⎠⎠ শহীদ রাজেশ ওঁরাও এর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি ⎝⎝





             📚 মোনালিসা নায়েক🔸আরামবাগ🔸



꩜ আজ সাত দিন হয়ে গেল দাদা তুই চিরশান্তির দেশে, যেখানে আর পৌঁছাতে পারবে না কোনো যুদ্ধাস্ত্র। পার্বত্য অঞ্চলের খাড়া অংশে প্রবল শীতে ছয়ঘন্টা ব্যাপী যুদ্ধে দেশের জন্য তোর শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, কতো কষ্ট পেয়েছিস বলতো দাদা! আমার চোখে এঁকে দিয়েছিস রঙিন স্বপ্ন,পাকা বাড়িতে বাবা,মা কতো স্বস্তিতে গ্রামের সকলকে তাদের সৌভাগ্যের কথা বলতো।যারা একদিন ভেবেছিল তোর পড়াশোনা বাবা  আর চালাতে পারবেনা,আমাদের দৈন্যদশার মুক্তি হবে না কোনদিনই। নিত্য অভাবের সংসারে তুই আধপেটা খাবার খেয়ে রাতের পর রাত জেগে উপলব্ধি করেছিলিস--আধাঁরের পর আলোর ঠিকানা,বাবার দৈন্যতা মুছে দেওয়ার শপথ।তাইতো প্রতিদিন ভোর উঠে মাঠে অনুশীলন করে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে শত বিদ্রুপের জবাব দিয়েছিস সকলকে।

কিছু স্বপ্ন দাদা অধরাই থেকে যায় জানিস,অজ পাড়াগাঁ বেলঘড়িয়া লড়াকু শক্তি আর সাহসের বীরত্ব আজ সংবাদ শিরোনামে।এখন সবাই বলে আমাদের ঘরের ছেলে– রাজেশ, আমাদের গর্ব।

তুই সময় ও পরিস্থিতির চাপে মোবাইলে টাকা ভরে দিতে পারতিস না সময়মতো, কত কথা শোনাতাম তোকে, আসলে তোর খবর নেওয়ার জন্যই মা-বাবা উদগ্রীব থাকতো তাই হয়তো!বুঝিনি দাদা, সময় তোদের কাছে কতটা মূল্যবান।সেই যন্ত্রনা আজ কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে।এখন মোবাইলে শুধু তোর যত ছবি দেখি রে,তোর ছবি বুকে রেখে মা-বাবা আজ কতরাত বিনিদ্র আছে,জানিস এখন আর রিচার্জের কোনো দরকার হয়না দাদা।

সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর থেকে তোর হাতে রাখি বাঁধিনি একবারও,এবারে কত আশা করেছিলাম তুই ওই  আসবি,আমিও তখন এ বাড়িতে অতিথি হয়ে এসে অনেক বছর পর  রাখি বাঁধবো তোর হাতে। তুই এবারে এসে  আমায় অলংকার দিবি পণ করেছিলিস,  তুই কথা রেখেছিস দাদা।বাবা-মা তো বড় অলংকার সারাজীবন এই অলংকারের বৈভবে আমি যেন সুখী হতে পারি দাদা,তোর স্বপ্ন পূরণ করতে পারি,তুই আশীর্বাদ কর।

জানিস দাদা ,খুব মনে পড়ে আমাদের আগের মাটির বাড়িতে উঠোনে বসে যৎসামান্য খাবার আনন্দ করে চারজনে ভাগ করে খেয়ে সবাই বলতাম একই কথা, আর খাবার লাগবে  না ,পেট ভরে গেছে।খুব ভালো ছিল রে দাদা মাটির বাড়ির  মায়া,ইঁটের তৈরি পাকা বাড়ির সুখ খুব বেদনাদায়ক রে দাদা,পুরো ঘর জুড়ে তোর- ই সব স্মৃতি জড়িয়ে আছে ,শুধু তুই আর আগের মতো মুঠোয় করে আমার পছন্দের চুলে বাঁধা ক্লিপ,টিপ চেপে ধরে বলিসনা-- বোন এদিকে আয়, দেখ তো এটা তোর কেমন লাগছে?মা, অনেক দিন তোমার হাতে দেশী মুরগির ডিমের ঝোল খাইনি,আজ তুমি কিন্তু এটা রান্না করবে,বাবা,তোমার বয়স হয়েছে,অনেক পরিশ্রম করছো ছোট বয়স থেকে,আর কাজে বেরোবে না তুমি ,আমি আছি তোমার কোনো চিন্তা নেই।তুমি বাড়িতেই থাকবে।

এই বাড়িতে কত নেতা-মন্ত্রী ,এলাকার নামী -দামী মানুষ এসেছিল।সবার প্রশস্তিবাক্য ভোলাতে পারেনি  আমাদের শোক।ভাবি বৌদির স্বপ্ন ছিল বরের বেশে তোর গলায় মালা দেবে, জানিস দাদা সে এসেছিল মালা নিয়েই,কফিনবন্দি অবস্থায় বীরের গলায় মালা পড়িয়ে সে  বাকরুদ্ধ। তোর কফিন থেকে তাকে  তুলতে খুব বেগ পেতে হয়েছিল প্রতিবেশীদের।

ভাবিসনা দাদা,এখন গোটা বিশ্বের  শত্রু দেশের হয়ে তুই যে শক্তি আর সাহস নিয়ে লড়েছিস তা আমাদের কাছে গর্বের। কুড়িজন সন্তানহারা,পিতৃহারা ,স্বজনহারা শহীদদের  রক্তের  যোগ্য জবাব ঠিক দেবে  দেশবাসী।দাদা তুই তো ভীষণরকম জেদি ছিলিস, আবার আসিস এই মায়ের কোলে স্বপ্নপূরণের সাফল্য নিয়ে । ভালোথাকিস রে দাদা।

                        ইতি-তোর অভাগিনী বোন।

0 Comments