উত্তম সিংহের অণুগল্প

 



উত্তর স্বাধীনতা 

স্বাধীনতা দিবস এলেই কেমন যেন হাত পা গুটিয়ে আসে রাতুল রায়ের। বুকের ধুক পুক বহুগুণ বেড়ে যায়। 
ষাট ছুঁই ছুঁই এই বয়সে স্বাধীনতা সম্পর্কে আর নতুন করে কোন উত্তেজনা আসে না তার। তবে একটা ভয় সারাক্ষন রাতুল রায়কে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। 
বছর কয়েক আগে ও এমনটা ছিল না। সকালে দেশত্মবোধক গান রক্তে কেমন জোয়ার নিয়ে আসতো। ত্রিরঙা পতাকা আকাশ জুড়ে বীরত্বের জয়গাথা হয়ে পতপত করে উড়ে বেড়াতে। বেশ ভালো লাগতো তার। অন্তত একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছেলে হিসেবে রাতুলের আনন্দের মাত্রাটা একটু বেশিই ছিল।
এখনও পাশের ক্লাবের ছেলেরা আমন্ত্রণ করে। বরন করে মঞ্চে বসিয়ে হাতে লাউড স্পিকার ধরিয়ে দেয়। তার মত করে গুছিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী মনোতোষ রায়ের সম্পর্কে আর কেই বা বলতে পারে!
ক্লাবের ছোট ছোট ছেলে গুলো এমনিতে বেশ ভদ্র সভ্য। প্রকাশে কিছুটা মান্যি গুন্যিও করে রাতুলকে। প্রতি বছর অন্যান্য দেশবরেণ্য মনীষীদের পাশে মনোতোষ রায়ের ছবিতে মাল্যদান করে ঘটা করে। কালকের জন্য মনোতোষ বাবুর বাঁধানো ছবিটা ছেলে গুলো চেয়েও রেখেছে রাতুলের কাছে।
এই ছেলেগুলোকেই রাতুলের কেমন অচেনা লাগে স্বাধীনতা দিবসের পাক্ মুহূর্তে। হালফিলের ফ্যাশান উঠেছে স্বাধীনতা দিবস উৎযাপনের নামে রাত বারোটায় মচ্ছব করা। কান ফাটানো ডিজে,বুক কাপানো আতসবাজির সাথে পাল্লা দিয়ে চলে তরল মাদকতা আর ইংলিশ গান।
রাতুল ঘড়ির দিকে তাকালো। মাহিন্দ্রক্ষন উপস্থিত। রাত বারোটা বেজে ঘড়ির কাঁটা ভারতের চুয়াত্তরতম  স্বাধীনতা দিবসের দিকে এগিয়ে গেল। মুহূর্তে সারা আকাশ বাতাস ভেসে গেল পশ্চিমী উন্মাদনায়। 
ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকে রাতুল। হাঁটুর ফাঁকে মাথা গুঁজে খাটের মাঝখানে সে যেন এক জড়ভরত। অপেক্ষায় থাকে কখন সে এই অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি পাবে। উন্মাদনা একবারে বন্ধ হয় না, ঘন্টাখানেক পর খানিক ঝিমিয়ে আসে। রাতুল মাথা তোলে। নাইট বাল্বের লাল আলোয় দেখে বাবার ছবি মেঝেয় পড়ে খান খান হয়ে গেছে।

            গল্পকার উত্তম সিংহ 
বড়শুল, পূর্ব বর্ধমান 
                      

















0 Comments