জয়তী ধর পালের অণুগল্প

 


ফাঁসি 


১৫ই আগস্ট
সকাল

-- "এই স্বপন , ফুলটা এদিকে দে। "

-- "আনোয়ার , খুটিটার শক্ত করে পোঁত। "

-- "পম্পা,আলপনাটা দারুন হয়েছ। "

স্বপন আনোয়ার পম্পা ক্ষুদি ... এরা সব 'আলোকধারা' ক্লাবের সদস্য ... বেকার ছেলে মেয়ের দল। ক্ষুদি আবার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট। ওর স্বর্গত দাদু ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী , তিনি ভালোবেসে নাতির নাম দিয়েছিলেন ক্ষুদিরাম। আজ পতাকা উত্তোলনের আয়োজনে ওরা খুব ব্যস্ত। ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উড়ল ... প্রথমে 'জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ',তারপর মাইকে বাজতে লাগলো একের পর এক দেশাত্মবোধক সংগীত।

বিকেল

কাগজে সইটা করে দিয়ে ক্ষুদি আর আনোয়ার বেরিয়ে আসলো রমেশ আগরওয়ালের বাড়ি থেকে।

-- "মন খারাপ করিস না ক্ষুদি। "

-- "না রে , আর কয়েক মাস পরেই শপিংমলের রঙ-চঙে বাহারি আলোয় হারিয়ে যাবে আমাদের 'আলোকধারা'।

--"কিন্তু এইটুকু কষ্ট হজম করতে পারলে যে , ওই শপিংমলের কাউন্টারে তুই বসবি ম্যানেজার হয়ে , আমি স্বপন পম্পা আমাদেরও তো 'বেকার' বদনাম ঘুচবে। "

বুক চিরে একটা দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে আসে ক্ষুদির।

রাত

স্নান করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে ক্ষুদি। হঠাৎ চমকে উঠলো ...গলায় এটা কিসের দাগ... কখন হলো... !

'আলোকধারা'র মাইকে তখনও বেজে চলেছে গান ... 'একবার বিদায় দে মা , ঘুরে আসি ... তখন যদি না চিনতে পারিস দেখবি গলায় ফাঁসি ... '।


  গল্পকার জয়তী ধর পাল  

হলদিয়া টাউনশিপ, পশ্চিমবঙ্গ 








0 Comments