অমিতাভ সরকারের রম্যরচনা


কুত্তা খানে মাসু

এঁই,তোরা কেউ শান্তনুকে দেঁখেছিস?
না তো স্যার।
ওঁকে একটু আমার সাথে দেঁখা করতে বলিস তোঁ।
ঠিক আছে স্যার।
শান্তনু তার একটু আগেই বন্ধুদের দলটি থেকে পাশের গলিতে লুকিয়ে পড়েছে ওনাকে দেখে।

...কয়েকদিন হলো একটি নামি কলেজের    ডেমনস্ট্রেটর সত্য ঘোষ,শান্তনুকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন আর শান্তনুও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সত্য ঘোষের একটি বৈশিষ্ট্য হল প্রতিবছরই কলেজে ভর্তি হওয়া ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেদের মধ্যে কয়েকজনকে বেছে নেন তার নানারকম ফাইফর্মাস খাটার কাজে। তাদের সামনে প্রলোভন থাকে যে,জুওলজি প্রাক্টিক্যাল পরীক্ষার ব্যাপারটা পুরোটাই ওনার হাতে এবং সেখানে তিনিই বেশ কিছু পাইয়ে বা না পাইয়ে দিতে পারেন। 
যথারীতি প্রতিবারই কিছু ছেলে এই ফাঁদে পা দেয়।

ছাত্রদের আবার অভিযোগ,সত্যবাবু ছেলেদের খাটান আর মেয়েদের খাওয়ান। এমনই ফেঁসে যাওয়া এক ছাত্র শান্তনু। যাই হোক,স্যার চলে যেতেই আমরা গলিতে গিয়ে,লুকিয়ে থাকা শান্তনুকে ধরলাম। 
এবার তো ব্যাপারটা একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে।স্যার শুধু তোকেই খুঁজে বেড়াচ্ছেন কেন,বলতে হবে।
অবশেষে শান্তনুর স্বীকারোক্তি পেলাম।

---বিশ্বাস কর,স্যারের কাজ করে আমি ক্লান্ত।আমাকে দিয়ে জিনিস আনিয়ে,উনি রান্না করে হোস্টেলের মেয়েদের পিকনিক খাইয়েছেন।এরপর গত রোববার হস্টেলে আমার ঘরে এসে,আমার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে টাকা দিয়ে বললেন:শান্তনু,কলকাতা থেকে আমার গেস্ট এসেছে। তুই তো ভাল বাজার করতে পারিস,আমাকে এক কেজি মাংস এনে দে না।
তা তুই কি করলি ?

এবার হেসে ফেলে শান্তনু।
কাউকে বলিস না। আমি চকবাজার গেলাম,সোজা এক ছাট মাংসের দোকানে গিয়ে বললাম,"দাজু,কুত্তা খানে মাসু হুঞ্ছ ? মোলাই এক কেজি দিয়া হাল্নুছ"।এই বলে এককেজি হাড়সহ কুকুরকে খাওয়ানোর মাংস কিনে,বাকি টাকাতে টিফিন করে, পৌঁছে দিয়ে গেছি ওনার ঘরে।

আমরা তো দমকা হাসিতে ফেটে পড়লাম। ভূপেনের চায়ের কাপে বিষম লেগে গেল। সেই থেকে সত্য ঘোষ আর শান্তনুর লুকোচুরি খেলা চলছিল কলেজে আর দার্জিলিং-এর অলিতে গলিতে।

লেখক অমিতাভ সরকার 
গোলাবাগান, এইচ এন রোড, কোচবিহার 



















0 Comments