দুটি কবিতায় ~ সুদীপ্ত বিশ্বাস


সুদীপ্ত বিশ্বাসের দুটি কবিতা 

নগ্নতা 

রাতের কাছে নগ্ন হতে লজ্জা তো নেই,
বরং ও রাত ঘন কালো চাদর মুড়ে
ঢেকে রাখে আমার যত নগ্নতা সব।

ওই আকাশে নগ্ন হতে লজ্জা তো নেই,
বরং আকাশ ছাতার মতো মাথার উপর
মুড়ে রাখে সবকিছু তার বুকের ভিতর।

জল বাতাসে নগ্ন হতে লজ্জা তো নেই,
বরং তারা একটু বেশি খুশি হয়েই
ফিসফিসিয়ে বলে কিছু বাড়তি কথা।

নদীর কাছেও নগ্ন হতে লজ্জা তো নেই,
বরং নদী ছলাত-ছলাত ছন্দ তুলে
নগ্ন হয়েই আমায় শুধু নাইতে বলে।

বন-পাহাড়ে নগ্ন হতে লজ্জা তো নেই,
বরং তারা খুব খুশিতে দুজনেই চায়
আমি যেন খালি পায়ে যাই হেঁটে যাই!

পশুপাখি ওদের কাছেও লজ্জা তো নেই,
বরং তারা বন্দুক আর চশমা-টুপি
এসব ছাড়ায়, সত্যি কোনও বন্ধুকে চায়।

এই পৃথিবীর সত্য যারা তাদের কাছে
নগ্ন হতে লজ্জা তো নেই,লজ্জা তো নেই
কারণ সত্য নগ্ন হতে লজ্জা পায় না।

মানুষ দেখে নগ্ন হতে লজ্জা করে
মানুষগুলো লুকিয়ে রাখে নিজের মুখও
তারা শুধুই মিথ্যে বলে, মুখোশ পরে।

এই সমাজে নগ্ন হতে লজ্জা করে
গোটা সমাজ মিথ্যেবাদী, ভ্রষ্টাচারী
নগ্নতা আর সরলতার সুযোগ খোঁজে।

আশার বাষ্প

মহামারী এসে জীবন কাড়ছে তবু
আমরা চেয়েছি গেয়ে যেতে সেই গান
শবের উপরে জমছে শবের স্তুপ,
কবরের পাশে বেঁচে ওঠে কিছু প্রাণ।

রাত্রির বুকে বাড়ছে আঁধার রোজই
ফুল তবু ফোটে শবদেহটার পাশে
চাঁদ নেই তবু দূরের আকাশে দেখ,
কিছু ছোট তারা আলো দেয়,ভালোবাসে।

মৃত্যু আসছে কাড়ছে মায়ের কোল
কত ভাবনারা আর তো পেল না ভাষা
বেশ কিছু ফুল অকালেই ঝরে গেল,
মৃত্যুর পরও থেকে যায় প্রত্যাশা। 

দূরের তারার ক্ষীণকায় স্মিত আলো
সংকেতে বলে সংগ্রাম আছে বাকি
তারা খসে গেলে মৃত্যুর গান গেয়ে,
তখনও দেখবে ডাকছে ভোরের পাখি।

কবি সুদীপ্ত বিশ্বাস 
রানাঘাট, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ













0 Comments