স্বাধীনতা দীনতায়
আজ ১৫ই আগস্ট।সকাল থেকেই ঝিরঝিরানি বৃষ্টি,স্কুলছুট বাচ্চার মতো, খামখেয়ালিপনা ক'রে চলেছে অবিরাম।শহরের রাস্তা ঘাট আধভেজা হয়ে পরে রয়েছে।বিছানায় পক্ষাঘাতে পড়ে রয়েছে,বসন্ত।সেই এপ্রিল থেকেই বসন্ত ঘর বন্দি।লকডাউনে আকস্মিক চাকুরি খুইয়েছিল,মেনেও নিচ্ছিল,চাপ নেওয়া বসন্তর গা সওয়া অনেকটাই।কিন্তু রক্তচাপ মেনে নেয় নি মস্তিষ্ক। রাতদুপুরে সেরিব্রাল।সরকারি হাসপাতাল।অর্ধেক সুস্থ,অর্ধেক অসুস্থ হয়ে,পুরোপুরি পড়ন্ত আলোর মত নিভে আসছে বসন্ত।ঠিক আজকের আবহাওয়ার মত।'আচ্ছা জীবন কেন,আবহাওয়ার মত পালটায় না,লড়াই থেমে শান্তি আসে না কেন!' বৈশাখী রোজ ঠাকুরকে বলে।বসন্তর পক্ষাঘাতের পর কয়েকপক্ষকাল,এক পাক্ষিক লড়াই চালাচ্ছে বসন্ত পত্নী বৈশাখী।
পাড়ার অঙ্গনওয়ারি স্কুলে পড়ায় বৈশাখী। আজ স্কুলে একবার যেতেই হবে ওকে,না শুধুই পতাকা উত্তোলন নয়।এক এনজিও বাচ্চা দের হাতে চাল-ডাল-আটা-তেল আর কিছু পেন খাতা তুলে দেবে।
স্কুলে পতাকা উঠলো।'স্বাধীনতা মানে,কর্মের স্বাধীনতা, ধর্মের স্বাধীনতা ও খাদ্যের স্বাধীনতা.. 'নিজের ছোট্ট বক্তব্য অমনোযোগী কতিপয় শ্রোতাকে শোনাল বৈশাখী। আজ নিজের পাঁচ বছরের শিশুপুত্র বিল্টুকেও নিয়ে এসেছে,সেও শুনছে,দেখছে।
বৃষ্টি বাঁচিয়ে,মোটামুটি শুষ্ক হয়ে বাড়ি ফিরলো,মা বেটা,স্কুলের পর্ব মিটিয়ে।সামনের বারান্দায় প্রতিক্ষারত 'দয়াময়ী স্টোরের' দয়াময় মুদি।'তুমি তো ওদিকে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছো।ধারে আর কত দিন খাবে? আজ পয়সা নিয়ে তবে যাবো'
আকস্মিক অপমানে কালো হয়ে এলো বৈশাখী।লজ্জা শিকলের মত বেঁধে ফেললো ওকে,কালবৈশাখী উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে আত্মসম্মান!'আর কটা দিন যদি...আমি ঠিক দিয়ে দেব..ছেলেটার হরলিক্সটা যদি..'
'...কর্মের স্বাধীনতা, ধর্মের স্বাধীনতা ও খাদ্যের স্বাধীনতা!'অল্প সময়েই মায়ের ভাষণ বেশ মুখস্থ করে ফেলেছে,বিল্টু।সেটাই বলতে বলতে ঘরে ঢুকে গেল ও।
0 Comments