সুজিত রেজের গুচ্ছ কবিতা




           সুজিত রেজ🔸চুঁচুড়া ,হুগলি🔸




       ১. হৃদস্পন্দন



অনেক কথা হল আঙুলে আঙুলে ,
নির্বাধ সাঁতার স্নায়ু ভাঙা জলে ,
অনির্বাণ ব্যথা দুই বাহুমূলে।

এবার বিরত হই স্থল খুঁজি চলো ,
পিছনে ঘোলাস্রোত যত এলোমেলো ,
পদ পদান্তর অহেতুক ভেল।

সামগীতি সন্ধ্যা শ্রুতি পরশয়ে ,
নিবিড় বেদনার নির্বেদ দহে ,
সিঞ্চিত শেঁওলি ভূমাতে বিলয়ে।

অক্ষর যাপণ শ্রেয় আশ্রয় ,
সমাহিত চিত্তে জাগে প্রত্যয় ,
সংশয় স্খলিত বিশ্ববিজয়।


        
       ২. শিউলিফুল  


আমার বাবা কারখানা থেকে বাড়ি ফিরে, জিভ বের করে পাঁচ-সাতটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন।। মা ন্যাতানো শাড়ির আঁচলে মুখের ক্লান্তি নিংড়ে নিয়ে বলতেন :খাবে চলো। 
বাবা তেল চিটচিটে থলে থেকে লবণাক্ত রুমালটা বের করে ,এক চিলতে বিশ্বাস মাখানো দু'চার টাকা মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বলতেন : আমি বিশাখ দত্ত হলেও মুদ্রারাক্ষস নই।


মা লঙ্কা পুড়িয়ে, সিদ্ধ আলু মেখে , এক থালা পান্তা বেড়ে দিতেন আর বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে পরখ করতেন তৃপ্তির আলো। সানকি থালার কিনারে হাত ঘষতেই ঝরে পড়ত সম্পর্কের শুভ্র শিউলিফুল । 


         ৩. নিষেধাদি 



প্রতি সন্ধ্যায় সমুদ্র ঋতুমতী হয় 
তখন তার জল ছুঁতে নেই। 

প্রতি সন্ধ্যায় গাছ ডালপাতা খুলে রেখে উলঙ্গ হয়  
তখন আলো জ্বালাতে নেই। 

প্রতি সন্ধ্যায় নদীর ছলাৎ জল চুমু খায় নৌকার গলুইয়ে  
তখন নিঃস্ব নোঙরের ঈর্ষা মাপতে নেই। 

প্রতি সন্ধ্যায় জোনাকি অন্ধকারের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে 
তখন বাঁশি বাজাতে নেই।

প্রতি সন্ধ্যায় কবি আগুনলিপি লেখে নিশুতি নিয়তির কলমে 
তখন রাহু কেতুর ঘুম ভাঙাতে নেই।

2 Comments

  1. প্রাচীন ঋষির মতো হৃদয়ে এক উপলব্ধি জন্মে তখন প্রাচীন দর্শনে খুঁজে পাই প্রত্ন নির্মাণ। এই কবিতা সেই বোধের স্ফুলিঙ্গ।

    উত্তরমুছুন

  2. প্রতি সন্ধ্যায় সমুদ্র ঋতুমতী হয়
    তখন তার জল ছুঁতে নেই। ... বেশ ভালোলাগলো এইসব কবিতা ।

    উত্তরমুছুন