দিশারী মুখোপাধ্যায় এর গুচ্ছ কবিতা





  দিশারী মুখোপাধ্যায়🔹দক্ষিণ দিনাজপুর🔹




সর্পে রজ্জুভ্রমের গল্প


চিনি , চিনি তো বটেই , কিন্তু
তাকে কি চেনা বলা যায় ? 

এই যে কালো ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিলোমে 
একে তো কাজললতার কালি বলা যায় না
কাজল প্রসঙ্গে আসে চোখ
শুকনো পাতার আগুনে পোড়া হাঁড়ির ভুসো বলা যায় না
ভেতরে ভাতের ঘ্রাণ থাকে
অথবা কালো মেয়েটির ততোধিক কালো স্তনবৃন্ত

কোন বীজের ভেতরে কত বড় গাছ থাকে
আমরা জানি । জানি কি ? হয়তো সঠিক জানি না

এই যে অন্ধকারের ভেতর
বাড়ির নম্বর খুঁজে পাচ্ছে না আলো
এ খবর কোনো কাগজে পাবে ? পাবে না । কারণ
খবরকে ইদানিং গল্প বলা হয়



সাপুড়ের অনাদর


মাথার ভেতর একটা চন্দ্রবোড়া আছে
মাঝেমাঝেই তার, ছোট হলেও, একগ্লাস দংশন পায়
এবং দংশায়
এসব কথা, কবিতার সৌজন্যে , সকলেই জানেন

প্রত্যেক বিষধর সাপেরই একটা বিশেষ ফ্যাসিনেশন আছে
কে কাকে দংশন করবে
সেটা তাদের মন, মর্জি এবং আরও কী একটা ব্যক্তিগত বিষয় থাকে
সে সবের ব্যাপার
(এখানে বিষহীন কোনো প্রাণীকে সাপ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে না ) 
আমার চন্দ্রবোড়াও সেরকম একটা পছন্দ আছে
সেটা কোনো গোপন এবং আশ্চর্যের বিষয় নয়

সাপুড়েরা ফণাধারীদেরই বেশি পছন্দ করে
আর বোড়াসাপ ফণা ধরতে পারে না


আগডার রহস্য


সকাল থেকে আকাশ আজ অন্ধকার হয়ে আছে
অন্ধকারের পরিবর্তে কাজল ধ্যাবড়ানো চোখ
পুরনো, মোটা, ছাতাধরা ত্রিপলের কথাও মনে এসেছিল
বললাম না । কেন বললাম না , বললে
অন্ধকার ফিকে হয়ে যাবে । তবে
ত্রিপলের তিনটে বিশেষণ নিয়ে
আপত্তি করতেই পারেন যে কেউ

এইরকম অন্ধকার দিনগুলোতে
একজনের নামই আমার মনে আসে
এবং এইজাতীয় একটা কমন রসায়নের উপর
কোনো প্রশ্নই পরীক্ষায় আসে না

আমি সারাদিন অন্ধকার নিয়ে কী কী করলাম - 
জানালায় অনেক উঁকি এসেছিল
কেবল উঁকি মেরে তো কোনো সফল উপন্যাস লেখা যায় না



স্বপ্নের আবদার রাখতে পারিনি


স্বপ্ন প্রায়ই আমার সামনে এসে
নাচে গায় 
বলে- আমাকে দেখো

আমার তো একজোড়াই মাত্র চোখ
খুব বড়ও নয়
খুব সুন্দরও নয়
মানুষের পায়ের গোড়ালি ফাটলে
যেরকম খাঁ খাঁ করে
টেনেটুনে থার্ড ডিভিশনে পাস করা
এবং কোনো অখ্যাত কলেজেও
পড়াশুনার সুযোগ না পাওয়া চোখ

পাড়ায় একদিন একটা চক্ষুদান শিবিরে গিয়ে
অনেক ধরাপাকড়া করে
চোখদুটো দেবার অঙ্গীকার করেছি
সেজন্য, দরকার হলে , আগে আগে মরতেও রাজি আছি

স্বপ্নকে দেখতে গিয়ে
সেই চোখ নষ্ট করা যায় 


অবৈধ কান্না


কাছাকাছি কোথাও শবদাহ হচ্ছে
আগুনের তাপ নেই
পোড়া মাংসের গন্ধ নেই
হাড় খুলি ফাটার শব্দও নেই
শুধু একটা ভেঙে যাওয়া সেতারের
অপঠিত চিঠিগুলোর কান্না শোনা যায়

কাছাকাছি কোথাও শবদাহ হচ্ছে
কেউ একজন লাঠি করে খুঁচিয়ে দিয়ে
আগুনটা উস্কে দেয়

অদূরে ছুঁড়ে ফেলা সেই লাঠিটাও
জ্বলতে থাকে চুপিচুপি



একজন ক্যালাস কবি


আমার কবিতার পাঠক সংখ্যা খুবই কম
কম বললেও একটু বাহুল্য হয়ে যায়
(যিনি কোটির মালিক, কম বললে বোঝেন লক্ষ)

একজন আড়- পাগলা প্রেমিক
তার মনোযোগের এক দশমাংশ কখনো কখনো
একটি অসম্পূর্ণ প্রজাপতি  এবং
একটি পাখির খসে যাওয়া দেড়খানা পালক
কবরের মধ্যে পাশ ফিরে শুতে যাওয়ার সময়
একজন সিরাজ কালেভদ্রে

আমি সারাদিন ধরে অন্যের বাগান দেখি
আর মুগ্ধতা প্রকাশ করি
যদিও লোকে বলে
আমার মুগ্ধতার মধ্যে আছে ক্যালাসনেস



                       কবি দিশারী মুখোপাধ্যায় 

0 Comments