পিপিং টম ও লেডি গোদিভা



                ⍚ বিদুর উপাধ্যায়🔸দুর্গাপুর🔸


সেদিনও একরকমের লক ডাউন ছিল।শহরের কোন মানুষ বাইরে না বেরোনোর পাশে কেউ দরজা এমন কি কোন জানলাও খোলে নি। না কেউ কোন আদেশ দেয় নি, তবে অনুরোধ করেছিল। শোনা যায় শুধু মাত্র সম্মান জানাতেই শহরের মানুষ এই রকম একটা সিদ্ধান্ত নেয়।কারণ সেই দিন লর্ড কভেন্ট্রি লিওফ্রিকের সাথে একরকম চ্যালেঞ্জ নিয়ে লেড়ি গোদিভা ঘোড়ার পিঠে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে পুরো শহর ঘুরে বেড়াবেন।শুধু মাত্র নিজের মাথার চুল দিয়ে শরীরের কিছু অংশ ঢেকে রাখবে, বেরিয়ে থাকবে নগ্ন পা, উরু এবং বাকি শরীর।ব্যাপারটা একটু খুলে বলা যাক।
সময়টা এগারো শতাব্দী,লেডি গোদিভার বিয়ে হয়
লর্ড লিওফ্রিকের সাথে। লিউফ্রিক এমনিতে ভালো মানুষ হলেও কোন কারণে প্রজাদের উপর একটা বিরাট অঙ্কের কর চাপিয়ে দেন।লেডি গোদিভা বিভিন্ন ভাবে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেও কিছু লাভ হয় না। লেডি খুবই প্রজা বৎসল ছিলেন বলে জানা যায়।লর্ডকে বারবার বুঝিয়ে কোন ফল না হলেও লর্ড লেডিকে একটা অদ্ভুত শর্ত চাপিয়ে দেন।তিনি বলেন, লেডি যদি নগ্ন হয়ে শহরের রাস্তায় ঘুরতে পারে তবে লর্ড প্রজাদের উপর থেকে এই করের বোঝাটা কমিয়ে দেবেন। লেডি এই শর্ত স্বীকার করে শহরের রাস্তায় ঘোড়ার পিঠে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা বলেন।শহরের মানুষ একথা জানতে পারেন, এবং তাঁরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নেন যে এই দিন শহরের কেউ বাইরে বেরোবেন না।শহরের দরজা জানলা খুলবে না। লেডি ঘোড়ার পিঠে চেপে শহর ঘুরে লর্ডের কাছে ফিরে আসেন।লর্ড তাঁর শর্তে হেরে গিয়ে শুধুমাত্র ঘোড়া ছাড়া বাকি সবের উপর থেকে বাড়তি করের বোঝা কমিয়ে দেন।এ পর্যন্ত কাহিনীটা ঠিক আছে। কিন্তু এখানেই টম নামের একটি চরিত্রের সাথে আমাদের পরিচয় হয়। লেডি যে সময় শহরে ঘুরছিলেন তখন এই টম যিনি একটি টেলারিং দোকানের ভিতরে ছিল। তিনি দরজার ফাঁক দিয়ে লেডিকে দেখতে থাকেন এবং ধরা পড়ে যান।শাস্তি স্বরূপ তাকে অন্ধ করে দেওয়া হয়।অথবা হতে পারে শহরের মানুষ লেডিকে ভালোবেসে শ্রদ্ধা করে টমকে মেরে দেয় অথবা অন্ধ করে দেয়। এই লেডি গোদিভার ঘটনাটি সম্পর্কে বিতর্ক থাকলেও তাঁর উপর অনেক কবিতা লেখা হয়, গান লেখা হয়। এমনকি কবি টেনিসন ও ১৮৪০ সালে ‘গোদিভা’ নামে একটি বিখ্যাত কবিতা লেখেন। পরবর্তী কালে তাঁর উপর অনেক নাটক লেখা হয়, সিনেমাও তৈরী হয়।বেলজিয়ামের একটি বিখ্যাত চকলেট কম্পানি লেডির সেই কুখ্যাত ঘোড়ায় চেপে থাকা অবস্থায় ছবিটি তাদের কম্পানির ট্রেডমার্ক হিসাবে ব্যবহার করে।এই লেডি গোদিভার সাথে যে নামটি জড়িয়ে যায় তা হল পিপিং টম।১৭৭৩ সালে এই শব্দগুচ্ছটি কভেন্ট্রি শহরে প্রথম সবার নজরে আসে।শহরের বেশ কিছু লোক ওকগাছের একটি পুতুল বানিয়ে তার মাথায় পরচুলা পরিয়ে পোড়ানোর উৎসব করতে থাকেন।সেখান থেকেই পরবর্তী কালে এই উৎসবটি জনপ্রিয়তা পায়।যদিও বর্তমানে এই পিপিং টম অর্থে, যে সকল মানুষ লুকিয়ে যৌনদৃ্শ্য দেখে আনন্দ উপভোগ করেন তাদের বোঝায়, এমনকি যে সব মানুষ রাতে জানলায় অন্যের বাড়িতে উঁকি দেয় তাদের বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়। ‘১৭৯৬ সালে ক্লাসিকাল ডিকসিনারি ফর দ্য ভালগার টাঙ্গ’ প্রথম এই ফ্রেজটি যে সকল মানুষ অন্যের ব্যাক্তিগত জীবনে বেশি উৎসাহী তাদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।বর্তমান ঐতিহাসিকরা লেডি গোদিভার এই ঘটনাটি বিশ্বাস করেন না।তার তৎকালীন আরো ঐতিহাসিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে দেখান লর্ড ও লেডি দুজনাই ধর্মীয় স্থানে সাহায্য করবার পাশে বেশ কিছু জনহিতকর কাজ করেছেন। লেডির নিজেই সেই সময়েই বেশ কিছু জমির মালিক ছিলেন।স্বভাবতই এই রকম ভাবে ঘোড়ার পিঠে চেপে ঘুরে বেড়ানোর ঘটনা গল্প ছাড়া আর কিছু নয় বলে অনেকে দাবি করেন। যাই হোক লেডি গোদিভার ঘটনা গল্প হোক বা সত্য ঘটনা তাঁর নাম কিন্তু এখনো সাধারণ মানুষের মধ্যে বেঁচে আছেন, এবং তার সাথেই বেঁচে আছে টম, হয়ত পিপিং টম হয়ে, অন্য নামে অন্য অর্থে।

0 Comments