হৃদস্পন্দন

  • Home


  • Download

  • Social

  • Feature


মাঝ বয়সী উপত‍্যকা 
কাঞ্চন রায় 

মেঘ আর বসন্তের সংঘর্ষ হলে
আমার আকাশে ঝড় জিতে যায় 
বারবার! হয়তো তুমি বলবে,
জানলা খুলে ঘর নোংরা করাটা
আমার নিছক আলসেমি; তাই...

কিন্তু মাঝ বয়সী উপত্যকাগুলো ঠিক এমনই হয়--
ওরা বেহায়ার মত নদীর কাছে ছুটে তো যায়,
তবে পাড় ভাঙার কম্পনটা ওদের অজানা--

আসলে দু'একটা নষ্ট ঋতু না গায়ে মাখলে,
স্রোতের গতিপথ বোঝা দায়...! 

কবি কাঞ্চন রায় 
পশ্চিম ডহরথুবা, হাবরা, উত্তর ২৪ পরগনা


প্রচ্ছদ শিল্পী: কাঞ্চন রায় 



















বৃষ্টি সাজ 
পলাশ দাস 

১.
খুব গরম পড়েছিল কাল সারারাত জুড়ে 
আকাশ মেঘলা
মাথা যন্ত্রণায় গরম চা
আরামদায়ক ঠাণ্ডা হাওয়া  

২.
বৃষ্টি পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি 
ভিজতে চাইছে মন 

৩.
ঝমঝম বর্ষা নামল 
ভিজছি, ভিজে যাচ্ছে আমার সমস্ত অঙ্গসাজ
ভালো লাগছে 

৪.
এক দিন -            দু দিন - 
ঝম ঝম     ঝির ঝির    টিপ টিপ 
একঘেয়ে, মনখারাপ 
 
৫.
পায়ের পাতা, গোছের কাছ 
হাঁটু ছোবে, ছুঁয়ে ফেলেছে 
জল যন্ত্রণা 

কবি পলাশ দাস 
বারাসাত, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ



ব্যথাদিন
মৃত্যুঞ্জয় হালদার

একরোখা দিন রেখে যায় ঋণ
কত ক্ষত মন মৈনাকে
নিরাশার নৈশলোকে
বোবা বিদ্রুপে হয় বিলীন।

যন্ত্রণার যাঁতাকলে কামনারা মৃত বলে
বিক্ষিপ্ত বিলাপ বিপুল
বিপর্যস্ত বিষন্ন বকুল
অকাতরে ঝরে পড়ে শ্রাবণ সলিলে।

আকছার অনাচার আনাচে কানাচে
মন আশমানে মেঘ
ডেকে যায় ভেক
চুপিসাড়ে ব্যথাদিন রেখে যায় কাছে।

কবি মৃত্যুঞ্জয় হালদার
                    গড়িয়া, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ 






সুনন্দ মণ্ডলের দুটি কবিতা 

মুখোশধারী

আগামীর রোদ বড় তাপীয়
অসহ্য পরিবেশ, বায়ুমন্ডল।

মানুষের হিংসাও পরিমাণে তত
জীবন সংকট কোথাও।
নিঃশর্ত বাক্যালাপে কেটে ফেলে কথার মুন্ডু
ধারাপাতে গুণে নেয় অসম প্রতিযোগিতা।

দিনরাত চাপ চাপ কাজের ঢিবি
সরিয়ে ফেলতে সময়টাও বোকা।
হাজার মিথ্যের বাক্যবাণ, জর্জরিত সভ্যতা
চাবুক মারা প্রথা শেষ, তাই সপাটে লাথি।

একে অপরকে ঠেলে
ওপরে ওঠার চেষ্টায় প্রতিযোগিতা
কেউ ওঠে হয়তো বা 
কেউ মুখ থুবড়ে গড়ায়। 

জীবনকে চেনাতে সময়টাও কেমন মুখোশধারী। 

অভিমানী

হারিয়ে গেছে 
সেই পুরোনো দিন,
পুরোনো চাতাল ঘর ভাঙা।

গড়তে হবে
একইরকম রঙিন
পুরোনোটার মতোই যেন হয় রাঙা।

চাই গো আমি
জীবন তেমন, যেমন ইচ্ছে
খুশিমতো জীবন যাপন।

রক্ষে করো
ক্ষান্ত হও, সংসার
কখনো বোঝার কখনো সোজা মতন।

শোনো অভিমানী
নয়কো বেকার কিছুই
পাবে সবই, একটু বুঝে শুনে চলার।

ধৈর্যের বাঁধ 
যার যেমন শক্ত 
সবুরে মেওয়ার মতোই জীবন তার। 

                       কবি সুনন্দ মণ্ডল 
   কাঠিয়া, মুরারই, বীরভূম






























অরুণ কুমার দাঁ'র দুটি কবিতা 

মাছজীবন

স্বপ্ন অদৃশ্য হলে, উঠে দাঁড়াই
ভারহীন পায়ে হাঁটি
বুকের খাঁচায় বিশুদ্ধ বাতাস ভরে
ছুঁতে যাই অনাগত-দিন ।

গভীর জলে খাবি-খাওয়া মাছজীবন
ধীবরচোখের আড়ালে ডুব দিই-
জাল ছিঁড়ে বাঁচার উদগ্র বাসনা।

কানামাছি

ছুঁয়ে দাও -
কানামাছি খেলায় যেভাবে ছোঁয়াছুয়ি হয়

চোখ বাঁধা
বন্ধুরা হাততালি দেয়, দূরে দূরে

এখেলায় বরাবরই আমি কাঁচা
হাততালি শুনি -
আর ছুঁতে পারিনা কাউকে !

কবি অরুন কুমার দাঁ
ভিড়িঙ্গি স্কুলপাড়া, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান




লাইক,শেয়ার,কমেন্ট
মীরা মুখোপাধ্যায় 

তোমরা আমাকে ফিরিয়ে  দিলেও
ভোরের আলো আমায় লাভচিহ্ন পাঠায়
আমি যখন আমার মেঘলা কবিতা তাকে শোনাই

এতো কৃপণতা কেন তোমাদের  বুঝিনা....
শুধু " বেশ লেখা "এটুকু দেখেই
চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আবার  লিখতে বসি

কিছুনা, বকুলগাছটাও জানে
ভাঙা সংসারের মধ্যে কতো কষ্টে 
আমি লিখি জলচৌকিকে টেবিল বানিয়ে 

কবি মীরা মুখোপাধ্যায়
তেলিপুকুর, ডাক শিমুরালী, নদীয়া





আঘাতের বিপরীতে
শান্তনু গুড়িয়া 

কার জন্য ভালোবাসা কুড়োও
সঞ্চয় করো অভিমান
টানটান মাংসপেশী, নিয়মিত যোগাসন
আশ্চর্যের খোঁজে অনুসন্ধান অনুক্ষণ
বুকের ভেতর চিত্রার্পিত সেই মুখ
ছুঁড়ে দাও খোলামকুচি দিন
                শূন্যতার পুকুরে
আয়নার সামনে রোজ
স্নানশেষে পরিপাটি সাজগোজ
ছুঁতেই পারছ না
অথচ জানালা দিয়ে উঁকি মারছে রোদ
খোলা হয়নি বন্ধ দরোজা
তবু আনন্দ ঢুকে পড়ছে ঘরে
আঘাতের বিপরীতে এই অলক্ষ্য উন্মোচন
আঙ্গুল চিনেছে সুখের সুলভ সংস্করণ!

কবি শান্তনু গুড়িয়া
বেড়াবেড়িয়া, বাগনান, হাওড়া














শূন্যতা 
পিঙ্কু চক্রবর্তী 

বিকেলের সূর্যাস্ত যার কথা বলে গেলো কানে কানে, 
আমি তার স্বপ্নে ভাসি।
রাতের জোৎস্না বাতাসে যে গন্ধ ছড়িয়ে গেলো, 
আমি রোজ তার গন্ধ মাখি।
ভোরের আলো যে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে গেছে, 
আমি সেই আলোতেই মাতি।
দুপুরের প্রখর রোদ যেভাবে পুড়তে শিখিয়েছে,
আমি সেভাবেই সকল শূন্যতাকে আড়াল করতে শিখেছি। 
সন্ধের কাছে শিখেছি কিভাবে মাথা নত করতে হয়... 
তাই তো পথ চেয়ে মাথা নুইয়ে আছি।

কবি পিঙ্কু চক্রবর্তী
সাধনপুর গভঃ হাউসিং, পূর্ব বর্ধমান

















উদয়ন চক্রবর্তী'র দুটি কবিতা 

নায়ক তুমি খলনায়কও

দেওয়ালের পর দেওয়ালে
জলছবি এঁকে রাখি
দিন গুজরানের অণু পরমাণু ভেঙে 
সারি সারি টাঙানো দিবারাত্রির কাব্য
কোলাহল মুছে যাচ্ছে সময়ের ইরেজারে
চুপিসারে হামাগুড়ি দেয় নৈঃশব্দ
অজন্তা ইলোরার অমরত্ব বুকে নিয়ে।
অজান্তেই  গুহা চিত্র আঁকা হয়ে যায়
বুকের গহ্বরে নীরবতায়
সময় বুঝে হাজির হয় একান্তে নিঃশব্দে কেউ 
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একাঙ্ক নাটকের কোলাজ হাতে 
সেখানেই জলছবি হয়ে ভেসে যায় জীবন 
সেখানে নায়ক তুমি খলনায়কও তুমি 
দিনের শুরুতে কিংবা দিনান্তে।

সুখ প্রজাপতি হয়ে উড়ে যায়

সিঁড়ি দিয়ে নাচতে নাচতে নেমে যাচ্ছে সুখ
নিঃশব্দে গুটি পোকা যেমন খেয়ে নেয়
কচি পাতাদের শরীর নিঃশব্দে তেমনই 
ক্যাট ওয়াক করে হেঁটে যাচ্ছে ছলনা ।
আমি ছলাৎ করে লাফিয়ে পড়ি বারান্দায় 
শেষ রোদ্দুরের আহ্লাদী ছলাকলা দেখব বলে।এটা জানি একবার চলে গেলে সে
বলে যাবে না দেখলে তুমি ইতিহাসের আরও 
কাছাকাছি। আলোর কাছ থেকে শুধুই আলো ধার করো। অন্ধকার দাঁড়িয়ে আছে তোমাকে ছুঁয়ে দেখবে বলে। অন্ধকার শুধুই বিষণ্নতার ঝাঁপি নিয়ে ঘুরে বেরায়। কী অসুখ কেন অসুখ বোঝার আগেই সুখ গুটি পোকা থেকে প্রজাপতি হয়ে উড়ে যায়।

কবি উদয়ন চক্রবর্তী 
কোন্নগর, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ


























সৌমেন দেবনাথের গুচ্ছ কবিতা 

আকালের কথন

অত্যন্ত প্রজ্ঞায় হত্যার কলায় সত্য সততার শরীরে
ছিদ্র এঁকে দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে ভগবান স্তুতি করি
আমি ও আমরা দেবশিশু
শুটকির রাজ্যে বিড়াল চৌকিদার 
রাবণ-মনস্ক সদিচ্ছায় সব লয় যাবে
ভাবতে ভাবতে ভেঙে পড়বে
জমাট হবে কান্না তবু পাবে না তালাশ
কেউ বুঝবে না কেউ জানবে না রক্তচুম্বনের ইতিহাস
মৃতের বুকে দাঁড়িয়ে অপ্রাপ্ত প্রেমিকার মত উল্লসিত
আমরা ধ্বংস অবতার
নরমে নরম তবুও পারবে না করতে হজম
শক্তে শক্ত হিংস্র সূর্য বুঝতে গলদঘর্ম 
আমরা উলঙ্গ শিশু, ভিখারী মাকেও হায়েনা ন্যায় বাগড়া দিই
লিখে যাও চিন্তিত মহাপুরুষ মূর্খদের জন্য পাদটীকা

স্মৃতি কণ্টক

অন্তিম ক্ষণে অন্তহীন আকাশের অস্তপ্রায় লালাভ সূর্যে চেয়ে
সাহসহীন নতজানু আমার যৌবনকে রোমন্থনে আনি
নিঃশ্বাস দূরত্বে অবস্থান করেও মানুষ চিনিনি
আহা,কণ্ঠস্বরে জড়িয়ে অন্যমনস্ক হতে পারতাম না
পেটের ক্ষুধা ভুলে যেতাম মনের ক্ষুধা নিবৃত্তে
অথচ সেই স্বপ্নই ছাইরঙা শাড়ি পরা মেঘের মত উড়ে গেলো
চোখের পানি সময়-অসময় বোঝে না
স্মৃতির ঝাঁপি থেকে কিছু পোনা মাছ ধরার বৃথা চেষ্টা করলেও
ভাবনা-কলস উল্টে রাখি...
বুঝেছি, পছন্দ-অপছন্দের কথা চট করে বলে দিতে নেই
বেশি আগ্রহ, বেশী অনীহা দুটোই দোষের
মন খারাপের সময়ে রঙিন শাড়ি পরলে তাকে পরীক্ষায় ফেলতে হয় সময়ে নিষ্ঠুর হতে হয়, মায়ার জাল গুটিয়ে নিতে হয়
নতুবা, ঠকতে হয়, ঠক আর শঠ ওরাও মানুষের মত
জীর্ণ পাতার মতো জীবন বৃক্ষ থেকে ঝরে গেছে অনেক পাতা
স্মৃতির মুকুলে প্রস্ফূটিত হয় অতীতের সব
দেখি জীবনের উপন্যাস খণ্ডিত, অসম্পূর্ণ
এ জীবনের বেলাভূমিতে সূর্য কিরণ দেবে কেনো
মগজ থেকে সুসময়ের দিনগুলো মুছে গেছে
কিছু ক্ষত মাছ চোখ রাঙায়, শাসায়, ধমকায়
সূর্যদেবও অন্য সংসারে আলো বিলাচ্ছে সূর্যতারার মত
আমার তা দেখতে দেখতে বাকীটা পথ হাঁটতে হবে
আমি হাঁটছি, কিন্তু আমার কোন গন্তব্য নেই...

মেঘেদের দখলে আকাশ

ভাবনাও যেন জিম্মি নৃশংস জালে
নীরবে কান্না করা জীব বেড়ে চলেছে ভুবন মাঝে
কাঁকড়ার হিংস্র পায়ে চুনোপুুঁটির দফারফা
বোয়ালের সাথে রুই-কাতলার শলা আর কলা
গর্তেও লুকিয়ে লাভ নেই মায়া-ঝায়ার
শিয়াল-খাটাশ-বেজির মুখায়বে হত্যার রক্ত
ছাগল-হাঁস-মুরগির পরিভ্রমণ বলয়বদ্ধ
জনারণ্য বন্য পশুর ক্রিয়ায় বিপন্ন
পশুদের পোষ্যরা ঘোরে লয় নিমিত্তে লোকালয় থেকে দেবালয়
বিস্তৃত বনভূমি ছেড়ে পাগলা হাতি সুশীলের ভীড়ে
সুশীল বক্তৃতা ছেড়ে বকবক বকে
বাকবহুল বাবুরামে বিমুগ্ধ আমজনতা
প্রতিশ্রুতির ফল্গুধারায় ভেসে যায় অতল তলে
বন্য হায়েনার কাশফুল কেশে কলপ
আগে তো ছিলো না শিয়াল-কুকুরের এত উন্মাদনা
শুনেছি তো বাঘ, নেকড়ে বিলুপ্ত পথে...
আসলো ওরা কি করে প্রাণালয় পর্যন্ত?
কেন গণ্ডার ভাণ্ডার সাবাড় করে
কেন শকুনেরা ঠুকে ঠুকে খায় রশদ ও মগজ
কেন ঈগলের লাল ঠোঁটে বুদ্ধিজীবীদের টাই কোট
চোখের জল শুকিয়ে গেছে
যেদিকে তাকাই নীল আকাশ নেই
সবুজ প্রকৃতি নেই, উষ্ণতা নেই

কেবল পূঞ্জীভূত কালো কালো মেঘ

চিন্তার সমুদ্রে আঁছাড় খাই

আমি বলীর প্রাণী
যে কোন মুহূর্তে গত হতে হবে
অনাগত দিন বড়ই অশনি
না চাই ভবিষ্যৎ,আমার ভবিষ্যতের বয়স বেড়েছে
সময় থমকে দাঁড়ায় না
দেখায় না সহানুভূতি
সম্মুখে মৃত্যু রঙিন তীর হাতে হাসে
কোমল পলির ত্বকে লুটিয়ে পড়ি
অসুর গর্জনে আকাশ চেরে
সহনীয়া পলিমাটি ঠোঁট মেলিয়ে অট্টহাসিতে মত্ত
কোকিল ডাকে, কণ্ঠে গরল স্বর
বিশুদ্ধ বাতাসে বিষবাষ্প
পালাবার পথ শূন্য
সম্মুখে শিলাদৃঢ় পাহাড়
তুমি তো আছই
শূন্য থেকে মহাশূন্যেরও উপর, সর্বত্র
আমায় মুঠোয় ভরে ঝুনঝুনি বাজাও
ভেবে হেরে গুটিয়ে যাই, মাঝে মাঝে ভাবনা ফেলে দেই

কিন্তু চিন্তার সমুদ্রে আঁছাড় খাই

অহিংসার পুনর্জন্ম

হিংসার বীজগুলো মুহূর্তে অঙ্কুরিত হচ্ছে
পরিমিত সার পাচ্ছে না
পরিমিত জল পাচ্ছে না
অথচ,ডগমগিয়ে বাড়ছে সন্ত্রাসী কাশফুল
বিস্তৃত এলাকা গ্রাস করছে ঘৃণাঘাস
ফলছে তাতে অবজ্ঞার আঙুরলতা

অহিংসার তন্তুগুলো ছাগল খেয়ে ফেলেছে
এখন সে রোমন্থন করছে
কিছু হজম হতে চলেছে
এবার মল হয়ে চলে যাবে খনন গর্তে
তা থেকে তৈরি হবে কম্পোস্ট
মানবের ক্ষেতে কিছু কৃষক করবে বিলি
তাতে কেউ পাবে হারানো দিশা
পুনর্জন্ম হবে অহিংসার

অশীতিপরের আর্তনাদ

আমার দৃঢ়তায় দাঁড়ানোর মেরুদণ্ডে ঘূণপোকা ধরেছে
স্বপ্নের আশালতিকার মুখ মুচড়ে গেছে
বেঁচে থাকার পৃথিবীকে অচেনা লাগে
অকারণ কারণে বেঁচে থাকা,পৃথিবীর বোঝা
প্রাণহীন মনোভূমিতে ঘোর অমাবশ্যা
দিনভর গৃহকোণে পোল্ট্রি মুরগির মত ঘুমাই
রাতভর প্রশ্নহীন চোখে জেগে থাকি
ভাবি, কেনই ভাবি
অসাড় আর ঊষররা ভাববে কেন
বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি, আজ আমি একা
আমাকে কেউ একা করে রাখেনি
আমার দীর্ঘশ্বাসে রাতের গহীনতা ভাঙে
অশ্রুস্রোতে বাতাস হয় ভারাতুর
আজ আমি যুবুথুবু দাঁড়কাক কিংবা পাথর প্রতিমা
নিঃশেষিত কৌটার মতো ডাস্টবিনে পড়ে থাকি
তবুও স্বপ্ন দেখি, স্বপ্নসৌধ রচি
ভাঙা রোড দিয়ে ছুটে চলে স্বপ্নের ট্রেনটি
কে যেন পিছন থেকে ইচ্ছা ঘোড়ার লাগাম টানে
আমি যে খুটে খাওয়া ক্ষমতাশূন্য পতঙ্গ

লোকে বলে,"নড়ে ঘর পড়ে না"

আগাছার দাপাদাপি

তেলাপোকাও উড়ে এসে চোখ রাঙিয়ে যায়
বেড়া ভেঙে রান্না ভাতে মুখ লাগায় কুকুর
বানরের দাঁত ভেঙছি দেখে সুশীল কাঁদে ঘরে

বাঁচতে মিথ্যার পাহাড়ে নৃত্য করতে হচ্ছে 
আহা, শীর্ণকায় নালা নদী গিলে খায়
পঁচায় জন্মানো কেঁচো সম্মানীয়র পথ আটকায়

আমি যে সত্যের আস্ফালন দেখেছি ও দেখছি
বিলাসী সমুদ্রে শত্রুর সাথে মিশে সবাই বুদ
শত্রুর স্বপ্নই ফলে বেশি, জন্ম অত্যন্ত ঘন ও একতাবদ্ধ
কা কা ডাকে নিকুঞ্জ মাত্

দিন গেলেই রাত বাড়ছে,
শেকড়ে এগারিকাসের পুনঃপুন জন্ম
সিঁধেল ইঁদুর আজো সিঁদ কাটছে
অথচ আমরা নিরানব্বই জন বসে আছি
কেবল দেখছি- আগাছার দাপাদাপি
আর আকাশে শকুনের উড়াউড়ি

ষড়যন্ত্রের শিকার

মগজের মনিটরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু
পুশ করে দিয়েছে অঙ্গহীন
মশার মুটকীটগুলো...
তাই ব্যথা যন্ত্রণা জ্বরে জর্জরিত
কামান দিয়েও দাগতে পারিনি
ফায়ার যত হয়েছে লক্ষ্যভ্রষ্ট
পালিয়েছে আমারি স্বজাতির কক্ষে
আমাকে জব্দ করার করেছে ষড়যন্ত্র
নেংটি ইঁদুর দিয়েছে বুদ্ধি
মুটকীট পেয়েছে শক্তি
আমারি রক্তে পেট ভরে ওদের 
উড়ে বেড়ায় চারিপাশ দিয়ে
দেখি আর দেখি
আর ভাবি, গুটিকয়েক তো মেরেছি
না কমে অন্যগুলো এলোই বা কোথা থেকে
আর চিনলোই বা আমাকে কিভাবে

তাই ম্যালেরিয়া জ্বর আর কমলোই না।

অকৃপণতা 

বারুদ স্তূপে এক টুকরো কণা অগ্নি-ফুলকি
রূপ নেয় দাবানল
সেই অগ্নি স্ফূলিঙ্গে একত্রিশ বছর স্নান করছি
অঙ্গার হয়ে গেছে অঙ্গ
অথচ বেঁচে আছি
স্বপ্নগুলো পঁচে যাচ্ছে ক্রমাগত
রঙিন পথে চলি ফ্যাকাশে চিন্তায়
নিত্য গলদঘর্ম করি, তবুও জিহ্বা সুস্বাদু বঞ্চিত
শুধু দেখি অন্যের স্বর্ণদ্বীপ্যমান জীবন
আক্ষেপের খেয়া দোলে ডোবে অতলে
তবুও হাসি, অমলিন হাসি...
শেষটুকুন দিয়েও আগলে রাখি পরিবার পরিবেশকে
মাছের আঁইশের মতো শরীর থেকে খসছে কিছু
হয়ে গেছি সরু রোগা পটকা বৃক্ষ
অথচ বাতাস বিলাচ্ছি

লোকে বলে অকৃপণ আমি।

বিপথের যাত্রী

পরচর্চায় মত্ত মন কখনো আত্ম-বিশ্লেষণ করেনি
একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখি নিজের অবয়ব 
নতুন ভাবে আবিষ্কৃত হই আমি
নিজেকে চেনার জানার আত্ম-সমীক্ষার সময় পাইনি
অবসরের জঞ্জালে বসে খুঁজিনি স্বপ্নের চারাগাছ
কেবল গড়েছি, ভাঙতে ভাঙতে গড়েছি
আমার জীবন খেরোখাতাতে এত বেশি অসংগতি লিখতে থাকলে শব্দের অভাব পড়বে না
সবুজ স্বপ্ন পূরণের জন্য ময়লা করেছি বিবেবকে
চেতনার রশি ছিঁড়ে আমি তাতে গেঁথেছি মিথ্যার বেসাতি
লিপ্সার ডালে চড়ে আমি উড়েছি দিগবলয়ে
আমি আজ পঁচা পেয়াজ খোলস ছাড়ালে হবো অস্তিত্বহীন
সম্মানীয়তার মোড়কে ঢেকে আছে আমার দুষ্কর্ম স্বরূপ
অথচ,
গিন্নীর চোখে সুন্দর পুরুষ
ছেলের কাছে বিশ্বের সেরা বাবা
তোমাদের চোখে?
বিশেষ ব্যক্তি।

কবি সৌমেন দেবনাথ 
সরকারি মুড়াপাড়া কলেজ, নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ
















দালান জাহানের তিনটি কবিতা 

অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক 

যার গল্প বলে স্বস্তিহীন ঘুমিয়ে যায় 
আমার পূর্ব পুরুষেরা
পাখির পালক থেকে খসে পড়ে তার
সোনার পাহাড় 
বাস্তবতার কালো দাঁত ঘর্ষণহীন চাকা 
কেবলই ঘুরতে থাকে 
প্রজ্ঞাপনের সোনালি ফিতেয়।

ক্ষতবিক্ষত পল্লব প্রদীপ 
সায়াহ্ন বেলা হাসে। সে তো আসে না
সে তো এভাবেই আসে
পশ্চিম মেঘের অন্ধকার ভেঙে 
পূবের মেঘের প্রসব ব্যথায় 
সকলের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করে। 

তার দীপ্তিতে টুকরো টুকরো
খোলসে মাখা রস ভাগ্যকে ভাগ করে দেয় স্রেফ দুটি নদীতে। 

সকল রাস্তায় জ্বলতে থাকে 
তার আগমন আগুন 
অদমিত অদৃশ্য পায়ের নিচে 
কেবলই ভূমিষ্ট হয় মৃত্যু। 

নূরা পাগলা

রক্তে-রক্তে ছড়িয়েছে ঘাতক
পানির ট্যাপ টিউবওয়েল নদীর মোহনায় আপন বিশ্বাসের সাথে 
জীবনে-জীবনে গড়িয়ে যায় ঘাতক।

জানালায় চাঁদ এসে বসে থাকে
বলে যায় ধুলোবালির শখ সংলাপ 
রাতের চেয়ে কাল কালো সমুদ্র 
ঘাতকের ভয়ে চকচক করে। 

লালে-নীলে ঢেকে গেছে সবুজ-সবজি 
চারদিকে কেবলই পুঁটলি ওয়ালা
ঢোল বাজে খন্ড-বিখণ্ড হয় আত্মারা।

নূরা পাগলা চিৎকার করে মাঝরাতে
মাটির ছাদ ভেঙে ওঠে আসে মৃতেরা 
যুগযুগ ধরে মরে যায় কীট 
একটিও মানুষ মরে না। 

অন্ধকারে মানুষের নাম নিতে নেই 

অনন্ত দুঃখ নিয়ে ঝরে যায় বৃষ্টি 
সবুজ পাতারা পাগড়ি পড়ে 
অবুঝ মাছগুলো লাফায় দাপায়
দখিনের জানালায় উঁকি দেয় 
এলকোহল ভেজা রোদ 
চাপা হৃদয়গুলো আড়াল করে হাসি 
বুকের পূর্ব কোণে জমিয়ে রাখে জল। 

এখনও মানুষ মিছিলে যায় 
অধিকারের বাতিক নিয়ে আঁকে কঙ্কাল 
এখনও দুঃখ দিয়ে রেকার বোঝাই 
সমুদ্র সেঁচার মতো সাহস নিয়ে 
বার বার সমুদ্রে ডুবে যায়। 

অন্ধকার আর শয়তান যমজ দুই ভাই 
ইন্দ্রিয়ের ভেতরে রাক্ষস ঢুকায় 
অন্ধকারে মানুষের নাম নিতে নেই। 

কবি দালান জাহান
বোয়ার সেন্ট্রাল আফ্রিকা










































নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

  • আগস্ট (3)
  • জুলাই (22)
  • জুন (8)
  • নভেম্বর (15)
  • অক্টোবর (5)
  • সেপ্টেম্বর (81)
  • আগস্ট (66)
  • জুলাই (55)
  • জুন (56)
  • মে (57)
  • এপ্রিল (46)
  • মার্চ (15)
  • জানুয়ারী (14)
  • ডিসেম্বর (73)
  • নভেম্বর (103)
  • অক্টোবর (97)
  • সেপ্টেম্বর (101)
  • আগস্ট (120)
  • জুলাই (88)
  • জুন (76)
  • মে (63)
  • এপ্রিল (11)

🔴বিজ্ঞপ্তি:

পাঁচ মাসের বিরতি কাটিয়ে আবার ও ফিরছি আমরা। খুব শীগ্রই আসছে আমাদের প্রত্যাবর্তন সংখ্যা।

অনুসরণ করুণ

এক মাসের সর্বাধিক পঠিত পোস্টগুলি:

  • শেষ শোকসংগীত ~ গোবিন্দ মোদকের কবিতা
  • দুটি কবিতায় ~ গৌতম কুমার গুপ্ত
  • ব্রাত্য ~ বিদ্যুৎ মিশ্র'র কবিতা
  • দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প
  • আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা
  • গুচ্ছ কবিতায় ~ অসীম মালিক
  • সুমিত রায়ের গল্প
  • সে প্রেম পবিত্র~ প্রেমাংশু শ্রাবণের কবিতা
  • সুব্রত মাইতির কবিতা
  • তিনটি কবিতায় ~ রাগীব আবিদ রাতুল

বিষয়সমূহ

  • Poetry speaks 2
  • অণু কথারা 21
  • আবার গল্পের দেশে 8
  • উৎসব সংখ্যা ১৪২৭ 90
  • একুশে কবিতা প্রতিযোগিতা ২০২১ 22
  • এবং নিবন্ধ 3
  • কবিতা যাপন 170
  • কবিতার দখিনা দুয়ার 35
  • কিশলয় সংখ্যা ১৪২৭ 67
  • খোলা চিঠিদের ডাকবাক্স 1
  • গল্পের দেশে 17
  • ছড়ার ভুবন 7
  • জমকালো রবিবার ২ 29
  • জমকালো রবিবার সংখ্যা ১ 21
  • জমকালো রবিবার ৩ 49
  • জমকালো রবিবার ৪ 56
  • জমকালো রবিবার ৫ 28
  • জমকালো রবিবার ৬ 38
  • দৈনিক কবিতা যাপন 19
  • দৈনিক গল্পের দেশে 2
  • দৈনিক প্রবন্ধমালা 1
  • ধারাবাহিক উপন্যাস 3
  • ধারাবাহিক স্মৃতি আলেখ্য 2
  • পোয়েট্রি স্পিকস 5
  • প্রতিদিনের সংখ্যা 218
  • প্রত্যাবর্তন সংখ্যা 33
  • প্রবন্ধমালা 8
  • বিশেষ ভ্রমণ সংখ্যা 10
  • বিশেষ সংখ্যা: আমার প্রিয় শিক্ষক 33
  • বিশেষ সংখ্যা: স্বাধীনতা ও যুবসমাজ 10
  • ভ্রমণ ডায়েরি 1
  • মুক্তগদ্যের কথামালা 5
  • রম্যরচনা 2
  • শীত সংখ্যা ~ ১৪২৭ 60

Advertisement

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

মোট পাঠক সংখ্যা

লেখা পাঠাবার নিয়মাবলী:

১. শুধুমাত্র কবিতা, মুক্তগদ্য অথবা অণুগল্প পাঠাবেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য বিষয়ক লেখা সম্পূর্ণ আমন্ত্রিত। ২. লাইনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ৩. লেখা মেইল বডিতে টাইপ করে পাঠাবেন। ৪. লেখা মৌলিক ও অপ্রকাশিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্য কোনো ব্লগ, ওয়েবজিন অথবা প্রিন্টিং মিডিয়ায় প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ৫. মেইলে আপনার লেখাটি সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত, কথাটি উল্লেখ করবেন। ৬. লেখার সাথে আবশ্যিক ভাবে এক কপি ছবি ও সংক্ষিপ্ত ঠিকানা পাঠাবেন।  ৭. লেখা নির্বাচিত হলে এক মাসের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে। এক মাসের মধ্যে কোনো উত্তর না এলে লেখাটি অমনোনীত ধরে নিতে হবে। ৮. আপনার লেখাটি প্রকাশ পেলে তার লিঙ্ক শেয়ার করাটা আপনার আবশ্যিক কর্তব্য। আশাকরি কথাটি আপনারা মেনে চলবেন। আমাদের মেইল- hridspondonmag@gmail.com
blogger-disqus-facebook

শান্তনু শ্রেষ্ঠা, সম্পাদক

আমার ফটো
পূর্ব বর্ধমান, India
আমার সম্পূর্ণ প্রোফাইল দেখুন

সাম্প্রতিক প্রশংসিত লেখা:

সুজিত রেজের কবিতা

সুজিত রেজের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন

© হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন। শান্তনু শ্রেষ্ঠা কর্তৃৃক পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে প্রকাশিত।

Designed by OddThemes | Distributed by Gooyaabi Templates