তিনটি কবিতায় ~ রূপক চট্টোপাধ্যায়


রূপক চট্টোপাধ্যায়ের তিনটি কবিতা 

ওই দিন সব বলাকা বলেছি

বেশ কিছুদিন আগে 
অভিমান ফিরে গেছে ঘরে, 
জল বিলাসী কলস তার
জল ছলনায় ওই, ভেসে ভেসে 
দূরত্বে প্রহর তুলে সিন্ধু ভ্রমে হারায়। 

কেউ কোনো দিন এসে 
হাত ধরে ডাকেন বলে 
অভিমান ফেলে গেছো নোলোক
তার চন্দ্রমাসের আলোক ইস্পাতে! 

দুই জোড় হাত বন্ধ করে একাই
শরীর মেনে নিয়েছে আগাছার আগ্রহে
ডুবে যাওয়া সৌখিন ক্ষত ও ক্ষরণ। 

কি যে গেঁথে আছে বুকের অন্ধকারে 
শেকড়ে সোহাগে বালি মাথা নদীর সকলে, 
বুঝেও মনে হয় - এই আগুন মাঠের শেষে 
ঠান্ডা চাঁদ ওঠা রাতের নারি কেও শস্যের
সমাগম ঘরে ফেরাবে কভু,গৃহস্থালি দাওয়ায়! 

তবু অভিমান ফিরে গেছে 
চুলে সাঁঝ লেগেছিলো রসাতল, 
শাঁখা ছিল বিলাপের নরম সেতার, 
দু হাতের হলুদ আর কপালের লবন বিন্দু 
নীচু মুখের আড়ালে টুপ টুপ লেবু ফুল 
ঝরে যাওয়া নয়নের শোকে!

আমার অনন্তে এই 
বলাকা উড়ানের
শেকল বাঁধা সময় টুকু রেখে 
অভিমান চলে গেলো বাতিল বিকেলের দিকে।

নিয়ম ছিঁড়ে 

এমন নীল লবন পাখা পেলে
আমিও সামুদ্রিক সন্তরণে যাবো। 

মাঠ খোলা বুক পেতে সহজ মাটিতে 
জটিল শেকড় সন্ধি মেনে সরলবর্গীয় 
সাজাবো আবার বন বিলাসে। 

বিচ্ছিন্ন ডিঙা গুলির 
মনি কাঞ্চন বেলা শেষে ,
তীরে এসে দুলে দুলে খুলে দেবে 
চুলের অন্ধকার আলাপ। 

সারস শুভ্র নারী রা শঙ্খ বেদনায় 
বাজাবে  মঙ্গল কামনার শাঁখা, যাদের
স্বাতী সজ্জিত বিনুনির ফাঁসে কত
উজ্জ্বল পুরুষ মেনে নিয়েছে শেকলের
কৃতদাস স্বাদ। মনে নিয়েছে মীন রাশি।

এমন অরূপ রতন 
আমি পাগলের প্রলাপ থেকে খুঁজে পেলে
সান বাঁধা গণিত ভেঙে দিঘি কে দেব ইচ্ছে জল। 
জল পাবে নদীর শরীর...।
জাফরানী রঙের হরিণী 
এমন বয়স এলে তোকে মৃত্যু ভেঙে ছোঁবো। 

এমন নীল লবন পাখা পেলে 
আমিও সামুদ্রিক সন্তরণে যাবো

হাত

পথটি ছিলো সামনে থেকে সুদূর
শাল্মলি আর সুজন অপেক্ষায়।
হাতটি ছিলো মনের মতো নদী
অল্প প্রেমে, তুমুল যন্ত্রনায়। 

বিকেল বেলার হংসিনী সাইকেল
ভাঙা বাঁশির ভীমপলশ্রী কাঁপন, 
বুকের ভেতর বসত আরশি নগর
চোখের ভেতর বাষ্প পূর্ণ ভবন। 

হঠাৎ দেখা থমকে যাওয়া পাহাড়
পাদদেশে গ্রামের পরিপাটী। 
কৃষ্ণচূড়ায় রঙ ধরেছে কবেই
উল্টে গেছে আধেক চাঁদের বাটি। 

কেউ তো ছিলো কাঁধের উপর মাথা 
সাঁঝের ফণায় প্রদীপ প্রজ্বলিত। 
অনাহারের শঙ্খধ্বনির পরেও
কেউ তো ছিলো তৃষা মনোমত। 

এমন কোনো গ্রামীন ধূলার খাতা
উল্টে দেখি শুকনো পাতার শিরা। 
দাঁড়িয়ে আছে কান্না কাব্য নিয়ে
কলজে ফাটা প্রলাপে সর্বহারা। 

শস্য আভাষ দিও বন্ধু কভু
সেই হাতটি রাখতে দিও ভুলে। 
সেই হাতটি আবার নদীর মতো
স্রোত সোহাগে আসব হলুদ কূলে।

কবি রূপক চট্টোপাধ্যায়
 রানিবাঁধ, বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ 




0 Comments