অনিন্দ্য পালের গল্প


গোলা 

ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল বেস্পতি। ছেলেটা এত রাগী হল কী করে?এইটুকু কথায় খাবার ফেলে উঠে গেল! 

পঞ্চা পান্তার গামলায় আর এক খাবলা নুন মিশিয়ে,এক কামড় পেঁয়াজ দিয়ে খাওয়া শুরু করলো। সেদিকে একটু তাকিয়ে বেস্পতির হঠাৎ শরীরটা জ্বালা দিয়ে উঠলো। বেশ ঝাঁঝিয়ে বললো, 
---গোলাটা না হয় দে দিলে ছাবালটারে। সেই তো পড়েই থাকে,চাষ তো আর হয় না আগের মত,যা হয় ওই ক'বস্তায় পুরে না হয় এই মেটে দাওয়ায় ফেলে রাখবো।ছেলে এখন সরকারী লোক,ওর তো একটা পাকা দালান থাকতি হবে। দে দাও,দে দাও। রোজ রোজ আর এই কুকুর কান্টাকান্টি ভালো লাগে না। 

---অ! 

পঞ্চা এইটুকু শব্দ করে আবার আগের মতই খেতে লাগলো। 

পান্তার আমানিটা চুমুক দিয়ে শেষ করে গামলাটা ঠেলে সরিয়ে দিল পঞ্চা। একটা ঢেকুর তুলে একটু চুপ করে বসে থাকলো। 

---ওই গোলায় শুধু কি ফসল থাকে? ওকেনে আমার বাপ-পিতমোর আত্মা শান্তিতে বাস করে।তিন পুরুষের গোলা। চাষ করেই তো চলে যাচ্ছিল,পড়াশুনা শিখে ছেলে বাবু হয়ে গেল।তা নয় হল,তা বলি আমার গোলাটা ভেঙেই ঘর করতি হবে? 

ঠিক তখুনি ঘর থেকে বের হয়ে এল পিলন। বাবার দিকে চোখ কুঁচকে চড়া সুরে বললো, 

"আমি তো তোমার ছেলে। আমার সুখটা তোমার কাছে কিছু না? আমার চেয়ে তোমার গোলাটা বড় হয়ে গেল!আমি চাকরি করি। আমাকে একটু ভালো থাকতে হবে তো,না কি? " 

পঞ্চা কয়েক সেকেন্ড পিলনের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর হঠাৎ উঠে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল।কয়েক মুহুর্ত পর সেখান থেকে বেরিয়ে ছেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বাম হাতের মুঠো খুলে রাখলো ছেলের সামনে। সেখানে একমুঠো সোনালী ধান। পিলন দেখলো তার বাবার চোখ দুটোতে জল চকচক করছে। 

---এটা আমার বড় ছেলে। তুই ছোট। এতদিন এই ছেলেই তো আমাদের খাইয়েছে।এখনো খাওয়াচ্ছে।ওকে কি করে বঞ্চিত করি বল? ওটাই,ওই গোলাটাই তো ওর ঘর।আর তো কিছু চায়নি ও। 

হতবুদ্ধি পিলনের মনে হল,তার বাবার কালো,রোদে পোড়া শরীরটা যেন কেমন সোনালী হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।বাবার গা থেকে একটা খুব সুন্দর গন্ধ পিলনের মনটাকে হঠাৎ ছোটবেলায় নিয়ে গেল। গরম ভাতের গন্ধে পিলনের পেট জুড়ে খিদের অঙ্কুর,পিলন চেঁচিয়ে উঠলো--- 
"মা,খুব খিদে পেয়েছে,খেতে দাও!" 

সাহিত্যিক অনিন্দ্য পাল
 জাফরপুর, চম্পাহাটি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা






0 Comments