আম ~ সিদ্ধার্থ সিংহ'র অণুগল্প


সিদ্ধার্থ সিংহ'র অণুগল্প 
আম 

টিনের চালে শব্দ শুনেই রাঘব বুঝতে পারল আম পড়েছে।
বাড়িতে একটাই আম গাছ। প্রচুর আম হয়। ছোট্ট ছোট্ট। কিন্তু খুব মিষ্টি। সামান্য হাওয়া দিলেই টুপটাপ ঝরে পড়ে।
গত বছর পর্যন্ত বাড়িওয়ালা বেঁচে ছিলেন। তখন আম পড়লে দু'-চারটে রাঘবকেও দিতেন। কিন্তু তাঁর ছেলে যা পায়, হয় নিজে খায়, না হয় শ্বশুরবাড়িতে পাঠায়। 
কোথায় যেন চাকরি করে! সন্ধেবেলায় যায়। মধ্যরাতে আসে। 
সে দিন মাঝরাতে আম পড়ার শব্দ শুনে রাঘব ঝপ করে বেরিয়ে আম কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিল।

সক্কালবেলায় বাড়িওয়ালার ছেলে বলেছিল, হ্যাঁ রে, তোর বউদি বলল কাল রাতে নাকি আম পড়েছিল? তুই তুলেছিস?
রাঘব বলল, হ্যাঁ।
--- এর পর থেকে আম পেলে আগে আমার কাছে নিয়ে আসবি, বুঝেছিস?

তার পর থেকে ও আর আম কুড়োয়নি। আজ টিনের চালে পর পর বেশ কয়েকবার শব্দ হতেই ও আর শুয়ে থাকতে পারল না। ঘর থেকে বেরিয়ে যে ক'টি আম পড়েছিল ও কুড়িয়ে নিল। ঘরের দিকে আসছিল হঠাৎ মনে পড়তেই...

সোজা বাড়িওয়ালার ছেলের ঘরের দরজা ঠক ঠক  করতে লাগল। তখন রাত দেড়টা-দুটো হবে। চোখ ডলতে ডলতে বাড়িওয়ালার ছেলে বেরিয়ে এসে বলল, কী হয়েছে?
হাতের আম দেখিয়ে রাঘব বলল, এই যে আম... সে আমটা নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
দশ পনেরো মিনিটও হয়নি, রাঘব খাটে ওঠা মাত্রই আবার টিনের চালে শব্দ। 
সেটা নিয়ে আবার বাড়িওয়ালার ছেলের ঘরের দরজায় ঠক ঠক ঠক ঠক, এই যে আম... আমটা নিয়ে সে ঘরে চলে গেল। 
আবার আম পড়ার শব্দ। আবার তার ঘরের দরজায় ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক--- এই যে আম...

আজ বুঝি হাওয়াটা একটু বেশিই দিচ্ছে। ঘনঘন আম পড়ছে। টিনের চালে শব্দ হচ্ছে। রাঘব গিয়ে আম কুড়োচ্ছে। আর ওই ঘরের দরজায়--- ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক ঠক... এই যে আম...

এ বার বলতেই, সে এত রেগে গেল যে, বিরক্ত হয়ে বলল, যত বার আম পড়বে তত বারই তুই আম কুড়িয়ে নিয়ে আসবি নাকি! এর পরে যদি আম পড়ে তুই আর এখানে নিয়ে আসবি না। যা পাবি, তুই নিয়ে নিস, বুঝেছিস? দাঁড়া... বলেই, রাঘবের কাছ থেকে এতক্ষণ যে আমগুলো সে ঘরে নিয়ে গিয়েছিল, সেগুলো ঘর থেকে এনে ওর দিকে এগিয়ে দিল।

সাহিত্যিক সিদ্ধার্থ সিংহ
২৭/পি, আলিপুর রোড, কলকাতা





1 Comments