লক্ষ্মণ দাস ঠাকুরার চারটি অণুগল্প
হিমু
ধড়াম করে বার দরজাটা খুলেই একুশ বছরের টগবগে দেবেশ মাথায় গামছাটা বেঁধেই মোল্লা পাড়ার দিকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুট।
-আগুন আগুন তারস্বরে শুধুই চিৎকার।
ধোঁওয়ায় আটকে পড়া রহিমের বাঁচাও বাঁচাও আর্তনাদ।ভয়ার্ত এক বিভীষিকা পরিবেশ।
কোনো কিছু না ভেবেই দেবেশ গামছাটা মুখে বেঁধেই আগুন মাড়িয়ে পাঁজা কোলে করে রহিমকে বাইরে এনেই অজ্ঞান।এখন ওরা দুজনেই হাসপাতালের একই বেডে।ওরা এখন নার্স দিদিদের হিমু ভাই।
ঘুম
মাঘের জাড়।মুখে হু হু,ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বৃদ্ধ বুদ্ধবাউরী হাত ঘষতে ঘষতে ঘরে ঢুকে দেখে মা মরা ন্যাওটা নাতি হাঁদু এখনও ঘুমায়নি। খড় পাতানো বিছানায় হাঁদুকে কাঁথা বস্তা ঢাকা দিয়েও কিছুতেই ঘুম পাড়াতে পারলো না।
-- দাদু!জাড়ই ভাঙছে না তো ঘুমোবো কি!
--দাঁড়া শালা জাড়কে মজা দেখাচ্ছি বলে আগড়টা ভালো করে আটকে মেঝেতে পাতা কয়েক আটি খড় মেঝের কোনে জ্বালিয়ে একটা বিড়ি ধরাল।
--শালা এইবার? বলেই শুয়ে পড়ল।
জাড় ভাঙলো বটে কিন্তু ঘুম ভাঙলো না।
অগ্নিশিখা
লালে লাল কৃষ্ণচূড়া গাছটায় কুড়ুলের ঘা পড়তেই হরিহর বাবুর গর্জন-ওখানে কোন মতেই মোবাইলের টাওয়ার বসবে না। দুই ছেলের অমনি প্রতিবাদী চিৎকার-তোমার তো একটা চাকরি করে দেবার মুরোদ নাই যেই আমরাএকটা কাজের ব্যবস্থা করলাম আর অমনি বাধা।সরে যাও,তুমি তোমার
প্রকৃতি প্রেম ও আদর্শ নিয়ে থাকো।দুভাই মিলে বাবাকে আটকায়।গাছ কাটা পড়ে।চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মা দেখে কৃষ্ণচূড়ার অগ্নিশিখায় যেন ওদের বাবার চিতা জ্বলছে।
বন মহোৎসব
এ বছরেও ধুমধামে বনমহোৎসবের আজ উদ্বোধনী।মাইক বাজছে।বিশিষ্টজনদের এই দিনের তাৎপর্যপূর্ণ বক্তৃতা।এ পাড়ার বুড়িমা যথারীতি এক ঘটি জল একটি চারা গাছ হাতে নিয়ে মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।মাইকে মন্ত্রী মশাইয়ের শুভ বৃক্ষরোপনের কথা ঘোষিত হলো।
বুড়িমা কাঁপা কাঁপা গলায় মন্ত্রী কে বলে-না, না বাবা ওখানে নয় এইখানে। প্রতিবছরই তোমার মতো মন্ত্রীরা এসে এই খানেই চারা লাগায়।
মন্ত্রীমশাই অবাক স্বরে বলেন-তাহলে আগের বছরের গাছগুলো কোথায় গেল?
কেন বাবা! আগের বছরগুলোকে কি তুমি ধরে রাখতে পেরেছ? তেমনি গাছগুলোকেও ধরে রাখা যায় নাই- বলেই বুড়িমা চারাটি মন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়।
0 Comments