আমীরুল আরহামের দুটি কবিতা





বন্দিশালায় চাঁদ


ছেলেমেয়ে দুটি দু'বাড়ির জানালার ফাঁক দিয়ে
আড়ি মেরে দেখে আকাশের তারা, পূর্ণিমা চাঁদ
কয়লার বিদ্যুতে চাঁদের দেহে ডোরা কাটা কালো দাগ
রুদ্ধশ্বাস বাঘগুলো লাফ দেবে মর্ত্যে যে কোন দিন
গহন বনের দহন ছায়ায় মুখ পোড়া চাঁদ চোখ মুদে দেখে
পৃথিবীর বিষে ভরিয়ে তুলেছে আকাশে ওজন ।

গাছকাটা গৃহছাড়া রাতজাগা হুতুমপ্যাঁচা ঠোঁটে নিয়ে চাঁদ
ধুলায় দুখে ম্লান বন্দী করেছে তারে রামপালের বন্দিশালায়
বনের গভীরে হারিয়ে গেছে ব্রহ্মজ্ঞানী বৃক্ষ সমুদ্র তটের বালু
আকাশ জুড়ে বাড়ি আকাশ জুড়ে ছাদে অন্ধকার গভীর রাত।

সামনে বড়দিন শুভদিন সমুদ্র,নদী,পাহাড় বা আকাশ কেনার
যে যার তেরপাল তুলে করেছে বাজার দখল
পৃথিবাটা জঞ্জালে ভরে গেলে শহর উড়বে উপরে
শহরের ঘরে ঘরে ঝুলবে ঝালরে নক্ষত্র আর চাঁদ।


সিঙ্গল শট 

বেলায়েত খাঁ’র ভৈরবী পূবের ঘরে
সকালের দুকাপ কফিতে ধোঁয়া
পাশেই না-খাওয়া ডিম আলুভাজি রুটি 
জানালা থেকে তির্যক রোদ টেবিলে
চামচে কিছুটা ছিটিয়ে তার চিবুকে
কয়েকটি অগোছালো চুল কপাল ছুঁয়ে হাত মুখে
ভোঁ ভোঁ কয়েকটা মাছি আর বাইরে কা কা
আর সব স্তব্ধ শূন্য ফাঁকা
আমরা দুজন পাশাপাশি
নিষঙ্গ একা বাইরে তাকিয়ে যে যার শূন্যে
বসেছিলাম না-বলা কথার দোলনায় ঝুলছিলাম 
বিড়ালটি দ্বিধা করতে করতে একসময়ে
এক টুকরো রুটি নিলো সযত্নে খেলো
মাছিগুলো উড়ে গেলো
কাকগুলো তখন ও বাড়ির ছাদে
হাতি মার্কা অলক মেঘের তলায়
‘টাটকা সবজি’ সুরেলা হাঁক ছুঁয়ে গেলো ছ’তলায়
নাচুমুক ঠাণ্ডা কফিতে আমার মুখের আদল
বাদল দিনের আভাস দিয়ে
রোদটা পশ্চিমে পালালো যখন
সে উঠে গেলো নীরবে
আমি তখনও শূন্যে ঝুলে ছিলাম
সেই থেকেই শূন্যে...


         কবি আমীরুল আরহাম 
                প্যারিস, ফ্রান্স 

0 Comments