সুদীপ পাঠকের একাঙ্ক নাটক


উপকারীকে বাঘে খায়

চরিত্রলিপি 
(মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার ক্রম অনুসারে )


মৌপিয়া : সুশ্রী , বুদ্ধিমতী , স্মার্ট ও কর্মদক্ষ যুবতী । পেশা : রেডিও জকি ।

রাহুল : বছর ২৫/২৬ এর ব্রাইট , হ্যান্ডসাম , ব্যাচেলর ইয়াংম্যান । পেশা : মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টটেটিভ ।

পটলদাদু : অশীতিপর বৃদ্ধ , পেনশনার । রাহুলের অতি স্বল্প পরিচিত প্রতিবেশী ।  

দেবদা : রাহুলের সমবয়সী যুবক। প্রকৃতপক্ষে একজন কর্মহীন , উঠতি মস্তান গোছের ছেলে যে নিজেকে সমাজসেবী বলে পরিচয় দেয় । 

বুলবুলি : গোল্ড মাইন ইন্সুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট । বাকচাতুর্য যার জীবনে উন্নতির মূলধন। 

জ্ঞানদাচরণ ঢেঁকি : একজন অতি সুচতুর ও সুযোগ সন্ধ্যানী মধ্যবয়সী মানুষ । পৌরসভা নির্বাচনের নির্দল প্রার্থী । 

গোপীনাথ ধামা : বছর ৩০/৩২ এর যুবক । কথায় পূর্ববঙ্গের টান । পেশা : বিল্ডিং মেটিরিয়ালের সিন্ডিকেট মেম্বার।

প্রিয়াঙ্কা : বছর ২১/২২ এর একটি উচ্ছল ও প্রগলভা যুবতী , রাহুলের গার্লফ্রেন্ড । পোস্ট গ্রাডুয়েশনের ছাত্রী। 

বিট্টু : বডি বিল্ডার , প্রিয়ঙ্কার প্রণয়প্রার্থী । নির্বোধ গবেট প্রকৃতির যুবক , বুদ্ধিবৃত্তির বালাই নেই । শরীরচর্চা ছাড়া অন্য কিছু বোঝে না । 

মঞ্চের পর্দা ওঠার আগে থেকেই BGM শুরু হয় । রেডিওতে একটি FM চ্যানেলের সম্প্রচার শুরু হচ্ছে তারই সিগনেচার টিউন বাজছে । পর্দার বাইরে রকিং চেয়ারে মৌপিয়া বসে আছে ব্যাক টু অডিয়েন্স । BGM শেষ হয় মৌপিয়া দ্রুত টার্ন করে দর্শকদের সামনে । জোরালো সার্চ লাইটের মতন আলোক বৃত্ত এসে পড়ে তার ওপর । 

মৌপিয়া : ( বিশেষ বচন ভঙ্গিতে ) গুড মর্নিং কলকাতা, আপনারা শুনছেন 98.3 Radio Mirchi , it's hot . আর সঙ্গে রয়েছি আমি মৌপিয়া । ঘড়ির কাঁটা বলছে এখন সময় সকাল ন 'টা । শুরু  করছি আজকের মর্নিং শো,আজ মাসের দু তারিখ,সপ্তাহের তৃতীয়দিন, তাই প্রচণ্ড প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে শুরু হচ্ছে অনেকের আজকের দিনটা । বিশেষত যাদের কিনা টার্গেট তাড়া করে বেড়াতে হয় । তাদের কথা মাথায় রেখে প্রথমেই শুনে নেবো একটা জনপ্রিয় হিন্দি ছায়াছবির গান।

আলো নিভে যায় , মৌপিয়া চলে যায় । BGM শুরু হয় ও ধীরে ধীরে পর্দা উঠতে থাকে । 

BGM 
থোড়া থোড়া ভাগা ভাগা সা 
দৌড়া দৌড়া ভাগা ভাগা সা 
ওয়াক্ত ইয়ে শাক্ত হ্যায় 
থোড়া থোড়া .. 

পর্দা সম্পূর্ণ উঠে গেলে দেখা যায় একটি ব্যাচেলরস এ্যাপার্টমেন্ট । সর্বত্র সব কিছু অগোছালো , অবিন্যস্ত । ডানদিক থেকে রহুল এসে মঞ্চে প্রবেশ করে । তার পরনে তোয়ালে , বোঝা যায় সে সদ্য স্নান সেরে বাথরুম থেকে বেরিয়েছে । সে প্রথমে প্যান্ট পরে তারপর চশমা । এবার সে ডিও স্প্রে মাখে , স্যান্ডো গেঞ্জী পরে তারপর গায়ে জামা চাপায়। ইতিমধ্যে ফোন আসে।এই সম্পূর্ণ Action and BGM এক সঙ্গে শেষ হয় , পুরো ব্যাপারটার মধ্যে  Synchronisation থাকে । ফোনের রিং টোন বাজতে থাকে । রহুল ফোন কল রিসিভ করে : 

রহুল : হ্যালো ... হ্যালো ! 

মঞ্চের ডান ধারে স্পট লাইটে এক বৃদ্ধকে দেখা যায় বেঞ্চে বসে ,গলায় মাফলার ,হাতে জিলিপির ঠোঙ্গা। 

পটলদাদু : ( ফোকলা দাঁতের উচ্চারণে ) রাহুল ভাই কখন বাড়ী থেকে বেরুচ্চ বাবা ? আমি যে তোমার পথ চেয়ে ছাতিম তলায় বসে আছি আর জিলিপি খাচ্ছি !
 
রহুল : (সবিস্ময়ে) ছাতিম তলা ! জিলিপি ! কিন্তু আপনি কে বলছেন ? আমি তো আপনাকে চিনতে পারছি না ! 

পটলদাদু : সে কি বাবা ! এরই মধ্যে ভুলে গেলে আমি পটল দাদু । তুমি তো আমার ফোন নম্বর লিখে নিয়েছিলে বাবা ! 

রহুল : (দ্বিগুণ বিস্ময়ে) পটল দাদু !! সরি আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ; আপনি কাকে চাইছেন বলুন তো? 

পটলদাদু : আমি তোমাকেই চাইছি বাবা , তুমিই তো আমার দাদুভাই। 

রাহুল : দাদুভাই ! সে আবার কে? 

পটলদাদু : কেনো তুমি !আমার রাহুল দাদুভাই ।গত সপ্তাহেই তো আমাদের দাদু নাতির সম্পর্কটা তৈরী হল। তুমি কত যত্ন নিয়ে খাতির করে তোমার মোটর বাইকের পিছনের সিটে বসিয়ে আমাকে পোষ্টাপিসে পৌঁছে দিলে!  

রাহুল : ও ও ও আ আ আচ্ছা আচ্ছা ... হ্যাঁ এবার মনে পড়েছে। 

পটলদাদু : মনে তো পড়বেই বাবা , তুমি আমার নাতি বলে কথা । তুমি ছাড়া এই আশি বছরের বুড়োটাকে আর দেখবে কে বলো , কেই বা আছে আমার? 

রাহুল : ইয়ে মানে বলছিলাম কি পটল দাদু ... আজ আমার খুব তাড়া আছে , অলরেডি লেট হয়ে গেছে ... আপনার সঙ্গে পরে না হয় ... (কথা অসমাপ্ত থাকে যায়)। 

পটল দাদু : (মুখের কথা কেড়ে নিয়ে) না না না পরে নয় আজই এখনই , তুমি বাড়ী থেকে বেরিয়ে সোজা ছাতিম তলায় আসবে । আমাকে ব্যাংকের দরজায় নামিয়ে দিয়ে তারপর তুমি আপিসে যাবেখন । ভুলে গেলে আজ যে মাসের দু তারিখ ! পেনশনটা তুলতে হবে তো , জলদি এসো আমি তোমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছি বাবা। 

রাহুল : আচ্ছা পটল দাদু আপনি বসুন আমি আসছি।(ফোন কল কেটে দেয় , রাগে গজগজ করতে করতে ) পটলদাদু পটলদাদু , দাদুর আমার পটল তোলার সময় হল ; সেটা না তুলে উনি চলেছেন পেনশন তুলতে ! যত্তসব । এই কারণেই এই কারণেই দেশটার বারোটা তেরোটা সব বেজে গেলো । ওহ্ মাই গড ! আই এ্যাম গেটিং লেট ,হারি আপ রাহুল হারি আপ ! 

টেবিলের ওপর খাবার চাপা দেওয়া ছিল এবার সে খেতে শুরু করে । গোগ্রাসে কোনো প্রকারে খাবার গলোদ্ধকরণ করছে , এমন সময় দুম দাম ঝপাস শব্দ !! রাহুল মুখ তুলে চায় ও বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় । তার ঘরে একজন অপরিচিত লোক এসে হাজির , এবং সেটা দরজা দিয়ে নয় , ব্যালকনি দিয়ে । হাতের কাছে ছাতা ছিল , রাহুল খাওয়া ফেলে সেটা তুলে নিয়ে আক্রমণের ভঙ্গিতে বন্দুকের মতন তাক করে ধরে। 

রাহুল : (ঝাঁঝালো গলায়) এই খবরদার , হ্যান্ডস আপ, কেরে তুই?

দেবদা : কি ! আমাকে তুই তোকারি করছেন ! সাহস তো মন্দ নয়! 

রাহুল : (অপেক্ষাকৃত কম ঝাঁঝ সহ) এই কে তুমি? 

দেবদা : এমন ভাবে তুমি বলছেন যেনো কতকালের পুরোনো বন্ধু! 

রাহুল : (অনেক নরম স্বরে) এই কে আপনি? 

দেবদা : হ্যাঁ এইবার ঠিক আছে। গুড আই লাইক ইট। 
রাহুল : (আবার চড়া স্বরে) কি ঠিক আছে ? কিচ্ছু ঠিক নেই , কে আপনি? 

দেবদা : আপনি আমাকে চেনেন না ? আশ্চর্য ! 

রাহুল : (ভ্যাঙানোর সুরে) এমন ভাবে বলছেন যেনো কতকালের পুরোনো বন্ধু, আশ্চর্য! 

দেবদা : (গলা ছেড়ে,কলার তুলে) আমি হলাম দেব। 

রাহুল : (ব্যঙ্গ করে) সুপারস্টার না মিনিস্টার কোনটা শুনি? 

দেবদা : জানোয়ারি ফবরারি মার্চ তিন মাস হয়ে গেল আমার এলাকায় আছেন অথচ আমাকেই চেনেন না ? অদ্ভুত? 

রাহুল : আপনার এলাকা মানে? 

দেবদা : হেঃ হেঃ হেঃ আমি হলাম সমাজসেবী দেবদা। এট্টু খোঁজ নিয়ে দেখবেন এই এলাকার পোত্তেকটা সুবোবুদ্দি সম্পন্ন নাগরিক এক ডাকে আমায় চেনে । আমি একবার জোরে সিটি মারলে না এক সঙ্গে একশো একান্নটা লোক জড়ো হয়ে যায়,বুয়েছেন? 

রাহুল : একশো একান্ন! 

দেবদা : হ্যাঁ শেষে শূন্য রাখতে নেই তো ওটা অসুবো ব্যাপার ,তাই একান্ন করে দিলাম আর কি। 

রাহুল : আরে দুত্তর মশাই , আপনার শুভ অশুভর ট্যাঙ্কে গুলি । বলা নেই কওয়া নেই অপরিচিত মানুষের ফ্ল্যাটে এসে হাজির হয়েছেন , তাও আবার উল্টো দিক থেকে! এসবের মানে কি? 

দেবদা : হ্যাঁ এটা অবশ্য আপনি ঠিকই বলেছেন । তবে উল্টো দিক থেকে আসার ও কিন্তু একটা জাস্টিফিকেশন আছে।ভেবে দেখলাম আমি যদি ডোর বেল বাজাই আর আপনি যদি দরজার আই হোল দিয়ে এক চোখ মেরে দেখেন তাহলে হয়তো আমাকে সেলসম্যান ভেবে ভুল করবেন । দরজা খুলবেন কি খুলবেন না সেই চিন্তায় পড়ে যাবেন । ওদিকে আমিও বাইরে ওয়েট করতে করতে বোর ফিল করতাম । অযথা আপনার আমার দুজনেরই হ্যারাসমেন্ট হতো । আর যেহেতু এটা এক তলার ফ্ল্যাট তাই পাশের বাড়ীর পাঁচিলে উঠে যখন দেখলাম আপনার ব্যালকনির গ্রীলের জানলাটা খোলা রয়েছে তখন স্যাট করে ঢুকে পড়লাম আরকি।আসলে আমিতো সমাজসেবী দেবদা , সমাজের সেবা করাটাই আমাদের একমাত্র ব্রত।তাই যে কোন উপায়ে মানুষের কাছে পৌঁছানোটাই আমার লক্ষ্য,
বুজলেন কিনা? 

রাহুল : অসাধারণ ... (হাত তালি দিয়ে) অসাধারণ যুক্তি।এ্যাপ্রিশিয়েট করার মতনই বটে।তা আমার কাছে আগমনের হেতুটা এবার ঝেড়ে কাশবেন কি?

দেবদা : ভেরি সিম্পল । আপনাকে আমাদের সমাজ সেবায় অংশগ্রহণ  করতে হবে । একজন সিরিয়াস পেশেন্ট বাড়িতে বিছানায় পড়ে কাতরাচ্ছে । আপনার বাইকের পিছনের সিটে বসিয়ে তাকে হসপিটালাইজ করতে হবে। 

রাহুল : (প্রায় আর্তনাদ করে) ক ক্ক কি কি ! কি বলছেন কি আপনি ? এ্যাবসার্ড , অসম্ভম । এরকম আবার হয় নাকি ? বাইকে করে কেউ পেশেন্ট নিয়ে যায়? 

দেবদা : কেনো হবে না কেনো শুনি ? রাঞ্চো যদি পারে তো আপনি পারবেন না কেনো শুনি ? জানেন সমাজসেবায় অসম্ভব বলে কিছু নেই।  

রাহুল : রাঞ্চো ! সেটা আবার কে? 

দেবদা : আরে এতো অদ্ভুত লোক মাইরি ! সিনেমা টিনেমা কিছু দেখেন না নাকি ? থ্রি ইডিয়েটস বইতে আমির খান বন্ধুর বাবাকে স্কুটিতে চাপিয়ে হসপিটালে নিয়ে যায়নি ? অবশ্য সেখানে করিনা কাপুরের মতন একপিস আইটেম ছিল ...( হাত কচলে)  ইন্সপিরেশন যাকে বলে আর কি । কিন্তু আমাদের তো ওসবে ভুললে চলবে না আমাদের সমাজসেবা করতে হবে। 

রাহুল : (স্বগোতক্তি) হে ভগবান থ্রি ইডিয়েটস দেখে এই ইডিয়েটের মাথায় কি আইডিয়াটাই না এসেছে ! একে এখন বোঝাই কি করে যে সিনেমা আর বাস্তবে আকাশ পাতাল তফাৎ । (দেবের উদ্যেশ্যে স্পষ্ট ভাবে) এই যে শুনুন আমার হাতে এক ফোঁটা সময় নেই । অফিসে ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে।অল রেডি আই অ্যাম লেট। আপনি এখন কাটুন তো। 

দেবদা : এ এ এই ওতো অফিস দেখবেন নাতো । করেন তো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির দালালী, ব্যাংক কিম্বা রেল সার্ভিস করলে তবু না হয় বুঝতাম। 

রাহুল : এক্সকিউজ মি আই অ্যাম এ মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ । নট এ দালাল ! 

দেবদা : এ্যাঁ কি হয়েচে? 

রাহুল : বলছি আমি একজন মেডিক্যাল (কথা অসমাপ্ত থাকে যায়)। 

দেবদা : (কথা কেড়ে নিয়ে) হ্যাঁ ঠিক আছে ঠিক আছে বুয়েচি । এই একই হল , যার নাম চলভাজা তার নামই মুড়ি । পাতি বাংলায় আপনি হলেন একজন বেচুবাবু । শুনুন এই আমাদের মতন কিছু এডুকেটেড , ডেডিকেটেড , আনএ্যাম্প্লয়েড সোসালওয়ার্কার ছিল বলেই না এই সমাজটা এখনও টিকে আছে । আপনিও সেই সমাজের একজন নাগরিক , সেটা ভুলে যাবেন না । তাই সমাজসেবা করাটা আপনার পাতোমিক কর্ত্তব্য । এই দেবদা আপনাকে সেই সুবর্ণ সুযোগ করে দিচ্ছে । বেশি নক্সা না করে চটপট চলুন। 

রাহুল : (কয়েক মুহূর্ত মনে মনে একটা ফন্দি এঁটে নিয়ে) দেখ ভাই দেব...(কথা অসমাপ্ত থাকে যায়)।

দেবদা : (জামার হাতা গোটাতে গোটাতে এগোয়) এ্যাঁ কি হোয়েচে কি বলছেন ...

রাহুল : (ভয় পেয়ে পিছিয়ে গিয়ে) না মানে বলছিলাম যে দেখুন সমাজসেবী দেবদা ...

দেবদা : হুম্ শুনছি ক্যারি অন ...

রাহুল : হ্যাঁ তাই বলছিলাম কি আজকে কিছুতেই হবে না , আজ পটলদাদু আমার জন্য ছাতিম তলায় অপেক্ষা করে বসে আছেন যে।  

দেবদা : পটলদাদু ! সেটা আবার কি কেস? 

রাহুল মোবাইল ফোন হাতে তুলে নিয়ে দেবকে গোটা বিষয়টা সবিস্তারে বোঝাতে থাকে , পুরোটাই মাইম । BGM এ সংলাপের সাউন্ড ট্র্যাক ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে দিলে যেমন শব্দ হয় তেমনটা শোনা যায়।এক সময় তার কথা বন্ধ হয় ও সে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।BGM 
শেষ হয়। 

রাহুল : এবার বুঝতে পারছেন তো কি কঠিন সমস্যা । মানে একজন মানুষ একই সময়ে একসঙ্গে দু জায়গায় যাই কি করে ভাবুন? 

দেবদা : ( কিছুক্ষন গালে হাত দিয়ে ভাবে তারপর) আপনার কথা শুনে তো জেনুইন কেস বলেই মনে হচ্ছে । যাক এবারের মতন আপনাকে ছেড়ে দিলাম । তবে মনে রাখবেন ভবিষ্যতে যখনই পোয়েজন হবে তখনই ঝাঁপ দিয়ে পড়ে সমাজসেবা করতে হবে । বাইক যখন আপনার আছে তখন সেটাকে পজেটিভ কাজে ব্যবহার করতে হবে। 

রাহুল : বৃদ্ধ মানুষকে পেনশন তুলতে সাহায্য করা এটাও তো একধরনের সমাজসেবা,তাই না ? 

দেবদা : মন্দ বলেন নি ! ব্যাপারটা নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করতে হবে । মনে হচ্ছে সমাজ সেবার একটা তালিকা তৈরী করতে হবে । যাই হোক পরে দেখা হবে , এখন চলি ... টাটা বাই বাই । 

দরজা দিয়ে দেবের প্রস্থান। 

রাহুল : (কপালের ঘাম ঝেড়ে ফেলে) উফ্ বাপরে বাপ! কি ডেঞ্জারাস জিনিস , ব্যাটা ছুঁচ হয়ে ঢুকে একেবারে ফাল হয়ে বেরোলো ! যাক গে যাক , ব্রেক ফাস্টটা এবার শেষ করি । (টেবিলের কাছে যায় ও হাতে করে খাবার তুলে ধরে) এটাকি অমলেট ? এটা বাটার টোস্ট ! সবতো শুকিয়ে জুতোর সুকতলা হয়ে গেছে । আর এটা কি কফি নাকি শরবত ? ( হাত মুছতে মুছতে) ধুত্তর , নিকুচি করেছে । অফিসের ক্যান্টিনেই না হয় আজ খেয়ে নেবোখন । (জুতো পরতে পরতে) এবার চটপট বাইকটা নিয়ে বেরোতে পারলে হয়।  

রাহুল জুতো পরা শেষ করে ব্যাগটা হাতে নেয় ঠিক তখনই  আবার ফোন আসে। 

রাহুল : (অত্যন্ত বিরক্তি সহকারে) উফঃ আবার ফোন, আজ আর কোনো কাজকর্ম হবেনা দেখছি। আননোন নাম্বার ! ধরবো কি ধরবো না ? যদি কোনো ক্লায়েন্টের হয় !নাহ কি যে মুশকিল( কল রিসিভ করে )হ্যালো... 

বুলবুলি : হ্যালো রাহুল স্যার , গুড মর্নিং , মাই সেল্ফ বুলবুলি,ডু ইউ রিমেম্বার মি?

রাহুল : নো আই ডোন্ট , হু আর ইউ ? 

বুলবুলি : ওহ মাই গড ! আই অ্যাম ইওর FB ফ্রেন্ড স্যার, বুলবুলি।

রাহুল : লুক দেয়ার ইজ থাওজ্যন্ড ফ্রেন্ডস ইন মাই FB একাউন্ট । হাউ ডু ইউ এক্সপেক্ট দ্যাট এই স্যুড রিমেম্বার ইচ এন্ড এভেরি বডি??

বুলবুলি : বাট আই অ্যাম বুবুলি স্যার !! 

রাহুল : নো ম্যাটার বুলবুলি ওর চুলবুলি । এন্ড লিসেন হোয়্যাট ডু ইউ থিংক অফ ইওর সেল্ফ ? আ সেলিব্রিটি আ ফিল্ম স্টার?? 

বুলবুলি : বাট স্যার অনলি ডে বিফোর ইয়েস্টারডে উই হ্যাড আ লং কনভারসেশন অন ফেসবুক চ্যাট ইন লেট নাইট । ইউ টোল্ড মি দ্যাট ইউ আর ফেড-আপ অফ ইওর গার্ল ফ্রেন্ড প্রিয়াঙ্কা। রিমেম্বার দ্যাট স্যার? 

রাহুল : ( ভয়ঙ্কর অপ্রস্তুত হয়ে ) এই আপনি কে ঠিক করে বলুন তো ? আপনি এতো পার্সোনাল কথা জানালেন কি ভাবে !? 

বুলবুলি : ভেরী গুড ডুড , এই তো ঠিক লাইনে এসেছেন । এতক্ষণ ফালতু ভ্যানতার করছিলেন কেন বলুন তো ? বাঙালীর ছেলে বাংলায় কথা বললে কতো মিষ্টি লাগে,আর বেশীক্ষন ইংরেজিতে কথা বললে আমারও কিরকম চোয়াল ব্যাথা করে জানেন তো।

রাহুল : ( যথেষ্ট অবাক হয়ে ) ডুড !! আপনি আমাকে ডুড বলছেন !! এসব পার্সোনাল রিলেশনশিপে চলে । একটু আগে তো খুব স্যার স্যার করছিলেন ! আর তা ছাড়া আমি তো আপনাকে চিনিই না! 

বুলবুলি : আরে ধুস বাদ দিন  তো , স্যার বলছিলাম কারণ ওটা ইন্ট্রোডাক্টশণ  ছিলো তাই । তা সে চ্যাপ্টার তো শেষ হয়ে গেল। এখন আর অতো ফর্মালিটিস করে কি লাভ বলুন তো । আর আপনি না চিনলেও আমি কিন্তু আপনাকে ভালোই চিনি। 

রাহুল : তাই নাকি ! কি ভাবে ?

বুলবুলি : চিনবো না কেন ! দু' দু'বার দেখেছি তো আপনাকে ! লাস্ট ইয়ার নলবনে নিউ ইয়ারর্স ইভ পার্টিতে আর এইতো লাস্ট মান্থ মিলনমেলা গ্রাউন্ডে , ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেড ফেয়ারে । আপনি বেশ হ্যান্ডু আছেন মাইরি । তবে মেয়েদের ব্যাপারে একটু নার্ভস । ও কিছু না , সব ঠিক হয়ে যাবে । আমি টিপস দিয়ে দেব ।একেবারে সলিড,  কখনো ফেল করেনি জানেন তো। আপনার ডাক নামটাও জানি গুবলুবাবু হি হি হি। 

রাহুল : আপনি তো দেখছি পাক্কা গুপ্তচর ! জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন নাকি বলুন তো ?? 

বুলবুলি : আরে আরে এতো চাপ নেবেন না । আপনার গার্ল ফ্রেন্ড প্রিয়াঙ্কা ... ওর আর আমার কমন ফ্রেন্ড মামপি , ওখান থেকেই সব ইনফরমেশন বের করি আর কি । ইটস পার্ট অফ মাই প্রফেশন ইউ নো !

রাহুল : মামপি-ই-ই-ই !! দ্যাট ট্রেটর !! ওকে আমি বিশ্বাস করে সব বললাম আর ( কথা অসমাপ্ত থেকে যায় )

বুলবুলি : (মুখের কথা কেড়ে নিয়ে) হ্যাঁ জানি আর বলতে হবে না , আপনি খুব সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করেন , ভুল করেন , আর করবেন না । সেদিন মিড নাইটে FB তে যে চ্যাট আপনি করেছিলেন সেটা আমার সঙ্গে নয় মামপির সঙ্গে করেছিলেন । আপনি হয়তো সেই সময় একটু রসেবশে ছিলেন , তাই মেমোরিটা স্লিপ করে গেছে । ওরকম হয়েই থাকে। আমি একটা ছোট্ট ঢপ মারলাম আপনাকে লাইনে আনার জন্য , রাগ করবেন না প্লিজ । ঘাবড়াবেন না একদম , বললাম না আমার কাছে টিপস আছে , চলে আসুন বলে দেবো।

রাহুল : চলে আসুন মনে ? কোথায় যাবো ? কেন যাবো ? আপনার মতলবটা কি একটু খুলে বলুন তো?  

বুলবুলি : আবার এক্সসাইটেড হয়ে যাচ্ছেন , শুনুন আজ আপনি ড: ঢনঢনিয়ার চেম্বার ভিজিট করছেন তো ? সো উই ক্যান ক্যাচ আপ এরাউন্ড 5pm, সাউই সিটি মল , ওকে উইথ ইউ ? 

রাহুল : উফঃ দিস ইস রিয়ালি টু মাচ ! আপনি এক্সাকটলি কি করেন বলুন তো ?

বুলবুলি : এতক্ষনে একটা কাজের কথা বলেছেন।আমার প্রফেশনটা তো আপনাকে বলাই হয়নি । আমি জনসাধারণকে নিশ্চিন্ততা ও নিরাপত্তা প্ৰদান করি। 

রাহুল : সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস নাকি?

বুলবুলি : অনেকটা কাছাকাছি গেছেন , তবে এটা তার চেয়ে অনেক বড় ব্যাপার । আমি গোল্ডমাইন ইন্সুরেন্স কোম্পানিকে রিপ্রেজেন্ট করি। 

রাহুল : সোজা কথায় এজেন্ট তাই তো ? ক্লায়েন্ট পটাতে পারলে কমিশন।

বুলবুলি : ছি: ওভাবে বলতে নেই , ওসব তো পুরোনো টার্ম , আপনি তো একজন মডার্ন ইয়াং ম্যান ,কি তাই না !? কোম্পানির নামটা একবার ভেবে দেখুন , গোল্ডমাইন , যাকে বলে সোনার খনি । আমাদের কোম্পানি শুধুমাত্র ফোর হুইলার এবং টু হুইলার নিয়ে কাজ । আর বাইক ছাড়া আপনার লাইফ তো ইমাজিনই করা যায় না । তাই বলছি মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে একবার একটা পলিসি করালে আজীবন নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন । সব ধরণের দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেবে গোল্ডমাইন। পলিসি ম্যাচিওর করলে আকর্ষণীয় ডিভিডেন্টও পাবেন। আরও অনেক এক্সসাইটিং অফার আছে , সবতো আর ওভার টেলিফোন বোঝানো সম্ভব নয় । তাই বলছি একবার মিট করুন না বস , ক্লিয়ার হয়ে যাবে সব । আপনি বললে আপনার বাড়ীতেও চলে যেতে পারি , যাবো কি? 

রাহুল : ( আঁতকে উঠে ) না-না-না বাড়িতে আসার কোনো দরকার নেই ,ঐ সাউথ সিটি মলই ঠিক আছে।  
বুলবুলি : ওকে বস , বাকী কথা KFC ইর চিকেন খেতে খেতে হবে কেমন ? মিঙল বাকেট । ডোন্ট অরি ইটস আ ট্রিট ফ্রম মাই সাইড।

রাহুল : ওকে ওকে ফাইন , আমি যাব।

বুলবুলি : থ্যাংক ইউ বস ,রাখছি।  

রাহুল : (ফোনে কথা বলা শেষ হয় , আবার আত্মগত ভাবে বলতে থাকে) 
উফঃ কি ধড়িবাজ মেয়েরে বাবা ! বলে কিনা পঞ্চাশ হাজার টাকার পলিসি করাতে !! মানে প্রায় দেড় দু মাসের স্যালারি ঝেড়ে দেবার ধান্দা । করাচ্ছি তোমার পলিসি দাঁড়াও । তবে যেতে তো একবার হবেই , মামপি না জানি আরও কত কিছুই বলেছে , সেটা জানতে হবে , না হলে প্রিয়াঙ্কা আবার আমার পিন্ডি চটকাবে । (হঠাৎ যেন মাথায় নতুন আইডিয়া এসেছে এই ভাবে) ভেরি গুড , যাবো KFC ইর চিকেন খাবো , মামপির কথাগুলো শুনে নেবো তারপর সিম্পলি হাল্কা পাতলা কেটে পড়ব ব্যাস। 

ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে দরজার দিকে এগোতে যাবে , হঠাৎ একজন জলজ্যান্ত মানুষকে দেখে ভয়ঙ্কর রকম চমক ওঠে । সেই লোকটি কখন যে নিঃশব্দে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে তা রাহুল লক্ষ্য করেনি , তাই স্বাভাবিক ভাবেই  রাহুল খুব ভয় পেয়ে যায়।

রাহুল : (আঁতকে উঠে) ওঃ মা গো ! একি কে আপনি ? ফ্ল্যাটের ভিতরে ঢুকলেন কি করে ? কি চাই কি আপনার? 

জ্ঞানোদাচরণ ঢেঁকি : আপনি মোট তিনটি প্রশ্ন করেছেন । একে একে উত্তর দিই কেমন ? প্রথমতঃ আমি হলাম শ্রী জ্ঞানোদাচরণ ঢেঁকি । দ্বিতীয়তঃ আপনার ফ্ল্যাটের দরজা খোলাই ছিল , তাই সহজেই ভিতরে প্রবেশ করা গেছে এবং তৃতীয়তঃ আমি এবারে পৌরসভার নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী রূপে ভোটে দাঁড়িয়েছি । যেহেতু আমি নির্দল তাই দল ভারী করার জন্য আপনার কাছে এসেছি । আশা করি আপনার সমস্ত প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পেরেছি , ধন্যবাদ। 

রাহুল : (হঠাৎ কি ভেবে , আহ্লাদিত হয়ে) ভেরি গুড ... এই মুহুর্তে ঠিক আপনার মতনই কোন একজন কে খুঁজছিলাম! 

জ্ঞানদা : আচ্ছা তাই নাকি ! কেনো বলুন তো ? 

রাহুল : বলছি বলছি আপনি বসুন । দেখুন শ্রী জ্ঞানোদাচরণ ঢেঁকি বাবু ...উফ্ আপনার এই এতো বড় নাম উচ্চারণ করতে গেলে জিভ জড়িয়ে যায় যে!  

জ্ঞানোদা : এটা একটা কমন প্রবলেম , সংক্ষেপে সবাই আমাকে জ্ঞানদা বলে ডাকে। 

রাহুল : ফাইন জ্ঞানদা বলছি কি আপনি রাজনীতি যখন করছেন তখন কূটনীতিটাও নিশ্চই  ভালোই বোঝেন আশাকরি ? 

জ্ঞানদা : তা সত্যি কথা বলতে কি প্রয়োজনের খাতিরে একটু আধটু বুঝতে হয় বৈকি! 

রাহুল : তাহলে আমার একটা ছোট্ট উপকার করুন না দাদা । আমি যে সাংঘাতিক সমস্যায় পড়েছি । এই বিপদের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করুন। 

জ্ঞানদা : অবশ্যই , মানুষের প্রয়োজনে তার পাশে দাঁড়ানো তার সমস্যার সমাধান করা তার বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া এই সবই তো একজন আদর্শ জনপ্রতিনিধির কর্তব্য । আমি আপনাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত । তবে তার আগে আমাকে জানতে হবে আপনার সমস্যার প্রকৃতিটা কি আর তার চরিত্রটাই বা কি ধরনের? 

রাহুল : প্রকৃতি ! চরিত্র ! ওরেব্বাস ... আপনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে যেন আজই আমার একসঙ্গে হিস্ট্রি আর জিওগ্রাফি এক্সাম আছে । শুনুন জ্ঞানদা এতো সব ভারি ভারি কথায় কাজ কি বলুন ? আমি বরঞ্চ আপনাকে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলি কেমন? 

জ্ঞানদা : বেশতো তাই বলুন না ,আমি শুনতে আগ্রহী। 

রাহুল : জানেন দাদা আমার মতন আহাম্মক দুনিয়ায় আর দুটো নেই । যাকে বলে ' আ ব্যায়েল মুঝে মার ' আমি ঠিক তাই করে বসে আছি।  

জ্ঞানদা : এখনো পর্যন্ত কিন্তু সঠিক ভাবে  কিছুই বোঝা গেলো না ! 

রাহুল : ' উপকারীকে বাঘে খায় ' এই প্রবাদটা নিশ্চই আপনার জানা আছে ? 

জ্ঞান দা। : আলবৎ জানি বৈকি ; সেই কোন ছেলেবেলায় পড়েছি , এখনো মনে আছে । ক্লাস ফাইভের বাংলা গদ্যের সিলেবাসে ছিল।  

রাহুল : কিসের কথা বলছেন বলুন তো ? 

জ্ঞানদা : কেনো কপালকুণ্ডলার অংশ বিশেষ ? ' নবকুমারের  কষ্ঠ আহরণের উপাখ্যান ' । আপনাদের সিলেবাসে ছিল না বোধহয়? 

রাহুল : আর সিলেবাস ! লাইফটা যদি সব সময় সিলেবাস মেনে চলতো তাহলে তো আর কথাই ছিল না! 

জ্ঞানদা : একশো শতাংশ খাঁটি কথা ভায়া । জীবনের সিলেবাস খুব আনপ্রেডিক্টেবল । 
রাহুল : তবে আপনি এক্সাম্পলটা দিয়েছেন একেবারে খাপে খাপ । ঐ গল্পটা আমার পড়া । 

জ্ঞানদা : উহু গল্প নয় উপন্যাস। 

রাহুল : সে যাই হোক , আমার হয়েছে ঠিক ঐ দশা । রোজ সকালে অফিস যাওয়ার সময় দেখতাম অটো স্ট্যান্ডে মানুষের লম্বা লাইন । বাচ্চা বুড়ো সবাই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে । তাই মানবিকতার খাতিরে নিজে যেচে রোজই কোনো না কোনো একজনকে লিফ্ট দিতাম । এখন দেখছি কিনা সেটাই বুমেরাং হয়ে গেল,আশ্চর্য্য! 

জ্ঞানদা : বুঝেছি বুঝেছি আর বলতে হবে না । সবাই আপনার চরিত্রের মানবিক দিকটা যেই না চিনে ফেলল ওমনি তারা দানবিক অত্যাচার শুরু করে দিল,কি তাই তো ? 

রাহুল : যা বলেছেন দাদা , একেবারে মোক্ষম জায়গাটা ধরেছেন। 

জ্ঞানদা : আরে এতো অতি সামান্য ব্যাপার , এতেই এতো বিচলিত হয়ে পড়লে চলবে কেনো ভাই ? আপনার হাতে স্মার্ট ফোন থাকতে চিন্তা কিসের! 

রাহুল : মানে ! ঠিক কি বলতে চাইছে ন একটু খোলসা করে বললে ভালো হয়। 

জ্ঞানদা : আরে মশাই আপনার বাইকটা ওয়েলেক্সে বেচে দিন।   

রাহুল : সেকি ! বেচে দেবো ! তারপর ? আমার কাজকর্মের কি হবে ? বাইক ছাড়া যে আমি সম্পূর্ণ অচল , আমার প্রফেশনে বাইক মাস্ট । সারাদিন আমাকে কত ট্র্যাভেল করতে হয় জানেন? 

জ্ঞানদা : আমার পুরো কথাটা না শুনেই কিন্তু আপনি অযথা উত্তেজিত হচ্ছেন । শুনুন বাইকটা ওয়েলেক্সে বেচে দিন ।  তারপর সকলের সঙ্গে ঐ অটোর লাইনে গিয়ে দাঁড়ান । দিন পনেরোর মধ্যেই সবাই জেনে যাবে যে আপনার বাইক নেই । ব্যাস আর কি লোকজন আপনাকে জ্বালাতন করা বন্ধ করে দেবে । সে ক' টা দিন মেট্রো ওলা উবের এই সব দিয়ে কাজ চালাতে হবে । হ্যাঁ মানছি তাতে আপনার একটু ধকল যাবে , খরচও একটু বাড়বে , তবে তা সাময়িক । দুদিন বাদেই তো টুক করে নতুন বাইকটা কিনবেন , EMI দিয়ে আর কি । আর সেই বাইকটা কিন্তু নিজের বাড়িতে রাখা যাবে না । কাছাকাছির মধ্যে কোথাও একটা গ্যারেজ ভাড়া করতে হবে । বাড়ী থেকে আপনি বেরোবেন পায়ে হেঁটে । একটা টো টো ধরে গ্যারেজে যাবেন । তারপর বাইকে চড়ে গোটা শহরটা দাবড়ে বেড়ান না , কে দেখতে যাচ্ছে আপনাকে ? হেলমেট দিয়ে মুখ তো ঢাকা থাকবে তাই না? 

রাহুল : (অল্প সময়ে পুরো ব্যাপারটা  ভেবে নিয়ে) ওহ্ দারুন অসাধারণ এক্সিলেন্ট ! জ্ঞানদা পায়ের ধুলো দিন দাদা । আপনি এক্কেবারে সঠিক প্রফেশন বেছেছেন । একটু বসুন চট করে বাইকের ফোটো আপলোড করে দিচ্ছি ... ওহো  একদম ভুলে মেরে দিয়েছিলাম ; ব্যালকনির গ্রীলের জানলাটা তো বন্ধ করাই হয়নি ! দেখেছেন কি কান্ড ? বলা তো যায় না আবার কোন সমাজসেবী ঢুকে পড়ে ! জ্ঞানদা আপনি চা খাবেন? 

জ্ঞানদা : হ্যাঁ তা হলে মন্দ হয় না , এনি টাইম ইজ টি টাইম ! 

রাহুল : ফাইন , আপনি একটু ওয়েট করুন আমি চা বানাচ্ছি । আজ যখন এতো লেট হয়েই গেলো তখন না হয় লাঞ্চের পরেই অফিসে যাবো । আপনি বসুন আমি চা নিয়ে আসছি । (প্রস্থান) 

এবার জ্ঞানোদাচরণ ঢেঁকি উঠে ঘুরে ফিরে এঘর ওঘর উঁকি মেরে দেখে । হালচাল বোঝবার চেষ্টা করে । তারপর সে কোন একজনকে ফোন করে এবং কিছু একটা জরুরী নির্দেশ দেয় । কোনো শব্দ শোনা যায় না পুরোটাই অ্যাকশনটা  মাইম । কিছু সময় অতিবাহিত হয় , তারপর ... 

রাহুল : (নেপথ্যে) দাদা আপনার লিকার চা না দুধ চা? 

জ্ঞানদা : দুধ চা হলেই ভালো।  

রাহুল : (নেপথ্যে) চিনি কতোটা ?

জ্ঞানদা : পৌনে তিন চামচ। 

রাহুল : (নেপথ্যে) এ্যাঁ ! ও আচ্ছা ঠিক আছে।   

একটু পরে চায়ের ট্রে হাতে রাহুলের মঞ্চে প্রবেশ । সে জ্ঞানদাকে চা দেয় এবং নিজে তারিয়ে তারিয়ে চা উপভোগ করে । কথা শুরু হয়। 

রাহুল : যাক বাবা সব কাজ সারা হয়ে গেছে । পটলদাদুকে বলে দিলাম আজ আমি যেতে পারবো না।বুড়ো একেবারে খোচে ফায়ার , সে যাক গে যাক । আচ্ছা জ্ঞানদা আপনি কি করে যে আমার মনের কথা পড়ে ফেললেন সেটা ভেবেই অবাক হচ্ছি । কতদিন থেকে চিন্তা ভাবনা করছি যে একটা নতুন বাইক কিনবো,কিন্তু উপলক্ষ্যটা স্থির করতে পারছিলাম না।  সামনেই একটা ইনক্রিমেন্ট পেতে চলেছি , EMI দিতে আমার কোনো অসুবিধাই হবে না।  

জ্ঞানদা : (চা খেতে খেতে) গ্রেট তাহলে তো আর কোনো সমস্যাই রইলো না । এখন শুধু ফোন আসার অপেক্ষা।  

তখনই রাহুলের মোবাইল ফোনে একটা SMS আসে । রাহুল আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। 

রাহুল : এই দেখুন দাদা বলতে না বলতেই ! পড়ছি শুনুন " আপনার বাইক আমার খুব পছন্দ হয়েছে । আপনি যে এ্যামাউন্ট  চেয়েছেন তাতেও আমার কোনো অসুবিধা নেই । আমি আপনার বাড়ির খুব কাছেই থাকি,পাঁচ মিনিটের মধ্যে  আসছি,থ্যাঙ্ক ইউ-- গোপীনাথ । " উফ্ ফাটাফাটি জাস্ট ভাবা যায় না । আজ সকালে যে কার মুখ দেখে উঠেছিলাম!  

জ্ঞানদা : প্রতিদিন যার মুখ দেখে থাকেন , অর্থাৎ কিনা আপনার নিজের মুখ । (রাহুল সাংঘাতিক অবাক হয়) ইয়ে মানে আপনার বেড রুমে অল্প একটু নজর দিয়েছিলাম আর কি । আয়না বসানো স্টিলের আলমারিটা বিছানার ঠিক বিপরীত দিকের দেওয়ালে সেঁটে আছে কিনা তাই বলছিলাম ... 

রাহুল : জ্ঞানদা , দাদা শুধু পলিটিক্স কেনো গোয়েন্দাগিরিতে হাত পাকলেও বেশ সুনাম অর্জন করতে পারতেন ।আপনি তো মশাই ...

কথা অসমাপ্ত থেকে যায় , জ্ঞানদা দরজার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে এবং রাহুল ফিরে তাকাতেই ...

গোপী : গুড মর্নিং , আমি গোপীনাথ ধামা।আমিই আপনারে SMS কইরাছিলাম। 

রাহুল : ধামা আপনার সার্নেম ? 

গোপী : আইজ্ঞা হ , আমার পদবী হইলো গিয়া ধামা। 

রাহুল : আপনি কি কাজ করেন জানতে পারি 
কি ? 

গোপী : হ নিশ্চয় পারেন বৈ কি , আমি বিল্ডিং মেটিরিয়ালের সাপ্লায়ার , আমাগো একখান সিন্ডিকেট আছে , আমি তার মেম্বার।

রাহুল : (স্বগতোক্তি) একদিকে ঢেঁকি অন্য দিকে ধামা , নিজেকে তো চালের আড়ৎদার বলে মনে হচ্ছে । (স্বাভাবিক ভাবে) আরে আপনি তো একেবারে তৈরী হয়েই এসেছেন দেখছি ! হেলমেট সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন?  

গোপী : নো হেলমেট নো পেট্রোল , তাই সঙ্গে তো রাখতেই হইব । তার ওপর আবার পৌরসভার পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ চলতাছে কিনা । কথায় বলে সাবধানের  মার নাই । হেলমেট আমার অনেক আগে থ্যেইক্কাই কাছে ছিল , শুধু বাইকটাই যা আছিল না । কৈ দেন আমারে চাবিটা দেন ! 

রাহুল : ওহো চাবি তাই না ! (পকেট হাঁতড়ে চাবি বের করে দিতে যায় কিন্তু ফিরিয়ে নিয়ে বলে) আমার টাকাটা ?

গোপী : হ নিশ্চয় এই তো সাথে কইরা লইয়াই আইছি , ধরেন । (একটা চেক বের করে দেয়) 

রাহুল : একি ! এতো দেখছি একটা একাউন্ট পেয়ী চেক ! এটা নিয়ে আমি এখন কি করব ? ধুয়ে খাবো?  

গোপী : বালাই সাট ! ধুতে যাইবেন  কোন দুঃখে ? অবিস্যি ধুলেও কোনো ক্ষতি নাই , আমি ওয়াটার পুরুফ ইংক দিয়া লিখছি কিনা!  

রাহুল : আরে ধুত্তর মশাই , থামুন তো । আপনি যে চেক পেমেন্ট করবেন কৈ সে কথা তো SMS এ লেখেন নি। 

গোপী : এই প্রবল ডিমনিটাইজেশনের যুগে আপনি যে ক্যাশ পেমেন্ট এক্সপেক্ট করতাছেন কৈ হেই কথাটাও তো আগে কন্নাই ! উই আর লিভিং ইন আ ক্যাশ লেশ সোসাইটি , ডিজিটাল ইন্ডিয়া বুঝলেন কিনা ? চেকটা আজই একাউন্টে জমা কইরা দেন , ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এনক্যাশমেন্ট হইয়া যাইবো । আর তাছাড়া আজই তো আমি আপনার লগে ব্লু বুক , রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট , পার্চেজিং ভাউচার এসব কোনো অরিজিনাল পেপার্সই লইত্যাছি না । আহা ধরেই নেননা যে দুইডা দিন আমি টেস্ট ড্রাইভের জইন্য বাইকখান লইলাম । ট্যাকাটা আপনের এ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হইলেই আমারে এক খান কল দিবেন ,আমি আইস্যা ডকুমেন্টস গুলি সব লইয়্যা যামুকনে , কেমন ঠিক তো ? (জ্ঞানদাকে উদ্দেশ্য করে) আসেন ঢেঁকিদা আপনারে ইস্টিশনে ড্রপ কইরা দিয়া তারপর না হয় আমি কনস্ট্রাকশন সাইটে যামু। 

রাহুল : (সাংঘাতিক অবাক হয়ে) সেকি ! আপনারা পরস্পরকে চেনেন নাকি ? 

গোপী :  হা হা হা হাসাইলেন দাদা , আরে ঢেঁকিদার লগে কি আমার আজকের সম্পর্ক নাকি ? উনিইতো ফোন কইরা আমারে খবরটা দিলেন । কইলেন আমাগো এলাকার মধ্যেই একখান সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক বিক্রি হইত্যাছে । চট কইরা চইলা আইতে , তাই তো আইলাম ! 

রাহুল : ওহ্ মাই গড ( ধপ করে বসে পড়ে)

জ্ঞানদা : ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুন , ধামা ঠিকই বলেছে । রাহুল ভাই আপনার কাছে আসার প্রকৃত কারণটা বলবার কোনো সুযোগ আমি পাইনি , তাই বলাও হয়নি । আমি একজন নির্দল প্রার্থী , আমার না আছে লোকবল না আছে অর্থবল । তাই ভেবেছিলাম নির্বাচনের বিভিন্ন কাজকর্ম আপনার বাইকের পিছনের সিটে বসে নির্বিঘ্নে সেরে নিতে পারবো । খোঁজ খবর নিয়েই এসেছিলাম । আপনি ব্যাচেলর মানুষ , নির্ঝঞ্ঝাট একা থাকেন । কিন্তু এখানে এসে দেখলাম সে গুড়ে বালি । আপনি যাকেবলে সমস্যার সাগরে পড়ে একেবারে হাবুডুবু খাচ্ছেন । সমাধানের উপায় আমিই বাতলে দিলাম বটে , তবে কিনা তাতে করে আমার নিজের সমস্যা বাড়লো । তাই আপনি যতক্ষনে চা বানাচ্ছিলেন সেই ফাঁকে আমি ধামাকে ফোন করে সুসংবাদটা দিলাম এই আর কি ! আপনার জন্য আমি একবাক্স লাড্ডু এনেছিলাম । তা বাইকটা যখন গোপীনাথের হস্তগত হল তখন লাড্ডুর বাক্সটাও তারই প্রাপ্য কি বলেন ? তবে আমি আপনাকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করবো না । আফটার অল আপনার দৌলতেই তো ধামার বাইক প্রাপ্তি ঘটলো । তাই আমি আপনার জন্য এই একটা ... না না একটা নয় এই দুটো লাড্ডু রেখে গেলাম কেমন ?(প্লেটে রাখে) আজ তাহলে আসি রাহুল ভাই । (গোপীর উদ্দেশ্যে) চলো হে গোপীনাথ চলো ওদিকে আবার অনেক কাজ পড়ে আছে , একা মানুষ কোন দিক যে সামলাই ...। (প্রস্থান)

গোপী : ওক্কে দাদা থ্যাঙ্ক ইউ , সী ইউ , টেক কেয়ার , হ্যাভ এ নাইস ডে , বাই বাই ...। (প্রস্থান)

রাহুল সাংঘাতিক অবাক হয়ে দুজনের চলে যাওয়াটা দেখতে থাকে । তবে খুব বেশি সময় সে পায় না । তার বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই তার গার্লফ্রেন্ড ঝড়ের বেগে এসে হাজির হয়। 

প্রিয়াঙ্কা : যে দুটো উটকো লোক এইমাত্র তোমার ফ্ল্যাটের ভিতর থেকে বের হয়ে গেল তারা কে শুনি ? 

রাহুল : এ্যাঁ কি কে ? ও আচ্ছা , ঐ তো কি যেনো নাম ... হ্যাঁ জ্ঞানোদাচরণ ঢেঁকি আর গোপীনাথ ধামা। 

প্রিয়াঙ্কা : ঢেঁকি ! ধামা ! এটা তোমার ফ্ল্যাট না গোডাউন ? 

রাহুল : আমারও তাই মনে হচ্ছে জানো !  যাক সে কথা , তুমি হঠাৎ এই সময় কি মনে করে ? 

প্রিয়াঙ্কা : কেনো আসতে পারি না নাকি ? 

রাহুল : আমি কি একবারও সে কথা বলেছি ? 

প্রিয়াঙ্কা : তাহলে কি বলতে চাইছো ? এবার থেকে এ্যাপয়েন্টমেন্ট লাগবে বুঝি ? 

রাহুল : ওহ্ প্লিজ ফর গড শেক প্রিয়াঙ্কা ..

প্রিয়াঙ্কা : আমাকে দেখে তো মোটেই খুশি হওনি বলে মনে হচ্ছে । অন্য কারোকে  এক্সপেক্ট করছিলে বুঝি ? সত্যি কথা বলো তো ? 

রাহুল : এসব তুমি কি বলছো প্রিয়াঙ্কা ! বেবি ইউ নো হাউ মাচ আই লাভ ইউ ?এই তুমি লাড্ডু 
খাবে? 

প্রিয়াঙ্কা : ওহ্ ষ্টপ ইট , তোমার এই ন্যাকামো আমার অসহ্য লাগে । এ সব ঢপব্বাজির কথা অন্য করোকে শোনাবে , আমার একেবারেই ভাল্লাগেনা। 

রাহুল : আচ্ছা বেশ,তাহলে তুমিই বলো কি করলে তুমি বিশ্বাস করবে যে আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি?

প্রিয়াঙ্কা : বাজে বকবক না করে চটপট তোমার বাইকটা বের করো । আমাকে বিগ বাজারে ড্রপ করে দিয়ে তারপর তুমি যেখানে খুশি যাও । 

রাহুল : (হতাশা ঝরে পড়ে) আর বাইক ;  সে পাখি ফুড়ুৎ । 

প্রিয়াঙ্কা : (প্রায় আঁতকে উঠে) মানেটা কি ? 

রাহুল : এই মাত্র আমার বাইকটা ওয়েলেক্সে বেচে দিলাম।  

প্রিয়াঙ্কা : (চিৎকার করে) হো আ আ আ  ট ? তুমি তো দেখছি একটা ক্রিমিনাল ! 

রাহুল : কি বলছো কি ! তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি ? 

প্রিয়াঙ্কা : মোটেই না , মাথা আমার ঠিকই আছে। যে লোক এতক্ষন এই ভয়ঙ্কর কথাটা চেপে রাখতে পারে তার পক্ষে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করাটাও অসম্ভব কিছু 
নয়।  

রাহুল : আরে তুমি বলবার সুযোগ দিলে কৈ ? 

প্রিয়াঙ্কা : ফালতু অজুহাত খাড়া করো না রাহুল , আমার মাথায় কিন্তু আগুন জ্বলছে । 

রাহুল : শোন শোন ডার্লিং , তুমি সবটা না জেনেই অকারণ রাগ করছো সোনা । 

প্রিয়াঙ্কা : আর কি জানাতে বাকী আছে তোমার শুনি?  

রাহুল : শুনলে তুমি দারুন এক্সসাইটেড হবে । দিন পনেরোর মধ্যেই আমি একটা নতুন বাইক কিনছি । এক্কেবারে রেসিং বাইক , হওয়ার সঙ্গে কথা বলবে । তারপর শুধু তুমি আর আমি লং রাইড । (গান গাইতে শুরু করে এবং বাইক চালানোর ভঙ্গিতে প্রিয়াঙ্কার সামনে এসে দাঁড়ায়) 
এই পথ যদি না শেষ হয় 
তবে কেমন হতো তুমি বলত ? 
লাল্লা লা লা লা , 
লাল্লা লা লা লা ,
লা আ লা আ লা আ আ আ ...

প্রিয়াঙ্কা : ওকে ফাইন , তাহলে দিন পনের বাদেই না হয় আমাকে কনট্যাক্ট করবে ঠিক আছে ? তার আগে নয় । নো বাইক নো লাইফ । এতদিন তোমার বাইক ছিল তাই আমার কম্প্যানি পেয়েছো , এখন তোমার বাইক নেই তাই আমিও নেই । 

রাহুল : প্লিজ সোনামনি এ ভাবে বোলো না ! ডোন্ট ব্রেক মাই হার্ট । 

প্রিয়াঙ্কা : আপাতত তোমার হৃদয়ের টুকরো গুলো সব এক জায়গায় কালেক্ট করে রাখো , পরে না হয় ফেভিকল দিয়ে জুড়ে নেবে । (মোবাইল ফোনে কারোকে কল করতে সচেষ্ট হয়) এখন আমি বিট্টু কে যোগাযোগ করি কেমন ? 

রাহুল : বিট্টু ! মানে সেই  বডি বিল্ডার ? 

তখনই মঞ্চের ডান দিকে স্পট লাইটে বিট্টুকে দেখা যায় । পরনে জিম করার ড্রেস , সে জিমে রয়েছে এবং ডাম্বেল ভাঁজছে ।পাশে ফোন রয়েছে।

প্রিয়াঙ্কা : ইয়েস বেবি , ওর বডিও আছে বাইক ও আছে । এক্কেবারে রেসিং বাইক হওয়ার সঙ্গে কথা বলে । বিট্টু তো সেই কবে থেকেই প্রপোজ করে বসে আছে । আমিই এতদিন এটা সেটা বলে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলাম । এখন দেখছি ... (কল কানেক্ট হয়ে যায়) 

বিট্টু : (সাংঘাতিক উত্তেজিত হয়ে ডাম্বেল রেখে ফোন ধরে) হ্যাল্লো 

প্রিয়াঙ্কা :  হ্যালো কে বিট্টু ?  

বিট্টু : ইয়েস ডার্লিং টেল মি হোয়াট হাপেন্ড ? 

প্রিয়াঙ্কা : এই তুমি আমাকে চিনতে পারছো ? 

বিট্টু : পিংকু বেবি এটা জিজ্ঞাসা করে তুমি আমাকে ইন্সালট করলে বেবি । আই ফিল ভেরি স্যাড । 

প্রিয়াঙ্কা : এরকম কেনো বলছো বিট্টু ? আমি আবার কি করলাম ? 

বিট্টু : জনেমন তোমার ছবি তোমার ফোন নাম্বার এগুলো আমার মোবাইলে নয় আমার বুকের ভিতরে সেভ করা আছে ডার্লিং । 

প্রিয়াঙ্কা : ওমা তাই নাকি ! হি হি হি ...

বিট্টু : ইয়েস জানু , হাজার লোকের ভিড়ের মধ্যেও চোখ বন্ধ করে তোমার গলা শুনে ঠিক চিনে ফেলতে পারি ।

প্রিয়াঙ্কা : উফ্ আমি জাস্ট ভাবতেই পারছি না , এই শোনো না আই নিড ইউর হেল্প ম্যান রাইট নাও । 

বিট্টু : এতো দিন পর তাহলে আমাকে এই জন্য মনে পড়লো ? 

প্রিয়াঙ্কা : আরে না না তা নয় , আসলে এতদিন আমি একটা ফালতু ঝামেলায় জড়িয়ে ছিলাম তাই কনট্যাক্ট করতে পারি নি । এখন ফ্রী হয়ে গেছি , প্লিজ ভুল বুঝো না । মিট করে সব বলব তোমাকে । আগে প্রমিস করো তুমি আমার কথা রাখবে ! 

বিট্টু : জানেমন তুমি শুধু মুখ ফুটে একবার বলো কার লাশ ফেলতে হবে ? 

প্রিয়াঙ্কা : এই না না ওসব করার দরকার নেই । আপাতত আমাকে বিগ বাজারে নিয়ে গেলেই চলবে , আমার কিছু শপিং করার ছিল যে । 

বিট্টু : এই ব্যাপার ! ডোন্ট ওরি বেবি , আমি এখনই বাইক নিয়ে বড় রাস্তার মোড়ে পৌঁছে যাচ্ছি । 

প্রিয়াঙ্কা : ওহ্ হাউ নাইস ! তুমি ওয়েট করো ডার্লিং আমি এখনই আসছি বাই । 

এতক্ষন রাহুল গোটা মঞ্চে ছটফট করে বেড়ায় , সে বারংবার প্রিয়াঙ্কাকে বাধা দিতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না । এবার প্রিয়াঙ্কা ফোন রেখে রাহুলের উদ্যেশ্যে ব্যঙ্গাত্মক ভাবে গান গাইতে শুরু করে ।

প্রিয়াঙ্কা : 
জিন্দেগি এক সফর হ্যায় সুহানা 
ইয়াহ কাল ক্যায়া হো কিসনে জানা ?  (দরজার কাছে গিয়ে) টাটা বাই বাই বাইকটা কিনলে ফোন করতে ভুলোনা যেনো , লাভ ইউ হানি ... উ উ উ ম ম আ আহ্ । (ফ্লাইং কিস দিয়ে চলে যায়) । 

রাহুল : (সম্পূর্ণ বিদ্ধস্ত , অসহায় ভাবে দুহাত ছড়িয়ে বলে) এ কি রে ভাই , লে হালুয়া ! এটা কি হলো ? (স্থির হয়ে যায়)।

মঞ্চের আলো পরিবর্তিত হয় । মৌপিয়া প্রবেশ করে ও বাম দিকে চেয়ারে বসে আগের মতোই তার ওপর স্পট লাইট এসে পড়ে এবং ... 

মৌপিয়া : হ্যালো ফ্রেন্ডস কথায় গানে গল্পে সময় অনেকটাই গড়িয়েছে কিন্তু আমাদের আরো অনেক গান শোনা বাকী আছে আরো অনেক গল্প করা বাকী আছে । আমি শুনবো সেই সব কথা কিম্বা গল্প যা আপনারা শেয়ার করতে চান আমার সঙ্গে অর্থাৎ আপনাদের খুব কাছের ও বিশ্বস্ত বন্ধু মৌপিয়াকে । একটা ছোট্ট বিজ্ঞাপন বিরতীর পর ফিরে আসছি । যাবার আগে শুনবো এমন কিছু যাতে এক্সাইটমেন্ট আছে এনার্জি আছে আর আছে ... না আর কি আছে সেটা আমি বলবো না আপনারাই ঠিক করুন । তবে এবার আর হিন্দি নয় এখন শুনবো পুরোনো দিনের একটি সুপারহিট বাংলা ছায়াছবির গান । শুনতে থাকুন 98.3 Radio Mirchi , it's hot .(প্রস্থান) 

BGM
সিং নেই তবু নাম তার সিংহ 
ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব 
গা য়ে লা গে  চা কা 
ভ্যাবা চ্যাকা 
হাম্বা হাম্বা 
ঠিক ঠিক ঠিক ।

গান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে লাইটিং স্কিম পাল্টে যায়। এক কথায় বলতে গেলে ডিস্কো থেকের মতন চেঞ্জিং লাইট শুরু হয় ।  সমস্ত চরিত্রগুলি একে একে মঞ্চে উপস্থিত হয় ও রাহুলকে গোল হয়ে ঘিরে উৎকট অঙ্গভঙ্গি করে নাচতে থাকে । রাহুল পালাবার পথ পায় না সে যেনো বন্দী হয়ে গেছে বলে মনে হয় । ধীরে ধীরে পর্দা নামতে থাকে । 

সাহিত্যিক সুদীপ পাঠক 
মধুগড়, দমদম, কলকাতা





























0 Comments