বোধোদয়
রবিবারের সকালে স্নান, পুজো সেরে, জলখাবার খেয়ে সবেমাত্র খবরের কাগজে চোখ বোলাতে শুরু করেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত হাইস্কুলের হেডমাস্টার সত্তরোর্ধ শ্রী মনোময় দাশগুপ্ত। হঠাৎ করে কলিংবেলের আওয়াজে মনোনিবেশ ভঙ্গ হয়...
--"বৌমা, দেখোতো... কে এলো?"
--"ও তোমরা?.. ভিতরে এসো "..
--" না কাকিমা, ভিতরে যাব না... আপনি দাদুকে একটু ডেকে দিন "..বছর আঠারোর জয় বলে...
--" আচ্ছা, দাঁড়াও "...
মনোময়বাবু বেরিয়ে দেখেন পাড়ার তিনটে ছোকরা মুখে মাস্ক পরে, সোস্যাল ডিস্ট্যান্সিং রেখে দাঁড়িয়ে আছে..
--" কি ব্যাপার? স্বাধীনতা দিবস তো চলে এল.. এবারে কি কিছু হবে না? "....
--" ওইজন্যই তো আপনার কাছে এলাম " …দেবু বলে...
--"দাদু, আমরা এবারে একটু অন্যভাবে দিনটা পালন করতে চাই... ওই যে লাইব্রেরির পিছনদিকের রাস্তাটা ধরে গেলে একদম শেষে যে 'লালবাতির পাড়া'টা আছে ওখানের কিছু বাচ্ছার হাতে আমরা ওইদিন মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ পড়াশোনার সামগ্রী আর সাথে কিছু মুদিখানার জিনিষপত্র তুলে দেবো... আপনি
কি বলেন? "...
--" খুব ভালো উদ্যোগ.. আমি সাথে আছি "...
ঘরের ভিতর থেকে এসে একটা পাঁচ হাজার টাকার চেক ওদের হাতে তুলে দেন মনোময়বাবু..
--" এটা রাখো "...
--" একটা অনুরোধ দাদু, আপনার সান্ধ্যআড্ডার বন্ধুদের এখন কিছু বলবেন না..এটা সারপ্রাইজ প্রোগ্রাম হবে "...
--" আচ্ছা, বেশ "..
পনেরই আগস্ট যথাসময়ে দেখা যায় সোস্যাল ডিস্ট্যানসিং রেখে পাড়ার বয়স্ক মানুষদের হাত দিয়েই বাচ্ছাদের হাতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে..
এবারে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নেই, সব খরচা এতেই বরাদ্দ করা হয়েছে।
--" কি ব্যাপার দত্তবাবু? কেমন লাগছে? ছেলেগুলো অতটাও খারাপ নয়, কি বলেন? "...
--" আর লজ্জা দেবেন না দাশগুপ্তদা, সত্যিই.. আমাদের যুবসমাজ এখনও যথেষ্ট দায়িত্ববান একটা সুস্থ, রুচিশীল ভারতবর্ষ গড়ে তোলার জন্য.. শুধু প্রয়োজন আপনার মত ভরসাযোগ্য সাপোর্টের "....
--" আপনাদের মতোই বা নয় কেন? সবাই এগিয়ে এলে তবেই তো সংকটের রাত্রি পেরিয়ে নতুন সূর্যোদয় হবে.. তাই না? "...
--" ঠিক বলেছেন "..
--" চলুন, এগোনো যাক "....
বাড়ি ফেরার পথে শুনতে পান কোথাও গান বাজছে...
" ভায়ের, মায়ের এত স্নেহ,
কোথায় গেলে পাবে কেহ..
ওমা তোমার চরণদুটি বক্ষে আমার ধরি..
আমার এই দেশেতেই জন্ম
যেন, এই দেশেতেই মরি "....।
গল্পকার শুক্লা মুখার্জি
সুভাষ পল্লী, পূর্ব বর্ধমান।
0 Comments