তিনটি কবিতায় ~ সুদীপ্ত বিশ্বাস


সুদীপ্ত বিশ্বাসের তিনটি কবিতা 

বাক্যহারা ১

রাতদুপুরে আসছে উড়ে একটা দুটো স্বপ্ন পাখি
হারানো সেই সোনালি দিন, এখন একে কোথায় রাখি!
আবছা আলোয় চমকে দেখি সেই যে তুমি মেঘের মেয়ে কলসি নিয়ে দুপুরবেলা একটু দুলে ফিরছ নেয়ে
হাল্কা রঙা কল্কা শাড়ি,দুলছে বেণী ইচ্ছেমত স্তব্ধ চোখে থমকে থাকি,আরে এটাই সেই ছবি তো!
সেই যে যেটা হারিয়ে গেছে একটুখানি অসাবধানে
আজ পুরোটা রাখব ধরে,আজকে লিখে রাখব প্রাণে।
গভীর রাতে আবছা আলো, হতেও পারে চোখের ভুল
বলো না তুমি সত্যি করে,তুমি কি সেই টগরফুল?
যাচ্ছে খুলে স্মৃতির পাতা,ডাগর চোখে দেখছি খালি
অরফিউস ও ইউরিডিসি, বুদ্ধদেব ও আম্রপালি...
স্বর্গ বুঝি আসল নেমে আবছা আলো ঘরের কোণে
না বলা কথা অনেক ছিল পড়ছে না যে কিছুই মনে।
হঠাৎ দেখি কাঁদছ তুমি, তোমার চোখে অশ্রুধারা
তোমার মুখে আমার ছায়া আনন্দেতে বাক্যহারা।

বাক্যহারা ২

বুঝতে পারনি বুঝতে চাওনি বলে,
সুরের ইশারা ক'জনে বা বলো বোঝে?
কত কত মেঘ রোজ চলে যায় ভেসে
অবুঝ মনটা তবুও তোমায় খোঁজে।


নদী ছুটে চলে, মেঘেরাও ভেসে যায়-
পাহাড়ের থেকে ঝর্ণারা এসে নামে,
তবু একা একা বিষন্ন সন্ধ্যায়
না বলা কথারা থেকে যায় নীলখামে।


গুমরে গুমরে এ কেমন বেঁচে থাকা?
চারদিক জুড়ে নীরবতা, গিরিখাত
সময় চলেনা, থমকে থেমেছে চাকা,
ঘিরে ঘিরে ধরে অমাবস্যার রাত।


ভাঙা ডানা নিয়ে তবুও তো পথ চলি,
শীতের বিকেলে ক্লান্ত রোদের মত
বিষাদ রাঙানো নদী আর কানাগলি,

দিগন্ত জুড়ে মন খারাপের ক্ষত!

বাক্যহারা ৩

অবলা কথারা আটকে রয়েছে চোখে

অবুঝ মনের বোবা কান্নার মত
আজকে এখন পাথর চোখেতে শুধু
হারানো আবেগ পুরানো দিনের ক্ষত।


বুঝলে না কিছু বুঝতে চাওনি বলে
সুরের ইশারা সুরকার শুধু জানে
দূরের বাতাস দূরে চলে যায় আরও
মন শুধু বোঝে হারানো গানের মানে।


এসেছিল যেটা একদিন নিঃশব্দে
বাতাসেও ছিল চুপিচুপি আসা যাওয়া
রূপকথা দেশে হারানো বিকেলগুলো
সবটাই যেন মিথ্যে অলীক মায়া।


জীবনের খাতা ভাসানোর পর পর
দুচোখ ভেজায় অঝোর অশ্রুধারা
অল্প দুঃখে সশব্দে কেঁদে ওঠে

গভীর দুঃখে ঠোঁটেরা বাক্যহারা।

কবি সুদীপ্ত বিশ্বাস 
রানাঘাট, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ


























0 Comments