিন্ত হলাম আমি।

সেদিন থেকেই অপেক্ষা করে আজ হল সেই দিন, মানে আমার 'উদরপূর্তির মুহূর্তকথা' শুরু।
আঁধার নামছে নিঃশব্দে। তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে,তাই দ্রুত পা চালালাম।
"অনিরুদ্ধ, যাও কোথায়..?"
আমার নাম ধরে আবার কে ডাকছে..? এখানে পরিচিত কেউ যে আছে,বাপের জন্মেও তো শুনিনি।
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি,এক বৃদ্ধ। লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আমায় ইশারা করে ডেকে চলেছেন।
আলোর অভাবে ঠিকমত মুখটাও দেখা যাচ্ছে না। ঘাড়ে গলবন্ধ,মাথায় যে চুল নেই সেটা এই অনালোকিত প্রেক্ষাপটে অবশ্য বিলক্ষণ বুঝছি।
"আ... মা..য়... ড..ডা..কছেন ?"
আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম।
এটা আমার ছেলেবেলার দোষ। অযাচিত মুহূর্ত সামনে এলেই তোতলাতে থাকি।
"আর কে আছে এখানে,তুই আর আমি ছাড়া..?"
বৃদ্ধ মানুষটি খেঁকিয়ে উঠলেন।
কিন্তু আমার নাম উনি জানলেন কি করে ? শহর থেকে এত দূরে যেখানে আমার কোনো আত্মীয়স্বজনই নেই,সেখানে আমার নাম ধরে কেউ ডাকছে..! বেশ অবাকই হলাম।
কৌতূহল চেপে রাখতে পারলাম না। বলে বসলাম,"আপনি আমার নাম জানলেন কি করে..?"
"বানিপীঠ বিদ্যাপীঠে পড়তিস, তাই তো ? বড় হয়ে গেছিস, কিন্ত মুখটা একই রকম আছে..।"
এবার বৃদ্ধের গলাটা একটু মিনমিনে শোনালো। 
যা ব্বাবা..! এতো দেখছি আদ্যোপান্ত জানে...!
ফাঁদে পড়ছি না তো? রহস্যটা জানতে হচ্ছে।
"হেঁয়ালি না করে বলুন তো আপনি কে..?"
বেশ জোরে ধমকের সুরে বললাম ওনাকে।
"কি রে ....! ক্লাস এইটে গোপাল স্যারের 'রাম ঠ্যাঙানি'টা মনে পড়ছে..?"
ওঁর কথা শুনে এক লহমায় মনের মধ্যে বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে গেল। মনে পড়ে গেল বিদ্যালয় জীবনে সোনা রোদে মাখা রূপকথার মতো দিনগুলি। ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন গোপালবাবু। ছাত্র দরদী মানুষটি ক্লাসে যখন পড়ানো শুরু করতেন,আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতাম। অষ্টম শ্রেণীতে একবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম ক্লাসে। স্যার সঙ্গে সঙ্গে সেটা খেয়াল করে বলেছিলেন,"বলতো,আগের লাইনটা কি বললাম.?" সেদিন আমি আমতা আমতা করতেই জুটেছিল 'প্রবল মার'। পরে ডেকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন,"তোর কাছে এটা আশা করিনি..! আর কখনো এমন আনমনা হসনি, কেমন?" মার খাওয়ার সব দুঃখ চলে গিয়েছিল স্যারের স্নেহে। আজও মনে আছে..।
"স্যার....! আপনি?" স্মৃতির পাতা উল্টে গোপাল স্যারকে মনে পড়তেই শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে গেল।
"মনে পড়েছে বজ্জাত..? আমার এই গ্রামেই বাড়ি। অবসর নিয়ে এখানেই পাকাপাকি বাস।
তা তুই যাচ্ছিস কোথায়?"
"স্যার..., কলিগের পিসেমশাইয়ের শ্রাদ্ধ খেতে.... "
"কিন্তু এখন...? সেতো দুপুরেই সব ভুরিভোজ হয়ে গেছে...!"
"আমার অফিসে কাজ ছিল স্যার। তাই দেরী হয়ে গেল..." 
"আসতেই হতো..?" 
"না স্যার,মানে আমি একটু খেতে ভালোবাসি..."
স্যারকে সবটা খুলে বললাম আমি। 
শুনে হঠাৎ উনি চুপ করে গেলেন।
পরিবেশটায় নীরবতা যেন হঠাৎ গ্রাস করলো। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে,সেই শব্দও শুনতে পাচ্ছি। আকাশে আধফালি চাঁদ থেকে জ্যোৎস্না ঝরে পড়ছে ধানক্ষেত ও গাছগুলোর উপর। চারিদিকে যেন মধ্যযুগের বাতাবরণ।
হঠাৎ একটা অস্ফুট কান্নার আওয়াজ কানে এলো। স্যারের কাছ থেকেই যে আসছে বুঝতে পারলাম। বয়সের ভারে ন্যুব্জ স্যারের থেকে একটু দ্রুতই হাঁটছি। ফলে ওনার সঙ্গে আমার দূরত্ব বেড়ে গেছে বেশ কিছুটা। থামলাম আমি। স্যারের পাশে গিয়ে বললাম,"আপনি কাঁদছেন স্যার..?"
"ভাবছি,সবাই খাওয়া দাওয়া করতেই আসে শ্রাদ্ধে। যে মানুষটা চলে গেল,তাকে ঘিরে কোনো আফসোস কারোর চোখে মুখে দেখি না। ভাবলাম তুই অন্যরকম..! কিন্তু তুইও অনিরুদ্ধ...?"
শুনে একটু দুঃখই হলো। পরক্ষনেই মনে পড়লো বিক্রমের কথাটা,"তিন চার রকমের মাছের পদ হবে শুনেছি...."
দুঃখ তৎক্ষনাৎ ভুলে গিয়ে হাসি মুখে বললাম,"স্যার...! 'জন্মিলে মরিতে হবে/অমর কে কোথা কবে..'। খাওয়া'র সঙ্গে তাই এই ছোট্ট জীবনে আপোষ করি না..."
"নিজেকে মৃত মানুষটার জায়গায় বসা জানোয়ার..! তখন বেদনাটা টের পাবি। যে লোকটা সারাজীবন সংসারটার জন্য প্রাণপাত করলো,সে যেন বয়সের ভারে মরে গিয়ে অপরাধ করেছে...! সবাই চব্যচোষ্য গিলছে,আর রান্নার সুনাম করে যাচ্ছে..! যেন মরে গিয়ে ওদের খাবার সুবিধা করে দিয়েছে..! ছিঃ..!"
স্যার প্রচন্ড রেগে গিয়েছেন বুঝতে পারছি।স্কুল লাইফের কথা মনে পড়ে গেল। 
"স্যার, আপনি উত্তেজিত হবেন না,আমি ওইভাবে বলতে চাই নি...!"
 শান্ত করার চেষ্টা করলাম স্যারকে।
"যাঃ....যাঃ.. , পেট পুরে খেয়ে আয়..!" ওঁর কথায় রাগের সঙ্গে যন্ত্রনাটাও অনুভব করছি ।
স্যারের উত্তেজনা প্রশমিত হচ্ছে না দেখে আমি হাঁটার গতি একটু বাড়িয়ে দিলাম।
চন্দ্রালোকে সাবালক সোনালী ধানের উপর বায়ুস্রোত নদীর তরঙ্গের মত লাগছে। এই দৃশ্য পরিহার করবে,এই দুঃসাহস পৃথিবীতে আর কারোর আছে বলে আমার জানা নেই। রূপকথার রাজ্যে চলে এসেছি যেন…!
এরই মাঝে হটাৎ কানে এলো স্যারের গুরুগম্ভীর, কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আবৃত্তি। শুনেই থমকে গেলাম। গায়ে কাঁটা দিচ্ছে..! বিশ্বকবির "মৃত্যুর পরে" কবিতাটি ওনার কণ্ঠে ছাত্রজীবনেও শুনেছি দু একবার। কিন্তু আজকের অনুভূতিটা অন্যরকম। হাওয়ায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ ওনার কন্ঠ...

         "আজিকে হয়েছে শান্তি ,
         জীবনের ভুলভ্রান্তি
           সব গেছে চুকে ।
         রাত্রিদিন ধুক্‌ধুক্‌
         তরঙ্গিত দুঃখসুখ
           থামিয়াছে বুকে ।
          যত কিছু ভালোমন্দ
          যত কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব
            কিছু আর নাই ।
      বলো শান্তি , বলো শান্তি ,
       দেহ-সাথে সব ক্লান্তি
             হয়ে যাক ছাই …."
        কবিতার লাইনগুলো শুনতে শুনতে চোখে পড়লো সামনে দুর্গামন্দিরের আবছা আলো। বুঝলাম গন্তব্যস্থলে এসে পড়েছি প্রায়।
প্রথম স্তবক শোনার পরেই অদ্ভুত নীরবতা নেমে এলো।
"স্যার..,থেমে গেলেন কেন..?"
বলে পিছনে তাকাতেই চমকে উঠলাম,"স্যার আর নেই..!"
বুকের মধ্য দিয়ে  একটা হাড় হিম করা স্রোত বয়ে গেল। ভয়ে গায়ের সমস্ত লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে...! খালি ভাবছি,স্যার হঠাৎ কিভাবে উধাও হয়ে গেলেন..? প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না। গলা শুকিয়ে আসছে।
পিছনে হঠাৎ একটা হাতের স্পর্শ পেলাম।
"কে...?"  চিৎকার করে উঠলাম আমি।
"আমি রনি...। কাকু পাঠিয়েছে আমাকে।আমার সঙ্গে আসুন...."
আমার সংবিত ফিরে এলো। তখনো ঘাড় ঘুরিয়ে গোপাল স্যারকে খুঁজছি..!
"কি ভাবছেন? চলুন,সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে.."
রনির কথায় সম্মতি জানিয়ে ওর সঙ্গে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চললুম।
শ্রাদ্ধ বাড়িতে মানে বিক্রমের পিসির বাড়িতে পৌঁছে দেখি,সবাই হাসিমুখে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। বুঝতে পারলাম,আমার এখানে আসার কারণটা হয়তো বাড়িতে ভালোমতোই আলোচিত হয়েছে।
একটু লজ্জাই পেলাম। ঘড়িতে তখন পৌনে সাতটা। বুঝলাম,স্যারের সঙ্গে ধীরে ধীরে আসতে গিয়ে কুড়ি মিনিটের পথটা প্রায় পৌনে এক ঘন্টায় এসেছি।
"কি রে..? এত দেরী হলো?"  বিক্রম প্রশ্ন করতেই ভাবলাম,স্যারের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টা বললে আমার সাড়ে সাতটার লাস্ট বাসটা তো মিস হবেই,বাড়িতেও গিন্নির সঙ্গে প্রবল অশান্তি কেউ আটকাতে পারবে না।
বেমালুম চেপে গিয়ে বললাম,"আসলে বাসটা খুব লেটে পৌঁছল বুঝলি..! তাই দেরী হয়ে গেল। আমাকে ফিরতে হবে ভাই। তুই ব্যবস্থা কর।"
ডাইনিং টেবিলে নত মস্তকে বসে শুধুই গোপাল স্যারের কথা ভাবছি। হঠাৎ মাথায় একটা নরম হাতের স্পর্শে হুঁশ ফিরলো। মুখ তুলে দেখি,'গোপাল স্যার...!'
আমি হতভম্বের মত ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। খাওয়া তখন মাথায় উঠে গেছে।এখানে উনি..? কিভাবে..?
"খেয়ে নাও বাবা...!" পরম স্নেহে স্যার বললেন। ওঁর  দিকে হাঁ করে চেয়ে রইলাম।পলক পড়ছে না আমার। এ কোথায় এসে পড়লাম...! আর, স্যারই বা  হঠাৎ 'তুমি' বলছেন কেন আমাকে...? সব গুলিয়ে যাচ্ছে আমার..! যাহোক করে গিলে কুটে এখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচি..!
আমি গোগ্রাসে খেতে শুরু করে দিলাম। ডাল আর পোস্ত দিয়ে যাহোক করে অল্প কিছু ভাত খেয়ে উঠে পড়লাম আমি।
"কি রে মাছের পদগুলো কে খাবে..?"
পাশে বিক্রম বসে আছে টেরই পাই নি।
"পেট খারাপ। খাবো না রে...। সাড়ে সাতটার বাসটা আমায় ধরতেই হবে। নাহলে গিন্নি.."
"চিন্তা করবে,না রাগ করবে..? কোনটা.?"
বিক্রমের রসিকতাটা এই পরিবেশে হজম হলো না। গম্ভীর মুখে বললাম, "আসলে ছেলে মামার বাড়ি গেছে। বাড়িতে ও একা। আমি ফিরবোই বলেছি ভাই.."
"ঠিক আছে,তোকে জোর করবো না। তবে চিন্তা করিস না। রনি তোকে বাইকে পৌঁছে দিয়ে আসবে জয়পুর মোড় অব্দি।"
বিক্রমের কথায় আশ্বস্ত হয়ে উঠে পড়লাম আমি।
বাড়ির সদর দরজার বাইরে রনির স্টার্ট দেওয়া বাইকে উঠতে যাবো,হঠাৎ পিছন থেকে শুনলাম,"বাবা দাঁড়াও...!" 
দেখে আবার একবার বিস্মিত হলাম।  গোপাল স্যার ডাকছেন...!
"এই প্যাকেটটা নিয়ে যাও। কিছুই তো খেলে না। বাড়িতে তুমি আর বৌমা মিলে খেয়ে নিও।কেমন..?"
স্থবির হয়ে রোবটের মতো ওনার কাছ থেকে খাবার প্যাকেটটা নিয়ে নিলাম। আমি পিছনে বসতেই রনি বাইক চালাতে শুরু করলো।

পরের দিন সকাল সকাল অফিস গেছি। সারারাত ঘুমাতে পারি নি। কিছুতেই অঙ্ক মেলাতে পারছিলাম না। খালি ভাবছি একই মানুষের এত অল্প সময়ের মধ্যে দুরকম আচরণ কি করে হতে পারে..? 
নিজের ডেস্কে বসে কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রেখে শুধুই ভেবে চলেছি। কিছুতেই উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না। হঠাৎ কানে এলো বিক্রমের গলা, " কাল কখন পৌঁছলি রে..? গিন্নি বকে নি তো? শ্রাদ্ধ বাড়ির মাছের পদগুলো খেয়েছিস?"
"তোকে সব প্রশ্নের উত্তর দেব পরে। আগে তুই আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দে.."
আমি একটু রহস্য করেই বললাম।
"বল...!"  আমার প্রশ্ন শুনে একটু থতমত খেয়েই বললো বিক্রম।
"তবে বন্ধু হিসেবে প্রথমেই আমি তোর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।" আমতা আমতা করে বললাম আমি।
"ক্ষমা চাইছিস..? হেতুটা শুনি..?"
" কাল পিসেমশাইয়ের প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে যে শ্রদ্ধা জানাবো.., সেটাই পরিস্থিতির কারণেই ভুলে গেছি রে...! যে মানুষটার শ্রাদ্ধে লোভে পড়ে খেতে গেলাম,তাকেই দেখা হলো না। ছি..,ছি..ছি...! কাল থেকে অনুতাপে মরে যাচ্ছি ভাই...।"
"আরে ছাড়...! ভনিতা না করে কি প্রশ্ন করবি বলছিলি..?"
"তাহলে তোকে সবটা খুলে বলতে হয়...."
আমি বাসে নামার পর গোপাল স্যারের সঙ্গে দেখা হওয়া থেকে শ্রাদ্ধ বাড়িতে ওঁর আচরণের পরিবর্তন, সবটা বিক্রমকে বিস্তারিত বললাম।
শুনে আমার সহকর্মী বন্ধু হেসেই অস্থির..!
"তুই হাসছিস....!"  আমার একটু রাগই হলো বিক্রমের উপর।
"তোর সঙ্গে গোপাল স্যার মানে আমার পিসেমশাইয়ের কথা হয়েছে শুনে হাসি পাচ্ছে ভাই...!"
"আমি তোকে মিথ্যা বলছি...?"
"সত্যিই যে বলছিস না সেটা ভাবার নিশ্চয়ই কারণ আছে অনিরুদ্ধ।"
বলে পকেট থেকে মুঠোফোনটা বের করে সামনে ধরলো বিক্রম।
আমি দেখেই নির্বাক হয়ে গেলাম। চোখের পলক পড়ছে না।
স্ক্রিনে গোপাল স্যারের  প্রতিকৃতি। চন্দনের ফোঁটা দেওয়া সারা মুখ। এ আমি কি দেখছি?"
"কি বলছিস বিক্রম..? স্যার মারা গেছেন? কবে?"
"আরে....তোর গোপাল স্যারেরই তো কাল শ্রাদ্ধ ছিল..!"
"হেঁয়ালি করবি না বিক্রম...! তাহলে তোদের বাড়িতে উনি কে ছিলেন যিনি আমাকে..."
"আরে ওটা পিসেমশাইয়ের যমজ ভাই..! তোর সঙ্গে ওঁর দেখা হয়েছে। বুঝলি বন্ধু..। বলে কিনা...."
বিক্রম বলে যেতে লাগলো। বুঝলাম,আমার একটা কথাও বিশ্বাস করে নি ও।
এর পরের অক্ষরগুলো আর কানে ঢুকছিল না আমার। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল স্যারের আকুতিটা, "নিজেকে মৃত মানুষটার জায়গায় বসা জানোয়ার..! তখন বেদনাটা টের পাবি..."
                      ওই ঘটনার পরে কাউকে না বলে অফিস থেকে চুপি চুপি জয়পুর মোড়ে নেমে আঁধারে পথ হেঁটেছি বহুবার। কিন্তু স্যারের দেখা পাই নি। 
যদি দেখা হতো, তাহলে ওঁর পা দুটো জড়িয়ে ধরে একবার বলতাম,"দহনে আমি রোজ পুড়ছি স্যার,পুড়ে ছাই হচ্ছি....। বিশ্বাস করুন...!" 

সাহিত্যিক পাভেল ঘোষ 
পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
                      


আঁচল 
অভিনন্দন মাইতি

তোমার রাধাচুড়া আঁচল ছায়ায় 
নাম গোত্রহীন লতার মতো ঝুলে থাকি।

লতা হতে অভিযোজিত হয়ে  আমার সুতোয় রূপান্তর।চুপসারে...

মসলিন সুতোর তন্তুতে ব‍্যাঙের আঠা---শীৎকার।
খোলস ছেড়ে খাজুরাহে 
                             নরনারায়ণ ভাস্কর্যে প্রমত্ত!

সুতোয় বাঁধা ফাতনা।
স্মৃতিরাকা সাঁতার দিলে হু হু জল।

তোমার রাধাচুড়া আঁচল ছায়ায়
নাম গোত্রহীন লতার মতো ঝুলে থাকি।

বর্ষাবকুল ঝরে আঁচল আঙিনায়...

কবি অভিনন্দন মাইতি 
লুটুনিয়া, সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর





 


শর্মিষ্ঠার ছোটগল্প 
টাঙ্গন জোড়া জল

"চুড়ি নেবে চুড়ি ই ই ই... ,কাঁচের চুড়ি"
রোজ দুপুরে আমার ফ্ল্যাটের নিচে ফুটপাত ধরে হেঁটে যায় ঝন্ ঝন্ শব্দরা একই ছন্দে। প্রায় দিন পনেরো হবে শুরু হয়েছে এই নতুন ঝঙ্কার। আশ্বিনের ডাক। বারান্দার উইন্ড চাইমের সরু ফাঁপা নলগুলোর টুং টুং শব্দে ষড়যন্ত্র আর একটা পোষা চড়ুই এসে লুচিপাতা গাছের সরু শীষগুলোকে খুঁটে দিয়ে যায়। পোষা এই অর্থে বললাম, ওর গায়ে কেউ কোনোদিন রবীন ব্লু'র নীল রঙের মতো কিছু নজরটিকা লাগিয়ে দিয়েছিলো হয়তো। পিঠের কাছে সেটাই জ্বলজ্বল করে। দেখলেই চিনতে পারি আমার নীলু'কে। জেড প্ল্যান্টের টবের মাটিতে কয়েকটা লুচিপাতা গাছ হয়েছে। কেমন করে এলো সেটা আমার অজানা। হয়তো ওই নীলু'ই ঠোঁটে করে এনেছিল ওর বীজ। চুড়িওয়ালার ডাকে বরাবর আমার মনটা কেমন উদাসী হয়ে যায়। এই সময়টা বীরেন বা আমার সুপুত্র ইমন কেউই বাড়ি থাকে না।একজন অফিস অন্যজন কলেজ। অতএব, এ দুপুরের আমি একলা ডাহুক।

বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। আমাদের 'কৃষ্টি টাওয়ার' এর স্যান্যাল বৌদিদের কাজের মেয়েটা রোজ এইসময় মেইন গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায় আর ডানদিকে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নীচে ছায়ায় দাঁড়িয়ে চুড়ি দেখে, কাঁচের চুড়ি। যত না চুড়ি দেখে, তার চেয়ে বেশী ঢলে পড়ে সাইকেলের হ্যান্ডেলে। আর ওর শাদা দাঁতের ফাঁকের শাদা হাসি রোদ্দুরের মতো ছড়িয়ে যায়। বেগুনি শাড়ি লাল পাড়, আঁচল কোমরে গোজা, হাতখোঁপা। হাতে শাঁখা আছে বটে ! কিন্তু স্বামী নেয় না হয়তো ! 'কাজের মেয়েদের ওমন গা-ঢলানি স্বভাব থাকে। আমার তাতে কী ! কাজে প্রত্যেকদিন আসলেই হলো। বাইরে যা খুশি করুক।' সাফ উত্তর স্যান্যাল বৌদির। সেদিন রুনু ভালো মনে বলতে গিয়ে শুনে এসেছে।রুনুর সাদা মনে কাদা নেই বলেই জানতাম। বেচারা উপকার করতেই গিয়েছিলো। মনে মনে ভাবলাম, হাসিটুকু বেঁচে থাক দুপুররোদে। ভাতফুল হয়ে ফুটে উঠুক কোনো নিরণ্ন দিনে ওদের মাঝখানে।

ঘরে এলাম। আমার লেখার টেবিলের এককোণে পিতলের পানের বাটা রাখা আছে।ওতে আমি কালি শেষ হয়ে যাওয়া কলমগুলো রাখি। টেনে কাছে আনলাম। দেখি কলমগুলো আস্তে আস্তে সবুজ পানপাতা হয়ে যাচ্ছে।ঈষৎ সিক্ত।গায়ে ছোট্ট ভেজা গামছার টুকরো জড়ানো। রাঙাপিসি আলতো করে গামছা সরিয়ে একটা পান বের করে বাকিটা অপত্যস্নেহে মুড়ে রেখে দিলো। তর্জনীতে চুন লাগানো।পা ছড়িয়ে বসে কোলে পানটা রাখলো। তারপর ওই তর্জনীটা ওভাবেই উঁচু করে রেখে যাঁতা দিয়ে কাঁচা সুপারী কেটে পানের ওপর ফেললো। কচ কচ শব্দ। কাটতে কাটতে একটা সরু ফালি আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। তৎক্ষণাৎ 'না'। ওসব খেলে আমার মাথা ঘোরে। একটুকরো খয়ের আগেই ছিলো পাতায়, এখন সেটায় চুন লাগিয়ে এদিক সেদিক কোনোমতে মুড়ে বিরাট গহ্বরে চালান করে দিলো। আঙ্গুল থেকে সামান্য চুন দাঁতে লাগিয়ে চেবাতে থাকলো ধীরে, খুব ধীরে।ভেতর গালে টোপলা। আর একটু পরে গালসি দিয়ে লাল টুকটুকে নেমে আসবে। রাঙাপিসির রাঙা ঠোঁটদুটো আরো আরো রাঙা হয়ে উঠবে। আর আমাকে পাশে নিয়ে কাঠবিড়ালির সাথে নদীর পাড়ের সেই লুকোনো গল্পগুলো বলবে। আমি রাঙাপিসিকে কখনো বেগুনি শাড়ি পড়তে দেখিনি। শাড়িটা শাদাই ছিলো। তাতে রঙিন সুতো দিয়ে কোলাজ আঁকতো রাঙাপিসি।

আমার তখন আট, রাঙাপিসির পঁয়ত্রিশ হবে। স্কুল ছুটি থাকলে বাবার সাথে গ্রামের বাড়িতে যেতাম। মেজকা, ছোটকা, ঠামু, দাদু আর রাঙাপিসির ব্যস্ত হুল্লোড়। আমার রান্নাবাটি খেলার সাথী ছিলো রাঙাপিসি। কোত্থেকে কাঁটা ঝোপের বড় বড় পাতার নিচে গুচ্ছাকারে ঝুলতে থাকা ক্ষুদ্র বেগুনের মতো থোকা তুলে আনতো, লুচিপাতা আর সরু ছোট্ট ঢেঁড়সের মতো দেখতে কিছু ফল। পরে আমার ছেলের কাছ থেকে জেনেছি ওগুলো সোলানেসি ফ্যামিলির গাছ। তারপর আমরা রান্না করতাম পেয়ারা গাছের নিচে। প্রত্যেকদিন মেজকার বন্ধু সিতাংশুকাকা আসলেই রাঙাপিসির অমন ফর্সা টুকটুকে গালদুটো কেমন আরো লাল হয়ে যেত। আর রাঙাপিসি আমার আরো কাছে ঘেঁষে বসে রান্নাবাটি খেলায় ভুল করতো বারবার। ব্যাস এইটুকুই। তারপরের আর কিছু আমার জানা নেই। একবার খুব বর্ষায় টাঙ্গনের ধারে আমরা সবাই ঘুরতে গিয়েছিলাম। সিতাংশুকাকাও গিয়েছিলেন আমাদের সাথে। খুব সুন্দর ছবি আঁকতেন কী না ! টাঙ্গনের ধারে একটা আর্টপেপারের বান্ডিল খুলতেই দু'একটা উড়ে গিয়েছিলো দূরে, ঝোড়ো হাওয়ায়।আমি দৌঁড়ে কুড়োতে গিয়ে দেখি একটা আর্ট পেপার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাঙাপিসি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে আর অনতিদূরে স্থির দৃষ্টি সিতাংশুকাকার। অসহায়, অপরাধী সেই দৃকপাত। হঠাৎ ঝমঝম করে বৃষ্টি। নদীর জলগুলো ছোট ছোট পিরামিড হতে হতে শুধু তরঙ্গ হয়ে গেলো। আমি স্পষ্ট দেখলাম রাঙাপিসি হাতে ওই আর্টপেপার নিয়ে সিতাংশুকাকার কাছে এলো, একদম কাছে।পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেই ছুট।গোল্লাছুট নদীর দিকে। নাঃ, কেউ ধরতে পারেনি। না বাবা, না মেজকা, ছোটকা কেউ।ঘটে গেলো অকস্মাৎ অপ্রত্যাশিত ঘটনা। সিতাংশুকাকা বিমূঢ় দাঁড়িয়েছিলো ওই একই জায়গায়।কতক্ষন, কতঘন্টা, কতদিন কেউ জানে না। হয়তো এখনো দাঁড়িয়ে আছে !

আমি পানের বাটার পেছনে রাখা ফ্রেমটা টেনে আনলাম নিজের কাছে। আজ তেরো'ই আশ্বিন। চন্দনের ফোঁটা লাগাবো কাঁচের ওপরে। ঘড়িতে ঢং ঢং করে তিনটের ঘণ্টা বাজলো। ফুলে যাওয়া শরীরের আমার রাঙাপিসির অচেনা অবয়ব যখন পুলিশকাকুরা টেনে তুলেছিলো নদী থেকে তখনও সময় ছিলো দুপুর তিনটে। আমি এখনো বুঝতে পারিনি চন্দনের ফোঁটায় ফটোফ্রেমের কাচ সাজানোর অর্থ আসলে কী ! রাঙাপিসির শাড়িটা কিন্তু তখনো শাদাই ছিলো আর এখনো শাদাই আছে পঁয়তাল্লিশ বছর পরেও।
ফ্রেমটা বুকের কাছে জড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 
'রাঙা, কাঁচের চুড়ি পড়বি ?'
কই,কেউ উত্তর দিলো না তো ! আবার জিজ্ঞাসা করলাম,
'রাঙা, বেগুনি শাড়ি পড়বি ?'
কোনো উত্তর নেই।
শুনতে পেলাম সেই ডাক 'চুড়ি নেবে গো, চুড়ি ই ই...'। মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে। অনেক দূরে, টাঙ্গনের ধারে, সিতাংশুকাকা আর্ট পেপার নিয়ে বসে আছে, তুলি ভিজে যাচ্ছে নদীর জলে আর আমার রাঙা আলতা পায়ে ধীরে ধীরে নামছে নদীর ঘাটে, শাদা হয়ে যাচ্ছে নদীর জল, দিব্যি শুনতে পাচ্ছি সেই শাদা হাসি টুপটুপ করে ঝরছে শিউলির সাথে। এখন ভরা আশ্বিন।

সাহিত্যিক শর্মিষ্ঠা সাহা 
২৭, পুলিন অ্যাভিনিউ, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ 








ধোঁয়াশা ও দৃশ্যান্তর
নাসিম বুলবুল

ওপারে বিস্তীর্ণ নদী,এপারে বেলা শেষ।
প্রথাগত সূর্য ডুবছে একটু একটু করে
নদী তীরে মুখটা গাঢ় নীল অন্ধকারে ভেসে যাচ্ছে...

প্লবতায় ছেড়ে যাওয়া এক টুকরো ঋণ
আধেক খরচ ও অনামী পাপের ভারে
ভারাক্রান্ত দৃশ্যান্তর।হারিয়ে যাওয়া কে আটকাবে?

তাবিজ কবচ নাকি অপত্যের ভিতরে নিথর লাশ?

এলোপাথাড়ি ব্যারাম খুলির চারপাশ খুবলোচ্ছে
আর দু'হাত ভর্তি অসারতা নিয়ে
লিখে যাওয়া সম্ভব না,নিঃসঙ্গতার অভাবী টানে...

দৃশ্যগুলো কোষের শিথিলতায় নিয়মিতই পচে যাচ্ছে
এক একটি নৈঃশব্দ্যের ভিড়ে চলে ধোঁয়াশার চাষ!

কবি নাসিম বুলবুল
সুলতানপুর, মিনাখাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা 




সুজিত রেজের চারটি কবিতা 

(এক)

খোলস

মনের ভেতর আছে খোলসের স্তর
মোচার খোলার মতো আবরণ-ঘর
খোলস খুলে গেলে তুচ্ছতায় খোলা
বৃত্তি ও চিত্তের চলমানতার দোলা

মনের ভেতর আছে খোলসের স্তর
পঞ্চবি ডাল তলে ন্যুব্জ তরুবর

(দুই) 

মান্দাস

অমাবস্যার অন্ধকার গ্রাস করছে
মার্জারের মতো ক্ষিপ্র ও চতুরালি চলন
মনপবন চক্রব্যূহে মাথা খুঁড়ছে
মন্দবাসা ছন্দহীন জীবন-যৌবন

কী নিয়ে থাকি প্রহরকাটা বেলা
মধ্যরাতে ভাসাই একা মান্দাসের ভেলা

(তিন)

প্রাপ্তি

যা রেখে যেতে চাও রেখে যেতে পারো
এ দীর্ঘ কপালজোড়া বুগিয়ালে
আমৃত্যু বহন করে যাব চণ্ডালছোপ

জীবনের প্রাপ্তি ভালোবাসাঘর
অর্কিড গুল্ম লতায় পাতায়
কাঁপা কণ্ঠে উচ্চারিত মধুশ্লোক

(চার)

সারদামঙ্গল

কাকভোর সরস্বতী-সকাল-শুভেচ্ছা ভিজে চুল
তেরো ডিগ্রি লেপমুড়ি ঠাণ্ডা শাঁখালু নতুন কুল    

গার্লস স্কুল মিডডে মিল নবীন কিশোর
কিশোরী সোনা চাঁদের কণা দিনটা তোর

স্তনহীন অন্তর্বাস
খিচুড়িতে বীর্যের সুবাস

কবি সুজিত রেজ
                        চুঁচুড়া, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ












নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

  • আগস্ট (3)
  • জুলাই (22)
  • জুন (8)
  • নভেম্বর (15)
  • অক্টোবর (5)
  • সেপ্টেম্বর (81)
  • আগস্ট (66)
  • জুলাই (55)
  • জুন (56)
  • মে (57)
  • এপ্রিল (46)
  • মার্চ (15)
  • জানুয়ারী (14)
  • ডিসেম্বর (73)
  • নভেম্বর (103)
  • অক্টোবর (97)
  • সেপ্টেম্বর (101)
  • আগস্ট (120)
  • জুলাই (88)
  • জুন (76)
  • মে (63)
  • এপ্রিল (11)

🔴বিজ্ঞপ্তি:

পাঁচ মাসের বিরতি কাটিয়ে আবার ও ফিরছি আমরা। খুব শীগ্রই আসছে আমাদের প্রত্যাবর্তন সংখ্যা।

অনুসরণ করুণ

এক মাসের সর্বাধিক পঠিত পোস্টগুলি:

  • শেষ শোকসংগীত ~ গোবিন্দ মোদকের কবিতা
  • দুটি কবিতায় ~ গৌতম কুমার গুপ্ত
  • ব্রাত্য ~ বিদ্যুৎ মিশ্র'র কবিতা
  • দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প
  • আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা
  • গুচ্ছ কবিতায় ~ অসীম মালিক
  • সুমিত রায়ের গল্প
  • সে প্রেম পবিত্র~ প্রেমাংশু শ্রাবণের কবিতা
  • সুব্রত মাইতির কবিতা
  • তিনটি কবিতায় ~ রাগীব আবিদ রাতুল

বিষয়সমূহ

  • Poetry speaks 2
  • অণু কথারা 21
  • আবার গল্পের দেশে 8
  • উৎসব সংখ্যা ১৪২৭ 90
  • একুশে কবিতা প্রতিযোগিতা ২০২১ 22
  • এবং নিবন্ধ 3
  • কবিতা যাপন 170
  • কবিতার দখিনা দুয়ার 35
  • কিশলয় সংখ্যা ১৪২৭ 67
  • খোলা চিঠিদের ডাকবাক্স 1
  • গল্পের দেশে 17
  • ছড়ার ভুবন 7
  • জমকালো রবিবার ২ 29
  • জমকালো রবিবার সংখ্যা ১ 21
  • জমকালো রবিবার ৩ 49
  • জমকালো রবিবার ৪ 56
  • জমকালো রবিবার ৫ 28
  • জমকালো রবিবার ৬ 38
  • দৈনিক কবিতা যাপন 19
  • দৈনিক গল্পের দেশে 2
  • দৈনিক প্রবন্ধমালা 1
  • ধারাবাহিক উপন্যাস 3
  • ধারাবাহিক স্মৃতি আলেখ্য 2
  • পোয়েট্রি স্পিকস 5
  • প্রতিদিনের সংখ্যা 218
  • প্রত্যাবর্তন সংখ্যা 33
  • প্রবন্ধমালা 8
  • বিশেষ ভ্রমণ সংখ্যা 10
  • বিশেষ সংখ্যা: আমার প্রিয় শিক্ষক 33
  • বিশেষ সংখ্যা: স্বাধীনতা ও যুবসমাজ 10
  • ভ্রমণ ডায়েরি 1
  • মুক্তগদ্যের কথামালা 5
  • রম্যরচনা 2
  • শীত সংখ্যা ~ ১৪২৭ 60

Advertisement

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

মোট পাঠক সংখ্যা

লেখা পাঠাবার নিয়মাবলী:

১. শুধুমাত্র কবিতা, মুক্তগদ্য অথবা অণুগল্প পাঠাবেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য বিষয়ক লেখা সম্পূর্ণ আমন্ত্রিত। ২. লাইনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ৩. লেখা মেইল বডিতে টাইপ করে পাঠাবেন। ৪. লেখা মৌলিক ও অপ্রকাশিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্য কোনো ব্লগ, ওয়েবজিন অথবা প্রিন্টিং মিডিয়ায় প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ৫. মেইলে আপনার লেখাটি সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত, কথাটি উল্লেখ করবেন। ৬. লেখার সাথে আবশ্যিক ভাবে এক কপি ছবি ও সংক্ষিপ্ত ঠিকানা পাঠাবেন।  ৭. লেখা নির্বাচিত হলে এক মাসের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে। এক মাসের মধ্যে কোনো উত্তর না এলে লেখাটি অমনোনীত ধরে নিতে হবে। ৮. আপনার লেখাটি প্রকাশ পেলে তার লিঙ্ক শেয়ার করাটা আপনার আবশ্যিক কর্তব্য। আশাকরি কথাটি আপনারা মেনে চলবেন। আমাদের মেইল- hridspondonmag@gmail.com
blogger-disqus-facebook

শান্তনু শ্রেষ্ঠা, সম্পাদক

আমার ফটো
পূর্ব বর্ধমান, India
আমার সম্পূর্ণ প্রোফাইল দেখুন

সাম্প্রতিক প্রশংসিত লেখা:

সুজিত রেজের কবিতা

সুজিত রেজের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন

© হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন। শান্তনু শ্রেষ্ঠা কর্তৃৃক পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে প্রকাশিত।

Designed by OddThemes | Distributed by Gooyaabi Templates