
করোনায় পুজো
শিবের সংসারে কিছুদিন ধরে অশান্তি চলছে। শিব শান্ত প্রকৃতির মানুষ। কোন জুট ঝামেলার থাকে না। তার ডিমান্ড খুব কম। বছরে একবার আসে। কিন্তু খুব একটা হৈচৈ তাকে নিয়ে হয় না। দূর্গা পূজো তো তা নয়। পাঁচদিনের জমজমাট পূজো। কয়েক বছর ধরে আবার কার্নিভাল শুরু হয়েছে। অথয়েভ পাঁচ দিন শেষ হলেই আগের মতো বাড়ি ফিরতে পারছে না। সেখানের সি এম এই দূর্গা পূজোকে সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছেন। রেড রোড জুরে তাই ম্যারাপ বাঁধা হয়। বড় বড় নেতারা আসেন। দেশ বিদেশ থেকেও আসে। তাই দূর্গার অহংকার বেড়ে গেছে। এবার সেই অহংকার ভেঙেছে। এবার দূর্গা মত্যে যেতে পারবে না। নো এন্টি টু মর্ত্যে।
কিন্তু দূর্গা শুনছে না। তার এক জেদ সে যাবে। এই অশান্তিতে সে রান্না বন্ধ রেখেছে। তার না খেলেও চলে। কিন্তু ছেলেমেয়েরা না খেয়ে থাকবে এটা কোন বাপ সহ্য করতে পারে? তাই আজ আবার দূগাকে নিয়ে বসেছে। শিব বলল-এবার যেতে হবে না।
-কেন?
----মর্তে এবার করোনা।
--সেটা কি?
--সে এক মারাত্মক ভাইরাস।
--সে আবার কি জিনিস?
--সে এক শক্তিশালী ভাইরাস। নাক মুখ দিয়ে ঢোকে। তারপর ফুসফসকে এটাক করে। মানুষ মারা যায়। কয়েক লাখ মানুষ মারা গেছে।
--আমি তো যাবো বাপের বাড়ি। সেখানেও কি—
--সারা পৃথিবী জুড়ে।
--সে হোক গিয়ে। আমি যাবো। বছরে একবার যাই। পাঁটা দিনের জন্য যাই।
--পাঁচ দিন দশ দিনের কথা হচ্ছে না। ছেলে মেয়েদের কথাও তো ভাববে।
--ওখানে মানুষ আছে কি করে?
---মাস্ক পড়ে।ফেস গার্ড নিয়ে। গ্লাভস পড়ে। মাথায় কভার দিয়ে। ডাক্তারা পি পি পড়ে। মানুষে মানুষে তিন ফুট দূরত্বে রেখে। ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ খুব দরকার না হলে।
---তুমি কি সব বলছো আমার মাথায় ঢুকছে না।
--ঢুকবে কি করে?কোনদিন তো এসব শোনোনি।
--তুমি জানলে কি করে?
--নারদ সব খবর দিচ্ছে।
--তাও আমি যাবো।
--মুখে সবাইকে মাস্ক পড়তে হবে। ফেস গার্ড দিয়ে মুখ আঁড়াল করতে হবে। হাতে গ্লাসভ
পড়তে হবে? ছেলে মেয়েদের থেকে তিন ফুট দূরে থাকতো হবে।মাথায় পাতলা কাপড়ের
টুপি পড়তে হবে।। স্যানেটাইজার দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে।দর্শকদের মধ্যে কার করোনা আছে কে বলতে পারে? তোমাদের হতে কত ক্ষণ?
--হাতে গ্লাভস পড়লে অস্ত্র ধারন করবো কি করে?
--অস্ত্র ধারন করতে হবে না। তোমার অস্ত্র দিয়ে ভাইরাস মারতে পারবে না।
--সে না হয় অস্ত্র ধারন এক বছর করলাম না। তবু যাবো।
--করোনাকে তোমার ভয় হচ্ছে না?
--ভয় একটু হচ্ছে। কিন্তু মত্যৈর মানুষ আমাকে নিয়ে পাঁচটা দিন কি আনন্দ করে। কারো কারো নতুন প্রেম হয়। কত লোক দোকান দিয়ে এই কটা দিন কিছু টাকা আয় করে। কত গরীব মানুষ সারাবছর না কিনলে আমার উপলক্ষে তাদের জামাকাপড় হয়। মুখে আনন্দ ফোটে। কোন কোন সংস্থা এই সময় গরীবের বস্তু দান করে। তাদের মুখে হাসি থাকে। সারা বছর দু:খ কষ্টে কাটালে এই কটা দিন তারা আনন্দ করে। কোথাকার করোনা তার ভয়ে আমি বাপের বাড়ি যাবো না।
--তাহলে তুমি যাবেই।
--হ্যাঁ ।যাবোই।
--তাহলে এক কাজ কর তোমার বাপের দেশের সি এম কে একটা ফোন করো।
--ফোন করে কি বলবো?
---এক ড্রাম স্যানিটাইজার পাঠাতে। ছ জোড়া গ্লাভস। সাতটা মাস্ক পাঠাতে।
--সাতটা কেন? আটটা হবে।
--কেন?
--অসুরের লাগবে না?
--ও বেটা করোনার সঙ্গে লড়াই করবে?
--না। না। তা হয় না।
--অসুরের জন্য খুব প্রেম দেখছি।
--তা তো একটু হবেই। কত বছর পায়ের কাছে বসে আছে। না ভালোবেসে পারি?
--আর আমি?
--তুমি তো মাথায় আছো।
--না না। বেটা করোনায় মরুক। ওর জন্য মাস্ক পাঠাতে বলবো না। ও মরুক। আমার প্রেমে ভাগ বসিয়েছে বেটা। এতো দিন বুঝতে পারিনি। করোনা আমার চোখ খুলে দিয়েছে। জয় করোনার জয়।
0 Comments