তিনটি কবিতায় ~ রাগীব আবিদ রাতুল


রাগীব আবিদ রাতুলের তিনটি কবিতা 

সংসারে সন্ন্যাসী

অনন্ত সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে উঠেছি একা হতে,
আলাদা হয়েছি যখন সব কোলাহলে,
সেখানেও পিপড়ার চুপিসারে চলা–রাতে
সবই হয়ে যায় ম্লান,
সব ভিড়ে কি আর হারাতে পেরেছি তাকে।
রাস্তা পারাপারে কুকুরেরাও সজাগ থাকে,
আমিও ছিলাম সেখানে,পারিনি তো ভাবনায়
বাতাস হতে,
বেঁচে যেতে চাই আমিও সব মৃত নদীর বেশে।
দোকানের ভেতরে শুধু লোভ দেখে যাই,
মানুষেরে বাঁচাতে,সপ্ন দেখাতেই কি
এত দোকানের সাজ,এত আলোকসজ্জা,
তবে কি নাই মানুষের নিজস্ব আলো, 
সব আলো ফুরিয়েছে কি তবে।
রাতের রাজপথ এখন আর নির্জন সুন্দর নয়,
তবে এখনো রয়েছে নির্জন কিছু মানুষের নিঃশ্বাস, 
শহরের ভেতর খুঁজে যায় তারা পুরনো কিছু গাছ,কিছু নিজস্ব রাস্তা, ব্যক্তিগত চাদের আলো, 
সবই হারাতে হারাতে তাদের চামড়াও হয়েছে 
ভীষণ পুরনো। 
সংসারে যে ভুলে জন্মেছে সন্ন্যাসী, 
কে পারে আটকাতে তাকে,
তবুও তো তাকে থেকে যেতে হয়,
মেনে নিতে হয় দোকানের লোভ,পোষাকের আবরণ,সতর্ক পকেট।
এভাবেই বেঁচে যেতে হয় প্রতিনিয়ত। 

চোখের জল 

চোখের জল কান্নায় মেশে না অনেকদিন,
জল কখনো রুম সিলিংয়ের ধাঁধায় মেশে,
বাসার ছাদে,পিলারে হেলান দিয়ে আটকে যায়,
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে পায়ের নীচে, 
কখনো দৈনন্দিন স্রোতের আঘাতে তলিয়ে যায়।

কোলাহলের ভেতরে কিছু পরিচিত শব্দে ;যদিও ফিরে আসে,
আমিই তখন ঢোক গিলে গ্রাস করি জল,
কখনো আটকে যায়,আমার চোখ লাল হয়,
লাল চোখের ভয়েই হয়তো তা থেমে যায়।

চোখের জলে অন্য কেউ থাকে,
চোখের জলেই অতীত নামে নীরবতায়,
কোন পুরনো দৃশ্য ফিরে আসে,
একটুখানি ছোঁয়া থাকে অবহেলায়।
তবুও চোখের জল কান্নায় মেশে না অনেকদিন।

অমলিন দুঃখ

স্কেলের রেখা ধরে ধরে সম্পাদ্য সকল নিখুঁত হতে চলেছে,
যেভাবে নিখুঁত ভাবে সুখ খুঁজে চলো তোমরা,
দুঃখ তো মাপজোখের বিষয় না তোমাদের কাছে,
বাড়িতে প্রবেশের পরে যে তোয়ালে হাতে আসে,
যার গায়ে মাখো সারাদিনের ব্যস্ততা আর ক্লান্তির ধুলো, 
দুঃখ তেমনই আমার কাছে অমলিন সুন্দর,
এক ফোটা জল কানের লতি ছুঁয়ে,
কাঁধে এসে পড়তেই দুঃখের কথা মনে পড়লো।
তোমাদের দুঃখের কথা এখন কেবলই
দোকানের আবদারে, দুঃখ তোমাদের
অনাদর আর আফসোসে।
আমার দুঃখগুলো তোমাদের মতো নয়,
দুঃখগুলো একটা সারসের, ঝিলের পানির ধারে বসে থাকা দুপুরের মতো। 

কবি রাগীব আবিদ রাতুল
ঢাকা, বাংলাদেশ













































0 Comments