মনোরম মন্দারমনি
মন্দারমণি যাওয়ার ইচ্ছেটা বরাবরই ছিল। তা বলে অতিমারীর এইসব দমবন্ধ পরিবেশে যে সেখানে যাওয়া হবে ভাবিনি।হয়তো যেতামও না যদি না ছেলের ব্যাপারটা মাথায় আসতো।বছর পাঁচেকের খুদেজনটি বাড়ির বাইরে না বেরিয়ে ঘরে থেকে থেকে এমন একটা মানসিক অবস্থার শিকার যে বাইরে শব্দটা শুনলেই তার ভয় লাগে এই বুঝি করোনা হয়ে যাবে।তখনই মন্দারমণির প্রস্তাব এবং তাতে বউ আমতা আমতা করলেও ছেলে নিমেষে রাজী। সমুদ্র তার খুব পছন্দ।আমাদের সঙ্গে জুড়ে গেল আমার মামাতো ভাই বাবুসোনা। তারপর আর কি…পোশাক-টোশাকের সাথে স্যানিটাইজার, ডিসইনফেক্ট আর মুখে মাস্ক পরে শনিবার বিকেলে পৌঁছে গেলাম।টিকিট দীঘা অবদি থাকলেও বুদ্ধি করে কাঁথিতে নেমে গেলাম বলে বেশ খানিকটা আগেই গেলাম পৌঁছে।বিকেলে হোটেল মৈনাকের দোতলায় লাগেজ রেখেই সমুদ্র সৈকতে দৌড়।ভীড় ভাট্টা তেমন না থাকায় সমুদ্রের সান্নিধ্য আরো বেশি করে উপভোগ করতে পারলাম।
একটু হেঁটে বিচটা ঘুরে দেখতে দেখতে বুঝলাম মন্দারমণির এটাই বিশেষত্ব: হোটেলগুলো মূলত সমুদ্রের গা-ঘেঁষে।হোটেলের খাওয়া-দাওয়া খুব আহামরি নয় কিন্তু সমুদ্রকে এত কাছে পেয়ে আমরা খুব খুশি।আরো খুশি ছেলের আনন্দ দেখে।সে ব্যাটা বিকেল থেকেই ঝিনুক কুড়োতে লেগেছে।রাতে অবশ্য বিশেষ কোথাও ঘোরবার ছিল না।হয়তো নিরাপত্তার কারণেই বিচের দিকের গেট ছিল বন্ধ।হোটেলে ফ্যামিলি নিয়ে আসা পর্যটকের সংখ্যা বেশি।ফলে অতিমারীর থমকে থাকা বন্দী বন্দী পরিবেশটা মনেই হচ্ছিল না।তারপর রোববার ভোরে হোটেলের ঘর থেকে সানরাইজ দেখে এতটাই তরতাজা আর অণুপ্রাণিত লাগলো নিজেকে যে মনে হচ্ছিল বিশ্বনাথন আনন্দকে তুড়ি মেরে কিস্তিমাত দিতে পারি যে কোনো সময়ে।সূর্যটা এতটাই মোহময়ী ছিল যে ঘুমন্ত ছেলেকেও ডেকে দিলাম যাতে এই মুহুর্তগুলোর সাক্ষী সেও হতে পারে।বউ ছেলেকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে চলে গেল কিছুক্ষণ পরেই।অগত্যা আমাকেও যেতে হল তাদের সাথে।সকাল বেলার লাজুক সূর্যের চোখ দিয়ে সৈকতকে দেখে বিস্কুট আর ডাবের জল খেয়ে হোটেলে ফিরে দেখি ভাই ততক্ষণে উঠেছে।ভাইএর ঘরে সবাই একসাথে কচুরি খেয়ে আবার বিচমুখী।লক্ষ্য স্নান।রাতেও চোখে পড়েছিল।বেলায় উঠেই বসলাম স্পিড বোটে।সমুদ্রের ৪-৫ কিলোমিটার ভেতরে নিয়ে গেল।টাকাটা বেশি নিলেও অভিজ্ঞতাটা বেশ রোমাঞ্চকর। ছেলে ভয় পেয়েছে বলে তাকে ভরসা দিতে গিয়ে বুঝলাম,ভয়টা আমারো কম কিছু লাগছিলো না।না, দুপুরে কাঁথি স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে অবদি আর কোথাও ঘুরিনি।মন্দারমণির ওই বিচেই ছিলাম।সমুদ্র সামনে থাকলে আর কোথাও বুঝি যেতে মন চায় না।যে অটোচালক দাদা আগের দিন আমাদের এনেছিল সেই আবার নিয়ে গেল হোটেল থেকে। হাওড়া পৌঁছতে পৌঁছতে ক্লান্ত সন্ধ্যের সাথে মোলাকাত হলেও মনে ততক্ষণে সঞ্চয় করেছি এমন সুন্দর আর আনকোরা অভিজ্ঞতার স্মৃতি যে আমি নিশ্চিত তাদের রোমন্থন পাথেয় করে আগামী দিনের পথ হয়ে উঠবে আরো মনোরম।
0 Comments