চিত্তরঞ্জন গিরির কবিতা


শীত,তোমারই অঙ্গনে

নিঃশব্দে-কুয়াশায়,গুটি গুটি পায়ে,ছায়াঘন মেঘে প্রাণে দিলে ঠান্ডা উতল হাওয়া

তোমার ওড়না -একটু একটু করে,যখন ঘিরে ধরে
একটার পর একটা শ্বাস -নদীর ভগ্নতটে
বিরহী উত্তরীয় উড়িয়ে দেয়-বিষন্ন অনুরাগ।
শঙ্খচিলের ডানায় ডানায়,গোধূলির অস্তরাগে শ্বেত বলাকায় শেষ রশ্মি ছটায়
একা একা জেগে থাকি শুধু শুধুই এক মুঠো অনুরাগ উষ্ণতায়।

সকাল বেলায় শিশির গুলো,তোমারই হাতের নেলপালিসে-যখন নৃত্য করে কাব্যময় ছন্দে
মায়াবী মোহে আচ্ছন্ন হয়ে যাই
বিরহী যক্ষরাজার -চুম্বকন দ্বীপদ উপপাদ্যে।  

ভোরের আলোয় মিঠেল রোদ্দুর -গরম চায়ের কাপ চুমুক দিতে দিতে -স্বপ্নে বিভোর হই তোমারই স্বতন্ত্র ভঙ্গিমায় 
প্রানে প্রানে দেয় উত্তাপ -মুক্তবিহঙ্গের উড়বার ঠিকানা।
ভেসে যাই -আনমনায়
বেকিংহাম প্যালেসের নীল নয়নাদের
উড্ডীয়মান মন্ত্রমুগ্ধ ডানায় ডানায়।

গোধূলির অস্তাচলে সাঁঝের মল্লিকা,বনজোছনায় প্রেমিকের আবেগ-পাথরে পাথরে ঘর্ষণ
এ এক অনাস্বাদিত হরমোনীয় মুক্তোর বিচ্ছুরণ!
তুমি,ঠিক যেন সেই -বর্ষায় স্নাত,কাঁচাহলুদে গৌরবর্ণ নারী,স্বর্ণঅঙ্গ অলংকরন 
হৃদয় তোলপাড়-ধিকি ধিকি,দাউ দাউ
জেগে ওঠে- কামনার অগ্নিশিহরন!

বাগিচায় বাগিচায় যেন রামধনুর বৈচিত্র্য
নলেনগুড় ও খেজুর রসের উৎকৃষ্ট উল্লাসে 
পথ পথকে করে দৃষ্টিনন্দন উদ্যান
এক পৃথিবী আঁকতে বসে -বেলা রোদ্দুর যায় যে বয়ে
গতিমন্থর পথের ঘ্রান,বালুকাবেলায় ছায়াতটে জেগেথাকে,আধফোটা সব সূর্যস্নান।

রাতের বেলায় ঠান্ডা হিমেল শালুক তখন পদ্ম সাজায় 
ঢোল তরঙ্গ মৃদঙ্গ বাজে জল ছুঁই ছুঁই নৃত্য খেলায় ছন্দ আঁকে প্রজাপতি,পরাগরেনু পাঁপড়ি বাঁধে
কামুক রেখা পাথর জ্বালায়-হীমবাহের গহীন হ্রদে 

একটি একটি- খসে পাতা,হৈমন্তী আনমনায়
মমিগুলো জেগে ওঠে লেপের ভিতর থেকে
পারিজাতের কি অপূর্ব গন্ধ বিলাসে
বালুকাতটে ঢেউ সরে সরে যায়
মনের গোপন রেখা গোপনে হারায়
শিউলির বিরহী গান,জেগে থাকে,রাতের গভীরে 
তারায় তারায় -বিসমিল্লা খাঁর সুর মূর্ছনায় 
অতৃপ্ত আত্মা মিলে মিশে একাকার
রাগিনীর শেষ অন্তরায়
ছোট ছোট ভাসমান মেঘগুলো-আজও ঠিকানা খোঁজে -তোমারই আঁচলে
স্নিগ্ধতনু মন নীলাম্বরী আস্তানায়।

কবি চিত্তরঞ্জন গিরি
পঞ্চসায়র রোড, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ


























0 Comments