তুহিন কুমার চন্দের কবিতা


আর মাত্র কয়েকটা বসন্ত                  (নাজিম হিকমতের স্মরণে)

তোমার দৃষ্টি ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে
খবর পেলাম জেলখানা থেকেই,
চোখের কি আর দোষ বলো,
বারোটা বসন্ত শুধু কেঁদে গেছো অবিরাম 
চোখও তো কাঁদে,চোখের কি দোষ বলো
সারাক্ষণ তোমার চোখাকাশ থেকে বেরিয়ে আসছে আগুনের গোলা। 

প্রিয়তমা, আর তো মাত্র কয়েকটা বসন্ত বাকি,
যাকে তোমার পেটে মোচড় দিতে দেখেছিলাম,সে এখন বারোটা বছর পেরিয়ে গেছে পলাশের গাঢ় লালে, 
ওর হাতে তুমি আমার পতাকাটা তুলে দিও বসন্ত আসার আগেই।

চাঁদ দেখিনি কতকাল,সূর্যরশ্মি আমার ছোট্ট ঘুলঘুলি দিয়ে সরু বল্লমের মতো
তৃষ্ণার জল চুষে নিয়ে ফিরে যায় প্রতিদিন।
আমাদের সন্তান ধূপ বনে খুঁজে ফেরে বাজের চিৎকার। 
গায়ের চামড়া কুচকে গেছে অনেক আগেই ,
যে বুকে তুমি মাথা রেখে জ্যোৎস্না দেখেছো পূর্নিমায়,
এখন কাঁসলে পাঁজরের চারপাশে ব্যথা হয়
তোমাকে চিঠি লেখার সময় হাত কাঁপে প্রিয়তমা!

আরতো মাত্র কয়েকটা বসন্ত, তারপর আবার খাদ্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পরতে হবে ধর্মতলা থেকে প্রতিদিন,প্রতিদিন।
এ শরীর থেকে উত্তেজিত পারদ এগিয়ে নিয়ে যাবে মহাসাগরের ঠিক মাঝামাঝি। 
আমার জামার বোতামের ধুলোকনা ঠিকঠাক মুছে রেখো তুমি।

বৃদ্ধ বটের ঝুড়ি, দূর্গামন্ডপের দেয়ালে ঢুকে গেছে কতদিন হলো।
পয়মন্ত রোদ ঝুড়ি টেনে নিয়ে গেছে ধনেশের ডিম।
যেমনভাবে আমার শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া ঘাম দোপাটীর পাপড়ি ছিঁড়ে নিয়ে গেছে ভোরের আকাশে।

আর মাত্র কয়েকটা বসন্ত প্রিয়তমা! 
রোদ,জল,ঝড় নিয়ে ফিরে যাবো অজানা শপথে।
জেলখানায় আটকে আছি বহুদিন, 
কিছু পাবার আগেই স্তব্ধতা স্থবির এখনো, 
ভালো থেকো পলাশের সাথে,বকুলের পয়মন্ত ফুল,বাড়ির সামনের গাছে আটকে থাকা পেটকাটি ঘুড়ি, দৈনিক উঁড়ে আসা জোড়া শালিকের সাথে কথা হয় প্রতিদিন।
আর তো মাত্র কয়েকটা বসন্ত,
গঙ্গার ঘোলা জলে স্নান করে ঘরে ফিরে যাবো।
আর মাত্র কয়েকটা বসন্ত প্রিয়তমা! 
আর মাত্র কয়েকটা বসন্ত।

কবি তুহিন কুমার চন্দ 
সুদর্শনপুর, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর 






















0 Comments