তাৎক্ষনিক ~ শুভজিৎ দাসের অণুগল্প


শুভজিৎ দাসের অণুগল্প 
তাৎক্ষনিক

"আগুন্তুক আগুনের অঙ্গার গুলো এখনো জ্বলে উঠছে ক্ষনে ক্ষনে লড়াই করে যাচ্ছে জলের সাথে তার শেষ স্ফুলিঙ্গ দিয়ে।"

নিউজ চ্যানেলের কভারেজ এখন প্রায় শেষ হয়ে গেছে,দমকলের আরেকটা ইঞ্জিন এসে গেছে হাওড়ার নিকটবর্তী একটি চটকল লাগোয়া বস্তির নিভে আসা লেলিহান অগ্নিশিখার তেজ মেটাতে,যা কিছুক্ষন আগে তজনজ করে দিয়েছে বস্তির অধিকাংশই,ঢলে আসা শেষবেলায় অবশিষ্ট কিছু আছে কিনা তা দিয়ে সম্বল করে নতুন করে আস্তানা খোঁজার তাগিদে এগিয়ে চলেছে গননার খাতার কিছু আবেগ মাখা মৌলিক সংখ্যার মানেরা।তাদের বুকে বল বলতে প্রশাসনিক ক্ষতিপূরণের আশ্বাস টুকু! শেষ বেলার আপাতত শেষ রিপোর্ট" আগুন বর্তমান নিয়ন্ত্রণের মধ্যে,ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সামান্যই কিন্তু হতাহতের কোনো খবর নেই।

চৌরাস্তার লাগোয়া চায়ের দোকানে খবরে কাগজ পড়ছে কিছু মানুষ,কাগুজে দৃষ্টিতে আপাতত সামান্য অগ্নিসংযোগের খবর নিয়ে হাহুতাশ তর্ক - বির্তকও চলছে মৃদু আঁচে,চায়ের দোকান লাগোয়া ফুটপাতের নতুন সদস্যরা শুনছে আর শিহরিত হচ্ছে,উদাস হচ্ছে নিয়তির পরিহাসে। তাদের কিশোর ছেলেটা ভাবছে - ফুঁসছে উওর খুঁজে চলেছে নিজের মনের অন্তরালে জগতের মায়ার,ঈশ্বরের;যার মহীমার গল্প ছোট থেকে শুনে আসছে,আর নানা কুন্ডলীকৃত ধোঁয়াটে ভাবনার বয়ঃসন্ধিকালের উন্মুক্ত মস্তিষ্কে।অযান্ত্রিক চোখে সে ভাবছে আর চেয়ে দেখছে রোজকার সেই রাস্তাকে যা সে রোজ দেখে কিন্তু আজ দেখছে তাকে আরো স্থায়ীভাবে স্পষ্টভাবে,তারপর একবার চোখ গেল রাশি রাশি ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে আকাশময় কালকের মতন কিন্তু অতটা গাঢ় কালো নয়,তারপর দূরন্ত কিছু পথিকদের ছুটে চলাকে,তারপর চোখে এল একটা ছোট্ট মন্দির দেখেই চোখ ঘুরিয়ে নিল ঘৃনাভরে,হঠাৎ চোখে পড়ল একটা বড়ো একটা সুন্দর স্নেহ মাখা স্নিগ্ধতা শোভনীয় মুখ চেয়ে আছে তার দিকে,আপাত দৃষ্টিতে মনে হল তার,তার ওই কিশোর দৃষ্টিতে;সে চেয়ে থাকল হা করে মুগ্ধ হয়ে।

দেখতে থাকল রোজ হা করে মনে ভরে আপাতত তার সাথে ওর কোন কথা হয়নি,তাকে দেখেই মনের পুলক সে ভরিয়ে নিত, এই মগ্নতার জন্য অবশ্য তাকে অনেক কাঠখোরও পোয়াতে হয় সেদিন মা এর কাছে এক চড় খেতে হল এটা অবশ্য তাদের জীবনে নতুন নয় তবুও তার বিরহ ভঙ্গের কারণে তার ভিতরে রাগও হয়,সেদিন নতুন চায়ের দোকানে মালিকের কাছেও খেল সজোরে এক লাথি,তবুও মেনে নিতে হয় সেই মালিকই তো এখন ওকে খাওয়াচ্ছে তার বদলে কিছু কাজ করতে হচ্ছে দুনিয়ার গতানুগতিকতায়।

আবারও আগুন্তক লেলিহান অগ্নিশিখা জ্বলে উঠেছে, বয়ঃসন্ধিকালের বিরহের ভাঙনে;সে কাতর চক্ষুতে চেয়ে আছে সেই বিজ্ঞাপনের দিকে যেখানে কালকে পর্যন্ত চেয়ে ছিল স্বাপ্নিক রাজকুমারী,আজ তার বদলে অন্য কোন দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ঢেকে দিয়েছে । আজকে আবার তাকে ভাবাল এই তাৎক্ষনিকভাবে গোটা জগতের মায়াবীকতাকে হঠাতই চড় তার শীর্ণ গালের উপর আছড়ে পড়ল, তার মা এই কান্ড মাঝেই মাঝেই করে থাকেন তাই তার এটা গা শোয়া তবুও তার তাৎক্ষনিক ভাবনার জাল ছিন্ন করতে বাধ্য হতে হল,তাৎক্ষনিক ব্যাথাকে গায়ে মেখে।ছুটে চলল মৌলিক সংখ্যার ন্যায়ে জীবনের ধারাবাহিকতায় একটা বিহরিত কিশোর ।

লেখক শুভজিৎ দাস 
শেওড়াফুলি, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ 















0 Comments