মহম্মদ সামিমের গুচ্ছ কবিতা
করতলে রাখো মেঘ
কত শিহরন ছিল,হিম হিম শরতের রাত
স্মৃতি এক কোলাহলময় আলোর বাহার
বারবার জিতে এসেছ আমার কাছে
ধনুক নামিয়ে রেখে নদীর জলের পাশে
শান্ত ছায়াবীথির কাছে এসে বসো,তন্ময়
ছেঁড়াখোঁড়া ডানা গুটিয়ে আহত বুলবুলিটি
মনমরা আলোর উপর ঠোঁট রাখে
হাওয়াকে নির্জন হতে দেখি
গির্জার ঘন্টা বাজে,লাজুক নৌকোখানি
মেঘের ভিতর জল ভেঙে ভেঙে পেরিয়ে যায়
মায়ার জীবন,অবসন্ন ইহজন্ম
পরবাস
ঘুম নেই চোখে। প্রবাসী জীবনের অনুক্ত রাত
জানলা দিয়ে নরম আলো আসছে চাঁদের।
আকাশ দেখা যায় না তেমন।
জেগে আছ তুমি আর এই শহরের নিঝুম পথঘাট,
গগনচুম্বী বাড়িগুলি পর পর সাজানো,
মিটমিট জ্বলছে, যেন জোনাকির গৃহস্থালি।
একটি অচেনা পাখি ডাকছে কখন থেকে
যেমন ডেকেছিল শেষ বিকেলে,চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে
শেষ ট্রেনে ফিরে যাওয়ার আগে।
বিষণ্ণ ছায়ার নীচে তুমি একা
জমানো দীর্ঘশ্বাস দিয়ে নিজের ব্যথার ভার
কমিয়ে নিচ্ছ
ভাবছ,আপন দেশে কেউ এখনও এই হিরণ্য জ্যোৎস্নার ভিতর
একটি হলুদ পাখির ডাক শুনবে বলে অপেক্ষা করছে,আজও।
জ্যোতির্ময়ী
এই পথে হাঁটে না কেউ
মানুষের পায়ের ছাপ নেই
মাঝে মাঝে জলের ঢেউ এসে মুছে দিয়ে যায়
ঘাসে জমে থাকা ধূসর ধুলো
শ্যাওলা হয়ে গেছে ইট,আবহমান মান্দাস
পাথরের ফাঁকে ফাঁকে লতাপাতা ও ঝুমকো ফুল
খড়ের কাঠামো জেগে আছে
একটি মাছরাঙা,ধ্যানের সম্রাট,চেয়ে আছে জল
দাঁড় টেনে বহু জীবনের শিরদাঁড়া
ম্লান হয়ে নিভে এসেছে এই পথের স্তব্ধতায়
বোধন শেষে চলে গেছে সবাই
মাটির চোখ,স্থির,শক্তিরূপেন,এইসব আত্মগত করে,মোহনায়।
সিলমোহর
এই আসা যাওয়ার মাঝে আমরা পথিকমাত্র
পথচারী মানুষের চোখ দেখি, ঘোলাটে কুসুমের মত
বেঁচে আছে অর্ধেক, বাকিটা ঢেলে দিয়েছে সংসারে
নিদারুণ কোনও যাপনের অন্তঃস্রোতে
মাঝে মাঝে মুখোমুখি হয়ে যায় দুটি পথ
চিৎকার করে না কেউ, চুপিসারে কানে কানে বলে ওঠে —
‘কোথায় ডুবেছে প্রাণ,হে অসহায় !’
নির্জন চুম্বনের দিন শেষ
আসা যাওয়ার মাঝে দেখা হয়ে যায় আমাদেরও
অর্ধেক আয়ুষ্কাল জেনেও বাকি পথটুকু হেঁটে যায়,বিপরীতমুখী।
মনে রেখো অরণ্য
নিঝুম চারপাশ,আগাছায় ঢেকেছে রেলিং
বন্ধ দরজার ভিতর চুপিচুপি আসে হৈচৈ দুপুর
মাস্টরমশাই-এর সাইকেলটি হেলানো ছিল দেওয়ালে
ছাপখানি রয়ে গেছে,যেমন থাকে প্রতিটি বিচ্ছেদে
পুরনো চাকায় লেগেছিল কাদা,ঝরে গেছে।
কোলাহল নেই,বাসনের আওয়াজ নেই
শুভ্রা দিদিমণির নামতা মুখস্থ নেই
কতদিন ছুটির ঘন্টার দৌড় নেই
ব্ল্যাকবোর্ডের উপর জেগে আছে লাবণ্যডানা
ফয়েজ স্যার চেয়ারে বসে বসে দেখছেন,
বল্লালদীঘি প্রাথমিক বিদ্যালয়,এই দুপুরে
নীলকণ্ঠ পাখি হয়ে উড়ে যাচ্ছে সুদূর
নীরব চারপাশ,ঘাসের সবুজে লেগে আছে স্মৃতি
এখন ছুটি
প্রতিটি ছেলেবেলা বিভূতিভূষণের বাড়ি বেড়াতে গেছে।
0 Comments