প্রবীর দে'র স্মৃতি আলেখ্য


 ফিরে দেখা শারদীয়া

কাঁধে কোদাল আর হাতে ঝুড়ি নিয়ে কৃষ্ণদাকে আমাদের বাড়িতে আসতে দেখেই মনের মধ্যে কি সে  চঞ্চলতা…! হ্যাঁ ,তবে তো আর বেশী দেরী নেই, দুর্গাপুজার দিন আগত প্রায়। প্রতিবারই,বিশ্বকর্মা পুজার দু-এক দিন পরেই কৃষ্ণদা আসতো... আমাদের বাড়ির চারিপাশের সব আগাছা পরিস্কার করতে।দুদিন ধরে কৃষ্ণদা কাজ করত, আর আমি কোন না কোন অজুহাতে স্কুলে না গিয়ে কাজ দেখতাম...আর মনে মনে পরিকল্পনা করতাম...পুজোতে কি কি করব। 

নিম্নমধ্যবর্তী,একান্নবর্তী আমাদের পরিবারে শারদোৎসবকে কেন্দ্র করে তখন সকলের মনে অনাবিল এক আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হত। পরিবারের যে সকল সদস্যরা জীবিকার প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে অন্য কোথাও থাকত,এ সময়টাতে তাঁদের বাড়িতে আসতেই হত। এটা একটা রীতি ছিল বলা যায়। রীতি বলতে কি...আমার বাবা চাইতেন...অন্তত শারদীয়ার সময় একসাথে সবাই মিলে ক’টা দিন কাটাই –এই আর কি।ষষ্ঠীর আশপাশ সবাই আসতেন ...আর লক্ষ্মীপুজার পরে যে যার কর্মস্থলে ফিরে যেতেন। তখন আবার আমরা,পরবর্তী শারদোৎসবের প্রতীক্ষায় দিন গুনতাম ।

আগে থেকে বলে নেওয়া ভাল,শারদোৎসবকে কেন্দ্র করে আমাদের বাড়ির এই মিলন মেলায় চারিদিকে সাজ সাজ রব পরলেও,আমাদের  নিজেদের বাড়িতে কিন্তু দুর্গাপূজা হত না কোনকালেই..লক্ষ্মী পুজার আয়োজন হত জাঁকজমক করে। তবে পাড়ায়,ক্লাবের পুজোতে আমাদের পরিবারের সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহন থাকতো। আর ব্যক্তিগত ভাবে পুজা আয়োজন না করতে পারলেও মনে খেদ ছিল না,সমস্ত কিছু আয়োজনে আমাদের মুখ্য ভূমিকা থাকতো।সার্বজনীন পুজা প্রকৃত অর্থেই সার্বজনীন ছিল—এখনকার মত অমুক প্রভাবশালীর ’সার্বজনীন দুর্গাপূজা’ ছিল না।  

আমার বাবা আর তাঁর ভাইয়েদের সংসার মিলেমিশে আমাদের একান্নবর্তী পরিবার।দাদু,ঠাকুমা গত হয়েছেন অনেক আগেই। একই হাঁড়িতে খাওয়া–দাওয়া...একই বাড়িতে প্রত্যেকের নিজস্ব ঘর...জীবিকার প্রয়োজনে যারা বাইরে থাকতেন,  তাদেরও ঘর নির্দিষ্ট ছিল।শারদীয়ায় বাড়িতে না এসে  অন্যত্র বেড়াতে গেছেন তারা কখনও,এমন ঘটনা মনে করতে পারছি না।আসলে অলিখিত একটা সার্কুলার ছিল- সারা বছর যে যেখানেই বেড়াতে যাও,কোন বাঁধা নেই,কিন্তু পুজোর কটা দিন সবাই একসাথে কাটাতে হবে। এই নিয়মের পরিবর্তনের ইচ্ছে কখনও কারও মধ্যে জাগ্রত হলেও একান্নবর্তী পরিবারের নির্মল সত্বাকে অটুট রাখার প্রত্যয় ছিল সবার মধ্যে। বস্তুত একান্নবর্তী পরিবারের ভিত্তি যে বিষয়গুলির উপর দাঁড়িয়ে অর্থাৎ অনুশাসন,আত্মত্যাগ, সহযোগিতা,নির্মল আন্তঃসম্পর্ক সংরক্ষণের প্রচেষ্টা এবং সমন্বয়সাধন...সেগুলি আমাদের পরিবারে ছিল। এছাড়া আরও একটি বিষয় ছিল,সেটি হল -‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা।'গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার বিরুদ্ধ সমালোচনা থাকলেও,আমার মনে হয় একান্নবর্তী পরিবারের অস্তিত্বের ভবিষ্যৎ কিন্তু এই নীতি দ্বারা যথেষ্টই সুরক্ষিত।আমাদের বাড়িতে সকলের মত নেওয়া হলেও বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নিতেন।তবে,প্রয়োজনে এই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন সাধনে তাঁদেরকে নমনীয় হতে দেখেছি। হয়ত শৃঙ্খলার পাশাপাশি এই নমনীয়তার জন্যই পরিবারে শান্তি বিরাজ করত।

মহালয়ার দু –এক দিন আগে বাড়ির নারকেল গাছগুলি থেকে সব নারকেল পেড়ে ফেলা হত। আমার কাজ ছিল,সেই নারকেলগুলো বস্তায় ভরে সিঁড়ি ঘরের নিচে রেখে দেওয়া। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রাতঃরাশে আইটেম হিসেবে ও দুপুরের রান্নায় ঐ নারকেলের প্রয়োগ ছিল অব্যাহত। আর তাছাড়া ,লক্ষ্মী পুজার অনেক আগে থেকেই মা,কাকিমাদের এক বেলা উপোষ করে  নারকেলের নাড়ু ,সন্দেশ প্রভৃতি তৈরি করতে দেখতাম লক্ষ্মীপূজার আয়োজনের প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে ।।আমার মায়ের নেতৃত্বে অন্যান্য কাকিমারা এই মহাযজ্ঞে সামিল হতেন।এছাড়া কোন রান্নার লোক না নিয়ে ,এতগুলো লোকের খাবার তৈরির দায়ভার তো এঁদের ছিলই। সকলকে খাইয়েই তৃপ্তি ,সকলে খেয়ে তৃপ্ত হলেই যেন ওঁদের আনন্দ। আগে থেকে বলে নেওয়া ভালো,আর্থিক সঞ্চয় বৃদ্ধি এবং শারীরিক সংরক্ষণের জন্য খাদ্য নিয়ন্ত্রনের বিষয়টি মেনে নেওয়ার ইচ্ছে আমাদের পরিবারের কারও মধ্যেই ছিল না।তাই এই কয় দিন রসিয়ে বিভিন্ন খাওয়া-দাওয়া পর্বকেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হত।

উৎসবকে উপলক্ষ করে এসময়  আমাদের বাড়ির  সদস্য ছাড়াও অনেক আত্মীয় –স্বজন এ সময় আমাদের বাড়িতে এসে থাকতো।যেমন,আমার পিসিরা, মা-কাকিমাদের বাপের বাড়ির লোকজন অর্থাৎ মামাবাড়ি হতে কেউ কেউ ...সবাই একসাথে মিলে মিশে ...মনে হত  যেন এ বাড়িতেই  সার্বজনীন দুর্গোৎসব। আর এত লোকসমাগমে যে বিপুল খরচ হত,তারজন্য বাবা,কাকারা মিলে যৌথ তহবিল গঠন করতেন।প্রত্যেকের আয়ের মধ্যে  বিশাল ফারাক তেমন কিছু ছিল না।তার জন্যেই  হয়ত  মনোমালিন্যের সম্ভাবনা কম ছিল। তবে সবচেয়ে মজার ছিল সপ্তমী থেকে একাদশী পর্যন্ত, দুপুরের খাওয়াদাওয়াটা।এটা হত ব্যক্তিগত স্পন্সরশিপের মাধ্যমে – কমন ফান্ড থেকে খরচ হত না। যেমন সপ্তমীতে হয়ত বাবা বাজার করলেন...অষ্টমীতে আর এক কাকা ...তারপরের দিন আরেকজন ...এভাবে হত। এবং এভাবে হওয়ার  ফলে খাওয়াদাওয়াটা হত জম্পেশ ...প্রতিযোগিতাও থাকতো তবে ভেতরে ভেতরে, প্রকাশিত হত না । আমি,দাদা আর আমার খুড়তোতো ভাইয়ের কাজ ছিল প্রতিদিন সকালে, ওঁদের সাথে বাজারে যাওয়া। হাতে-কলমে ভারী ব্যাগবহন শিক্ষালাভ,ক্রয়পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ এবংপরিবেশের সাথে অভিযোজনের শিক্ষাগ্রহণ প্রভৃতি উদ্দেশ্যেই হয়ত আমাদেরকে নেওয়া হত।বোনেদেরকে অবশ্য এসব চাপ থেকে রেহাই দেওয়ার চল ছিল।

আমাদের বাড়ির তিনদিক ঘিরে আরও কয়েকটি বাড়ি,আমার বাবার কাকাদের বাড়ি। তাঁরাও আমাদের আত্মীয় যদিও তাঁদের খাওয়াদাওয়া বা অন্যান্য বিষয় তাঁরা নিজেদের মতই করতেন। কিন্তু ভাব আদান –প্রদানের পরিবেশ ছিল বলে সামগ্রিক ভাবে একাকীত্ব অনুভব করতাম না কখনও ।আর পুজোর সময়টাতে সবাই মিলে হইচই করেই কাটাতাম একসাথে। যাইহোক,বাজার থেকে ফিরে,সকালের খাবার খেয়েই আমার বাবার খুড়তোতো ভাই ( আমারই  বয়সী ছিল) এর সাথে বেরিয়ে পড়তাম ...গন্তব্যস্থল – ক্লাবের পূজামণ্ডপ।ক্লাবের পুজোয় তখন সকাল থেকেই সব বয়সীদের ভিড় লেগেই থাকতো। বিভিন্ন বয়সীদের আলাদা আলাদা বিভিন্ন ব্যাচ...প্রত্যেকেই শারদীয়ার অনাবিল আনন্দের স্বাদ গ্রহন করতাম। সেখানে আবার প্রত্যেক ব্যাচের, তাদের সিনিয়র ব্যাচের সদস্যদের প্রতি সম্মান দেখানোর চল ছিল।যেমন,আমাদের মতো উঠতি  বয়সীদের কারও যদি পুজোর আনন্দে আত্মহারা হয়ে,প্রথম সিগারেট খাওয়ার পরম ইচ্ছে জাগত ...তাহলে তাকে ওখান থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে লুকিয়ে খেয়ে আসতে হত ।আর ফিরে আসার আগে তারা লেবুপাতা,এলাচ আরও কত কিছু খেয়ে আসত,যদি কেউ গন্ধ পায়...। 

বড়রা পুজোর যে সমস্ত কাজ করতে বলতেন বেশ নিষ্ঠা সহকারে করতাম।আর এভাবে এই আনন্দে সামিল হওয়ার কোন এক ফাঁকে বাড়িতে গিয়ে দেখা করে আসতে  হত। তখন তো আর মোবাইল ফোন ছিল না;বাড়ির লোকেরাও নিশ্চিন্ত হতেন ...না ,ছেলে বেপথে যায় নি।মোবাইল ফোন ,ফেসবুক,ছিল না বলে তখন আমরা মুখোমুখি বসেই ভাবের আদান – প্রদান করতাম।খুব খারাপ ছিলাম,একথা বলব না। আর এত কিছুর মধ্যে,মোবাইল এ কন্টাক্ট করে নয় ,মনের টানেই নির্দিষ্ট সময় পৌঁছে যেতাম প্রেয়সীর কাছে। এর জন্য অবশ্য সময় নির্দিষ্ট করে রাখতে হত আগের থেকেই ,সবার অগোচরে বন্ধুদের সাথে অধিকাংশ সময় থাকি …এখন ওদের সঙ্গ বেশ কিছু সময়ের জন্য ত্যাগ করে প্রেয়সীর সাথে কাটাবো …একটু ইতস্তত লাগত …।ফিরে এসে বন্ধুদের কাছে ধরা পরে গেলে ,ঘুষ হিসেবে,পরে কিছু একটা খাওয়াবো এইরকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে যেতে হত।সব দিক সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা থাকতোই।

বাড়ীতে তখন এতগুলো লোক ,খাওয়াদাওয়ার জন্য যে প্রয়োজনীয় বাসনপত্র দরকার তা আমাদের নিজেদের বাড়িতেই ছিল।মা,কাকিমারা মিলে সবকিছু নিজেরাই রান্না করতেন,ক্যাটারার ডাকার চল  ছিল না ।তবে মেনু ঠিক করতেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরাই,আমার মা শুধু ঐ আলোচনাতে অংশগ্রহণের অধিকার পেতেন।মশালাযুক্ত বিভিন্ন আমিষ সাবেকী পদগুলোই মেনুতে প্রাধান্য পেত। আজকাল অবশ্য  বাঙালি ঘরের খাবারের মেনুতে যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে। তবে তখন সবার মধ্যে শরীর সচেতনতা কম ছিল বলে কিনা জানি না ,হাই ফ্যাটযুক্ত,হাই প্রোটিনযুক্ত এবং মণ্ডা-মিঠাই  চর্ব্যচোষ্য করে খাওয়ার ব্যাপারে কারও দ্বিধা দেখতাম না।যাইহোক ,আনন্দের এই দিনগুলিতে খাওয়াদাওয়ার বিষয়টা যে অধিক প্রাধান্য পেত,একথা বলাই বাহুল্য।

এখন তো শপিং মলের যুগ,পুজোর কেনাকাটা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় আজকাল।আর এখন তো সবার একাধিক জামাকাপড় কেনাকাটার চল,পুজোর সময়। আমাদের বাড়িতে তখন কিন্তু অন্য নিয়ম ছিল। প্রত্যেকের জন্য একটাই সেট,আর তা কিনতে কিনতে ষষ্ঠীর দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত। আমার কাকা এবং আমার মা বাড়ির ছোটোদের নিয়ে ষষ্ঠীর বিকেলে একটি নির্দিষ্ট দোকানে নিয়ে যেতেন । নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে ঐ দোকানেরই মজুত জামাকাপড়ের মধ্যে থেকে আমাদের পছন্দ করতে হত। কেন্দ্রীভূত ভাবে এই কেনাকাটায় কারও কারও মধ্যে আক্ষেপ থাকলেও ,কেউ প্রকাশ করতেন না। কারও মনে হয়ত  ভাবনা আসত ...আমি টাকা দিচ্ছি অথচ আমার ছেলে বা মেয়ের জন্য জামাকাপড় নিজের পছন্দ অনুযায়ী কেনার সুযোগই  পেলাম না ...।কিন্তু,সকলেই শুধু পরিবারের শান্তির জন্য হয়ত এই ব্যবস্থা মেনে নিতেন।আজকের দিনে কোন পরিবারে,এ পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব কিনা,আমি সন্দিহান। আসলে বিশ্বাস,ত্যাগ, আর নির্ভরতা এই গুনগুলির বাস্তব উপস্থিতি ছিল বলেই হয়ত বাড়ির প্রত্যেকের চেষ্টায় অবিশ্বাস্য এক শান্তির পরিবেশ রচিত হয়েছিল। বলতে দ্বিধা নেই,এরকম এক পরিবেশে বড় হয়েছি বলেই আজও যে কোন পরিবেশের সাথে অভিযোজন করতে কোন অসুবিধার সম্মুখীন হই না। 

আমরা ছোটরা,পুজোর চারদিনই ঠাকুর দেখতে যেতাম। মা-কাকিমারা ঠাকুর দেখতে যেত,অষ্টমী বা নবমীর মধ্যে যে কোন একদিন,সবাই একসাথে। ওঁদের এই একসাথে ঠাকুর দেখতে যাওয়াটা আমার খুব ভাল লাগত। যাইহোক, তিনদিন খুব আনন্দে কাটাবার পর,দশমী এলেই মনটা বিষাদগ্রস্থ হত । কাল থেকে তো আর  এই পূজামণ্ডপ, এত আলোর রোশনাই,এত আনন্দের বন্যা এসব থাকবে না।এত লোকের সাথে ভাব বিনিময়ের অবাধ সুযোগ তো আর পাব না।দশমীর বিকেলে মা-কাকিমারা সবাই একসাথে পূজামণ্ডপে গিয়ে প্রতিমা বরণ করতেন।ওঁদের এই সকলে একসাথে মিলে যাওয়ার ছবিটা যেন আজও আমার স্মৃতিতে সুস্পষ্ট । পারিবারিক সংহতির এর চেয়ে আর ভাল উদাহরন কি হতে পারে,আমার জানা নেই । এরপর,দশমীর রাতে পূজামণ্ডপে ধুনুচি নৃত্য,তাতে সামিল ক্লাবের সব বয়সের সদস্যরা...সবশেষে বিসর্জনের শোভাযাত্রা। বিষাদের করুন সুরকে আনন্দের মুখোশ পরে ভুলে থাকার কৌশল। বিসর্জনের শেষে ,বাড়ি ফিরে আমরা বাড়ির বড়দের বিজয়ার প্রনাম করতাম। পরদিন আবার প্রতিবেশী পরিবারের বড়দেরও প্রনাম করতে যেতাম।তাঁরাও আমাদের হাতে নারকেলের নাড়ু অথবা সন্দেশ কিছু একটা দিতেন। আমাদেরকে প্লেটে না দিয়ে এই যে হাতে দিতেন,এরজন্য মনের মধ্যে কোন ক্লেশ অনুভব করতাম না,এটাই যেন রীতি ছিল। আজকাল অবশ্য ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের কল্যানে শুভ বিজয়ার হার্দিক ভাব বিনিময় প্রথার বেশ পরিবর্তন ঘটেছে । নতুন পদ্ধতিতে অর্থ ও সময় দুয়েরই সাশ্রয়  কিছু হয়ত ঘটেছে কিন্তু, পুরো বিষয়টাই কেন জানি না কৃত্রিমতার চাদরে ঢেকে গেছে । বিজয়াকে কেন্দ্র করে বছরে একবার অন্তত বাধ্যতামূলক আত্মীয়স্বজনের  বাড়ি যাওয়ার নিয়মটা আজ অবলুপ্তির পথে।সত্যি কথা বলতে কি, এখন আর কেউ বিজয়ার পরে বাস্তব মিষ্টিমুখ করায় না, হাঁড়িভর্তি মিষ্টির ছবি পাঠায়।

সময়ের বিবর্তনে,জীবিকার প্রয়োজনে আমাদের বাড়ির আরও অনেকের মত,আমি এখন অন্যত্র থাকি। বাড়িতেও এখন আর আগের মত অত লোকসমাগম হয় না।কালের নিয়মে এখন বাড়িতেও আর আগের মত অত লোক নেই।সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে,ব্যক্তিগত সুবিধা –অসুবিধাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্গাপূজাতে বাড়িতে সকলের সামিল হওয়াটা এখন আর হয় না।স্মৃতিতে পুরনো সেই দিনগুলির  ছবি ভেসে ওঠে  প্রায়শই...নস্টালজিক হয়ে পড়ি।বসে ভাবি ,বাড়িতে তো তখন কত অভাব ছিল ,কিন্তু শান্তিপ্রাপ্তির সদিচ্ছা ও প্রচেষ্টা এত তীব্র ছিল যে পুজো্র কটা দিন বাড়িতে এত আনন্দঘন শান্তির পরিবেশ রচনায় কোন কিছুই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

যতদিন বেঁচে থাকব,শারদীয়ার সেই দিনগুলির স্মৃতি উজ্জ্বল থাকবে আমার মনের মণিকোঠায়। 

সাহিত্যিক প্রবীর দে
তুলসীবাগান ,বিরাটী, কোলকাতা -৫১



























0 Comments