ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা

 

স্বাধীনতা

সত্তর বছর আগে,এই অশীতিপর বৃদ্ধের
এগারো বছরের শৈশবটা,এপারে আছড়ে পড়েছিলো,
চালহীন,চুলোহীন
ঠিক আজকের দিনে,খালিহাতে,খালিপায়ে।।
ওপারে ফেলে আসা,
জন্মভুমির মাটির উদ্দেশ্যে,
বারবার জড়ো করা হাত,
মাথায় ঠেকেছিলো তাঁর,
প্রণামের ভঙ্গিমায়।

সহায়, সম্বলহীন জীবনের
খালি হাতে অসম সংগ্রাম -
কৈশোর আর যৌবনের ফুটিফাটা জমিতে,
ঘাম,রক্তে বোনা সোনার ফসল,
ধীর ধীরে উঠেছিল গোলায়,
জীবনের; প্রাপ্তি,অপ্রাপ্তির দোলাচলে--
কৈশোরের মনি, মুক্তা,প্রবাল-
হারিয়ে গিয়েছিল অনেক-
গড়ে উঠেছে,
সাম্য সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে,
এক নতুন মন, নতুন দিকদর্শন-
বৃদ্ধর মননে, কাঁটাতারহীন
উন্মুক্ত এক দিগন্ত।।

আজ আবার,ঠিক সেই জায়গাটায়,
এসে দাঁড়িয়েছে, সেদিনের কিশোর,
সেদিনের সেই,শৈশবের প্রান্তরেখা ছোঁওয়া,
আজকের এই অশীতিপর বৃদ্ধ,
মনে আজও জ্বলন্ত অঙ্গার,
এগারো বছরের সঙ্গী নাতির হাত ধরে--
দাঁড়িয়ে কাঁটাতারের এপারে,
ওপারে তাঁর জন্মভূমি -
ওপারে আজ অন্য দেশ,
তার উদাস দৃষ্টি,
কাঁটাতার পেরিয়ে চলে যায় অনেকদুর,
ইছামতীর তীর ছুঁয়ে,ধলেশ্বরীর বুকে
বুড়িগঙ্গায় ভাসা
শঙ্খচিলের পাখায়।

দৃষ্টিতে এখনও কাঁটাতারের বেড়া পরেনি,
দৃষ্টিতে,এখনো পাসপোর্টের পরোয়ানা লাগেনি,
তাই মন আর দৃষ্টি,হারায়,বুড়িগঙ্গায়--
ওপারে ধলেশ্বরী, এপারে জলঙ্গী,
এপারে ইছামতী, ওপারে মেঘনা--
এখনো কি তেমন করে বয়না! ঠিক আগের মতো!!
চঞ্চল মনে হাজারো প্রশ্ন উকি দিয়ে যায়
সেখানে কোন ভাগাভাগি করেনি কেউ,
বাঁধেনি কাঁটাতারের মিথ্যা সীমারেখায় ।।

"আজকের তারিখ টা,মনে রেখো, দাদুভাই,
ভারতবর্ষ  স্বাধীন হয়েছিল এই দিনে,
সব বিভেদ ভুলে,তোমাদেরকেই, 
অনেক মূল্যে চোকানো, এই স্বাধীনতা ,
রক্ষা করতে হবে"।
দাদুর কথা ছোট্ট মাথায় ঢোকেনা তেমন করে,
শিশু টি শুধু বলে ওঠে,
"ওপারে তুমি জন্মেছিলে না দাদুভাই"--
তবে এখানে কাঁটাতার কেন!
কেন তুমি একছুট্টে ওপারে তোমার
সেই জন্মভূমিতে আজ এখনই
ইচ্ছে করলেই যেতে পারোনা দাদুভাই"!
নিরুত্তর দাদুর দুটি গাল বেয়ে,নেমে আসে অশ্রু--
মুখ থেকে বের হয় অস্ফুটে একটি শব্দ,
"স্বাধীনতা, স্বাধীনতা, স্বাধীনতা"।। 


কবি ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ 












0 Comments