চারটি কবিতায় ~ তাপসকিরণ রায়


তাপসকিরণ রায়ের চারটি কবিতা

পুরুষ ও প্রজাপতি

অপরূপা, ফুল বাগানে রংমিলান্তি খেলতে খেলতে একটি পুরুষ এগিয়ে চলেছে

তার বাউরি মনে নারী গন্ধবহ নেশায়,একটি নারী ও রাত চরিত্র তৈরি হচ্ছে।  

কখনো যমুনায় নির্মোহ ঢল নামে, 

আর্তনাদের বেড়া ভাঙতে ভাঙতে কিছু কিছু ভালোবাসা টুকরো টুকরো, 

একটা মন, টুকরো ভালোবাসা ছড়িয়ে-ছিঁটিয়ে 

একটা জীবন নির্মোহ বয়সের প্রান্তে এসে কিছু গন্ধ ও মাদকতা অচ্ছুৎ আমোদ

কখনো মহোৎসবের হরিনাম গান, কীর্তনের আখাড়ায় সে পুরুষ বৈষ্ণবীর গান শোনে   

কখনও বিকৃত নাসিকায় সে বাসি ফুলের ঘ্রাণ টেনে নেয়। 


স্ফুলিঙ্গ 

 

ইটস রেইনিং ক্যাটস এন্ড ডগস 

মাথার ছাতি ভেদ করে কাক ভেজা হয়ে হাঁট ছিলাম

ভেবেছিলাম সোনালী তখনও আমার অপেক্ষায় জানালায় দাঁড়িয়ে--

আমি দরজায় বারবার টোকা মেরেছি...

পাশের জালনার ঈষৎ ফাঁক দিয়ে ওকে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম...  

দরজা না খুলে সে মাথা উঁচু করে কি যেন দেখছিল ! 

আমি তার দৃষ্টি ধরে তাকালাম-- 

সামনের কার্নিশহীন নেড়া ছাদে একটি উলঙ্গ ছেলে দাঁড়িয়ে

শ্রাবণের ঢেউ তার অবিশ্রান্ত দেহে খেলা করছে।

রাগ হল খুব, আমার ফিরে যাওয়া সোনালী টের পেল না, 

অজস্র শ্রাবণের ধারা আমার ছাতা ফুঁড়ে নেমে আসছিল, 

ঘোলা কাদা জল--জলজ হয়ে যাচ্ছিল আমার দেহ ও কৌপীন। 

শ্রাবণের ধারায় কিন্তু সেই উলঙ্গ ছেলেটি ক্রমশ ধুয়ে যাচ্ছিল-- 

ভেজা শরীর থেকে তার জ্বলে জ্বলে উঠছিল স্ফুলিঙ্গ ফসফরাস। 

 

শ্রাবণধারা

 

কখনও চোখের পলক ব্যাপে শ্রাবণধারা নেমে আসে 

নির্জনতা ভেঙে সেখানে শব্দরূপগন্ধময়--

আদুড় গায়ের মেয়েটি বৃষ্টির ছলকে নেচে যাচ্ছে। 

সেই সাঁওতালি মেয়েটি ভেজাগন্ধ  ও সোঁদামাটির আলাপনে 

আপনি আপনি হেলে দুলে উঠছিল।  

ঝমাঝম বৃষ্টিরণনের মাঝখান দিয়ে এক সুর বেজে  উঠছিল।  

তাকে সে চিনতে পেরেছিল-- 

কোথাও তো বুকের মাঝ থেকে মাদল বেজে উঠছিল।


পুরুষালী ঘ্রাণে ও ক্রমশ জেগে উঠছিল, 

এমনি বর্ষার গন্ধের তার শরীর পিপাসা 

এমনি শীতালী অগ্নিতাপের মন তার, 

কাঁঠালিচাঁপার খোঁপা ভাঙা এক ঢাল চুল তার 

পিঠ ও নিতম্ব বেয়ে নেমে গেছে

তবু সমস্ত শ্রাবণধারা তার স্তন খুলে নিতম্ব আশ্রয় বেয়ে  

নিচে, ক্রমশ আরও নিচে নেমে যাচ্ছে,,, 

 

শ্রাবণের অন্তঃধারায় 

 

মরা জোছনা ও গহন কালো মেঘের কোন্দল ছিল। 

দেখ ঝড় থেমে গেছে, বাতাসঝাপট থেমে গেছে, 

ও লো বকুল সই, এবার মালা গাঁথ--বিনি সুতোর মালা, 

শ্রাবণধারা যাকে ছিঁড়ে দিতে পারবে না, 

মনের মধ্যে আঁটসাঁট বাঁধন রাখ--

শরীর যেন অযথা দ্বিধাবিভক্ত না হয়ে যায় !  

 

কিছু অসাবধানী বেনো জল গড়িয়ে আসতেই পারে  

মনের ভেতরটা তুই তখনও কোমল ও তরলিত রাখ, 

শক্ত কাঠামো যতই নাড়া দিয়ে দিয়ে যাক-- 

সেখানে তোর সৌন্দর্য থেমে থাক।   

এই আনন্দ উৎসবে শ্রাবণের সহস্র ধারা আসুক না নেমে-- 

গায়ে মাথায় এবং অভ্যন্তরে 

বৃষ্টির ভিজে যাওয়া রাঙামাটি ও কালো মাটি এক হয়ে কাদা হয়ে 

রাস্তায় সে কাহিনী, গন্ধ হয়ে, রূপসীর অন্তর্বাস ভিজাক--  

তবু প্রিয়া, এমন বল্গাহীন শ্রাবণ ধারার তৃষিত তাপে 

অপেক্ষা, আরও অপেক্ষায় আমরা তবু বসে থাকবো।


কবি তাপসকিরণ রায় 
স্টেশন রোড, জবলপুর, মধ্যপ্রদেশ 


















0 Comments