আ-ফোটা দিন
বিকাশরঞ্জন হালদার
ছায়াবৃত্তে জেগে থাকে সাঁজধরা মুখ।মুঠোর হাওয়া। মধুর-দৃষ্টিপাত! কবিতার মূর্তি গ'ড়ে নিজস্ব অবুঝ। অক্ষর-পতঙ্গ ওড়ে নদীর খাতায়। তোমার হিল্লোলিত পদচিহ্নে এখনও আ-ফোটা দিন! বড় আশ্চর্য মনে হয়! আমার নিঃশব্দের পৃথিবী জুড়ে শব্দের ছড়াছড়ি! রোদ মাথায় হেঁটে যায় পথিক সময়,প্রাণহীন পৃথিবীর পথে। দ্রষ্টব্য হয় মর্মবেদনা। একাকিত্বের মৃত্যু হলে,পুড়ে যায় খাঁটি অন্ধকারের বীজমন্ত্র! কথা বাড়ায় জটিল-করোটি। রাঙামাঠ কাছে আসে ছুটে! তবু লাঙলের ফালে ওঠে সীতা!মাটি-আয়োজনে...
কবি বিকাশরঞ্জন হালদার
রঘুনাথপুর, বিরেশ্বরপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
তোয়াঞ্জলী
সায়ন
যদি সময় পাই তোমাকে নিয়ে যাবো
প্রিন্সেপ ঘাটের গঙ্গার ধারে
সেই জলে কান পেতে তোমার বুকের ঘ্রাণ নেবো
ভাষায় লেখা থাক বর্ধমানের অন্নকথা
ভারতের আলপথ বেয়ে আমি আউশের গান ধরি
অন্নমাতার চুলের কালোয় যে রাত নামে
সেখানেই পড়ে দেখো- বিদ্রোহ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব ইস্তাহার
তোমাকে নিয়ে যাবো খাজুরাহো শিলার কাছে
তোমার কোমর জুড়ে নিরক্ষরেখা ভ্রমণ
সবটাই গোদাবরী জলের রেখায়
কফিপাতার গায়ে লাগে, সন্ধ্যা প্রদীপের জলরঙ আলো,
এখন তুমি শুধু বিরাট খোঁপায় বেঁধে রেখো একটা জীবন যার পথ চলা পায়ের দাগ
মিশে যাবে ভারতের আলপনার শিখায়।
কবি সায়ন
এন এস সি বোস রোড, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
নাভিজ্বর
নিমাই জানা
নাভি পুড়ে গেলে জ্বরের নিরাময় হয়ে এসো জলপটির উপর
নরম আঙ্গুলের স্পর্শে জ্বরের সংক্রমণ উড়ে যাচ্ছে নাভি বিন্দু দিয়ে
ক্রমশ হারিয়ে ফেলছি সকল মায়াময় সংসার যোগ
ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে সকল বন্ধন , ঋষির মত যোগাসনে নিমগ্ন আধপোড়া শরীর আমার বগলের তলার পারদ মেপে যায় ফারেনহাইট ডিগ্রিতে
মাথার কাছে গভীর অসুখের দিনে ও অ্যালজোলামের উপশম খুঁজে লাটাই ছেঁড়া একটা ঘুড়ি
আসলে ঘুড়িটি কেউ নয় ঘুড়িটির ভেতরে উবু বসে আছে আমার মা
যে রক্তাল্পতা খুঁজে নিচ্ছে আমার চোখের তলায়
কবি নিমাই জানা
রুইনান, সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর
কাঁটাতার
ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পর্কের প্রলম্ব সাঁকো কে
অনন্তের সঙ্গে বেঁধে দেবার প্রতীক্ষা
জ্যামিতিক সকল রেখাকে অতিক্রম করেছে।
গীতিকাব্যে ঋতুস্নান সেরে
কর্কট ক্রান্তির উষ্ণ আবহে তপ্ত হতে হতে
বালিতে পললে ধানের ক্ষেতে
মহীনের ঘোড়াগুলি হেঁটে যেতে থাকে।
মাঠের পর মাঠ সবুজ ঘাস
পাশে বহতা নদী এক চলমান প্রস্তাব
যেন প্রেম
যার কোন কল্পিত সূত্র নেই
সমাধান ও নেই
শুধু লাব ডুব লাব ডুব বুকের গভীরে,
ফিনিক্স পাখির মত মিলিয়ে যাবার আগে
শুদ্ধ ললিতে বেজে ওঠে --
উড়ে যায় মহীনের ঘোড়াগুলি
ডানা মেলে উড়ে যায়
নিচে উপেক্ষায় পড়ে থাকে
সীমান্তের কাঁটাতার।
কবি ড. ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
কল্যানী, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ
স্তব্ধ রাত্রির ক্লান্ত অঘরী
দেবদত্ত চক্রবর্ত্তী
না নানা
কিচ্ছু হতে পারিনি আমি!
সেই ছোটবেলা থেকে আজ অব্দি
নিয়ম আর শৃঙ্খলে আটকে ছিলাম
সমুদ্র থেকে দূরে! আর সমুদ্র সরে গেছে
নদীর মতো প্রতিদিন দূর থেকে বহুদূরে!
স্রেফ কিচ্ছু না হতে পারার সাহস
প্রয়োজন ছিল আমার যা ছিল না আমার কোনকালে!
জীবনভর তাই শুধু প্রতীক্ষা করেছি আর
তিলে তিলে দেখেছি
প্রত্যাশার মৃত্যু!
স্বপ্নের সমাধি!
আর ভেঙ্গে পড়তে দেখেছি শূন্য বাতাসে জীবনের ওড়ান!
ঝেড়ে ফেলেছি জীবন থেকে সেই সবকিছু
যা ছিল আমার অবিচ্ছেদ্যভাবে নিকটতম!
একসময় নিঃশব্দ রাত্রির অন্ধকারে বসে
মোমের আলোয় রেখা টানতাম দূর পৃথিবীর
উড়ন্ত পাখির ডানায় ভেসে ছুঁয়ে আসতাম মেঘের বারান্দা!
আমার ভাল লাগে না
আর ভাল লাগেনা কোনকিছুই!
কি দিয়েছে আমাকে গাদাগাদা মুখস্থ করা পাঠ্যবই...?
এই সংসার শুধু শূন্য রিক্ততায় বেঁধেছে আমাকে
চেতনে অবচেতনে আমি শুধু শুনেছি নিঃসঙ্গ পথিকের ডাক!
এক মহাশূন্যতায়
কে যেন বেঁধে রেখেছে আমাকে
সমান্তরাল জীবনে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবিন্যস্ত সুতোর মালায়?
কি হতে পেরেছি আমি?
কিচ্ছু না! কিচ্ছু না!
শুধু রহস্যে মোড়া পৃথিবীর উপন্যাসের এক নিরেট অধ্যায় ছাড়া!
সমস্ত উচ্চাসার নীচে
যদি আমাকে খোঁজে দেখ একবার
বিজ্ঞের বিচারে যা কিছু চরমতম অসন্মানের
সেই চুরান্ত চূর্ণবিচূর্ণ নামহীন স্থানে
নিখোঁজ আমি! মনে হয় যেন আমি
এই পৃথিবীর পান্থশালায় দাঁড়িয়ে থাকা স্তব্ধ রাত্রির এক ক্লান্ত অঘরী!
কবি দেবদত্ত চক্রবর্ত্তী
কলেজরোড, হাইলাকান্দি, আসাম
কাল সিন্ধু
শুভজিৎ দাস
"আর্সেনিকের আলো হেঁটে যায়
উড়ে যায় দৃশ্যেরা ,
আয়নার নীচে দারিদ্র্য ধরা পড়ে
উবে যায় ধোঁয়াটে কাব্য ,ফেয়ারনেস ক্রিমের উজ্জ্বল্য বাষ্পাকারে,
দৃশ্য পটভূমির পর্দায় নাচে পুতুলেরা
রাঙা ফুলের সুবাসে ঢেকে দেয় বাসি হলুদ ফলের
উদ্ভাস ;
আমি- তুমি হাসি ছেলেখেলা - ছায়া খেলায় বাস্তুতন্ত্রের বিবর্তনকে নিয়ে,
অর্বাচীন মস্তিষ্কে ক্ষুধাকে আঁকি
চেয়ে থাকি ,
পারদের শীতল স্পর্শ আবার ছোঁয়
ছুঁতে থাকে
সভ্যতার দৃঢ়শর্তের অধ্যায়ের আনাচে - কানাচে।। "
কবি শুভজিৎ দাস
শেওড়াফুলি, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ
হাত
সুজিত রেজ
এই হাত নীরার মুখ ছুঁতে পারে না
এই হাত শুধু পীড়া দেয় পীড়া--- অনন্ত যন্ত্রণা
এই হাত অন্ধকার লুফে নেয়
আরও গভীর অদ্ভুত জীবনানন্দীয় অন্ধকার ছুঁড়ে দেয়
এই হাতে তলরেখা নেই দাঁত আছে
এঁটো আঁতকুড় নেই কাচ কাটা ধার আছে
ওজর আছে অফুরন্ত
এই হাত পাপ শাপশাপান্ত
এই হাত মড়ক ও মরণের
উঞ্ছবৃত্তি চালিত আগুনের
ঘৃণ্য কীটদুষ্ট উচ্ছিষ্ট খুঁটে খুঁটে খায়
এই হাত কলঙ্কিত শত রাধায়
এই হাত ছুঁয়েছে তীর মদির মন্থনে
এই হাত ছুঁড়েছে তির তিতির পাখির সুধা হাড় চর্বণে
এই হাত ইতিহাসবিমুখ হয়ে বিনিদ্র জেগে থাকে
নটেশাকের আংটি পরে ডুবে যায় পোড়া অনঙ্গের নাভির পাকে
এই হাত তেত্রিশ কোটি দেবতার অংশ নয়
এই হাত প্রপঞ্চ মায়াময়
কবি সুজিত রেজ
চুঁচুড়া, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ