
একটা শহর একটা বাড়ি
অতিরিক্ত শহুরে বলে কি কোনো বিশেষণ হয়? যদি হয় তবে তা আমার। হয়তো গ্রামের খুব কাছাকাছি আসিনি বলেই শহুরে। কিংবা, যার খুব কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাই আমি জলের মতো তার কাছে ভেঙে পরি, তার আবেশে নিজেকে গড়ে নিই। তাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে নিজেকে জড়িয়ে থাকতে দিই।
শহরে মানুষ মন ছোঁয় না,শরীর ছুঁয়ে হারিয়ে যায়- একথা ভুল। তাই যদি হতো, একদিন বাসের অন্ধকারের আড়ালে কাঁদা মেয়েটার হাত চেপে ধরে কেউ বলতো না- দুঃখ কোরো না,সব কষ্ট একদিন চলে যায়। অথবা, ঠাসাঠাসি বাস থেকে পা পিছলে পরে যাওয়া ছেলেটাকে টেনে বুকে জাপটে ধরতো না কেউ। চারমাথা মোড়ের ধুলোমাখা ভিখারিটাকে কেউ শীততাপনিয়ন্ত্রিত ক্যাফের দামি পাউরুটি তুলে দিতো না, সাদা কাগজে মুড়ে। রাত সাড়ে এগারোটাতেও শেয়ার ক্যাবের ড্রাইভার বলতো না- দিদি, আপনি একদম সেফ। দরকার হলে আমার নাম ফোন নাম্বর, গাড়ীর নাম্বার পাঠিয়ে দিন আপনার চেনা কাউকে। এই শহরেই হাজারটা ফ্ল্যাটের ভীড়ে একা থাকা মেয়েটাকে কেউ প্রশ্ন করে না। লিভইন করা ছেলেমেয়েটাকেও পাশের ফ্ল্যাটের আন্টি হাসিমুখে গুড মর্নিং বলে। এই শহরটা আমাকে আমি আর তোমাকে তুমি হয়ে বাঁচতে শেখায়।
আত্মবিশ্বাসের হাতে হাত রেখে জেব্রাক্রসিং পার হতে শেখায়। বাসস্ট্যান্ডে পাশে দাঁড়িয়ে স্মোকিং করা মেয়েটার চরিত্র নয়, শুধু ফুসফুসটা খারাপ, শেখায় এই শহর। সারা গায়ে ট্যাটু আঁকা ছেলেটাও যে ব্রিজের ধারে তার একমাত্র প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করে তা জানে শুধু এই শহর।
এই শহর পলিউশনের শহর, কার্বন ডাই অক্সাইডের শহর, চোখ রাঙানোর শহর, রেশারেশির শহর, একাকিত্বের শহর, আবার আগলে রাখারও শহর। সমস্ত আগলানো মানেই তো বুকে জড়িয়ে ধরা নয়।
কিছু কিছু ভিড় শিখিয়ে দেয় চলতে, কিছু কিছু হাত ছেড়ে দিয়ে শিখিয়ে যায় একা চলার স্বাচ্ছন্দ, স্বাভাবিকতা। আর এভাবেই একটা শহর হয়ে ওঠে একটা বাড়ী,একটা সাজানো গোছানো চারদেওয়াল। শীতের রাতে, ভালোবাসার ওমমাখা কম্বলে ঢুকে পরে গোটা শহর।।
0 Comments