ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের রম্যরচনা

সেলফি-গুলফি সমাচার

আজকাল অটোগ্রাফের যুগ কেটে এসেছে ফোটোগ্রাফের যুগ।সত্যি কথা বলতে কী আজ আর কার হাতে কলম থাকে যে অটোগ্রাফ দেবে?তার চেয়ে স্মার্ট ব্যবস্থা হল এই স্মার্ট ফোনে পাশে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে একটা ছবি তুলে নেওয়া।অর্থাৎ সেলফি নেওয়া।কাঁধে যদি কাঁধ দেওয়ার মত ঘনিষ্ঠতা থাকে তবে বিষয়টা হবে আরও গুরুগম্ভীর।আপনার টি-আর-পি চড়বে একেবারে টপে।

আর যদি অন্য ক্ষেত্রে হয় তো এই সেলফির মূল্য নাকি টাকা দিয়ে মাপা যাবে না।এ তো ঘটনার একটা জাজ্বল্যমান প্রমাণ।এমনি ছবি তো যে কেউ যখন খুশি গুগুল সার্চ করে বসিয়ে দিতে পারে। কপি কোথা থেকে করছেন সে খোঁজ করতে লোকের বয়ে গেছে। কিন্তু পেস্টের ছোপ তো খুব গভীর। তাই আজ কপি আর পেস্টের খুব দাম।

কিন্তু সে সব ছবি যে স্বয়ং আপনার কীর্তি তা নিঃসন্দেহে তাই বলা যায় না।কিন্তু যদি নিজের তোলা ছবিতে আপনি নিজেই থাকেন তো এই একটা সেলফিই মাত করতে পারে আসরটা।কারণ ছবিতে আপনি স্বয়ং বিদ্যমান।অর্থাৎ প্রমাণ নিজেই হাজির ছবিতে। জলে,জঙ্গলে বা ভ্রমণে যেখানেই যাক না কেন একটা সেলফি হলে সে ভ্রমণ জমে একেবারে ক্ষীর।

ঘোঁটাদা খুব ভুটোদার ভক্ত।ভুটোদা একজন বিখ্যাত ক্রিকেট প্লেয়ার। যেখানেই ভুটোদা সেখানেই ঘোঁটাদা ফ্যান হয়ে চারটে ব্লেডের মত পাক খাচ্ছে।

কিন্তু অত বড় প্লেয়ার ভুটোদার সঙ্গ কি অত সহজে পাওয়া যায়? আর তার সঙ্গে সেলফি তোলা তো সম্ভব নয়।তাই ভুটোদার একজন ছায়াসঙ্গী নোটোদার সঙ্গে অনেক কান্ড করে পরিচয় করেছে ঘোঁটোদা। নোটোদার সঙ্গে দেখা হলেই তার সঙ্গে একটা সেলফি তার বাগানো চাই।নোটোদার সঙ্গে সেলফি মানেই তো একরকম ভুটোদার সঙ্গেই হল। আত্মনেপদী না হলেও পরস্মৈপদী দিব্বি খাবে লোকে।আর বেমালুম হজমও করে ফেলবে।

সেই সেলফি যখন সে ফেসবুকে দেয় তখন তখন তো মার মার কাটকাট অবস্থা। ফেসবুকে ঘোঁটোদার বন্ধু থেকে ফলোয়ারের সংখ্যা বেড়েই চলে। ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে যায় ঘোঁটোদা।

কিন্তু সেলফি না থাকলে কি এ সব হত? একেবারেই না। সেলফি মানে হল সেলফ-ই। নিজেকে একেবারে উঁচু সেলফে তুলে দেওয়া।একেবারে টপ হিরোর মত করে দেওয়া।তাই সেলফির কদর যে দিনে দিনে বাড়বে এ আর এমন কি?  

জনগনের এই ভাবধারাকে খুব মান্যতা দেয় ঘোঁটোদা।তার পকেটে টাকা বা অন্য কিছু না থাকলেও একটা স্মার্ট ফোন সর্বদা থাকে সেলফি নেওয়ার জন্যে।সেলফি তুলে তুলে সেলফি তোলা এখন তার কাছে জলভাত। বন্ধুরা বলে,কেউ কবিতা লেখে,কেউ বা গান গায় তাতে দোষ নেই আর ঘোঁটোদা নিরীহ সেলফি তুললেই দোষ?  

সেবার বর্ষায় সারা রাস্তা জলে থৈ থৈ। অফিস থেকে ফিরে ট্রেন থেকে নেমে ঘোঁটোদা দেখে রাস্তা আর রাস্তা নেই।নদী হয়ে গেছে।বেশ খানিক এদিক ওদিক চেয়ে ভাবতে লাগল বুঝি খেয়া নৌকো মানে রিক্সো টিক্সো আসে নাকি।না পেয়ে নেমে পড়ল হাঁটু জলে।তা এই জলে একটা সেলফি নিলে মন্দ হয় না। ছপাৎ ছপাৎ করে শব্দ হচ্ছে।সেলফি ভিডিও করলে আরও ভাল হবে।বেশ একটা অডিও এফেক্ট পাওয়া যাবে।এক হাতে ছাতা ধরে অন্য হাত সে তাক করল তার মোবাইলটা সেলফি নেবার জন্যে।পাশের এক বন্ধুকে বলল পেছনে একটু দূর দিয়ে সে যেন ছপাৎ ছপাৎ করে হাঁটতে থাকে।

সেলফিটা মন্দ হচ্ছিল না।রাস্তার আলো জলে পড়ে বেশ চিকচিক করছে। ঘোঁটোদার শরীরের একদিকে রাস্তার আলো পড়ছে আর একদিকে ছায়া। সেই আলোছায়ায় নিজেকে মায়াময় লাগছিল হয়ত। একেবারে ঘোরের মধ্যে ছিল।এই ছবি মানে সেলফি যখন ফেসবুকে পোস্ট হবে তার একঘন্টার মধ্যে এটা হট কেকের মত অন্তত ষাট জনের কাছে শেয়ার হয়ে যাবে। মানে মিনিটে একটা।আর লাইক-লমেন্ট-শেয়ারের বিরাট মালা পরে ঘোঁটোদা শুধু মিটি মিটি আত্মপ্রসাদের হাসি হেসে যাবে।

তা সেই হাসি যদি এখনি এসে যায় তো সেলফিতেও নির্ঘাত আসবে।একেবারে সদ্য সদ্য মানে টাটকা টাটকা।যা ভাবা তাই কাজ। মানে মনে আসতেই মুখে। হাসি আর কি।

কিন্তু বর্ষার জলে ডোবা রাস্তায় হাঁটা আর অন্ধকারে ছাত থেকে লাফ মারা কতকটা বোধহয় একই।কোথায় যে খানাখন্দ ওত পেতে হাঙরের মত শুয়ে আছে কে জানে। তা সেই এক হাঙর ধরল তার পা টেনে। সেই গর্ত একেবারে চ্যানেল হয়ে নেমে গেছে পাশের বড় ড্রেনের দিকে।

সেদিন ফেসবুকে সে একটা ভিডিও দিল বটে।তবে সেই ছপাৎ ছপাৎ জলে হাঁটার ছবি নয়।বিছানায় শুয়ে মচকানো পা নিয়ে কাতরানোর ছবি।ক্যাপশনে ঘটনার খানিকটা লিখে আরও ইমোশন্যাল করার জন্যে লিখে দিল –ভিডিও একনলেজমেন্ট মাই মম।  

এর সঙ্গে আরও ছিল।সজল চোখে বন্ধুদের কাছে তার দ্রুত আরোগ্যের জন্যে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করার কাতর আবদেন। তার মায়ের তোলা সেই ভিডিওতে তার হাপুস হুপুস কান্নাটা অবশ্য ফ্রি ছিল।ঘোঁটোদার দুর্ভাগ্য।যেখানে তার অন্তত তিন কেজি লাভ ইমোজি পাওয়ার কথা সেখানে মাত্র সাড়ে সাতশ গ্রাম স্যাড ইমোজি নিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে ফেসবুক লগ আউট করে ঘুমিয়ে পড়তে হল। সাড়ে পাঁচশ কমেন্টের বেশির ভাগে উপদেশ ছিলঃ দাদা বেশি ক্যার্দানি দেখান ভাল নয়।এখন অফিসে দুসপ্তাহ ছুটি নিয়ে রোজ মায়ের হাতে গাঁদাল পাতার ঝোল খেয়ে যান। আর হ্যাঁ রোজ রাতে মায়ের তোলা এমনি ভিডিও পোস্ট করতে কিন্তু ভুলবেন না।আমরা আপডেটটা দেখতে চাই।খুব চিন্তায় রইলাম।

ঘোঁটোদার সেলফি নেওয়ার এমন অনেক জবরদস্ত গল্প আছে। কোন এক জঙ্গলে সে বেড়াতে গিয়েছিল মাস কয়েক আগে। বাদাম খেতে খেতে হঠাৎ পেছন ফিরে দেখে তার ঘাড়ের কাছে এক গাছের ডালে একটা বাঁদর দাঁত খিঁচিয়ে তাকে অভ্যর্থনা করছে।

দারুণ লাগল দৃশ্যটা। এমন একটা দৃশ্য সেলফি দিয়ে না বাঁধিয়ে রাখলে চলে? তা ঠিক ঠাক পোজ দেখে সে যখন সেলফিটা তুলতে যাবে এমন সময় সেই ঘটনাটা ঘটল। ঘটনা বা দুর্ঘটনা যাই বল না কেন।  

সেলফি নেওয়ার আগেই গালে ঠাস করে এক চড় মেরে বাঁদর তো হাতের মোবাইল কেড়ে একেবারে সটান গাছের উঁচু ডালে। তারপর সেটা দিয়ে নিজের সেলফি তুলতে ব্যস্ত। কিন্তু হায়। টানাটানিতে ক্যামেরার মুখ গিয়েছিল ঘুরে। মানে ফ্রন্ট ক্যামেরা আবার ব্যাক ক্যামেরা হয়ে গিয়েছিল। বাঁদর তো মহানন্দে ক্লিক করেই উঁচু ডালে লাফিয়ে হাওয়া।তবে যাওয়ার আগে আবার ভেংচে মোবাইলটা ছুঁড়ে দিল। ঘোঁটোদার তো ক্রিকেটের লাইভ কমেন্ট্রি দেখা চোখ। খপাৎ করে ধরে নিয়ে দেখে তো হাঁ। আরিব্বাস!বাঁদরটা সেলফি তোলে নি কিংবা তুলতে পারে নি বটে। তবে যা তুলেছে তা তো একেবারে খাশা। বাঁদরের নিজের হাতে তোলা ছবি। এ ছবি গুগুল পেলে না লুফে নেয়। 

পরের দিন ডিজিট্যাল মাধ্যমে তার এই ছবিটা সে পোস্টিং করল এই ক্যাপশন দিয়েঃ বাঁদরের নিজের তোলা সেলফি।সে অবশ্য একটু ভুল করে ফেলেছিল। সে লিখতে গিয়েছিল বাঁদরের নিজের তোলা ছবি। কিন্তু সেলফিতে আচ্ছন্ন তার মন এমনি মতিচ্ছন্ন ঘটাল যে সে লিখল বাঁদরের নিজের তোলা সেলফি।

ইচ্ছে ছিল গাদা গাদা লাইক কমেন্ট শেয়ার কুড়িয়ে নিয়ে ছবিটা যদি গুগুল টুগুল কাউকে বেচা যায়। কিন্তু কমেন্ট বাক্সে ভুরি ভুরি যে কমেন্ট জমা পড়ল তার বেশির ভাগ তাকে নিয়ে মানে তার চেহারা নিয়েই কটাক্ষ। আসলে ছবিতে বাঁদর তো আদৌ নেই।তার জায়গায় উপস্থিত দাঁত খিঁচোন ঘোঁটোদা।বাঁদরের ছবি তোলা দেখে ঘোঁটোদার মুখের চেহারাখানা যা হয়েছিল। সবাই মনে করল ঘোঁটোদাই বুঝি—যাক গে।

ছবিটা গুগুলকে বিক্রি করা দূরে থাক সে ডিলিট করে দিল। ভাবল এমন ভুল আর সে কখনও করবে না। তবে এই ভুল হল সেলফি নয়কে সেলফি বলাটা। সেলফি তোলাটা নয়। তাই সেই ঘটনার পরও সে দিব্বি সেলফি তুলে গেছে গাদা গাদা।উঁচু বনই হোক বা কচুবন সে সেলফি তুলবেই।

ঘোঁটোদার চুলের স্টাইল করার খুব শখ। চুলের নানা স্টাইল করে সেলফি তুলে সেই সেলফিগুলো আবার কোলাজ করে অ্যালবামে রেখে দেয় যত্ন করে।একবার নতুন একটা স্টাইল করে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সেলফি তুলে যাচ্ছে। যাচ্ছিল একটা বড় গাছের নিচে দিয়ে। প্রথমে খেয়াল করে নি।পোস্ট করার সময়ও খেয়ালে ছিল না। কিন্তু অন্তত আড়াইশটা কমেন্ট এল এই মর্মে যেঃ দাদা চুলের স্টাইল বেশ ভাল। তবে এই সাদা রঙের পোঁচটা না দিলেই পারতেন।

মাথার ওপর গাছের ডালে বসেছিল একটা পাখি। সেই পাখিটাও উঠেছে সেলফিতে। কিন্তু সে যে কখন পচাৎ করে ইয়ে করছে- সে যাক গে।

সেলফিতে আচ্ছন্ন ঘোঁটোদা ভ্রমণে গিয়ে নৌকোবিহার করল। ভাবল এই যে ‘রাশিরাশি জল মধ্যিখানে আমি’ এর একটা সেলফি নিলে মন্দ হয় কি? হ্যাঁ এই সঙ্গে জলের ঢেউগুলো যদি একেবারে তার মাথার কোঁকড়া চুলের পেছনে থাকে তো জলের ঢেউয়ের সঙ্গে তার মাথার চুলেরও দারুন প্রশংসা পাবে সকলের।বিজ্ঞাপন কোম্পানীও ছবিটা লুফে নিতে পারে তাদের তেল বা স্যাম্পুর বিজ্ঞাপনে।

কিন্তু বেশি ক্যার্দানি দেখাতে গিয়ে একেবারে উল্টে সেই জলে।শুধু সেই নয়,উল্টি খেলে সেই নৌকোটাও।সে তো খাবি খেলই। আবার সকলকেও খাওয়াল।অনেক কষ্টে অন্য সকলের সঙ্গে তাকেও তুলে ডাঙ্গায় এনে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস দিয়ে কোনওরকমে বাঁচানো গেল। জ্ঞান ফিরেই ঘোঁটোদার মনে প্রথম যে চিন্তাটা এল সেটা হল তার মোবাইল ঠিক আছে তো?সেলফিটা উঠেছে তো?

উদ্বেগের সঙ্গে বলে উঠল,আমার সেলফি?

একজন বলল,উঠেছে উঠেছে। তবে সেলফি নয়।আপনার আর্টিফিসিয়াল রেসপিরেশনের ছবিটা খুব যত্ন করে আপনার ক্যামেরায় তুলে দিয়েছি।

বিশ্বস্ত মোবাইলের এই কাজে ঘোঁটোদা আশ্বস্ত হল।মোবাইল বেচারি এখনও দিব্বি ঠিক আছে।ভাগ্যি সেই বিপদের সময়েও তাকে একট্টুও না ভুলে হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরেছিল ঘোঁটোদা।

ভিডিওটা পোস্ট করে ক্যাপশন দিলঃ সেলফির অপকারিতা নিয়ে এটা আমার অভিনয় ছিল। আমার অভিনয় পাশের শতাধিক লোকে ভীড় করে মুগ্ধ হয়ে দেখছিল।

সঙ্গে সঙ্গে এক কেজি গোল্লা চোখের ইমোজি।একজন সাহস করে লিখলঃ দাদা অভিনয়টা চালিয়ে যান।বেশ হচ্ছে। বেশ খাচ্চি।

একজন মেয়ে চোখের জল ঝরিয়ে লিখল, ডিয়ার অভিনয়টা বড্ড খাঁটি হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে স্টেজটা একেবারে রিয়াল ছিল। আর এমন অভিনয় করবেন না।

রাজস্থানে বেড়াতে গিয়ে উটের সঙ্গে সেলফি তুলে বেশ ভাল লেগেছিল ঘোঁটোদার। তাই দেখে বাংলায় এসে ঘুঁটের সঙ্গে সেলফি তুললে কেমন লাগে দেখতে চাইল। আজকাল গ্যাস হওয়ার পরে ঘুঁটের ব্যবহার অনেক কমে গেছে।কিন্তু এককালে ঘুঁটেই তো আমাদের রান্নাঘরকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।ঘোঁটোদা ভাবল এমন একটা প্রায় দুষ্প্রাপ্য জিনিস নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি করবে।তার একেবারে প্রথমেই থাকবে ঘুঁটের সঙ্গে ঘোঁটোদার সেলফি।   

তা ঘোঁটোদার চোখ বটে। একেবারে সেলফি তোলা চোখ।খুঁজে খুঁজে ঠিক বার করল জায়গাটা। দেওয়ালে সদ্য ঘুঁটে দিচ্ছে এক ভদ্রমহিলা।অর্ধেক দেওয়ালে ঘুঁটে দেওয়া শেষ। আর বাকি অর্ধেকে কাজ চলছে। একতাল গোবর মানে কাঁচা গোবরের একটা বিরাট ঢিপি সাজানো আছে পাশে। তার মানে ঘুঁটে তৈরির র মেটিরিয়াল একেবারে রেডি।ঘোঁটোদাও রেডি হল সেলফি নেবার জন্যে।

কিন্তু টাল সামলাতে পারল না। এখানেও সেই ক্যার্দানির কোপ।ক্যার্দানি ছাড়া নাকি সেলফি ঠিক জমে না ঘোঁটোদার স্থির বিশ্বাস। পড়বি তো পড় একেবারে গোবরের সেই তালের মধ্যে মুখ গুঁজড়ে। গোবরের তালটা বেশ বড়ই ছিল কিনা।

তবে ভাগ্য বটে ঘোঁটোদার। ছবি কিন্তু উঠেছে।মানুষ নয়,গরুটাই তুলে দিয়েছে সেটা।  

হয়েছে কি ঘোঁটোদা ব্যালেন্স হারাতেই ব্যালেন্স হারিয়েছে তার মোবাইলও। আর সেটা পড়েছে একেবারে গরুটার সামনের ডাবায়। গরু তো কোনোদিন দেখে নি এমন আজব বস্তু। সে শুঁকে দেখতে গেল এটা খাবার জিনিস কিনা।স্মার্ট ফোন এত স্মার্ট যে চামড়ার সামান্য স্পর্শেই উজ্জীবীত হয়ে ওঠে। অতএব তার নাকের স্পর্শেই তার নাকের ছবিটা তোলা হয়ে গেল।

সে ছবি দেখে ঘোঁটোদা নাক তো সিঁটকোলই উপরন্তু গরুটার চোদ্দ পুরুষ উদ্ধার করতে ছাড়ল না। কেন বাপু তুই এটা শুঁকতে গেলি?এত পাকামি কেন?কিন্তু ছবি যখন তোলাই হয়ে গেছে তখন আর ডিলিট করে কী হবে? সেলফি যদি না হয় তো অন্তত গুলফি তো বটেই। মানে গরুর তোলা সেলফি।এও তো একটা বিস্ময়ের ব্যাপার নাকি?ফেসবুকে পোস্ট করলে বন্ধুরা কি তার মাহাত্ম বুঝবে না?

তাই সেইভাবেই ছবিটা পোস্ট করে দিল। সেলফি হিসেবে নয়। গরুর তোলা ছবি হিসেবে। সেই সঙ্গে গোবর আর ঘুঁটের মহামূল্য ব্যবহার উল্লেখ করল। লিখল এক সময় এই ঘুঁটেই কিন্তু আমাদের রান্নাঘরকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। এই ঘুঁটের সঙ্গে ঘোঁট পাকিয়েই কয়লা জ্বলত। ঘুঁটের ধোঁয়ায় আমাদের চোখ জ্বালা করে বটে তবে সেই সঙ্গে তা মশা তাড়াতেও সাহায্য করে। ম্যালেরিয়া ডেঙ্গুতে আর আমাদের পঙ্গু করতে পারবে না যদি আমরা নিত্য সন্ধ্যায় এমন ঘুঁটের ধোঁয়া দিই।

একটা মিনিটও পুরো যায় নি। সঙ্গে সঙ্গে কমেন্ট। রাশি রাশি হাসি হাসি। মানে এবার আর লাভ ইমোজি নয়,স্যাড ইমোজিও নয়।একেবারে ফোকলা হাসির ছড়াছড়ি। একেবারে সাড়ে পাঁচ কেজি মানে সাড়ে পাঁচ কে। কেউ কেউ অবশ্য চোখের জল ফেলা ইমোজি দিয়ে কমেন্ট করেছে, আহা সেলফি নিতে নিতে ছেলেটার মাথা খারাপ হয়ে গেছে গো। মে হি রেস্ট ইন ফিস মানে রোজ গাঁদাল পাতার চারা মাছের ঝোল খেয়ে কিছুকাল বিশ্রাম নিন দাদা।  

ছবিটা ছিল গরুর নাকের।এটা গরুটার পাকামিও নয় নাকামিও নয়। তবে ঘোঁটোদার নাকানি চোবানি।কারণ সেই ছবির যে কমেন্টগুলো পড়ল তাতে সেলফি তোলাই ছেড়ে দিয়েছে ঘোঁটোদা। তার সব স্মার্টনেস ঘুচে গিয়ে সে এখন বাটন ফোন ব্যবহার করে।  

লেখক ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়
বৈদ্যবাটি, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ 




















0 Comments