মুক্তি দাশের অণুগল্প
মিথ্যেবাদী মা
- ‘হ্যাঁরে সন্তু, তোর নতুন মা কেমন?’
- ‘খুব ভালো, বাবা।’
- ‘আর তোর ফটো-মা?’
বাসি ফুলের মালা জড়ানো দেয়ালে ঝুলে থাকা মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে সন্তুর চোখদুটো একটুখানি ছলছল করে উঠল বুঝি! কিন্তু সন্তু পাত্তা দিল না। হাতের তালুর পিঠ দিয়ে চোখদুটো ভালো করে মুছে নিয়ে বলল, ‘ফটো-মা পচা! খালি মিছে কথা বলত।’
বিনয় এবার সত্যিই অবাক হল। দশ বছরের ছেলে সন্তুকে রেখে তার প্রথমা স্ত্রী মারা যাবার পর একবছরও পূর্ণ হয়নি, সে আবার বিয়ে করেছে। দ্বিতীয়বার বিয়ে করার সময় তাঁর একটাই শুধু আশঙ্কা ছিল, সন্তুর কোনো অবহেলা হবে না তো! নতুন মায়ের রোষের শিকার হয়ে যাবে না তো তার ছেলেটা! ভয়ে ভয়েই ছিল। তাই সেদিন ফাঁক বুঝে সে কথাচ্ছলে মা-মরা ছেলেটাকে যাচাই করে নিতে চাইল, সত্যিই তার মনে কোনো দুঃখ বা ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে কিনা।
কিন্তু এ কী শুনল বিনয়? সন্তুর কাছে তার নতুন মা নাকি খুব ভালো। শুনে খুশিই হল বিনয়। শুধু খুশি না, রীতিমতন আশ্বস্তবোধও করল সে। যেন বুকের ভেতর জমে থাকা বিশাল একটা ভয়ের পাথর আজ সরে গেল। কিন্তু সন্তু তার নিজের মায়ের সম্পর্কে এরকম কথা বলল কেন?
হালকা ধমকের সুরে বিনয় বলল, ‘ছিঃ সন্তু, ছিঃ! উনি তোমার নিজের মা। তোমাকে ছেড়ে স্বর্গে গেছেন। আর তুমি ওঁর নামে...তাঁকে মিথ্যেবাদী বলছ? ছিঃ!’
আর একবার চোখদুটো মুছে নিয়ে সন্তু নির্ভীকভাবে বলল, আমার মা ভীষণ ভীষণ মিথ্যে কথা বলত বাবা, তুমি জানো না। আমি দুষ্টুমি করলে বলত, আজ তোর খাওয়া বন্ধ। তারপর জানো তো, খাওয়ার সময় ঠিক ডেকে নিয়ে গিয়ে জোর করে খাইয়ে দিত। মিথ্যেবাদী, মিথ্যেবাদী, মিথ্যেবাদী একটা!’
বিনয় স্তম্ভিত। কোনোরকমে শুধু বলতে পারল, ‘আর নতুন মা?’
সন্তু মুখ নিচু করে বলল, ‘বললাম না, নতুন মা খু-উ-ব ভালো। একটাও মিছেকথা বলে না,। কাল দুষ্টুমি করেছিলাম তো, তাই বলেছিল, খাওয়া বন্ধ। …আজ এখনো পর্যন্ত কিচ্ছু খেতে দেয়নি, বাবা!’
0 Comments