꩞ আলোক সরকার এক সংবেদনশীল কথন বিশ্ব ꩞


   🔰 হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়🔹মালঞ্চ, দুর্গাপুর🔹

🔴বাংলা কবিতার ভুবনে কবি আলোক সরকার এমন এক মহাজাগতিক নক্ষত্র যার আপাত সরল  লেখাগুলির মাঝে লুকিয়ে থাকে নির্মাণ ও বিনির্মাণের সুষমা। একবার পড়ার পর এক মোহ তৈরী হয়,পরে দিনে দিনে শব্দ গুলি সম্পর্ক অন্বেষা সৃষ্টি করে।নৈর্ব্যক্তিক এক অন্বয়সাধন নির্লিপ্ততা অথচ চিরজ্বলমান। মানুষের যেমন অতীত ভবিষ্যত দুদিকে ছড়িয়ে থাকে ঠিক তেমনি তার কবিতায় ক্রমান্বয়ে নিস্পৃহ বিস্তৃতি রহস্যময়তায় ভরে ওঠে।
আচ্ছা দেখা যাক কেমন সে নির্লিপ্তি :

....একদিন আর কোনো দুঃখই পাবো না।সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে এসে/ দামী ইজিচেয়ারের ভিতরে নিজেকে সপে দিয়ে / বেয়ারার হাতে ঠান্ডা জল খাব। একদিন অত্যন্ত কৌতুক বলে মনে হবে / এইসব কবিতা ,বিনিদ্র রাত্রি, শিল্পের গভীর গভীরতম মানে/যেমন এখন কুড়ি বছরের প্রেম বহুদিন পর ফিরে এসে/চুলের ভিতরে হাত রাখলেও শুধুমাত্র মমতা ঘনায়, /কোনো উত্তেজনা নয়, শিহরণ নয়, সেইরকম সহজ আঙুলে / একদিন প্রিয় কবিতার বই খুলে পড়ব /একদিন আর কোনো দু:খই পাবো না অন্ধকারে একটি সবুজ পাতা ঝরে গিয়েছিল বলে।

               
                      
                  ᯾একদিন # স্তব্ধলোক᯾


এইসব কবিতার বীজ পাঠকে শুধুমাত্র আলোড়িত করে না, আরোগ্য দেয়। অবশ্য একথা ঠিক নিশ্চিত যে, এইসব কবিতা পংক্তি জীবন এবং জীবন বিষয়েই বলা তবু স্বনির্মিত স্বাতন্ত্র্যতা যা বিশ্বাস নম্র আভরণ জাগ্রত চেতনারই বহিঃপ্রকাশ।আলোক সরকারের কাছে কবিতা কি এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন:
..ধরা যাক,একটি বাড়ি রয়েছে,তার দরজা
আছে। আমার কাজ বেরিয়ে যাওয়া।বেরিয়ে যাওয়াটাই আমার কাছে সত্য।একটা লক্ষ্য নিয়ে বেরিয়ে যেতে হবে।বেরিয়ে যাওয়াটাই শুধু আছে।সে যেখানে যেতে চায় তার একটা আগ্রহ আছে, প্রাপ্তি আছে, আনন্দ আছে।দরজা আছে কি নেই, তার লক্ষ্য নয়।অপরিকল্পনার দিকে যাওয়াটাই শিল্প।আর এসব নিয়েই ঘোর ,ঠিক ঘোর নয়,নিবিষ্টতা,এই নিবিষ্টতাই আমার কবিতা।

আসলে শব্দের গঠনবিন‍্যাস এবং ম‍্যাজিকায়ন আলোক সরকার এর কবিতার ইউ এস পি ।

...যতদিন সে না ফেরে/ আমাদের সব খেলা বন্ধ।/উৎসব বন্ধ /হাওয়াকে বলব তোমাকে আর পাতা/ কাপাতে হবে না। / তুমি সেই দেশে যাও /যেখানে সে আছে।/ ফুলকে বলব/ তোমার আর এ দেশে ফুটতে হবে না / তুমি সেই দেশে ফোটো/ যেখানে সে আছে /আমরা কারো ডাকে ঘরছাড়া হব না/ আমরা কোনো গান শুনব না/ কেবল দুপুর যখন চুপচাপ হবে/আমরা এমন একটা সুর বাজাব / যা ঘর ছেড়ে ওপরে ,আরো ওপরে / মলিন করুণ সুরে সারা আকাশ/ ভরে দেবে ,বাতাস ভরে দেবে / সেই দেশ ভরে দেবে/ যেখানে সে আছে ।...যতদিন সে না ফেরে/ পবিত্র মানুষদের জন্য।

এই কবির কাব্যচর্চা যারা দীর্ঘকাল অনুসরণ করেছেন তারা জানেন কবিতাকে বিষয় থেকে
বিষয়হীন করে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার জুড়ি মেলা ভার।উতল নির্জন,আলোকিত সমন্বয়,অন্ধকার উৎসব, বিশুদ্ধ অরণ্য,অমূলসম্ভব রাত্রি এই সব কাব্যে তার গভীর সাধনার নিবিড়তা সর্বক্ষেত্রে অভিব‍্যক্ত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সূক্ষ্মভাবে ব‍্যক্তিকেন্দ্রিক ইগো সেন্ট্রিসিটির প‍্যারাডাইম শিফট ঘটেছে।সংস্কারের বাধনগুলি শিথিল হয়েছে। শৈলী ও প্রথার প্রাচুর্য ক্রিয়াশীল এবং চিরজাগরুক তার লেখায়। এক উজ্জ্বল এবং স্থিতধী সচেতনতা তার হৃদয় সঞ্জাত।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সাহিত্যিক অশোক মিত্র
আলোক সরকারের কবিতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন:
থেমে থেমে, থেকে থেকে, কবিকে উপলব্ধি করতে হয় মনন বোধ ও মজ্জায়।তার কবিতায় পাওয়া যায় বেদ উপনিষদের শান্ত ব‍্যাপ্ত গভীর প্রজ্ঞা । হৃদয়কে আচ্ছন্ন করে এমনভাবে জারিত করে, যার মধ্যে উপলব্ধি করি এক স্বর্গীয় সুষমা।
তারপর তার নীল আলো সমস্ত অন্তর জগৎকে করে তোলে আবিষ্ট ও আপ্লুত।আলোক সরকারের সৃষ্ট কবিতাগুলি মরমী প্রজ্ঞার আশ্চর্য এক বিস্ময়কর অনুরণন ,যা কিন্তু ব‍্যাখ‍্যাতীত।

...চিরদিন আজ্ঞাবহ থেকে যাবো ।বৈশাখ দুপুরে একা/ তোমার গোপন চিঠি হাতে নিয়ে খররৌদ্রে যাব/ তোমার প্রেমিক তার বাড়ি।বলব বিকেলে হবে দেখা/ বড় রাস্তার পাশে তুমি তার অপেক্ষায়। সমস্ত দুপুরবেলা / পথে পথে ওড়াবে নিস্পৃহ ধুলো, ক্লান্ত কাক ঘূর্ণিফল গাছে ।

                 
                       
                      ᯾ অংশ: বিশুদ্ধ অরণ্য᯾


বিশুদ্ধ অরণ‍্যে আর একটি কবিতা যা উল্লেখ না
করলে লেখাটি সম্পূর্ণ হবে না।
... তোমরা সব এসে দেখে যাও ,আমার ছাদের/ গোপন টবেতে আজ গোলাপ ফুটেছে/ সম্পূর্ণ
আকাশ,মেঘ ভেসে যায়,ফাল্গুন মাসের / হাওয়া তোমরা এসে দেখে যাও। /দশটি পাপড়ি গাঢ় নির্নিমেষ একাগ্র জেগেছে...

                   ᯾রাজকন্যা: বিশুদ্ধ অরণ্য᯾


কেন্দ্রিভূত অবস্থা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।অন্ত‍্যমিল  সাধারণত দেখা যায় না তার কবিতায়, টানা গদ্যে কবিতা লেখা নতুন কিছু নয় কিন্তু আলোক সরকারের গদ্য কবিতা গুলি সবসময়
অনন্য মাত্রা প্রদর্শন করে পাঠকের হৃদয়ে।যাকে বলা যায় অভিব‍্যক্তময়তার তৎপরতা।স্বচ্ছ তরল নির্ভার
উৎসর্জনে মূর্ত আরেকটি কবিতা এরকম:

...হারিয়ে যাওয়া লাটিম আমি তোমার কথা ভাবি/ ঠিক তোমার কথা নয় তোমার হারিয়ে যাওয়ার কথা/ ছিলে একদিন সারাবেলা উদ্বেগব‍্যাকুল নিশীথিনী/ ঠিক কখন হারিয়ে গেলে লাল রঙের লাটিম?
কতো নি:শব্দে হারিয়ে গেলে!
কুয়াশা জড়ানো অপরাহ্ন মিলিয়ে যাচ্ছে আলো          কার্ণিশের নিচের আলো কার্ণিশের ওপরের আলো
সব কিছুই সরে যাচ্ছে এখন আমার মনে হয়
পেছিয়ে যাচ্ছে খোলা নীল রঙের আকাশ
মিলিয়ে আসছে কোলাহল।
সব কিছুই সরে যাচ্ছে ।লাল রঙের লাটিম....
ঠিক কখন হারিয়ে গেলে? আমার কেবল ভাবনা শূন‍্যময় অন্ধকার ফেনিয়ে উঠছে অভিমান
আমার কেবল ভাবনা ঠিক কখন হারিয়ে গেলে
লাল রঙের লাটিম।


এই কবিতায় প্রচুর প্রশ্ন আসছে ।কিন্তু আদপে পাঠকের মনে হয় প্রশ্নের বাইরে অন্য কিছু নয় তো।
বাংলা ভাষায় জীবনানন্দ দাশের পর কবি আলোক সরকারকে নির্জনতার কবি বলে অভিহিত করেছেন অনেকেই।কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ২০১২ তে কবিতা ক‍্যাম্পাস পত্রিকার পাতায় কবি
আলোক সরকার সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন:
আলোক সরকারের কবিতায় এক শান্ত নীরবতা সব সময় চোখে পড়ে।যেন বহুলোকের জনতার মধ্যে একটি পৃথক লোক হেঁটে চলেছে।

পঞ্চাশের একজন ব‍্যতিক্রমী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও আলোক সরকার কিন্তু
চল্লিশ দশকের শেষ দিক থেকেই একজন বিশিষ্ট কবির শিরোপা লাভ করেছেন।কেননা তার 'উতল নির্জন' এর কবিতা গুলি সব ই চল্লিশ দশকের শেষ পাদে লেখা(১৯৪৬--১৯৪৯)এবং যার প্রকাশ ১৯৫০ সালের মে মাসে ।এরপর আলোকিত সমন্বয় যদিও মাঝে সূর্যাবর্ত নামে একটি কাব্য পুস্তিকা রচিত হয়েছিল।
সরল ভাবনাগুলি থেকে উত্তীর্ণ অনুভবের এক স্থিতপ্রজ্ঞ রূপ প্রথম থেকেই ধরা পড়েছিল।
বাড়িতে পরিবেশ ছিল কবিতার।অগ্রজ অরুণকুমার সরকার ছিলেন সে সময়ের এক সম্ভ্রম জাগানো কবি।

একথা অনস্বীকার্য যে, শিক্ষিত এবং দীক্ষিত পাঠকের কাছে বুদ্ধদেব বসু,সুধীন্দ্রনাথ,প্রেমেন মিত্র, জ‍্যোতিরিন্দ্রের পরই ছিলেন আলোক সরকার, অলোকরঞ্জন,শঙ্খ ঘোষ,শক্তি, সুনীল এবং  উৎপলকুমার। বিষ্ণু দে র সাহিত্যপত্রে এই কবির কবিতা নিয়মিত ছাপা হত। তারপর মাত্র ২২ বছর বয়সে বুদ্ধদেবের কবিতা পত্রিকায়
আলোক সরকারের কবিতা ছাপা হল ।
এমনকি সঞ্জয় ভট্টাচার্য্যের পূর্বাশা পত্রিকায় তার নিয়মিত কবিতা বেরোত । আর ছিল বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনাবিল প্রশ্রয়।

কবিতার পাশাপাশি আলোক সরকারের পাঁচটি উপন্যাস ও বেশ কিছু গল্প আছে যাতে ধরা আছে মানুষের বাস্তব, বাস্তব জীবনের ঘটনা ।
প্রথম উপন্যাস অতিথিনিবাস পূর্বাশা পত্রিকায় বেরিয়েছিল।এমনকি অশত্থ গাছের মতো কাব্যনাটক।কাব‍্যনাটক সম্পর্কে কবির মতামত হল কাব্যনাটক সবসময় আধুনিক মনের ব‍্যাপার।শুধুমাত্র স্বগতোক্তির সময় কবিতা থাকতে পারে এছাড়া কবিতা যত না থাকে ততই ভালো।
তার একটি বিখ্যাত কবিতা ,নৌকো।
সেখান থেকে কিছু অংশ তুলে নিয়ে
স্মৃতির এই সংকলনে যোগ  করতে চাই।

...সন্ধ্যা হলে কোনোদিন ঘরে থাকব না, বিকেল
হবার আগে/ দুইজনে দুইদিকে চলে যাবো।
আমাদের বাড়ির নির্জন/শীতের শাখার মতো মৃত্যুর বিষাদে শান্ত পরিণত।/সহসা অশোক স্পষ্ট কৃষ্ণচূড়া প্রস্তুত সংরাগে/পলাশের নিমগ্ন প্রদীপ।
ভোরবেলা নীলিমা জাগ্রত।/ভালোবাসা আমাদের দুজনের আঁকা ছবি / সাহজিক বাড়িতে ফিরেই দেখবো বিশ্রুত আলোয় উচ্চারণ।
             

             ᯾ নৌকো: আলোক সরকার᯾


‌কবিতা যে সূক্ষ্মতম শিল্প কর্ম নির্মাণ বিনির্মাণে একথা বুঝেছিলেন আলোক সরকার।আর বুঝেছিলেন বলেই তিনি লিখতে পেরেছিলেন-
মাঠের অনেকটা ভিতরে নেমে বেশ চেঁচিয়ে বলি---শুনতে পাচ্ছ আমি একেবারে ভালো নেই।
আমি খুব কষ্টের মধ্যে আছি।
চমকে উঠে চারিদিকে তাকাই
কেউ শুনতে পেয়েছে?

কার শুনতে পাওয়া নিয়ে ভাবনা তাও ভাবি।

বিকেল নিবে আসছে ক্রমশঃ---
একটু আগে যে গাছটা আধার হচ্ছিল
তা আরো আধার হয়েছে

সারা গায়ে আধার নিয়ে অনবহিত  চলি।
পাতারা তাদের ভেসে যাওয়া শব্দ করে বোঝাচ্ছে-

শব্দ সারা মাঠ ভরে পুরো একটা জীবনকাহিনী।
আরো কিছুটা মাঠের মধ্যে নামি
নিচু গলায় থেমে থেমে বলি
শুনতে পাচ্ছো
আমি একেবারে ভালো নেই।
আমি খুব কষ্টের মধ্যে আছি।
মাথার উপর পুরো আকাশ
দশদিশা দিগন্তে নিস্তব্ধ হয়েছে।


                ᯾ নিস্তব্ধ: আলোক সরকার᯾


২০০৭ সালে অপাপভূমি প্রকাশ পায়।বিশেষতঃ
লিটল ম্যাগাজিনের কবি ও পাঠকদের মধ্যে বেশ সাড়া পড়ে যায়। ঠিক তার এক বছর পর ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয় আট ফর্মার বৃহদাকার এক কাব্য গ্রন্থ
আশ্রয়ের বহির্গৃহ,যাতে এক অন্য ভাষায় কথা
বলেছেন তিনি।
উপরোক্ত নিস্তব্ধ, কবিতাটি ঐ আশ্রয়ের বহির্গৃহ
থেকেই নেওয়া।
আশ্রয়ের বহির্গৃহ এর প্রথম কবিতা আস্তিক‍্য‍
শুরু হয় এইভাবে:
সায়াহ্নে প্রথম উক্তি
সে প্রাত:কাল নয়
সে সূর্যোদয় নয়
তার কর্তব্য বস্তুর চিহ্নিতকরণ নয়..

এই কাব্যের আরো কিছু প্রণিধানযোগ্য লাইন
উল্লেখ করা যেতে পারে:

ক. যা আসে তাই
     অসামান্য হয়ে আসে
     অসামান্য না হলে চিনব কী করে
     অসামান্য....

খ.কবিতা যখন লিখি
    কান্নাগুলোর উচ্চারণ বিষয়ে
    সতর্ক হই।
    কান্নাগুলোকে ব‍্যক্তিগত করি।

 গ.বেলা যত পড়ে আসছে
     মন্দির প্রাঙ্গণ আরো বেশি
     মন্দির প্রাঙ্গণ...

ঘ.ভাবি রোদ্দুর হয়েছে
    ভাবি বৃষ্টির প্রহর নাকি?
    যা কিছু দূরের তাই রঙ বদলায় ....

ঙ. সে একদিন ছিল
     সে আর কোনদিন আসবে না
     কেবল তার কাছে
     এই বার্তা বার্তাগুলি.......




কবিতা ছাড়াও তার দুটি কাব্য নাটক মনে পড়ছে , কীভাবে যে জনপ্রিয় হয়ে উঠল আমার মতো অনেকের কাছেই তা এখনও বিস্ময়ের কারণ।
১৯৬৪ সালে জুলাই মাসে কলকাতা থিয়েটারে
অশত্থ গাছ প্রথম অভিনীত হয়।
অভিনয় করেছেন কবিতা সিংহ, সমরেন্দ্র
সেনগুপ্ত, রত্নেশ্বর হাজরা, ছন্দা দাশগুপ্ত, ছন্দা দে এবং প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিমল রায়চৌধুরীর
তত্ত্বাবধানে নাটক মঞ্চস্থ হয়।
আরেকটি হল মায়াকাননের ফুল,১৯৬৫ তে
কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরে প্রথম মঞ্চস্থ হয়।
এক্ষেত্রেও যারা অভিনয় করেছেন তারা সব
বিখ্যাত কবি কালীকৃষ্ণ গুহ,রত্নেশ্বর হাজরা, মৃণাল বসুচৌধুরী,অশোক দত্ত চৌধুরী, সুপ্রিয় গুহ প্রমুখ।
আরো একটা ব‍্যাপার উল্লেখ করতে ইচ্ছে করছে
তা হল,কবিতাতে যৌনতার ব‍্যবহার সম্পর্কে তার
মতামতটি কেমন ছিল?

কবিতাতে যৌনতার সঙ্গে বিশুদ্ধতার কোনো সম্পর্ক নেই, একথা স্বয়ং আলোক সরকার বলছেন।তিনি আরো বলছেন, আমার কবিতায় যৌনতার বড়ো উচ্চারণ নেই।কেননা তা প্রাকৃতিক।তার উপরে আমার কোনো কন্ট্রোল নেই।তা আছে থাকুক কিন্তু শিল্পের মধ্যে তা আসতে পারে না।যা আমার নিজের নয়, তা আমি নেবো বা কেন ?
প্রত‍্যেক মানুষই চায়,সে নিজে পুরো আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে অর্থাৎ অর্থহীনতার দিকে
শূন্যতার দিকে নিজের উচ্চারণ করতে।
সুরঞ্জনা ,ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বলো নাকো কথা ওই যুবকের সাথে...
এর মানে কী ?
সুরঞ্জনা ,তুমি ওই যুবকের কাছে যাচ্ছো কেন ?
তুমি তো আরও বড়ো, অনেক বড়ো, আকাশের উপরে আকাশ, সেখানে তুমি, তোমার অবস্থান।
একথা আজ অনস্বীকার্য যে, কবিতা রচনার রহস্য যদি এক অপার গণিত হয় তবে আলোক সরকার তার মাস্টারমশাই।

প্রথাগত ব‍্যাকরণেের  সীমা পেরিয়ে
আলোক সরকারের কবিতা আজ তৈরী করেছে
ভাসমান কমিউনিকেশন।
                ----------------------------------------------



2 Comments