ফিফটি-ফিফটি ~ মুক্তি দাশের অণুগল্প


মুক্তি দাশের অণুগল্প 
ফিফটি-ফিফটি

রথের মেলায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে ঘুরতে সনাতন একসময় একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পাঁপড়ভাজা খাচ্ছিল। এরপর সে কাঠিগজা কিনে খাবে। তারপর একটু নাগরদোলায় চড়ে উপরনিচ বাঁই-বাঁই করে ঘুরলেও ঘুরতে পারে। এরকমই সে ভেবে রেখেছে।

ঠিক সেইসময় সে শুনতে পেল মাইকে অ্যানাউন্সমেনট হচ্ছে : "সাত-আট বছরের একটি ছেলে মেলায় হারিয়ে গেছে। নাম রাহুল। গায়ের রং ফরসা। পরণে ক্রীম-রঙা জিন্সের ওপর মেজেন্টা কালারের টি-শার্ট। খুঁজে পেলে সন্ধানকারীকে হাতে হাতে নগদ দশহাজার টাকা দেওয়া হবে।"  ইত্যাদি ইত্যাদি। সনাতন তেমন গা করল না। সে মনের সুখে পাঁপড়ভাজা খেতেই থাকল।
  
এমনসময় পেছনদিক থেকে কেউ একজন তার হাত ধরে মৃদু অথচ হ্যাঁচকা টান দিল। সনাতন ঘুরে দেখল, একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোঁপাচ্ছে। সনাতন শরীরটা নিচু করে জিগেস করল, "কী হয়েছে খোকনসোনা, কাঁদছ কেন?" 

তেমনি ফোঁপাতে ফোঁপাতে ছেলেটি বলল, "আঙ্কেল, ও আঙ্কেল...আমি না হারিয়ে গেছি। ওই যে মাইকে বলছে, শুনতে পাচ্ছ না? আমার নামই তো রাহুল। আমাকে আমার বাবার কাছে পৌঁছে দেবে?"

এক লহমার জন্যে বিদ্যুৎচমকের মতো দশহাজার টাকার ব্যাপারটা সনাতনের মাথার মধ্যে ঝিলিক মেরে গেল। সে নির্বিকার মুখে হাত বাড়িয়ে বলল, "এসো না, এসো...তোমার কোনো চিন্তা নেই। ভয়ও নেই। তোমাকে ঠিক তোমার বাবার কাছে পৌঁছে দেব।"  বলে ছেলেটির হাত ধরে মেলাকমিটির অফিসের দিকে এগোতে শুরু করে দিল সনাতন। কিছুটা এগিয়েছে, ছেলেটি সনাতনের হাত ধরে দাঁড় করাল। তারপর বলল, শুনেছ তো আঙ্কেল, আমাকে খুঁজে দিলে বাবা কিন্তু দশহাজার টাকা দেবে?" 

সনাতন নিপাট ভালোমানুষের গলায় দার্শনিকের মতো বলল, "হুম শুনেছি, কিন্তু বাবা, টাকাটাই তো আর সব নয়, এইযে তোমাকে খুঁজে পেতে তোমার বাবার হাতে তুলে দিচ্ছি..."

মাঝপথে ওকে থামিয়ে দিয়ে ছেলেটি বলে উঠল, "তুমি শুধু বাবার হাতে আমায় তুলে দেবে, বুঝলে? তারপর ফিফটি-ফিফটি...রাজি?"

সাহিত্যিক মুক্তি দাশ 
১৩৫, অঘোর সরণী, রাজপুর, কলকাতা













1 Comments