আকালের কথন
অত্যন্ত প্রজ্ঞায় হত্যার কলায় সত্য সততার শরীরে
ছিদ্র এঁকে দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে ভগবান স্তুতি করি
আমি ও আমরা দেবশিশু
শুটকির রাজ্যে বিড়াল চৌকিদার
রাবণ-মনস্ক সদিচ্ছায় সব লয় যাবে
ভাবতে ভাবতে ভেঙে পড়বে
জমাট হবে কান্না তবু পাবে না তালাশ
কেউ বুঝবে না কেউ জানবে না রক্তচুম্বনের ইতিহাস
মৃতের বুকে দাঁড়িয়ে অপ্রাপ্ত প্রেমিকার মত উল্লসিত
আমরা ধ্বংস অবতার
নরমে নরম তবুও পারবে না করতে হজম
শক্তে শক্ত হিংস্র সূর্য বুঝতে গলদঘর্ম
আমরা উলঙ্গ শিশু, ভিখারী মাকেও হায়েনা ন্যায় বাগড়া দিই
লিখে যাও চিন্তিত মহাপুরুষ মূর্খদের জন্য পাদটীকা
স্মৃতি কণ্টক
অন্তিম ক্ষণে অন্তহীন আকাশের অস্তপ্রায় লালাভ সূর্যে চেয়ে
সাহসহীন নতজানু আমার যৌবনকে রোমন্থনে আনি
নিঃশ্বাস দূরত্বে অবস্থান করেও মানুষ চিনিনি
আহা,কণ্ঠস্বরে জড়িয়ে অন্যমনস্ক হতে পারতাম না
পেটের ক্ষুধা ভুলে যেতাম মনের ক্ষুধা নিবৃত্তে
অথচ সেই স্বপ্নই ছাইরঙা শাড়ি পরা মেঘের মত উড়ে গেলো
চোখের পানি সময়-অসময় বোঝে না
স্মৃতির ঝাঁপি থেকে কিছু পোনা মাছ ধরার বৃথা চেষ্টা করলেও
ভাবনা-কলস উল্টে রাখি...
বুঝেছি, পছন্দ-অপছন্দের কথা চট করে বলে দিতে নেই
বেশি আগ্রহ, বেশী অনীহা দুটোই দোষের
মন খারাপের সময়ে রঙিন শাড়ি পরলে তাকে পরীক্ষায় ফেলতে হয় সময়ে নিষ্ঠুর হতে হয়, মায়ার জাল গুটিয়ে নিতে হয়
নতুবা, ঠকতে হয়, ঠক আর শঠ ওরাও মানুষের মত
জীর্ণ পাতার মতো জীবন বৃক্ষ থেকে ঝরে গেছে অনেক পাতা
স্মৃতির মুকুলে প্রস্ফূটিত হয় অতীতের সব
দেখি জীবনের উপন্যাস খণ্ডিত, অসম্পূর্ণ
এ জীবনের বেলাভূমিতে সূর্য কিরণ দেবে কেনো
মগজ থেকে সুসময়ের দিনগুলো মুছে গেছে
কিছু ক্ষত মাছ চোখ রাঙায়, শাসায়, ধমকায়
সূর্যদেবও অন্য সংসারে আলো বিলাচ্ছে সূর্যতারার মত
আমার তা দেখতে দেখতে বাকীটা পথ হাঁটতে হবে
আমি হাঁটছি, কিন্তু আমার কোন গন্তব্য নেই...
মেঘেদের দখলে আকাশ
ভাবনাও যেন জিম্মি নৃশংস জালে
নীরবে কান্না করা জীব বেড়ে চলেছে ভুবন মাঝে
কাঁকড়ার হিংস্র পায়ে চুনোপুুঁটির দফারফা
বোয়ালের সাথে রুই-কাতলার শলা আর কলা
গর্তেও লুকিয়ে লাভ নেই মায়া-ঝায়ার
শিয়াল-খাটাশ-বেজির মুখায়বে হত্যার রক্ত
ছাগল-হাঁস-মুরগির পরিভ্রমণ বলয়বদ্ধ
জনারণ্য বন্য পশুর ক্রিয়ায় বিপন্ন
পশুদের পোষ্যরা ঘোরে লয় নিমিত্তে লোকালয় থেকে দেবালয়
বিস্তৃত বনভূমি ছেড়ে পাগলা হাতি সুশীলের ভীড়ে
সুশীল বক্তৃতা ছেড়ে বকবক বকে
বাকবহুল বাবুরামে বিমুগ্ধ আমজনতা
প্রতিশ্রুতির ফল্গুধারায় ভেসে যায় অতল তলে
বন্য হায়েনার কাশফুল কেশে কলপ
আগে তো ছিলো না শিয়াল-কুকুরের এত উন্মাদনা
শুনেছি তো বাঘ, নেকড়ে বিলুপ্ত পথে...
আসলো ওরা কি করে প্রাণালয় পর্যন্ত?
কেন গণ্ডার ভাণ্ডার সাবাড় করে
কেন শকুনেরা ঠুকে ঠুকে খায় রশদ ও মগজ
কেন ঈগলের লাল ঠোঁটে বুদ্ধিজীবীদের টাই কোট
চোখের জল শুকিয়ে গেছে
যেদিকে তাকাই নীল আকাশ নেই
সবুজ প্রকৃতি নেই, উষ্ণতা নেই
কেবল পূঞ্জীভূত কালো কালো মেঘ
চিন্তার সমুদ্রে আঁছাড় খাই
আমি বলীর প্রাণী
যে কোন মুহূর্তে গত হতে হবে
অনাগত দিন বড়ই অশনি
না চাই ভবিষ্যৎ,আমার ভবিষ্যতের বয়স বেড়েছে
সময় থমকে দাঁড়ায় না
দেখায় না সহানুভূতি
সম্মুখে মৃত্যু রঙিন তীর হাতে হাসে
কোমল পলির ত্বকে লুটিয়ে পড়ি
অসুর গর্জনে আকাশ চেরে
সহনীয়া পলিমাটি ঠোঁট মেলিয়ে অট্টহাসিতে মত্ত
কোকিল ডাকে, কণ্ঠে গরল স্বর
বিশুদ্ধ বাতাসে বিষবাষ্প
পালাবার পথ শূন্য
সম্মুখে শিলাদৃঢ় পাহাড়
তুমি তো আছই
শূন্য থেকে মহাশূন্যেরও উপর, সর্বত্র
আমায় মুঠোয় ভরে ঝুনঝুনি বাজাও
ভেবে হেরে গুটিয়ে যাই, মাঝে মাঝে ভাবনা ফেলে দেই
কিন্তু চিন্তার সমুদ্রে আঁছাড় খাই
অহিংসার পুনর্জন্ম
হিংসার বীজগুলো মুহূর্তে অঙ্কুরিত হচ্ছে
পরিমিত সার পাচ্ছে না
পরিমিত জল পাচ্ছে না
অথচ,ডগমগিয়ে বাড়ছে সন্ত্রাসী কাশফুল
বিস্তৃত এলাকা গ্রাস করছে ঘৃণাঘাস
ফলছে তাতে অবজ্ঞার আঙুরলতা
অহিংসার তন্তুগুলো ছাগল খেয়ে ফেলেছে
এখন সে রোমন্থন করছে
কিছু হজম হতে চলেছে
এবার মল হয়ে চলে যাবে খনন গর্তে
তা থেকে তৈরি হবে কম্পোস্ট
মানবের ক্ষেতে কিছু কৃষক করবে বিলি
তাতে কেউ পাবে হারানো দিশা
পুনর্জন্ম হবে অহিংসার
অশীতিপরের আর্তনাদ
আমার দৃঢ়তায় দাঁড়ানোর মেরুদণ্ডে ঘূণপোকা ধরেছে
স্বপ্নের আশালতিকার মুখ মুচড়ে গেছে
বেঁচে থাকার পৃথিবীকে অচেনা লাগে
অকারণ কারণে বেঁচে থাকা,পৃথিবীর বোঝা
প্রাণহীন মনোভূমিতে ঘোর অমাবশ্যা
দিনভর গৃহকোণে পোল্ট্রি মুরগির মত ঘুমাই
রাতভর প্রশ্নহীন চোখে জেগে থাকি
ভাবি, কেনই ভাবি
অসাড় আর ঊষররা ভাববে কেন
বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি, আজ আমি একা
আমাকে কেউ একা করে রাখেনি
আমার দীর্ঘশ্বাসে রাতের গহীনতা ভাঙে
অশ্রুস্রোতে বাতাস হয় ভারাতুর
আজ আমি যুবুথুবু দাঁড়কাক কিংবা পাথর প্রতিমা
নিঃশেষিত কৌটার মতো ডাস্টবিনে পড়ে থাকি
তবুও স্বপ্ন দেখি, স্বপ্নসৌধ রচি
ভাঙা রোড দিয়ে ছুটে চলে স্বপ্নের ট্রেনটি
কে যেন পিছন থেকে ইচ্ছা ঘোড়ার লাগাম টানে
আমি যে খুটে খাওয়া ক্ষমতাশূন্য পতঙ্গ
লোকে বলে,"নড়ে ঘর পড়ে না"
আগাছার দাপাদাপি
তেলাপোকাও উড়ে এসে চোখ রাঙিয়ে যায়
বেড়া ভেঙে রান্না ভাতে মুখ লাগায় কুকুর
বানরের দাঁত ভেঙছি দেখে সুশীল কাঁদে ঘরে
বাঁচতে মিথ্যার পাহাড়ে নৃত্য করতে হচ্ছে
আহা, শীর্ণকায় নালা নদী গিলে খায়
পঁচায় জন্মানো কেঁচো সম্মানীয়র পথ আটকায়
আমি যে সত্যের আস্ফালন দেখেছি ও দেখছি
বিলাসী সমুদ্রে শত্রুর সাথে মিশে সবাই বুদ
শত্রুর স্বপ্নই ফলে বেশি, জন্ম অত্যন্ত ঘন ও একতাবদ্ধ
কা কা ডাকে নিকুঞ্জ মাত্
দিন গেলেই রাত বাড়ছে,
শেকড়ে এগারিকাসের পুনঃপুন জন্ম
সিঁধেল ইঁদুর আজো সিঁদ কাটছে
অথচ আমরা নিরানব্বই জন বসে আছি
কেবল দেখছি- আগাছার দাপাদাপি
আর আকাশে শকুনের উড়াউড়ি
ষড়যন্ত্রের শিকার
মগজের মনিটরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু
পুশ করে দিয়েছে অঙ্গহীন
মশার মুটকীটগুলো...
তাই ব্যথা যন্ত্রণা জ্বরে জর্জরিত
কামান দিয়েও দাগতে পারিনি
ফায়ার যত হয়েছে লক্ষ্যভ্রষ্ট
পালিয়েছে আমারি স্বজাতির কক্ষে
আমাকে জব্দ করার করেছে ষড়যন্ত্র
নেংটি ইঁদুর দিয়েছে বুদ্ধি
মুটকীট পেয়েছে শক্তি
আমারি রক্তে পেট ভরে ওদের
উড়ে বেড়ায় চারিপাশ দিয়ে
দেখি আর দেখি
আর ভাবি, গুটিকয়েক তো মেরেছি
না কমে অন্যগুলো এলোই বা কোথা থেকে
আর চিনলোই বা আমাকে কিভাবে
তাই ম্যালেরিয়া জ্বর আর কমলোই না।
অকৃপণতা
বারুদ স্তূপে এক টুকরো কণা অগ্নি-ফুলকি
রূপ নেয় দাবানল
সেই অগ্নি স্ফূলিঙ্গে একত্রিশ বছর স্নান করছি
অঙ্গার হয়ে গেছে অঙ্গ
অথচ বেঁচে আছি
স্বপ্নগুলো পঁচে যাচ্ছে ক্রমাগত
রঙিন পথে চলি ফ্যাকাশে চিন্তায়
নিত্য গলদঘর্ম করি, তবুও জিহ্বা সুস্বাদু বঞ্চিত
শুধু দেখি অন্যের স্বর্ণদ্বীপ্যমান জীবন
আক্ষেপের খেয়া দোলে ডোবে অতলে
তবুও হাসি, অমলিন হাসি...
শেষটুকুন দিয়েও আগলে রাখি পরিবার পরিবেশকে
মাছের আঁইশের মতো শরীর থেকে খসছে কিছু
হয়ে গেছি সরু রোগা পটকা বৃক্ষ
অথচ বাতাস বিলাচ্ছি
লোকে বলে অকৃপণ আমি।
বিপথের যাত্রী
পরচর্চায় মত্ত মন কখনো আত্ম-বিশ্লেষণ করেনি
একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি নিজের অবয়ব
নতুন ভাবে আবিষ্কৃত হই আমি
নিজেকে চেনার জানার আত্ম-সমীক্ষার সময় পাইনি
অবসরের জঞ্জালে বসে খুঁজিনি স্বপ্নের চারাগাছ
কেবল গড়েছি, ভাঙতে ভাঙতে গড়েছি
আমার জীবন খেরোখাতাতে এত বেশি অসংগতি লিখতে থাকলে শব্দের অভাব পড়বে না
সবুজ স্বপ্ন পূরণের জন্য ময়লা করেছি বিবেবকে
চেতনার রশি ছিঁড়ে আমি তাতে গেঁথেছি মিথ্যার বেসাতি
লিপ্সার ডালে চড়ে আমি উড়েছি দিগবলয়ে
আমি আজ পঁচা পেয়াজ খোলস ছাড়ালে হবো অস্তিত্বহীন
সম্মানীয়তার মোড়কে ঢেকে আছে আমার দুষ্কর্ম স্বরূপ
অথচ,
গিন্নীর চোখে সুন্দর পুরুষ
ছেলের কাছে বিশ্বের সেরা বাবা
তোমাদের চোখে?
বিশেষ ব্যক্তি।
কবি সৌমেন দেবনাথ
সরকারি মুড়াপাড়া কলেজ, নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ