হৃদস্পন্দন

  • Home


  • Download

  • Social

  • Feature


কবিতা 
অজিত কুমার জানা 

কলম কালির চুল্লিতে,
শব্দের বিরিয়ানি বানায়। 
কবিতার থালায় ফুটে গদ্যপরী,
সবুজ উলঙ্গ উপত্যকা,
ছাপার অক্ষরে যেন পর্যটন সুন্দরী।
হৃদযন্ত্র খুলে যায়, 
কবিতার অক্ষরে অক্ষরে।
সৃষ্টির প্রসব যন্ত্রণায়, বিজয় নিশান ওড়ে, 
পাখির ডানায় ওড়ে কবিতা।

কবি অজিত কুমার জানা 
কোটরা, হাওড়া, পশ্চিমব্ঙ্গ




চিতাছাপ কুকুর
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় 

চিতার ছাল গায়ে একটি দেশি কুকুরকে দেখে আপনি চমকিত হতে পারেন
ভয় পাওয়াও অস্বাভাবিক নয় এমনকি তাদের জাতিসাম্য বা অভ্যাসগত মিলও
খুঁজতে পারেন,ঘাতকের গরম জল বা পলিব্যাগের রসায়ন ভুলে গেলে
অঙ্কটা হয়তো মিলবে না। ডিএনএ আর আরএনএ পাকে পাকে বসে।
আর এন  এ-র বিপরীত প্রতিলিপি বারবার ভাঙে প্রতিরোধ। ডোন্ট কেয়ারের বুড়ো
আঙুলে দিশেহারা বিজ্ঞান।তাই সেকেন্ড স্ট্রেন থার্ড স্ট্রেন এসবের আগমন অবধারিত
এবং তারা ক্রমশ মারাত্মক হয়ে ওঠে।

চিতাছাপ কুকুরটি কিন্তু নিতান্ত নিরীহ দুর্বল একটি প্রাণী ছাড়া কিছুই নয়
তবে পশুকে ভুলেও মানুষের সঙ্গে তুলনা করবেন না, ওদের আত্মসম্মানে
আঘাত লাগবে কারণ ওরা মানুষের মতো চূড়ান্ত ক্ষতিকারক নয়।
একমাত্র মানুষই বিকৃত কামনা মেটাতে সব ধ্বংস করে দেয়।

            কবি জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
গোপেশ্বরপল্লি, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া










হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন নিবেদিত 
                  জমকালো রবিবার ৬

সূচিপত্র-

কবিতা:

সুজিত রেজ ॥ তাপসকিরণ রায় ॥ মৈনাক খাঁ ॥ নিমাই জানা ॥ তুষার ভট্টাচার্য ॥ মুক্তি দাশ ॥ অশোক কুমার দত্ত ॥ সমাজ বসু ॥ অমিত চক্রবর্তী ॥ চিত্তরঞ্জন গিরি ॥ পার্থ সারথি চক্রবর্তী ॥ প্রেমাংশু শ্রাবণ
নিত্য রঞ্জন মণ্ডল ॥ দীপক বেরা ॥ হামিদুল ইসলাম॥ কাঞ্চন রায় ॥ তীর্থঙ্কর সুমিত ॥ শুক্লা মুখার্জি ॥ শান্তনু গুড়িয়া ॥ দালান জাহান ॥ দীপঙ্কর সরকার ॥ অজিত কুমার জানা ॥

মুক্তগদ্য:

বিকাশরঞ্জন হালদার ॥ অনীশ ব্যানার্জ্জী ॥ নিশিকান্ত রায় ॥

প্রবন্ধ:

সৌম্য ঘোষ ॥ রথীন্দ্রনাথ রায় ॥ লক্ষ্মণ দাস ঠাকুরা ॥ উত্তম দেবনাথ ॥ বারিদ বরন গুপ্ত ॥ স্বাতী সরকার ॥

অণুগল্প: 

রবীন বসু ॥ অদিতি ঘটক ॥ সনৎ ঘোষ ॥ বিকাশ বর ॥

ছোটগল্প: 

অমৃতা বিশ্বাস ॥ অভিষেক ঘোষ ॥ প্রদীপ দে ॥  



রবীন বসুর অণুগল্প 
প্রত্যাবর্তন 

আজ আবার।আবার তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। মাঝরাতে  ওয়াশরুমে শাওয়ারের তলায়  দাঁড়ায় মোহনা। অবিরল জলধারায় সে কিছু ধুয়ে ফেলতে চাইছে। জালি দিয়ে ঘসে ঘসে গা থেকে কী যেন তুলছে। বা তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই সেই ঘৃণ্য অবলেপ মালিন্য সে তুলতে পারছে না। পরাজয়ের গ্লানি একরাশ লজ্জা নিয়ে তাকে কুঁকড়ে দিচ্ছে। শিরশির ঘৃণায় সারা শরীর বমি করতে চাইছে।

দু' বছরের বিয়ে।স্বামী সুপ্রতীম পেশায়  মনোরোগ চিকিৎসক।আন্তর্জাতিক জার্নালে গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল লেখেন। সভা-সমিতি চ্যানেলে মতামত রাখেন।অথচ বাড়ি ফিরে মনের হদিস তো দূরের কথা,শারীরিক অসুস্থতাও গ্রাহ্য করেন না।প্রতি রাতে বন্য মহিষ বা বরাহের মত সুঁচলো শিং দিয়ে শিকারকে যেন ছিন্নভিন্ন করে এক আদিম ভোগে তৃপ্ত হয়। 

য়্যুনিভারসিটির সহপাঠী অলোকেশের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করেছে দু'বছর। ও পিএইচডি করতে চলে গেল জার্মানি। মোহনাও চাকরির পরীক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। শেষমেশ একটা বেসরকারি ব্যাঙ্কে ঢুকে অলোকেশকে মেল করেছিল। ও জানিয়েছিল তার এখন দেশে ফেরার কোন ইচ্ছেই  নেই। আপাতত পোস্ট ডক্টরেট করছে। পরে এখানেই চাকরি। বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। মা চাইছিল মোহনার বিয়েটা হয়ে যাক। নেটে নানা ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট সার্চ করে বাবা-মা তার জন্য পাত্র পছন্দ করেছিল।একমাত্র ছেলে, নিজেদের বনেদি বাড়ি। প্রফেসর-ডাক্তার। সুদর্শন। মায়ের পীড়াপীড়িতে বিয়েতে মত দিয়েছিল।

কিন্তু বিয়ের নামে প্রতিনিয়ত এই বলাৎকার,এই গার্হস্থ্য নরক তার আর সহ্য হচ্ছে না। লজ্জা আর অপমানে সে কাউকে বলতেও পারছে না। বাবা-মাকে তো নয়-ই। এখন দেয়ালে পিঠ ঢেকে গেছে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মোহনা ড্রয়িংয়ে বসে ছিল কতক্ষণ।শীতার্ত এক অনুভূতি তাকে অন্ধকার সুড়ঙ্গের উষ্ণতায় ডাকছে। সে প্রাগৈতিহাসিক জীব হয়ে হাঁটু ভেঙে হামাগুড়ি দেয়।

একসময় ভোর হয়। পাখি ডাকে। মহিমা তার মনের মধ্যেকার শীতার্ত রক্তাক্ত পাখিটাকে মুক্তি দিতে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ল। বাইরে উজ্জ্বল আলো। আঁচলটা গায়ে জড়িয়ে নিল ভালো করে।

কলিংবেল বাজল। এত সকালে কে এল? সীমাদেবী দরজা খুলে দেখেন, মেয়ে মহিমা। 

"কীরে, তুই? এত সকালে !"

"আমি ফিরে এলাম, মা। একেবারে।"

   সাহিত্যিক রবীন বসু
১৮৯/৯, কসবা রোড, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ









নিশিকান্ত রায়ের মুক্তগদ্য 
তৈরি 

আক্রোশে ভেঙে পড়ছে কৃষ্ণচুড়ার ডাল 
লাইট পোস্ট ঘরোয়া আকাশ । 

রোকেয়া হলের দিক থেকে উন্মত্ত চীৎকার 
টিএসসিতেও আগুন 
চলো নিরাপদ দূরত্বে যাই। 
একটু নিরাপত্তা চেয়ে  যে কোন ছাত্রাবাসে 
একটু আত্মগোপন করি। 

চলো। 

তোমার হাতে আমার পাঁচটি আঙুল 
তোমার দিকে নিবিড় নিবদ্ধ আমি। 
আমরা যাব না।
আমরা কেউ কাউকেই ছেড়ে যাবনা 
আমরা বিচ্ছিন্ন হব না। 
আমরা বিচ্ছিন্ন হলে ওরা জয়ী হবে। 
প্রেম বন্ধ্যা হবে।
নারী মাতৃত্ব হারাবে। 
যৌনদাসত্ব ফিরে আসবে। 
আমরা ভাঙবো না। 
তোমার হাতে আমার পাঁচটি আঙুল। 
দৃঢ়তম বিশ্বাসের সাথে আমরাই জয়ী হব। 
কেননা আমরা দুজনেই আজ সত্যাশ্রয়ী 
আমরা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের জন্য তৈরি।

কবি নিশিকান্ত রায় 
লালমনিরহাট, বাংলাদেশ















মাতৃত্ব 
মৈনাক খাঁ

ধান গাছের চারার মতো ডুবে যাচ্ছে 
তোমার মাতৃত্ব; পুড়ে যাচ্ছে তোমার শৈশব।
ঝিরঝিরে বৃষ্টির ফাঁকে মুখ তুলে বসে আছে
আগামীর প্রজন্ম; 
তাদের মুখের হাসি এখন রক্তজবা,
কোনো মুখে আবার জরায়ুর গন্ধ।
তারা এখন বিকেলের খেলা ভুলে গেছে,
বৈধ শরীরি ভাষায় মেতে উঠেছে
মুখোশ পড়া প্রতিটি রাতে নতুন শাড়ির ভাঁজে।
কাঠ ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছে কিছু গাছ,
ডালে তাদের কতো পাখিদের সংসার, পাতার
আড়ালে বসে থাকে কোনো এক বৃদ্ধের 
আশির দশক পার করে আসা ক্লান্ত দুটো পা।
তবুও আমার মা ঘুমিয়ে পড়ে না...
ঘুমিয়ে পড়ে না জ্বর গায়ে সেই চোদ্দ বছরের
মেয়েটার সংসারী হয়ে ওঠার কথাটা ভেবে।
ঘুমিয়ে পড়ে না আমাদের মা, মাঝ রাতে
মেয়েটির খোলা পিঠে কিছু গদ্য লিখবে বলে।

কবি মৈনাক খাঁ 
ক্যানিং, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ 

















তাপসকিরণ রায়ের চারটি কবিতা

পুরুষ ও প্রজাপতি

অপরূপা, ফুল বাগানে রংমিলান্তি খেলতে খেলতে একটি পুরুষ এগিয়ে চলেছে

তার বাউরি মনে নারী গন্ধবহ নেশায়,একটি নারী ও রাত চরিত্র তৈরি হচ্ছে।  

কখনো যমুনায় নির্মোহ ঢল নামে, 

আর্তনাদের বেড়া ভাঙতে ভাঙতে কিছু কিছু ভালোবাসা টুকরো টুকরো, 

একটা মন, টুকরো ভালোবাসা ছড়িয়ে-ছিঁটিয়ে 

একটা জীবন নির্মোহ বয়সের প্রান্তে এসে কিছু গন্ধ ও মাদকতা অচ্ছুৎ আমোদ

কখনো মহোৎসবের হরিনাম গান, কীর্তনের আখাড়ায় সে পুরুষ বৈষ্ণবীর গান শোনে   

কখনও বিকৃত নাসিকায় সে বাসি ফুলের ঘ্রাণ টেনে নেয়। 


স্ফুলিঙ্গ 

 

ইটস রেইনিং ক্যাটস এন্ড ডগস 

মাথার ছাতি ভেদ করে কাক ভেজা হয়ে হাঁট ছিলাম

ভেবেছিলাম সোনালী তখনও আমার অপেক্ষায় জানালায় দাঁড়িয়ে--

আমি দরজায় বারবার টোকা মেরেছি...

পাশের জালনার ঈষৎ ফাঁক দিয়ে ওকে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম...  

দরজা না খুলে সে মাথা উঁচু করে কি যেন দেখছিল ! 

আমি তার দৃষ্টি ধরে তাকালাম-- 

সামনের কার্নিশহীন নেড়া ছাদে একটি উলঙ্গ ছেলে দাঁড়িয়ে

শ্রাবণের ঢেউ তার অবিশ্রান্ত দেহে খেলা করছে।

রাগ হল খুব, আমার ফিরে যাওয়া সোনালী টের পেল না, 

অজস্র শ্রাবণের ধারা আমার ছাতা ফুঁড়ে নেমে আসছিল, 

ঘোলা কাদা জল--জলজ হয়ে যাচ্ছিল আমার দেহ ও কৌপীন। 

শ্রাবণের ধারায় কিন্তু সেই উলঙ্গ ছেলেটি ক্রমশ ধুয়ে যাচ্ছিল-- 

ভেজা শরীর থেকে তার জ্বলে জ্বলে উঠছিল স্ফুলিঙ্গ ফসফরাস। 

 

শ্রাবণধারা

 

কখনও চোখের পলক ব্যাপে শ্রাবণধারা নেমে আসে 

নির্জনতা ভেঙে সেখানে শব্দরূপগন্ধময়--

আদুড় গায়ের মেয়েটি বৃষ্টির ছলকে নেচে যাচ্ছে। 

সেই সাঁওতালি মেয়েটি ভেজাগন্ধ  ও সোঁদামাটির আলাপনে 

আপনি আপনি হেলে দুলে উঠছিল।  

ঝমাঝম বৃষ্টিরণনের মাঝখান দিয়ে এক সুর বেজে  উঠছিল।  

তাকে সে চিনতে পেরেছিল-- 

কোথাও তো বুকের মাঝ থেকে মাদল বেজে উঠছিল।


পুরুষালী ঘ্রাণে ও ক্রমশ জেগে উঠছিল, 

এমনি বর্ষার গন্ধের তার শরীর পিপাসা 

এমনি শীতালী অগ্নিতাপের মন তার, 

কাঁঠালিচাঁপার খোঁপা ভাঙা এক ঢাল চুল তার 

পিঠ ও নিতম্ব বেয়ে নেমে গেছে

তবু সমস্ত শ্রাবণধারা তার স্তন খুলে নিতম্ব আশ্রয় বেয়ে  

নিচে, ক্রমশ আরও নিচে নেমে যাচ্ছে,,, 

 

শ্রাবণের অন্তঃধারায় 

 

মরা জোছনা ও গহন কালো মেঘের কোন্দল ছিল। 

দেখ ঝড় থেমে গেছে, বাতাসঝাপট থেমে গেছে, 

ও লো বকুল সই, এবার মালা গাঁথ--বিনি সুতোর মালা, 

শ্রাবণধারা যাকে ছিঁড়ে দিতে পারবে না, 

মনের মধ্যে আঁটসাঁট বাঁধন রাখ--

শরীর যেন অযথা দ্বিধাবিভক্ত না হয়ে যায় !  

 

কিছু অসাবধানী বেনো জল গড়িয়ে আসতেই পারে  

মনের ভেতরটা তুই তখনও কোমল ও তরলিত রাখ, 

শক্ত কাঠামো যতই নাড়া দিয়ে দিয়ে যাক-- 

সেখানে তোর সৌন্দর্য থেমে থাক।   

এই আনন্দ উৎসবে শ্রাবণের সহস্র ধারা আসুক না নেমে-- 

গায়ে মাথায় এবং অভ্যন্তরে 

বৃষ্টির ভিজে যাওয়া রাঙামাটি ও কালো মাটি এক হয়ে কাদা হয়ে 

রাস্তায় সে কাহিনী, গন্ধ হয়ে, রূপসীর অন্তর্বাস ভিজাক--  

তবু প্রিয়া, এমন বল্গাহীন শ্রাবণ ধারার তৃষিত তাপে 

অপেক্ষা, আরও অপেক্ষায় আমরা তবু বসে থাকবো।


কবি তাপসকিরণ রায় 
স্টেশন রোড, জবলপুর, মধ্যপ্রদেশ 



















অদিতি ঘটকের অণুগল্প
এলাডি্ং বেলাডিং

এলাডি্ং বেলাডিং সই লো...
মাম্মাম আমি ওদের সাথে খেলতে যাবো? 
বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মাধুরী খেয়াল করেনি ছোট্ট তিতির কখন পাশে এসে দাঁড়িয়ে পার্কে বাচ্চাদের খেলা দেখছে। মাথা নাড়তেই দে ছুট। বৌদি...বৌদি....ঠাম্মাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়েছি। আমি কিন্তু আজ রাতে আসতে পারব না। 
সে কি রে ! দাদা নেই, তিতিরের ক্লাস টেস্ট...
না বৌদি আজ ম্যানেজ করে নাও। আমার খুব দরকার। মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাব। আজ  সাতটার সময় টাইম দিয়েছে। অখ থেকে ফিরে কখন আসবো বল।
মাধু ও মাধু টিভিটা চালিয়ে দাও না। সমুর সেমিনারটা টেলিকাস্ট করবে বলেছে...
সে এখন কোথায়? রাত এগারোটায়। মাধুরী গলা তোলে।
তাহলে আজ আর আমি ঘুমের ওষুধ খাব না।
আমি রেকর্ড করে রাখব মা। সকালে দেখে নেবেন।
সকাল অবধি অপেক্ষা করতে হবে! 
হ্যাঁ মা--
রাত এগারটার সময় সৌমর সাথে কথা বলার জন্য মাধুরী স্কাইপে অন হয়। ওদের ওখানে সকাল  সাড়ে নটা। সৌম কথা বলছে--মাধু দেখে তন্নিষ্ঠা শর্টস আর স্লিভলেস গেঞ্জি পরে সোফায় বসে পপকর্ন খাচ্ছে।
মাধুর কিছু বলতে সঙ্কোচ লাগছে..
সৌম বুঝতে পেরে বলে, "তন্নিষ্ঠার স্পিচ আছে এই রেডি হবে। পাশের রুমে থাকে।"
মাধুর বুকে পাথর চাপে।
পরদিন দুপুরবেলা রেকর্ডিংটা প্লে করে শাশুড়ির জোড়াজুড়িতে। তিতির অনলাইন ক্লাস শেষ করে ঠামের সাথে একসঙ্গে বসে বাবিনের সেমিনার ভাত খেতে খেতে দেখছে--বলে ওঠে, "মা তানি মাসি তোমার চয়েস করা গোলাপি শাড়িটা পরেছে দেখ ! যেটা বাবিন বলল অনেক দাম !" 
সৌম 'ভায়োলেন্স অন ওমেন ইন ইন্ডিয়ার' ওপর বক্তৃতা দিচ্ছে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটিতে
শাশুড়ি হঠাৎ বলে ওঠেন মাধু তুমি কোথায় রেসিডেন্সিয়াল স্কুল টিচারের জন্য এপ্লাই করবে  বলছিলে ?...

লেখিকা অদিতি ঘটক
চুঁচুড়া, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ 























তুষার ভট্টাচার্য'র দুটি কবিতা 

শীতলপাটিতে শুয়ে

আর কোনওদিনও হেমন্তের ডাকপিওন নীরবে 
আমার নিকোনো মাটির দুয়ারে এসে ফেলে যাবেনা 
কাঁপা হাতে লেখা ভালবাসার রঙীন খাম;
তবু আমি হলুদ পাতা ঝরা দিনে প্রত্যাশার
অলীক স্বপ্নের ভিতরে জেগে থাকি
শীতলপাটিতে শুয়ে;
জোৎস্নালোকের আল্পনায় 
ওই চাঁদের পাহাড় ডিঙিয়ে আমি
কোনও না কোনওদিন নিয়ে আসবোই
ভালবাসার রঙীন জামা পড়ে 
ময়ূরপঙ্খি নৌকোয় চেপে
স্বপ্নে দেখা সুন্দরী রাজ কন্যেকে
আমার নিরালা মাটির দুয়ারে। 

ভালবাসার স্পর্শ 

নিমগ্ন অন্ধকার রাত্তিরে যূথচারী
স্খলন,নগ্নতা ভাল,
যদি তাতে লেগে থাকে
প্রগাঢ় ভালবাসার
হিরন্ময় স্পর্শটুকু !
'শুধু শরীর,শরীর                                                        মন নাই তোমার কুসুম' ?


কবি তুষার ভট্টাচার্য 
কাশিমবাজার, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ 















পরজীবী পুরুষ শরীর
নিমাই জানা 

উলঙ্গ ঈশ্বরের মতো বাবার পোশাক ও শীতল

খুলে রাখলো দেবী ধূপের বৃত্তাকার মায়া
দুই চরম বাহু নিয়ে উড়ে গেল হিমাদ্রির সবুজ অরণ্য সমতলের দিকে
পাথরের কথা ভাবতেই মেহগিনির স্তন জোড়া,পাতা ঝরিয়ে ভরিয়ে গেল আমার জন্ম ঘরের দুধেল দাঁতকে যা ক্রমশ পরজীবী
আমি কাঁদছি অসম্পূর্ণ সঙ্গমের জন্য , শুয়ে পড়ছি এক হিস্টামিনিক সমুদ্র ঘুমের জন্য
বিছানা কখনো আমাকে চাঁদের বিষ খাওয়ায়

আমি এক আকাশ নিরাসক্ত অর্পণ শিখে সাংখ্য যোগের অনুশীলন পৃষ্ঠা হয়ে গেছি
দুটো পুরুষ মানুষের কথা ভাবতেই ফুরিয়ে যাচ্ছে তারা অমাবস্যা তিথির গভীর অনন্তে
তাদের দাঁতেরা বিচ্ছিরি মাটির পুতুল খায়
পুড়ে যাচ্ছে তাপস,ওই বিন্দুটির দিকে বিছানো জরা,  মৃত্যু,নক্ষত্র পাশাপাশি রেখে
জীবিত জীবাশ্মের কাছে দাহের মন্ত্র শিখে নিচ্ছে দ্বিঘাত সমীকরণের ধ্রুবপদ

আসলে মায়ের জরায়ু নদী পেরিয়ে যাওয়ার পর আমার চোখে যে বালক অপার বিস্ময়ের অশ্রু এঁকে দেয়
আমি তাকে বিবিধ দূর্বাঘাস বলি
হাতে আগুন, চোখে ভয় , মুখে আগুনের ধ্বংসলীলায় সৃষ্টি করছে ঐশ্বর্য পুর
তুমি দীর্ঘ হও মারীচ আমার এই সুকান্ত তনয়ের কাছে নীল পোশাক খুলে রাখো, বৈতরণী
তোমাকে মৃত সন্তানের নাভি ভেবে খাই পাথরকুচি পাতার অশ্রু মিশিয়ে
মরীচিকা আর ক্যাকটাসের ভেতর গান্ধারী হেঁটে যাচ্ছেন অভিশপ্ত ভান্ডারের দিকে 
পরমেশ্বর লাল পোশাকের বাঁধনে তুলসী পাতার মায়াঘর বাঁধছেন

বাবা,আমি ও মা মধুপুরের দিকে ক্রমশ চলে যাচ্ছি ময়ূর বিছানা ফাঁকা রেখে

কবি নিমাই জানা
রুইনান, সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর


কেড়ে নিল 
চিত্তরঞ্জন গিরি 

এখন আর চুড়ির শব্দ পাওয়া যায় না
ঝরা বকুল এখনো ঝরে।
ঠিক যেমন চল্লিশ টা বছর ঝরে গেছে।
সেদিন ঝরা বকুলের তলায় চুড়ি গুলো মল্লিকার পাপড়ি সাজিয়েছিল।
এখন অ্যান্ড্রয়েডের স্বৈরাচারীতা। ঝাঁ-চকচকে রাজপথে আধুনিকতার উত্তরণ।
ভীরু ভীরু কাঁপা ঠোঁট,,,,, উঁকি মারা চাঁদ।
আজকে ইউটিউব ফেসবুক সব কেড়ে নিল।
এখন হলুদ বসন্ত যেন "তড়িৎ চালিত" আবেগহীন আসন।

কবি চিত্তরঞ্জন গিরি
পঞ্চসায়র রোড, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ









অমৃতা বিশ্বাসের ছোটগল্প 
মন্দ মেয়ের উপাখ্যান 

"রাত দশটা বেজে গেছে, এখনও রাধিকা বাড়ি ফিরল না। এ কেমন মেয়ে মানুষ করেছে তোর শাশুড়ি বাবু?" উচ্চস্বরে মায়ের চিৎকারে টনক নড়ল অভিরাজ এর, সত্যিই তো রাধিকা আজ বড্ড দেরী করছে, সাধারণত এত দেরি তো করেনা। চিন্তান্বিত মুখে উঠে এল খাবার ঘরে, মাথা নত করে মিনমিনে গলায় বলল, "মা অফিসে কাজের চাপ, হয়ত আটকে গেছে, আমি ফোন করেছিলাম, বলল ট্যাক্সি তে আছে, আসছে।" ছেলের মিথ্যা টা ধরতে সময় নিলনা নীলিমা, ঝাঁঝালো গলায় মৃন্ময় কে ঠেস মেরে বলে উঠল, "তখনই বলেছিলাম, বাপ মরা মেয়েটাকে দেখেই গলে যেওনা, একটু খোঁজ খবর নাও, তা নয় এককথায় ছেলের বিয়ে পাকা করে এল। এখন ঠেলা সামলাও।" গজগজ করতে করতে ঘরে চলে গেল নীলিমা। বাপ ছেলে চুপচাপ থাকাই ঠিক মনে করে বসে পড়ল।
সাড়ে দশটা বেজে গেছে, এখনও রাধিকার দেখা নেই। রাধিকার ফোনটাও বন্ধ, কি যে করে না মেয়েটা। এত রাত হয়ে গেল, এখনও আসার নাম নেই, দেরি হচ্ছে একটা ফোন করেও তো লোকে জানায়, তা নয়। রাগে গজগজ করতে করতে সবে আর একবার ফোন করতে যাবে অভি, এমন সময় রাত দুপুরে পাখির ডাক ওয়ালা কলিঙবেলটা বেজে উঠল। দরজা খুলে রাধিকা ঢোকার আগেই শাশুড়ি মায়ের রোষানলে পড়তে হল তাকে। "এই তোমার আসার সময় বৌমা, কতবার বলেছি না আমাদের এই পাড়াটা বর্ধিষ্ণু পাড়া, এখানে কোনো বাড়ির মেয়ে এত রাত অবধি বাড়ির বাইরে থাকেনা।" আর কিছু বলার আগেই নীলিমার হাত দুটি ধরে শান্ত গলায় রাধিকা বলে, "খুব ভুল হয়ে গেছে মা, আর হবেনা কোনোদিন, মাসের শেষ তো, তাই একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে খুব কাজের চাপ, কাল থেকে ঠিক সময়ে বাড়ি চলে আসব।" এই বলে ঘরে চলে যায় রাধিকা, নীলিমা ও আর কিছু বলতে পারেন না মাত্র তিন মাসের পুরোনো এই লক্ষ্মীমন্ত মেয়েটাকে। সত্যিই মেয়েটার কথায় যেন জাদু আছে, তিনি এত রাগারাগি করেন আজ অবধি মুখের ওপর উত্তর দেয়নি রাধিকা। একেক সময় মনে হয় সবটাই ভড়ং, হয়তো পুরোটাই ভালোমানুষির মুখোশ।

স্নানে গেছে রাধিকা, হঠাৎই তার ফোনে এক অচেনা নম্বর থেকে ফোন। আগুপিছু না ভেবেই ফোনটা তোলে অভিরাজ, ওপাশ থেকে ভেসে আসে গম্ভীর গলা, "কাজ হয়ে গেছে ম্যাডাম, বাকিটা আপনি দেখে নেবেন।" কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই স্নান সেরে আসে রাধিকা, ফোনটা কেড়ে নেয় অভিরাজের হাত থেকে, রাগত অথচ চাপা গলায় বলে, "আমার ফোনে আর কোনোদিন হাত দেবেনা, ফোনটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত জিনিস, আমার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ আমি একদম পছন্দ করিনা।" ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায় বারান্দায়। ধপ করে বসে পড়ে অভিরাজ, এ কোন রাধিকা কে দেখছে সে, শান্তশিষ্ট নম্র স্বভাবের রাধিকা, তার ফোনে এইরকম অদ্ভুত ফোনের মানে কি? তাহলে কি সত্যিই আদতে যা দেখা যায় রাধিকা তা নয়? কিন্তু অভিরাজ ভাবতেও পারেনা আর কি কি অপেক্ষা করছে তার জন্যে। সেদিনের মতো নীরসভাবেই দিন শেষ হয়, যদিও রাধিকার মতে তার অফিসের জুনিয়র ফোন করেছিল এটা জানাতে যে তার একাউন্টে র কাজ হয়ে গেছে। কথাটা মেনে নিলেও কোথাও একটা খটকা রয়েই যায় অভিরাজের মনে।

এরপর কেটে গেছে আরো দুমাস, রাধিকার কোনো কিছু অস্বাভাবিক ব্যবহার চোখে পড়েনি কারুর, সেদিনের ঘটনাও আবছা হয়ে গেছে অভিরাজের মনে। আজ রাধিকার বাড়ি নিমন্ত্রণ ছিল জামাই ষষ্ঠীর - সকালে দুজনের ই অফিস ছিল তাই রাতে অফিসফেরত ডিনার সেড়ে বাড়ি ফিরবে। দুর্ভাগ্যবশত আজই অভিরাজের বাইকটা গ্যারেজে দিতে হয়েছে ইঞ্জিনের কিছু সমস্যার জন্য। উঠি উঠি করেও বেশ দেরি করে ফেলেছে তারা বেরোতে। এখন ই প্রায় দশটা বাজে, গড়িয়া থেকে শ্যামবাজার পৌঁছতে এগারোটা বাজবে। এতরাতে মেট্রোর ঝুঁকি নেবার ইচ্ছে ছিলনা অভিরাজের, কিন্তু রাধিকার জোরাজুরি তে মানতেই হয়, তার ওপর খরচের কথাটাও মাথায় রেখে রাজি হয়ে যায়। মেট্রো তে ফিরবে বলে রাধিকা কে বলে তার পরনের গয়নাগাটি মায়ের কাছে খুলে আসতে।

অভিরাজের বাড়িটা শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় থেকে একটু ভেতরে। মেট্রো স্টেশনে যখন নামে প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। রাস্তাঘাট জনমানবশূন্য না হলেও খুব একটা লোক নেই। পাড়ার গলিটায় ঢুকতেই একটা কড়া মদের গন্ধ। এই প্রথমবার রাস্তায় রাধিকার হাতটা শক্ত করে ধরল অভিরাজ, বলল কোনো দিকে তাকাবে না, সোজা চলে এসো। ততক্ষণে জনমানবহীন ভাঙা বাড়িটার রকে যেসব ছেলেগুলো আড্ডা মারছিল তারা টোন টিটকিরি করতে শুরু করেছে।
দুজনের চোখেমুখে ভয়, রাধিকা পুরো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। অভিরাজ ও নিপাট ভালোমানুষ, মায়ের বাধ্য ছেলে সে, স্কুল কলেজেও কখনো মারামারি করেনি। রাগ হলেও এতগুলো অসভ্য নেশাগ্রস্ত লোকের সাথে লড়াই করা তার দ্বারা সম্ভব নয়। মাথা নীচু করে পা চালায় দুজনে। হঠাৎই রাধিকার আঁচলে একটা টান পড়ে। জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকায় অভিরাজ। "ওইভাবে দেখছি কাকে?" বলে একটা সজোরে চড় পড়ে অভিরাজের গালে, টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় সে। চশমা টা কোথায় যেন ছিটকে পড়ে, মাইনাস পাওয়ারের এই চশমা ছাড়া রীতি মতো অন্ধ অভিরাজ। অন্ধকারে হাতড়াতে থাকে। কিন্তু চশমা টা খুঁজে পেয়ে ঝাপসা দৃষ্টি তে যে দৃশ্য সে দেখে তার জন্য একদমই তৈরি ছিলনা - শাড়ির আঁচল টা কোমরে পেঁচানো, তার নীচে উঁকি মারছে কালো জিনস, রাধিকার একেকটা লাথিতেই ছিটকে পড়ছে মাতালগুলো। যে ছেলেটা আঁচল টেনেছিল সে হাতটা ধরে তারস্বরে চেঁচিয়ে যাচ্ছে যন্ত্রণায়, বাকিগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। সবকটা কে শয্যাশায়ী করে কাকে যেন একটা ফোন করল রাধিকা, তারপর এগিয়ে এল অভিরাজের দিকে, হাত টা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, "চলো, অনেক দেরি হয়ে গেছে।" অভিরাজ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যন্ত্রচালিতের মতো রাধিকার হাতটা ধরে উঠে দাঁড়াল। "এইসব কথা বাড়িতে বলতে যেও না প্লিজ। আমি জানি অনেক প্রশ্ন তোমার মনে, কিন্তু আজ নয়। ঠিক সময় সবটাই জানতে পারবে।"

বাড়ি ফিরে অনেক প্রশ্নর সম্মুখীন হতে হল দুজনকেই, কিন্তু বাহানা করে এড়িয়ে যেতে সক্ষম হল তারা। রাতে ঘরে এসে অভিরাজ ভেবেছিল আজ সত্যিটা জানতেই হবে, কিন্তু দেখল রাধিকা ঘুমিয়ে পড়েছে। কেমন যেন মায়া হল মুখটা দেখে। কিছুতেই মেলাতে পারল না নিজের চোখে দেখা ওই মারকুটে মেয়েটার সাথে এই নিষ্পাপ মুখটা। শুতে আসার সময় দেখল রাধিকার ফোনটা বাজছে, কোনো একটা প্রাইভেট নম্বর থেকে ফোন। হাজার ইচ্ছে হলেও আগেরদিনের কথা ভেবে ফোনে হাত দিলনা সে। অনেক রাত অবধি জেগে রইল অভিরাজ, রাধিকা কি কোনো খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত, কে ফোন করে তাকে, আর এইরকম মারপ্যাঁচ ই বা শিখল কোথায় রাধিকা। এইসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে কে জানে, ঘুম ভাঙল মায়ের চেঁচামেচি তে। "তখনই বলেছিলাম বাপ মরা মেয়ে, ভালো হবে না, এখন বুঝে দেখো। সাতসকালে মহারানী কোন অভিসার থেকে এই পোশাকে ফিরছেন কে জানে, ছি ছি, লজ্জ্বায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার।" অভিরাজ তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখল রাধিকা ঘরের ভেতর দাঁড়িয়ে, পরনে নীল জিন্স আর কালো সার্ট, হাতাটা গোটানো, চুলটা টেনে বাঁধা একটা পনিটেল করে, মুখে চোখে যেন একটা অদ্ভুত দীপ্তি।

ঘড়িতে বাজে ভোর ছটা, বাইরে সবে সকাল হয়েছে।অভিরাজ অবাক হয়ে যায় যে এতো ভোরে কোথায় বেড়িয়েছিল রাধিকা। কিছু বলার আগেই চেঁচিয়ে উঠলেন নীলিমা, "এই অসভ্যের মতো পোশাকে কোথায় গেছিলে তুমি? এক্ষুনি যাও তৈরি হয়ে নাও, বাবু আজ ই তোমায় বাপের বাড়ি রেখে তারপর অফিস যাবে। যে নাগরের সাথে বেড়িয়েছিলে তার গলাতেই ঝুলে পড়ো, বাবু তোমায় ডিভোর্স দিয়ে দেবে। এই সমস্ত নোংরামো আমার বাড়িতে চলবেনা।" এই বলে ঘরে ঢুকে গেলেন তিনি। রাধিকা নিরুত্তাপ, চুপচাপ ঘরে ঢুকে মুখ হাত ধুতে চলে গেল সে। অভিরাজ হতভম্ব হয়ে গেছে, তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, তাহলে কি সত্যিই রাধিকা কোনো খারাপ সঙ্গে যুক্ত। মৃন্ময় ও গোঁজ হয়ে বসে আছেন।

 সাড়ে সাতটা বাজতে যায়, এখনো ফ্রেস হয়ে আসেনি রাধিকা। বাইরের কলিঙ বেলের শব্দ, খবরের কাগজটা ছুঁড়ে দিয়ে ছেলেটা।অভ্যাস মতোই মৃন্ময় কাগজটা তুলে পড়তে পড়তে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন, "বাবু নীলিমা শিগগিরই এসো, দেখে যাও কি লিখেছে।" অভিরাজ কাগজটা নিয়েই আঁতকে উঠল, নীলিমার অবস্থাও তথৈবচ। এমন সময় সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল রাধিকা।

অভিরাজ একবার রাধিকা কে দেখে আর একবার খবরের কাগজ দেখে। খবরের কাগজের প্রথম পাতার খবর, "সিবিআই অফিসার রাধিকা দাসগুপ্তের বিশেষ তত্ত্বাবধানে ধরা পড়ল কলকাতার এক নারী পাচার চক্র।" রাধিকা ই বলে এবারে, "আসলে আমার বাবা ছিলেন সিবিআই অফিসার, এরম একটা কেসে ই আততায়ীর গুলিতে বাবা প্রাণ হারান। ছোটো থেকেই এই স্বপ্ন নিয়েই আমি বড় হয়েছি। কিন্তু আমার কাজের স্বার্থেই এই পরিচয়টা আমায় গোপন করতে হয়েছে।" 
"ওই জন্যেই কাল ওতো সহজে ওই মাতাল গুলো কে পিটিয়ে সায়েস্তা করে দিলে কাল, " আমতা আমতা করে বলে অভিরাজ। "আমি ক্যারাটেতে ব্ল্যাক বেল্ট" বলে হেসে ফেলে রাধিকা। 
"পারলে আমায় মাফ করে দিও রাধিকা, আমি খুব খারাপ কিছু কথা তোমায় বলে ফেলেছি, " হাত জোর করে বলে নীলিমা। "এমা একি করছ মা, আমি কিছু মনে রাখিনি," মিষ্টি হেসে বলে রাধিকা। এমন সময় ফোন বেজে ওঠে তার, মুহুর্তের মধ্যে সরল সাদাসিধে মুখটা হয়ে ওঠে বুদ্ধিদীপ্ত কঠিন। ফোনে কথা বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যায় সে, আর তার যাওয়ার দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে পরিবারের বাকি তিন সদস্য নারীর এক ই অঙ্গে এত রূপ, কখনো মা পার্বতী তো কখনো দশভূজা দূর্গা তো কখনো আবার রণচণ্ডিনী রূপে মহাকালী - রাধিকা যেন সত্যিই এই সব রূপের প্রতিরূপ। 

লেখিকা অমৃতা বিশ্বাস 
কালকাজি, নিউ দিল্লী, ভারত 


















নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

  • আগস্ট (3)
  • জুলাই (22)
  • জুন (8)
  • নভেম্বর (15)
  • অক্টোবর (5)
  • সেপ্টেম্বর (81)
  • আগস্ট (66)
  • জুলাই (55)
  • জুন (56)
  • মে (57)
  • এপ্রিল (46)
  • মার্চ (15)
  • জানুয়ারী (14)
  • ডিসেম্বর (73)
  • নভেম্বর (103)
  • অক্টোবর (97)
  • সেপ্টেম্বর (101)
  • আগস্ট (120)
  • জুলাই (88)
  • জুন (76)
  • মে (63)
  • এপ্রিল (11)

🔴বিজ্ঞপ্তি:

পাঁচ মাসের বিরতি কাটিয়ে আবার ও ফিরছি আমরা। খুব শীগ্রই আসছে আমাদের প্রত্যাবর্তন সংখ্যা।

অনুসরণ করুণ

এক মাসের সর্বাধিক পঠিত পোস্টগুলি:

  • শেষ শোকসংগীত ~ গোবিন্দ মোদকের কবিতা
  • দুটি কবিতায় ~ গৌতম কুমার গুপ্ত
  • ব্রাত্য ~ বিদ্যুৎ মিশ্র'র কবিতা
  • দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প
  • আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা
  • গুচ্ছ কবিতায় ~ অসীম মালিক
  • সুমিত রায়ের গল্প
  • সে প্রেম পবিত্র~ প্রেমাংশু শ্রাবণের কবিতা
  • সুব্রত মাইতির কবিতা
  • তিনটি কবিতায় ~ রাগীব আবিদ রাতুল

বিষয়সমূহ

  • Poetry speaks 2
  • অণু কথারা 21
  • আবার গল্পের দেশে 8
  • উৎসব সংখ্যা ১৪২৭ 90
  • একুশে কবিতা প্রতিযোগিতা ২০২১ 22
  • এবং নিবন্ধ 3
  • কবিতা যাপন 170
  • কবিতার দখিনা দুয়ার 35
  • কিশলয় সংখ্যা ১৪২৭ 67
  • খোলা চিঠিদের ডাকবাক্স 1
  • গল্পের দেশে 17
  • ছড়ার ভুবন 7
  • জমকালো রবিবার ২ 29
  • জমকালো রবিবার সংখ্যা ১ 21
  • জমকালো রবিবার ৩ 49
  • জমকালো রবিবার ৪ 56
  • জমকালো রবিবার ৫ 28
  • জমকালো রবিবার ৬ 38
  • দৈনিক কবিতা যাপন 19
  • দৈনিক গল্পের দেশে 2
  • দৈনিক প্রবন্ধমালা 1
  • ধারাবাহিক উপন্যাস 3
  • ধারাবাহিক স্মৃতি আলেখ্য 2
  • পোয়েট্রি স্পিকস 5
  • প্রতিদিনের সংখ্যা 218
  • প্রত্যাবর্তন সংখ্যা 33
  • প্রবন্ধমালা 8
  • বিশেষ ভ্রমণ সংখ্যা 10
  • বিশেষ সংখ্যা: আমার প্রিয় শিক্ষক 33
  • বিশেষ সংখ্যা: স্বাধীনতা ও যুবসমাজ 10
  • ভ্রমণ ডায়েরি 1
  • মুক্তগদ্যের কথামালা 5
  • রম্যরচনা 2
  • শীত সংখ্যা ~ ১৪২৭ 60

Advertisement

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

মোট পাঠক সংখ্যা

লেখা পাঠাবার নিয়মাবলী:

১. শুধুমাত্র কবিতা, মুক্তগদ্য অথবা অণুগল্প পাঠাবেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য বিষয়ক লেখা সম্পূর্ণ আমন্ত্রিত। ২. লাইনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ৩. লেখা মেইল বডিতে টাইপ করে পাঠাবেন। ৪. লেখা মৌলিক ও অপ্রকাশিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্য কোনো ব্লগ, ওয়েবজিন অথবা প্রিন্টিং মিডিয়ায় প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ৫. মেইলে আপনার লেখাটি সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত, কথাটি উল্লেখ করবেন। ৬. লেখার সাথে আবশ্যিক ভাবে এক কপি ছবি ও সংক্ষিপ্ত ঠিকানা পাঠাবেন।  ৭. লেখা নির্বাচিত হলে এক মাসের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে। এক মাসের মধ্যে কোনো উত্তর না এলে লেখাটি অমনোনীত ধরে নিতে হবে। ৮. আপনার লেখাটি প্রকাশ পেলে তার লিঙ্ক শেয়ার করাটা আপনার আবশ্যিক কর্তব্য। আশাকরি কথাটি আপনারা মেনে চলবেন। আমাদের মেইল- hridspondonmag@gmail.com
blogger-disqus-facebook

শান্তনু শ্রেষ্ঠা, সম্পাদক

আমার ফটো
পূর্ব বর্ধমান, India
আমার সম্পূর্ণ প্রোফাইল দেখুন

সাম্প্রতিক প্রশংসিত লেখা:

সুজিত রেজের কবিতা

সুজিত রেজের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন

© হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন। শান্তনু শ্রেষ্ঠা কর্তৃৃক পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে প্রকাশিত।

Designed by OddThemes | Distributed by Gooyaabi Templates