
সম্পাদকীয়:
সব শহরইতো কিছু কথা বলে। আসলে সবারই থাকে কিছু ইতিহাস। বহু পুরনো,ইতিহাসের ভারে জরাজীর্ণ শহর বেনারসের কথা মনে পড়লেই যেমন ভেসে ওঠে - পুন্যাত্মা গঙ্গা,দশাশ্বমেধ ঘাট,গঙ্গারতি,মন্দির,সাধু - মহাত্মা,গলির ভেতর তস্য গলি,বেনারসি জর্দার গন্ধ , সত্যজিত রায়ের জয়বাবা ফেলুনাথ সিনেমার কথা, ...আরো কতো কি ! আবার মুর্শিদাবাদ শহরের হাজার দুয়ারী দেখি যখন, তখন মনে পড়ে - সেই অষ্টাদশ শতাব্দীর সমৃদ্ধির নগরকে। সমগ্র বাংলা,বিহার, উড়িষ্যার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ। এটি ছিল বাংলার বংশগত নবাবের রাজ্য। সেইসঙ্গে ভারাক্রান্ত হয় মন পলাশির যুদ্ধের কথা ভেবে - যেখানে লেখা আছে বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। দিল্লী শহরের ঐতিহাসিক সৌধগুলো দেখে মনে পড়ে যায় মুঘল সাম্রাজ্যের কথা। আর আগ্রাতো প্রেমের শহর। তাজমহল দেখে কে নস্টালজিক হয়ে পড়েনা ? স্রষ্টা শাজাহানকে নিয়ে লেখা রবীন্দ্রনাথের সেই অসামান্য কবিতাটা মনে পড়ছে -
"চলে গেছ তুমি আজ মহারাজ,
রাজ্য তব স্বপ্নসম গেছে ছুটে,
সিংহাসন গেছে টুটে,
তব সৈন্যদল
যাদের চরণভরে ধরণী করিত টলমল
তাহাদের স্মৃতি আজ বায়ুভরে
উড়ে যায় দিল্লির পথের ধূলি পড়ে।
••••••••••••••••••••••••••••••••
তুচ্ছ করি রাজ্য - ভাঙা গড়া ,
তুচ্ছ করি জীবনমৃত্যুর ওঠাপড়া ,
যুগে যুগান্তরে কহিতেছে একস্বরে
চিরবিরহীর বাণী নিয়া
ভুলি নাই, ভুলি নাই,ভুলি নাই প্রিয়া।"
কর্মসূত্রে যারা কলকাতার বাইরে,তারা যত দূরেই থাকুক - কোনোদিন ভুলতে পারবে কলেজস্ট্রিটকে ? বইয়ের গন্ধ আর কফিহাউসের আড্ডাকে ?একসময় ময়দানে মোহনবাগান - ইস্টবেঙ্গল দেখে ফেরার পথে অনাদির মোগলাইয়ের স্বাদ মনে পড়বেই,কিংবা বড়দিনের মায়াবি আলোয় পার্কস্ট্রিটকে।
আর এইসব ফেলে আসা শহরে যদি থেকে থাকে কোনো মন দেওয়া - নেওয়ার স্মৃতি,হোকনা তা ব্যর্থ প্রেম। টাটকা স্মৃতি নিয়ে ঠিক ফিরে আসে সেই শহরে এলে। যা আমাদের উদ্বেলিত করে,আচ্ছন্ন করে, ভারাক্রান্ত করে। থমকে দাঁড়াই,ডুব দিই অতীতে। কলকাতায় এমন কতো প্রেমের জায়গা ছড়িয়ে আছে। তিলোত্তমার বুকে নির্জন প্রেমের সেরা ঠিকানা সেন্ট্রাল পার্ক। আবার ভিক্টোরিয়ার প্রেম জমে বাদাম ভাজার সঙ্গে। কতো হারিয়ে যাওয়া প্রেমের সাক্ষী আছে প্রিন্সেপ ঘাটও।
সাহিত্যেও দেখি বহুবছর পর গ্রামে ফিরে কুমুদিনীকে না পাওয়ার দুঃখে মন ভরে ওঠে হীরেনের। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপধ্যায়ের "অরন্ধনের নিমন্ত্রণ" গল্পটার কথা বলছি। হয়তো অনেকেই পড়েছেন।শহরের কাজের চাপে ব্যস্ত হীরেন গ্রামে এসেছে কুমুদিনীর অরন্ধনের নিমন্ত্রণে। পিসিমার বাড়িতে অনেক বছর পর দেখা হয় দুজনের ! দুজনেই অন্যত্র বিবাহিত। গ্রাম্য কুলীন প্রথার বিধি নিষেধে বিয়েটা হয়নি ওদের। তবু ওরা আবিষ্কার করে এতো বছরে হারায়নি ওদের প্রেম। বিভূতিভূষণের মর্মস্পর্শী লেখায় তা ফুটে উঠেছে অনবদ্যভাবে। আসলে কিছু হারায়না বোধহয়, থেকে যায় মনের গভীরে। কখনো অনুকূল পরিবেশে রুদ্ধ সেই স্মৃতি ফিরে আসে হু হু করে। এইরকম অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত -
"স্মৃতি পিপীলিকা তাই পুঞ্জিত করে
আমার রন্ধ্রে মৃত মাধুরীর কণা ;
যে ভুলে ভুলুক কোটি মন্বন্তরে
আমি ভুলিবনা,আমি কভু ভুলিবনা"
আবার জীবনানন্দ দাশ তাঁর "হায় চিল " কবিতাতে হারিয়ে যাওয়া প্রেমের কষ্ট ভুলতে চেয়েছেন -
"হায় চিল,সোনালি ডানার চিল,
এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর উড়ে উড়ে কেঁদো নাকো ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে।
পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;
আবার তাহারে কেন ডেকে আন ?কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে।"
বিষয়টা লিখতে গিয়ে নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলাম। এবার থামব। আশা করি আপনারাও ভালোবেসে নস্টালজিক হয়ে পড়বেন এই সংখ্যাটা পড়ে। সবাই ভালো থাকুন। সাহিত্যে থাকুন। অনেক শুভেচ্ছা , ধন্যবাদ সবার জন্য।
*এবারের সম্পাদকীয় লিখে সহায়তা করেছেন সাহিত্যিক বন্ধু সুমিতা চক্রবর্তী।
সূচিপত্র:
কবিতা: ॥ নাসির ওয়াদেন ॥ দেবার্ঘ সেন ॥ সজল কুমার টিকাদার ॥ নিমাই জানা ॥ নাসিম বুলবুল ॥ তুলসীদাস ভট্টাচার্য ॥ মীরা মুখোপাধ্যায় ॥ তুহিন কুমার চন্দ ॥ সাইফুল ইসলাম ॥ চিরঞ্জিৎ বৈরাগী ॥ শৌভিক চ্যাটার্জী ॥ শুভ্রাশ্রী মাইতি ॥সাত্যকি ॥ লিজা লিনকন ॥ মহুয়া গাঙ্গুলী ॥ অমিত কুমার সাহা ॥ সোমা ঘোষ ॥ ঐন্দ্রিলা মজুমদার ॥ নিশিকান্ত রায় ॥ মিলি মন্ডল রায় ॥ তুষার ভট্টাচার্য ॥ সুজিত কুমার মালিক ॥ পার্থ প্রতিম পাল ॥
গল্প: ॥ সমাজ বসু॥ শৈবাল মুখোপাধ্যায় ॥ পাভেল ঘোষ ॥ ঋভু চট্টোপাধ্যায় ॥ দীপক বেরা ॥ সৌমী গুপ্ত ॥ উত্তম সিংহ ॥ সোমা সাহা ॥ অমিত কুমার জানা ॥ শুভ্রশোভন রায় অর্ক ॥ শুক্লা মুখার্জি ॥ বিকাশ বর ॥ সুষ্মিতা রায়চৌধুরী ॥ সুদীপ পাঠক ॥ অঞ্জনা গোড়িয়া ॥ অভিষেক ঘোষ ॥
মুক্তগদ্য: ॥ সোমনাথ বেনিয়া ॥ প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ ॥ অরিজিৎ পাঠক ॥ দেবদাস কুণ্ডু ॥
অনিন্দ্য দত্ত ॥ রুচিরা দাস ॥ নন্দিতা মিশ্র চক্রবর্তী ॥
স্মৃতি আলেখ্য: ॥ চমক মজুমদার ॥ চন্দন বিশ্বাস ॥ আশিস মুখার্জ্জী ॥ বিকাশরঞ্জন হালদার ॥
খোলা চিঠি: ॥ অন্তরা দাঁ ॥ সৌমী আচার্য্য ॥ সুকুমার হালদার ॥
নিবন্ধ: ॥ বারিদ বরন গুপ্ত ॥
আত্মকথন: ॥ সুমিতা চক্রবর্তী ॥
0 Comments