(১)
বেলাশেষের রোদ্দুর টা তখনও পুরোপুরি নিভে যায় নি।সোনালী আলোর টুকরো টুকরো কালি ছড়িয়ে পড়েছে মেঘের আস্তরণে।মেঠো রাস্তার দু'ধারে আল বেয়ে যে পথ সবুজ গালিচায় পা ফেলে চলে গেছে দিকচক্রবালের শেষের কিনারে ঠিক সেইখানে দুটো খেজুর গাছের ফাঁকে সোনার মত সূর্য পশ্চিমে দুয়ারের গন্তব্যে পা বাড়িয়েছে।পুজোর পর এই সময়টায় হিম হিম হাওয়ায় ঝরা পাতাগুলো ধুলোর সাথে উড়তে থাকে দু-একটা। আমন ধানের পাকা রং ধরেছে ফসলে— শিশির মাখে সারারাত্তির জুড়ে। শেষবেলার মৃদু আলোয় ধানের শীষ গুলো নিয়ে পড়ে ফসলের ভারে। গোধুলীর রঙ আর ফসলের রঙ মিলে মিশেএকাকার। সুবল শ্যালো ঘরের একদম উপরে উঠে জলে হাত পা ধুয়ে নিল। পলাশ পুর গ্রামের এদিকটায় কয়েক বিঘা জমি। তবে একদম মেইন রাস্তার কাছে। গ্রামের একটু বাইরের দিকে। জমির পেরিয়ে গেলেও ওপাশে ময়ূরাক্ষী নদী।বানের সময় সাদা সাদা বালি গ্রাস করে নেয় ওপারের জমির সন্তানসম্ভবা জরায়ু। তবুও অনেক কায়িক পরিশ্রমে সেই বালি তুলে চাষের উপযোগী করে লাগানো হয় তরমুজ, শসা,খেরো এইসব বালি মাটির ফসল। যতটুকু পাওয়া যায় চাষ নির্ভর পরিবারের ততটুকুই লাভ। আলের দুপাশে হেলেঞ্চা কলমি আপনাআপনি মাথা নাড়ে। সুবল মাঝে মাঝে বাড়ি যাবার পথে তুলে নিয়ে যায়। টাটকা ক্ষেতের শাকের স্বাদ অমৃত সমান। সুবল আঁজলা করে জল দিয়ে কুলকুচি করল দু একবার। এদিকের জমিটা বেশ ফলবতী। বছর বছর আমন চাষ হয়। এখন আর নিজেদের জমির দায়িত্ব নিজেরা কেউ হেফাজতে রাখতে চায় না। ঝক্কি তো কম নয়। সারাবছর জমিকে সন্তানের মত লালন করা,পরিচর্যা করা, যত্ন করা পাহারা দেওয়া এবং তারপর সেই ধান ঘরে তুলে ঘর থেকে চাষী আর চাষী বউ মিলে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে আলাদা করা। মাথায় তাদের গামছা পাগড়ির মতো বাধা কোমরে গাছকোমর করে শাড়ি শক্ত করে আঁটা। শীতের রুক্ষ হাওয়ায় ধান পাঁচরাতে গিয়ে চামড়া ফেটে যায়। সারাদিন সেই ধান একত্র করে তারপর বাড়তি ধান গোলায় ভরে রাখা— সারা বছরের খাদ্যের রসদ। এত ঝামেলার জন্য মালিকপক্ষ বর্গাদার রাখে। যা ধান পাবে অর্ধেক অর্ধেক—সোজা হিসাব। সারাবছর জমির দেখাশোনা কীটনাশক সার এসব খরচ জমির মালিকের।তবে অনেক সময় যে দুপক্ষই বেইমানি করেনা তা নয়।ছেড়ে না দিয়েও উপায় নেই। তাতে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয় চাষী পরিবারের —যেমন সুবল দের। পোলাও,বিরিয়ানি না হলেও পুকুরের মাছ টা ,জমির শাক-সবজি দিয়ে বেশ চলে যায় সুবল দের। সুবল চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল যতদূর দেখা যায় অনন্ত জমি বরাবর ফসলের পাকা রং ধরেছে। সাঁঝ নেমে আসছে। কাঁচা মাটির সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো সুবল। পিছন থেকে বাঁকা চিৎকার করে ডাকছিল,"উটো কে বটেক সুবল নাকি ?ঘরকে যাবিক লাই?"
সুবল কাদের গামছা দিয়ে কপালের জল মুছে বলল,"ঘরটোতেই যেছি বাঁকাদা,তু এদিকপানে? কুথাকে ছিলি?"
বাঁকার মুখে সরল হাসি,'চৌধুরীদের বাড়ীটোতে ছিলম। তুর বাপ ও আছে। শুনলম ই জমিন গুলাতে বড় টাউনশিপ হবেক,ইস্কুল খুলবেক,একটো হোটেল বানাইবেক,মুদের দুখের দিন শেষ সুবল।সবাইকে কাজ দিবেক।সে কুথাটোই হচিল।'
সুবল ভ্রু কুচকায়,'এসব কিসের লিগ্যে'
"তু জানিস লাই !! ই দেখো কেনে সকলে জানে।ইদিকের জমিটোতে পরের বছর আর চাষ টো হবেক লাই ।বড়কত্তা কইছিল শহর থেকে কুত্ত লোকটো আসবেক।দেখো কেনে গেরাম ইকেবারে পালটিন যাবেক।তার বদলটোতে আমাদের কাজ টো দিবেক। খাওয়া পড়াটোর কষ্ট টো আর থাকবেক লাই।"
সুবল শুনছিল বটে জমির দিকে কাজে গিয়ে সবার সাথে এ ধরনের কথা। তখন বিশেষ পাত্তা দেয়নি। এখানে এসে দেখল একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ঈষৎ বিরক্তি প্রকাশ করে সুবল,"তুদের মাথাটো ইকেবারে গেছে রে ।তুদের লেগেই জমিটোও খোয়াইব,কাজটোও পাবক লাই।ইকটো কথা ভেবেছিস ? শহরের বাবু গুলান হোটেল টো করবেক,টাউনশিপ করবেক আমাদিগের কাজটো হোথায় কুথাকে? পড়াটো,লিখাটো তো জানিস লাই! টাকাটো দিবেক বললেই হল! সারাটো বছর তারপর টোতে কি আঙুল টো চুষবিক?'
বাঁকা যেন নিভে যায়,"উরা যে কইছিল!অনেক লুক লেবে।তা হলে টাকা টো পাব না মুরা?"
সুবল চারিদিক দেখে নেয় তারপর নিচু স্বরে বলে,"ইটো উদের একটো চাল ! কিছু টাকা ধর্যে দিবেক।যাতে মালিকদের জমিটো বিক্রির সময় টোতে ঝামেলাটো না বাধাইতে পারি। তারপর কাজ টো মিটে যাবেক।আমাদের ঘরে লা খ্যেতে পেয়ে মরতে টো হব্যেক।'
চোখ বড় বড় হয়ে যায় বাঁকার,"তাহলে উপায়!তুর বাপটো তো ছিল রে "
সুবল জ্বলে ওঠে,"মুর বাপটোর কথাটো শুনেই সন্দ হচ্ছে রে।'
মাথাটা হিসেব-নিকেশ করে চট জলদি। তারপর সুবল বলে,"তু যা ক্যানে বাঁকা দা।দেখছি সকলে মিলে কি করাটো যায়! ডাকলে আসিস কেনে।আমি ঘরটোতে যেছি একবার।তবে জমিটোতে কুনোমতে হাত দিতে দিবক লাই বাঁকা দা!"
বাঁকা একটু ভয় পায়,"সত্যিটো কইছিস সুবল?তুর বাপটো তুর ব্যবস্থাটো করে দিবেক তারপরটোতে পালটিন যাবেক লা তো? তু যা কইলি তা যদি সত্যি হয় তবে লা খেতে পেয়্যে মা বাপকে লিয়ে কুথাকে যাব!"
সুবল আশ্বাস দেয়,"চিন্তা টো করিস না বাঁকাদা।বেইমানি করবোক লা।বেঁচে টো থাকতে ই জমিতে ক্ষতি হতে দিবক লাই। নিশ্চিন্তে ঘরটোতে যাও কেনে।দরকার টো পড়লে বাপের উল্টোদিকে যেতে হবেক।"
সুবল হনহন করে হাঁটা লাগায় বাড়ির পথে। খিদে তে পেটে রাক্ষসের মত হা হা করছিল কিছুক্ষন আগে। বাঁকার মুখ থেকে কথাগুলো শোনার পর মাথায় রাগের আগুন সলতের অপেক্ষা করছিল।খিদেটা তখন মরে আসছে। হৈমন্তীর সন্ধ্যায় দ্রুতগতিতে হাঁটার দরুন সুবলের চিকন মসৃণ শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিকচিক করে উঠল চোখ দুটোয় ক্ষিপ্র দৃষ্টি।
(২)
একনাগাড়ে ঝিঁঝিঁ পোকা ডেকে চলেছে। বাঁশ বাগানের কোণে জোনাকিদের টিম টিমে আলো। উঠোনের চারিপাশে সেদ্ধ ধানের গন্ধ। পরিপাটি করে নিকানো আধা সিমেন্টের বাঁধানো উঠোন একপাশে তুলসী মঞ্চ।মাটির প্রদীপ জ্বলছে সেখানে।আর এক পাশে আগুন জ্বলছে ঢিমেতালে আখায়। দু-একটা কাঠের টুকরো ঢুকিয়ে দিলো সুবলের মা দুলি। চাল ফোটার গন্ধ। ফ্যান উপচে পড়ছে কালিমাখা হাড়ির দুপাশ থেকে।সুবলের খিদেটা আবার একবার ছোবল মারলো পেটের অভ্যন্তরে। হিমেল বাতাসে খোলা উনুনের ধোঁয়া মিশে যায়। বাতাসে খিদের গন্ধ বাড়ে। সুবল আনমনে ভাবে এ জমি যদি না থাকে তাহলে এই ফ্যানের গন্ধ পুরনো হয়ে যাবে। সেদ্ধ ধানের গন্ধ উঠোনের বুকে চাপা পড়ে যাবে চিরতরে।বড় দিদির বিয়ে হয়েছে এইতো দুটো মাস আগে চেয়েচিন্তে। সুবল জানে সংসারে জমানো টাকা প্রায় শূন্য।সেই কারণেই বাপ বুধো ছুটেছে চৌধুরীদের বাড়িতে।এখনো ফেরার নামটা পর্যন্ত নেই। কি পরিকল্পনার ছক করছে কে জানে। ছোটবোনটা বারান্দায় ছওয়াটের বাল্ব এর অন্ধকার আলোর ঘুমিয়ে পড়েছে। উস্কোখুস্কো চুল মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।হাতে পায়ে খড়ি ফুটেছে। গোটা দুপুর সোনাঝুরির জঙ্গলের ধানের শীষের গয়না ফসলের বীজ তৈরি মালা বিক্রি করে ক্লান্ত। অনতিদূরে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নীরব সাক্ষী সুবলের দাদুর ময়শা বসে আছে আঁকিবুকি রেখার মুখাবয়ব নিয়ে।চোখদুটি আধবোজা। রক্তবর্ণ— ঢুলছে। ক্রমাগত খিদে পেটে নিয়ে অপেক্ষা রত। চোখের কোনে পিচুটি কেটেছে। সুবলের বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো। এই সবকিছু নিমেষে নিভু আলোর তলার অন্ধকার হয়ে যাবে জমিটুকু বাঁচাতে না পারলে। দিনের শেষে ভাতের থালার ধোঁয়া কলকারখানা বা হোটেলের নিষ্প্রাণ কালো কুণ্ডলী কৃত ধোঁয়ায় পরিণত হয়ে যাবে। আদিগন্ত বিস্তৃত জমির লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে কখনো আসবেনা নূপুর পায়ে চোরকাঁটা সরিয়ে। উঁচু উঁচু বিল্ডিংয়ের পাশে খেজুর গাছের ফাঁকে সোনালী থালা কচ্চিৎ কদাচিৎ উঁকি মারবে। সোনার ফসল চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে। ক্রমাগত চিন্তাগুলো উঁকি মারতে শরীরের রক্ত গরম হয়ে গেল সুবলের। জন্ম-জন্মান্তরের এই সুতোটুকু বাঁচাতে না পারলে ক্ষমা করতে পারবে না সে নিজেকে। সুবল বেরিয়ে গেল লন্ঠন হাতে চৌধুরীদের বাড়ীর দিকে।
চৌধুরীদের বাড়িতে যখন পৌঁছলো তখনো ওদের উঠোনের পাশে বড় বড় গাড়ি রাখা। কতগুলো চাপা স্বর ভেসে আসছে। সুবল কান খাড়া করে শোনে। আজ বাঁকা কেও আসার সময় এর সাথে নিয়ে এসেছে। আঙুলের ইশারায় বাঁকাকে চুপ করতে বলে সুবল। দুই ছায়ামূর্তি আধো আধো অন্ধকারে চুপিচুপি শুনতে থাকে ধূর্ত চৌধুরী ওরফে বড়কর্তার গলা,"বুঝলে বুধো দুটো লেঠেল পাঠিয়ে দেবো,ঠিক মাঝের জমিটায় বুঝলি?তাহলেই ছড়িয়ে পড়বে।কেরোসিন বেশী করে নিয়ে যাস। ইন্দ্র থাকবে কাছাকাছি আড়ংকে ডেকে নিবি, বেশী লোক জড়ো করার দরকার নেই,জমির মালিকদের আগে থেকেই জানানো আছে ,টাকার অঙ্ক শুনে সবাই চুপ মেরে গেছে!"
বুধোর গলা শোনা যায়,"হ কত্তা !ইকদম চিন্তা টো করবেন লা।কাজটো ঠিক করে হয়্যে যাবেক।তা বাদে বিশ্বাস টো রাখবক।'
পাশ থেকে সুবল লক্ষ্য করে কোট প্যান্ট পরিহিত অচেনা ভদ্রলোক ঈষৎ সন্দেহ প্রকাশ করে,"আপনি কাজটা করতে পারবেন তো মানে জমিতে আগুন লাগালে আবার ওরা চাষ করতে পারবে না তো!'
কালো দাঁত বের করে বুধো খিকখিক করে হাসে,"কি যে কন বাবু,পোড়া জমি আর বাঁজা মেয়েছেলে সমান,পোলাপানের কুনো কথাটো লাই উদিকে জমিটোও তেমনটোই।ও জমি ইকবার পুড়াইলে ইখন চাষ তো দূরের কুথা আগাছা ও হবেক লাই।"
চা খাবার ছোট কাঁচের গ্লাসের সোনালী উৎকটগন্ধের তরলটা এক নিশ্বাসে শেষ করে বুধো।"ইখন উঠি কত্তা মশাই।মাঝরেতে জাগতে হবেক।কাজটো সহজ লয় ।সাবধানটোতে মাঝের জমিটোতে আগুনটো জ্বলাইতে হবেক।তারপরটো আপনি আশপাশের জমিগুলায় ছড়িন পরবেক।"
বড়কর্তা ঘোর লাগা চোখে হাত নাড়েন। বুধো একবার টালমাটাল পায়ে উঠে বলল," টাকাটা কত্তা?'
বড়কর্তা মুখ বেঁকিয়ে হাসেন,"তোমাদের ওই দোষ,কাজ না করেই টাকা চাও। এই মহেশ দশের দুটো বান্ডিল দে বাদবাকি টাকা শেষ হবার পর।" বুধোর চোখ দুটো চকচক করে ওঠে,"এজ্ঞে কত্তা সুবলের কাজটো হয়্যে যাবেক তো?"বড় কর্তা ও শহুরে বাবু চোখাচোখি করেন নজর এড়িয়ে।সুবলের মাথা ঝিমঝিম করে।বাঁকা ঢোঁক গেলে বেশ কয়েকবার। সুবলের গোটা শরীরে যেন কেউ বিষ মিশিয়ে দিয়েছে।এত জ্বালা করছে ।হাতের তালু,পায়ের চেটো ঘামে ভিজে সপসপ করছে।গলার কাছে ভয়ের চোরাস্রোত।দম বন্ধ করতে চাইছে যেন। শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে আসছে শীতল শোণিত-ধারা। বাঁকা ফিসফিস করে বলে,"কি হবেক ইবার?"
সুবলের সম্বিৎ ফেরে,"কিছু হবেক লাই।ইখুনি ইকবার চল কেনে খং,আলি,মসদুর,নব ,রাখো ইদের কাছে।মাঝরাতে আজ ঘুমটো হবেক লাই বাঁকা দা।একটো রাত না জাগলে খেতিটো হতে দেরি টো লাই!"
চারিদিকে সুনসান।পরিষ্কার আকাশে তারাদের জোনাকিআলো।ময়ূরাক্ষী থেকে আসা থেকে শিরশিরে হাওয়া ঠান্ডা করতে পারেনি ওদের হাত পা। জনা কুড়ি হবে কালো কালো মাথাগুলো মাঝে সোনালী ফসলের ক্ষেতের ধরে লুকিয়ে। অপেক্ষার প্রহর গুনছে সকলে।এক, দুই, তিন। হঠাৎ তিনচার জনের হাতে মশালের আগুন চাপাস্বরের উত্তেজনা।আর বুধোর টলমলো পায়ের আওয়াজ এর নিস্তব্ধতা খানখান হয়ে গেল। আর তখনই ক্ষিপ্রগতিতে বেরিয়ে এল মুখোমুখি কালো 'ঝাঁকড়া মাথা। বলিষ্ঠ শরীর চিকচিকে চোখের দৃষ্টি আর হই হই রব। বাঁকা কে পাশে নিয়ে সুবল এগিয়ে এলো একদম সামনে বুধোর মুখোমুখি,"ইখানে এতরেতে কিসের লেগ্যে?আগুনটো লাগাবি? দেখি তো লাগা কেনে!সবকটার মাথাটো নামাইন দিবক।ফসলের মাটিটোতে রক্তের বান বইবে আজ!বাপ বলে রেয়াত লাই ! কি বলিস নব ,খং!"
সবাই রে রে করে উঠলো। হাতে শাবল, কোদাল, ধারালো কাস্তে, লাঠি। লেঠেলের দল এগিয়ে যেতেই একেবারে বীরদর্পে ঝাঁপিয়ে পড়ল জনা কুড়ি ।লেঠেলের রক্তে ভিজে উঠলো মাটি।বুধো তখনও হাঁফাচ্ছে।সুবল এগিয়ে এসে গলার কাছে খামচে বলল,"জমি মুদের মায়ের সমান।মায়ের দিকে হাতটো বাড়াবিক কেট্যে লিব। ভেবেছিল জমি পুড়াইলে আর কুন উপায় দেখবো না মোরা।ছেড়েটো দিবক।উয়ারাও জমি বিচে দিবে ।বাপেরো বাপ থাকে রে বাপ!"
বুধো হতবুদ্ধির মত তাকিয়ে থাকে। রাতের শেষে পূবদিকের সোনালী আলো তখন আমন ধানের উপর স্পর্শ করেছে। আর কিছুক্ষণ কদিন পরেই পৌষের পাকা ফসলে উঠোন ভরে উঠবে।।
সাহিত্যিক সৌমী গুপ্ত
১৬২, রাইফেল ক্লাব রোড, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ