꩜ জন্মদিন ꩜




                    ✍শুভায়ন বসু🔹দুর্গাপুর


🎈 আজ সৈকতের জন্মদিন। তবে আজকাল আর এসবের খেয়াল রাখে না ও ।জীবনটা তছনছ হয়ে গেছে। বাবা-মা দুজনেই মারা গেলেন, পিঠোপিঠি এক বছরের মধ্যেই। শ্রাবন্তীর সঙ্গে মিউচুয়াল সেপারেশনও হয়ে গেল বেশ কয়েক মাস । তবে রুপা আসে মাঝে মাঝে স্কুলের ছুটিতে। গোটা দিনটা ওর সঙ্গে কাটিয়ে, বিকেলেই ফিরে যায়। শ্রাবন্তীই ওকে পৌছে দিয়ে চলে যায়, কিন্তু নিজে ঢোকেনা এ বাড়িতে,নিয়ে যাবার সময়ও। দীর্ঘদিন বাক্যালাপ নেই দুজনের ।
আজ যে ওর জন্মদিন সেটা অবশ্য ভোরবেলাতেই জেনে গেল সৈকত। না, শ্রাবন্তী বা রুপা কেউই আজ এখনও বার্থডে উইশ করেনি।আসলে আজকাল বহু অনলাইন সাইটই জন্মদিনের মেসেজ পাঠায় সকাল-সকাল।ওর ব্যাঙ্ক,এমনকি ওর কোম্পানি পর্যন্ত। তারপর ফেসবুক খুললে তো বড় বড় করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। সুতরাং ভুলে থাকা আর হল না সৈকতের।
যা হোক জন্মদিন বলে কথা। কত যেন হল বয়সটা ? সৈকত বুঝল,এই একবছরে শরীরের বয়স যত না বেড়েছে, মনের বয়স বেড়েছে তার বহুগুণ। একা থাকার যন্ত্রণা নিয়ে একটা বছর কেটে গেছে, আরো কত বছর যে এভাবে কাটাতে হবে! মনটা ভারী হয়ে গেল। সৈকত ভাবল, প্রথমেই মা বাবার ছবিতে গিয়ে একটা প্রণাম সেরে আসবে। যতদিন ওঁরা জীবিত ছিলেন, এটাই তো করত দিনের শুরুতে। তারপর সবাই মিলে কত কিইনা হত সারা দিনটাতে । হইচই ,আনন্দ, উপহার, দারুন দারুন খাবার,বিকেলে ঘুরতে বেরোনো, বড় রেস্তোরাঁয় ডিনার সারা ,একেবারে জমজমাট। বিয়ের পরেও তার ছেদ পড়েনি। শ্রাবন্তী সারপ্রাইজ গিফট দিত একটা। আশ্চর্য ব্যাপার,সৈকত যেটা ক’দিন ধরেই কিনব কিনব ভাবছিল,কিন্তু কোন না কোন কারনে কেনা হচ্ছিল না,সেটাই শ্রাবন্তী কিনে এনে হাজির করত। একটা সাধারণ স্কুলে পড়িয়ে, জমানো সব ক’টা টাকাই হয়ত সেদিন শেষ করে ফেলত ও। রুপা আসার পরও সেই আনন্দের দিনগুলোয় কোন ব্যতিক্রম হয়নি ।বাবা-মার ততদিনে বয়স হয়েছে, ওঁনারা আর কোথাও বেরোতে চাইতেন না। তবু সকালে উঠে ওঁনাদের প্রণাম করা দিয়েই দিনটা শুরু হত। শ্রাবন্তীর আবদারে ওই দিনটা ছুটি নিতেই হত সৈকতকে।
কিন্তু আজ? আজ আর কেউ নেই,কোথাও নেই।আজ একা একা জন্মদিনটা হয়ে গেছে বড়ই জৌলুসহীন, বিরক্তিকর ।আজও তাই অফিস ,আজও ক্যান্টিনের ঘ্যাঁট আর মাছের ঝোল । আউটিং,শপিং, গিফট সব তো কবেই বন্ধ হয়ে গেছে। সময় থাকতে যদি সংসারের ভাঙ্গনটা রোখা যেত!মেনে নিত না হয় আরো কিছু ।কিন্তু রূপা? ওকে কেন ছিনিয়ে নিল শ্রাবন্তী? রুপা তো সৈকতের চোখের মনি ছিল, কি দোষ ছিল মেয়েটার?
ফ্রেশ হয়ে একটা মোটামুটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পাঞ্জাবি পায়জামা পড়ে নিল সৈকত ।মা-বাবার ছবিতে ফুল দিয়ে প্রণামটা সেরে, আবার সে সব খুলে ফেলে অফিসের জামাকাপড় পড়তে হবে। কাজের মেয়েটা জলখাবার বানিয়ে দেয় এসময়। রান্নাঘরে তারই ঠুংঠাং শব্দ।
প্রতিবারই নতুন এক একটা ভাবনা এসে ভিড় করে মা-বাবার ছবিটার সামনে এসে দাঁড়ালে। এবারও সেই একই। মা যেন কি বলতে চাইছেন, বাবা যেন মৃদু হেসে আশীর্বাদ করছেন।‘ কি বলছ মা?’, কান পেতে শুনতে চাইল সৈকত ।প্রণাম করে মাথাটা তুলতেই স্পষ্ট শুনল, মা বলছেন ‘বাবা, এই নে, পায়েসটুকু খেয়ে নে। আজ যে তোর জন্মদিন।‘ চোখটা ভিজে গেল সৈকতের। মা? পায়েস ?কোথা থেকে আসবে? সব শেষ হয়ে গেছে।
 কিন্তু অদ্ভুতভাবে সৈকতের নাকে তখনই ভেসে আসতে লাগল পায়েসের গন্ধ। কোথা থেকে আসছে ?কি ব্যাপার? পিছন ঘুরতেই চমক। একহাতে পায়েসের বাটি আর অন্য হাতে প্রসাদী ফুল-মিষ্টি প্লেটে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রূপা। ‘একি তুই ? কখন এলি ?’ সৈকত অবাক। ‘এগুলো কি ?’ রুপা খিলখিল করে হেসে বলল ‘হ্যাপি বার্থডে বাবা। এই নাও,তোমার জন্য মা পাঠিয়ে দিয়েছে।‘ মা ? আরো একরাশ বিস্ময়। শ্রাবন্তী এখনো মনে রেখেছে ?
মেয়েকে আদর করে, ওর হাত ধরে আবার মা-বাবার ছবিটার কাছে গেল সৈকত । মার মুখে তখন যেন এক চিলতে হাসি লেগে রয়েছে,বাবারও চোখ থেকে যেন একরাশ খুশি ঝরে পড়ছে। পাশে তাকাতে, সেই একই হাসিটা সৈকত দেখতে পেল রুপার মুখেও ।
            -------------------------------------------------

0 Comments