সাত্যকির গল্প



শিশিরের দিন 

শিশির মাখা ভোর,নীলের উপর নীলের বাহার আর সাদার পাহাড়,হাসি হাসি মুখের সূর্য,ময়ূরকণ্ঠী বিকেলের মুগ্ধতা অমলকে আবেশে আটকে ধরে।কিন্তু,কয়েকদিন আগেও এই রূপ চোখে পড়ে নি অমলের।এখন বেশ দেখতে পাচ্ছে।এই কদিন মন খুব খারাপ ছিল।হেলানো গাছ আর ভাঙা ডাল দেখে দেখে দিনগুলো বড্ড একঘেয়েমি হয়ে গিয়েছিল। 
ইট বেছানো রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অমল দেখে কাশের ধোপ হাওয়ায় দুলছে ট্রেন লাইনের দিকে মাথা হেলিয়ে।কাদাজলে মেশা মাটি এখন বেশ নিজের শরীর ফুটিয়ে তুলছে বাতাসের কাছে,রোদে চকচক করছে।শাপলা- শালুক সরিয়ে হাঁসেরা সাঁতার কাটছে ওদের একচিলতে পুকুটায়।অমল দৌড়ে যায় ইট বেছানো পথ ধরে,তারপর মাঠের নরম ঘাস ভেদ করে পুজোর মাঠের দিকে। 
পুজোর মাঠ কেমন নোংরা,প্রত্যেকবার এই সময় সব পরিষ্কার হয়ে যায়,এবার হয় নি।অমলের মনে প্রশ্ন ঠেলে ওঠে এবার কেন পরিষ্কার হয় নি মাঠ?সারা মাঠের ধার ঘেঁষে বড় বড় ঘাস কেন উঠে রয়েছে?ঠাকুর দালানে বিমল কেন একাই ঠাকুর গড়ছে?প্রত্যেকবার তিন চার জন থাকে বিমলের সাথে ঠাকুর তৈরি করতে।ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া ট্রেন এবার কেন ছুটছে না?অনেক দিন অমল শোনে নি ট্রেনের আওয়াজ।রোজ ধানক্ষেত ভেঙে স্কুল যাওয়ার সময় দেখত ট্রেন ছুটছে,আওয়াজে সারা শরীরে শিহরণ জাগত। 
রাতে খাওয়ার সময় যতিন অমলকে বলেছিল এবার আর তেমনভাবে পুজো হবে না,কি যেন হয়েছে।অমল সব বোঝে নি,তবুও আন্দাজ করেছিল নিশ্চয় গুরুতর কিছু!বাবা ও আর ট্রেনে করে যায় না হজমিগুলি, লজেন্স বিক্রি করতে।অমল অনেক কিছু বোঝার চেষ্টা করে।কিন্তু বুঝতে ইচ্ছে করে না,সে সময় অমলের নেই।  
ছুটির এই সময় অমল শুধু ছুটতে চায় ঠাকুর দালানের দিকে।খোলা দালানের নিচে দাঁড়িয়ে দেখে বিমলের ঠাকুর গড়া। কাঠামো গড়া পর থেকে মাটি দেওয়া তারপর রঙ।খুশি এক অন্য মাত্রায় অমলকে জড়িয়ে ধরে। এবারেও খোলা দালানের পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে অমল। ওর বন্ধুরা অনেকই এখন আসছে না।আজ একাই দেখছে আর বিস্ময়ে আবিষ্ট হচ্ছে।এই শুনশান শূন্যতার মাঝে এক অন্য আনন্দকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছে অমল...     

গল্পকার সাত্যকি
বারাসাত, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ













0 Comments