স্বাতী রায়ের গল্প


ফিরে দেখা 

আজ চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি। খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেছে সুদেষ্ণার।ঘুম ভেঙে গেছে? না, ঘুমাতেই পারে নি কে জানে। আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে।এক সপ্তাহ আগে ফোনে কলেজের এক বন্ধু মারফৎ খবর পেয়েছে দীর্ঘ একত্রিশ বছর পর তাদের মহাবিদ্যালয়ের বন্ধুরা রি- ইউনিয়ন করবে।দিনটা তারা চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি ঠিক করেছে।বুকের মধ্যেটা মোচড় দিয়ে উঠল তার।অস্ফুটে বলে ওঠে-- সৌমাল্যর সাথে কথা হয়েছে?ও আসবে?
--আসবে আসবে সবাই আসবে। একটা জমজমাট গেট টুগেদার হবে। তুই আসবি কিন্তু। কোন হলে হবে তোকে হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়ে দেব।

ঠিক একত্রিশ বছর আগে সতেরো বছরের সুদেষ্ণার মুখটা মনে করার চেষ্টা করল পঞ্চাশ ছুঁতে চলা সুদেষ্ণা। তখন সবে একাদশ শ্রেণী।কৃষ্ণনগর,ছোট মফস্বল শহর।কবি বিজয়লাল উচ্চ মহাবিদ্যালয়ে শুধু একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীই পড়ানো হয়। সে দিনটাও ছিল চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি। কানের পাশে জোড়া বিনুনি করে সবে শাড়ি পরতে শেখা সুদেষ্ণা অন্য দিনের মতো ধীর পায়ে কলা বিভাগে ঢুকতেই পায়ের কাছে টুপ করে ঢিল বাঁধা কাগজের টুকরো এসে পড়ল।সতেরোর সুদেষ্ণার বুকের ভিতর একরাশ প্রশ্ন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো উথালপাথাল করে উঠল।কী ওটা? মহাবিদ্যালয়ের চাতাল ততক্ষণে ছাত্র ছাত্রীদের আগমনে সরগরম হতে শুরু করেছে। শিক্ষক শিক্ষিকারাও অনেকেই ঢুকছেন গেট দিয়ে। সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে সুদেষ্ণা প্রানপন চেষ্টা করে যাচ্ছে শাড়ি দিয়ে কাগজের টুকরোটা আড়াল করতে। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে সবার অলক্ষ্যে অতি সন্তর্পণে কাগজটা তুলে নিয়েই সোজা চালান করে দিল ব্লাউজের ভিতর। নাঃ এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। ওয়াশরুমে গিয়ে কাগজটা খুলে দেখবে কী লেখা আছে।কেউ কি ওকে উদ্দেশ্য করেই ছুঁড়েছে কাগজটা? নানান প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরছে তার।সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলার ডানদিকের বড় হলঘরটা কলা বিভাগের ঘর।সিঁড়ির প্রথম ধাপ পেরিয়ে পরের ধাপে টার্ন নিতেই দেখতে পেল সৌমাল্য কে। খুব নিচু স্বরে সুদেষ্ণাকে কমনরুমে যেতে বলেই দ্রুত বেরিয়ে গেল।কমার্স বিভাগের ছেলে সৌমাল্য। ছোটখাটো  সুন্দর চেহারার লাজুক ছেলেটা তাকে কমনরুমে কেন এভাবে যেতে বলল ভেবে পেল না সে।অদম্য কৌতূহলী মন আর অপেক্ষা করতে পারছে না।ওয়াশরুমে ঢুকে কাঁপা হাতে ব্লাউজের ভিতর থেকে কাগজের টুকরো বের করে খুলতেই দেখে খুব তাড়াতাড়ি হাতের লেখায়--আমি তোমাকে ভালোবাসি।বুকের ভেতর দ্রিম দ্রম শব্দে সারাদিন একটা ক্লাস ও মন দিয়ে শুনতে পারে নি ।শিক্ষকদের কোনো কথাই তার কানে ঢোকেনি।শুধু সময় গুনেছে বিকেল পাঁচটা কখন বাজবে।কমনরুম তাকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মতো টানছে। তারপর টানা দুবছর সৌমাল্য কে একবেলা না দেখে থাকতে পারত না সুদেষ্ণা। সিনেমা,পার্ক,কলেজ এক্সকারসন,কমনরুম, একসাথে টিফিন খাওয়া,খেলাধূলা আরো কত কী।যেন ঝড়ের গতিতে চলে গেল দুটো বছর।উচ্চ মাধ্যমিকে দুজনেই খুব ভলো রেজাল্ট করে শহরের বড় কলেজে ভর্তি হল সুদেষ্ণা বাংলা অনার্স নিয়ে। আর সৌমাল্য চলে গেল অ্যাকাউন্টেন্সিতে অনার্স নিয়ে কলকাতার নামি কলেজে।আলাদা কলেজ, আলাদা শহর,দেখা করার সময় কম তবু দুজনের মন যেন এক সুরে, এক লয়ে গাঁথা। ঠিক এইসময় সুদেষ্ণার বাবা মারা গেল হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে।কাকাদের জোরাজুরিতে মাও সম্মত হল।বিয়ে করতে বাধ্য হল সুদেষ্ণা। 

পাশের ঘরে গোঙানির শব্দে বিছানা ছেড়ে মাঝের দরজাটা বন্ধ করে দিল সে।সারারাত পাশবিক অত্যাচার করে তার চাকুরিজীবী স্বামীর মদের নেশা কাটতে শুরু করেছে। সুদেষ্ণার আপত্তিকে কেউ গুরুত্ব দেয় নি।সমবয়সী সৌমাল্যর ভবিষ্যতের ওপর মায়ের কোনো আস্থা ছিল না। অগত্যা মাকে ভালো রাখার জন্যই মানসিক ভাবে অপ্রস্তুত সুদেষ্ণা সংসার সমুদ্রে পাড়ি দিল। আজ সে আর কারুর কথা ভাববে না।দীর্ঘ একত্রিশ বছর পর আবার সৌমাল্যর সাথে দেখা হবে। ও কি করে,কোথায় থাকে,বৌ কেমন হয়েছে কিছুই জানেনা। কত প্রশ্ন মনের মধ্যে ভিড় করছে।ও সুখেই আছে নিশ্চয় বিয়ে করে। ভালো ছাত্র ছিল।ভালো চাকরিও করছে নিশ্চিত। আজ রবিবার। ছুটির দিন।তার চাকুরিজীবী স্বামীর মদের নেশা সারাদিন ধরেই চলবে। আর চলবে পদে পদে ঠোক্কর দিয়ে কথা।প্রতিবাদ করলেই মার। এই পরিবেশেই কত কষ্ট করে মেয়ে টাকে লেখাপড়া শিখিয়েছে। বাড়ির সবাই মিলে প্রায় জোর করেই মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিল।সুদেষ্ণা রুদ্রমুর্তি ধারন করে বন্ধ করেছে সে বিয়ে।মেয়ে কে সরাসরি প্রশ্ন করছিল বাবা ঠাকুমার প্রস্তাবে সেও রাজি কি না। সবে আঠারোয় পা দেওয়া মেয়ে মায়ের পা জড়িয়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল।পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিল। কমার্সের ভালো ছাত্রী আজ চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ।ব্যাঙ্গালোরে একটা ফার্ম হাউসের ম্যানেজমেন্ট এর দায়িত্বে আছে।

পাশের ঘর থেকে চিৎকার করছে চাকুরিজীবী স্বামী।আজ আর কোনো দিকে তাকাবে না সে। দ্রুত স্নান সেরে ছোট টিপ হালকা রঙের শাড়ি আর হাতঘড়ি টা পরেই আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখল অনেক বছর পর। হালকা লিপস্টিক ঠোঁটে বুলিয়ে নিল।ছোট একটা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সে।আকাশে এখনো আলো ফোটেনি।ট্রেন ধরতে হবে।কৃষ্ণনগর লোকাল। বউবাজার থেকে শিয়ালদহ স্টেশনটা অন্যদিন হেঁটে যেতে দীর্ঘ পথ মনে হয়। আজ যেন পাখির মতো হাওয়ায় ভাসছে সে।ট্রেনে চেপেই স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলে মেয়েকে একটা ফোন করে সে।একমাত্র মেয়েটাই তার অতীত জানে, বর্তমান জানে, ভবিষ্যতের কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়।কতদিন মেয়ে তাকে বলেছে--প্রতিদিন এভাবে মার খেয়ে পড়ে না থেকে বাবার থেকে সেপারেশন নিয়ে নাও মা।এভাবে আর কষ্ট সহ্য কোরো না। তোমার জন্য আমার খুব চিন্তা হয়।আজকালকার দিনের মেয়ে। কত সাহসী। কত সহজে জীবনের জটিলতার সমাধান করে ফেলে।তার মেয়ে তার মতো হয়নি ভেবে ভালো লাগে তার।

--হ্যালো,কে- মা?বলো মাই ফ্রেন্ড বলো।এত সকালে? কি ব্যাপার?মেয়ের ঐ এক দোষ। আদর করে মাকে ফ্রেন্ড বলে সম্বোধন করে।সুদেষ্ণা কি বলবে মেয়ে কে?কিছুই কি হয়নি? অবশ্যই হয়েছে। মদ্যপ স্বামী কে ঘরে একলা ফেলে রেখে এই প্রথম একত্রিশ বছর পর সে ছুটে চলেছে আলোর সন্ধানে ---একা। মেয়ে কে বললে হয়তো খুশিই হবে।

--আমি কৃষ্ণনগর যাচ্ছি। আজ আমাদের মহাবিদ্যালয়ের বন্ধুরা রি-ইউনিয়নের গেট টুগেদার পার্টি করছে। তোকে বলেছিলাম। ভুলে গিয়েছিস? আমি সেখানেই যাচ্ছি। বলতে গিয়ে গলাটা একটু কেঁপে উঠল তার।

-- গ্রেট! দারুন কাজ করেছো মা। এই তো আমার মাকে আমি এইরকমই দেখতে চাই। এনজয় ইয়োরসেল্ফ।তোমার সব বন্ধুদের ছবি আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে পোস্ট কোরো মা।জীবনের বেশিটাই অন্যের কথা ভেবেছো। এবার নিজের কথা ভাবো। নিজেকে চেনো।বাঁচতে শেখো নিজের জন্য...আরো কিছু বলছিল মেয়ে।ট্রেনের হর্নে সব কথা তার কানে এসে পৌঁছালো না।লাইন টা কেটে।
ট্রেনের হাওয়ায় চোখ বন্ধ করে আরাম করে বসতেই ক্লান্ত শরীর অবসন্ন হয়ে এলো তার।কত কান্নাকাটি করেছে সে মায়ের কাছে পড়াশুনা করতে চেয়ে। কি অসুবিধা ছিল মায়ের কে জানে। তাকে বিয়ে দেবার জন্য এত মরিয়া হয়ে উঠেছিল কেন? সৌমাল্য অনেক বুঝিয়েছিল মাকে। পাঁচটা বছর সময় চেয়েছিল।তার মধ্যেই সে একটা চাকরি পেয়ে যাবে কথা দিয়েছিল মাকে।মা কিছুতেই রাজি হল না। বরং কাকাদের পরামর্শে প্রায় জোর করেই একটা কিশোরীর সব স্বপ্ন হত্যা করল। শ্বশুরবাড়ির কারুর মত ছিল না পড়াশুনা সে পড়াশুনা করুক।শুধু সেবা আর সবার মন পাবার জন্য পদে পদে রান্না করতে হয়েছে। তবু মন পায়নি। পান থেকে চুন খসলেই মার খেয়েছে।

বড় হল ঘরটা গমগম করছে।সব বন্ধু দের সাথে একত্রিশ বছর পর দেখা।হলের ভেতরে একটা পুরোনো দিনের গান বাজছে।সুদেষ্ণা কাউকে চিনতে পারছে কাউকে পারছে না। সবাই সবার সাথে হাত মেলাচ্ছে। তাকে দেখতে পেয়েই বুকে জড়িয়ে ধরেছে স্বাগতা রেবা রীনা জবা। সবাই আপ্লুত।বড় ডায়াসের  একটা কোনে চোখ আটকে গেল সুদেষ্ণার। ঐ -ঐতো সৌমাল্য। অবিকল এক আছে।কারোর সাথে ফোনে কথা বলছে।একত্রিশ বছরে এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। শুধু চেহারাটা একটু ভারি হয়েছে।বেসিনের আয়নায় নিজেকে দেখল সে।দুচোখের কোলে কালি আর ক্লান্তির ছাপ।আয়নার কাছ থেকে সরে এসে জানলার ধারে দাঁড়িয়ে আনমনা হয়ে গেল সে।দীর্ঘ একত্রিশ বছর পর কেউ চেনা কেউ অচেনায় ধরা দিচ্ছে একে অপরকে। 

--কেমন আছো? চমকে পেছন ঘুরে তাকিয়ে সুদেষ্ণা দেখে সেই দুষ্টুমি তে ভরা গভীর চোখদুটো তারই দিকে তাকিয়ে হাসছে। 
--ভালো। তুমি?
--খুব ভালো। 
--তুমি কোথায় থাকো? ছেলেমেয়ে কটা?  সুদেষ্ণা জানার চেষ্টা করল সৌমাল্যর বিয়ে করে কতটা সুখী।
--আমি এখন ব্যাঙ্গালুরু থাকি।একটা ফার্মহাউস করেছি। বলতে পার ফার্ম হাউসের মালিক।দামি সিগারেটে সুখের টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ল সে।

একদল বান্ধবী যেন সতেরোর তরুনীর মতো ছুটে এসে সৌমাল্য কে চেপে ধরে ডায়াসের ওপর নিয়ে গেল স্যাক্সোফোন বাজানোর জন্য। প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিল সৌমাল্য।স্যাক্সোফোনে একটার পর একটা সুর তুলে আন্দোলিত করে গেল সকলের হৃদয়। সারাদিনের ঠাসবুনোট অনুষ্ঠানের মধ্যেই চলল খাওয়া দাওয়ার পর্ব। এরই মাঝে ছোট একটা কাগজের টুকরো সুদেষ্ণার হাতে গুঁজে দিয়ে আবার মেতে উঠলো সৌমাল্য। একত্রিশ বছর আগের মতো খুব সন্তর্পণে ওয়াশরুমে ধীর পায়ে ঢুকে কাগজের টুকরোটা খুলতেই চমকে উঠল সে। 
--ঠিক বিকেল পাঁচটা নদীর পাড়ে বেদিতে বসব। সেই বেদি! কত বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা কেটেছে তাদের এই বেদিতে বসেই।

আচ্ছন্ন সুদেষ্ণা ধীরে ধীরে হল থেকে বেরিয়ে গেল সকলের অলক্ষ্যে। মন্ত্রের মতো পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো নদীর ধারে। মাত্র পনের মিনিট পথ হেঁটে এসে বেদিতে বসে হাঁপাতে লাগল।উত্তেজনায় দীর্ঘদিনের অত্যাচারিত শরীর টলছে।রুমাল দিয়ে চোখ মুখ মুছতেই দেখতে পেল সুঠাম ঝকঝকে সৌমাল্য তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। 
--আর তিনটে বছর অপেক্ষা করতে পারলে না?অকপট সৌমাল্য।
--তোমার স্ত্রী ...সুদেষ্ণা কে কথা শেষ করতে না দিয়েই সৌমাল্য বলে ওঠে--বিয়ে করিনি।
--কেন?
--অদৃষ্টে নেই। তুমি কেন এত অত্যাচার সহ্য করেছ মুখ বন্ধ করে? 
--ক্ কে বলল তোমাকে? কি করে জানলে তুমি এসব? অবাক হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে সৌমাল্যর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে ভ্রু কুঁচকে। 
--সব জানি আমি। আয়ুষি আমাকে সব বলেছে। অবাক হবার আরো বোধহয় কিছু বাকি ছিল। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সুদেষ্ণা। মেয়ের নাম জানল কি করে সৌমাল্য? 

পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে ক্রমশ। ধপ করে বসে পড়ল বেদিতে।
আয়ুষি আমার অফিসে একটা গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে আছে সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায়। ঝকঝকে প্রাণোচ্ছল মেয়ে। কাজেও সমান দক্ষ। ওর কাছে আমি সব শুনেছি। তোমার প্রতিদিনের অত্যাচারিত হবার গল্প ,কত কষ্ট সহ্য করে মেয়ে কে মানুষের মতো মানুষ করেছ সব শুনেছি। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে সুদেষ্ণার। মেয়ে তো তাকে কোনোদিন কিছু বলেনি সৌমাল্যর কথা।বিশ্বাস হচ্ছে না তার। সন্দিগ্ধ চোখে সৌমাল্য কে দেখতে থাকল। 

--আমার অফিসে সবচেয়ে দক্ষ বুদ্ধিমতী মেয়ে আয়ুষি। ওর কাছে সব শুনে ওরই পরিকল্পনায় আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। কথাগুলো বলে একদৃষ্টিতে সুদেষ্ণাকে দেখতে লাগল সৌমাল্য। ঠিক সেই সময় তার ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল আসতেই মেয়ের ছবি স্ক্রিনে ভেসে উঠল।মেয়ে ফোন করেছে। হাত কাঁপছে সুদেষ্ণার। এই প্রথম মেয়ের কাছে গুটিয়ে যাচ্ছে সে।কাঁপা হাতে ফোন ধরতেই ওপাশে মেয়ের আনন্দচ্ছল মুখ।স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে উঠল --আজ সারাদিন কেমন কাটালে মা? তোমাকে আর আঙ্কেল কে একসাথে দেখে আমার মনটা খুব ভালো হয়ে গেল।জানো মা,আমি তোমাকে কিছু বলিনি।কারণ আগে জানালে তুমি এত সাবলীল ভাবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারতে না। আমি সব জানি এটা জানলেই নিজেকে গুটিয়ে নিতে।মা,ঐ ভদ্রলোক তোমার ভালোবাসাকে গুরুত্ব দিয়ে আজও বিয়ে করেন নি।জীবনে কাউকে আর আনেন নি। আনন্দ কর মা। দিনটা উপভোগ কর।বাকি জীবনটা উপভোগ কর।তোমার সাথে আমি আজ আর ফোনে  কথা বলে তোমার মূল্যবান সময় নষ্ট করে দেব না।ফোনটা কেটে দিল মেয়ে। ঝরঝর করে কাঁদছে সুদেষ্ণা। দুই হাতের বাহুডোরে সুদেষ্ণা কে বেঁধে সৌমাল্য বুকে জড়িয়ে ধরল। সৌমাল্যর বুকে মুখ গুঁজে জীবনের সব সঞ্চিত কান্না উগড়ে দিল সুদেষ্ণা। ঘরে ফেরার উদ্দেশ্যে সারিবদ্ধ একদল হাঁস পড়ন্ত বিকেলের সোনালী আলোয় সেই ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল।

 লেখিকা স্বাতী রায়
  ৪/১ যাদবগড়, হালটু, কলকাতা

















0 Comments