হৃদস্পন্দন

  • Home


  • Download

  • Social

  • Feature



 
আর্টিফিসিয়াল হ্যাকার

লোহা রডে মরিচা
তবুও সফটওয়্যার সনেট
কিংবা বেটোফেন কয়েন
পপুলার মার্কেট ইন্টারন্যাশনাল

টু হুইলারে ফাইব-জি গেম

মিডিয়ার চার চোখে সোস্যাল
মুঠো মুঠো ইনফর্মেশন

লগ ইন এন্ড অল ইজ ওয়েল!

চাঁদ মার্কা চারদেওয়ালে হোমওয়ার্ক
কিন্তু আমরা সাধারণ
সেভড ডিস্টান্স

টু ইন ওয়ান__
টেকনিকের চপে চুল বসিয়ে লুণ্ঠন

একাধিক মল রেস্তোরাঁ পকেটে
আর্টিফিসিয়াল হ্যাকার

কল ইন ইনটেলিজেন্স ব্যুরো

   কবি 
চিরঞ্জিৎ বৈরাগী 
                   যাদবপুর, উত্তর ২৪ পরগনা 


 




কে নেবে উপহার

আনত হই তোমার উজাড় করা প্রেমে

এখন যে আহব অন্তরালের ভ্রমে
স্বপ্নে -স্বপ্নে উৎসর্গীকৃত
নরক গুলজারে প্রাত্যহিক আবৃত

কুৎসিত দিনাতিপাতের কাছেই অঞ্জলি অর্পণ।

অনেক গভীরে প্রোথিত শেকড়
কুৎসিত দুনিয়ার কালো আবরণের ভেতর
দুমরিয়ে-মুচড়িয়ে ভাঙছে আয়না
কেঁদে-কেঁদে চোখ মুছে যতই করুক বায়না

থাক ধনুরভাঙা পণ,নয় আত্মসমর্পণ।

পথ চলতি মানুষের মুখ,
দুরন্ত বেপরোয়া নিয়ম ভেঙেই সুখ
ক্রমশই ছায়াহীন বীথিকাবিহীন শবযাত্রায় সামিল
এতো সুখের সংসার, সাজানো বাগান শুধু একটা মালির অমিল

আমার আকাশে উড্ডীন মেঘবালিকাকে কাকে করি অর্পণ ?


কবি প্রবীর কুমার চৌধুরী
         গড়িয়া, কলকাতা 



 

      আসা যাওয়া 


তিন 

চোরাগলির আসিফের ঝুপড়িতে পৌঁছে দেখি সে বসে আছে ছোট কাঠের চৌকির উপর। পরিবার বলতে তার বিধবা মা। যে আয়ার কাজ করতে অনেক সকালেই বেরিয়ে পড়ে। আমাকে দেখেই আসিফ ঠোঁটের কোনায় হাসি এনে বললো, ভাইজান এতদিন পর ইঁয়াদ করলে। আমার উপর রেগে নেই তো?
আমি তার চৌকির এক কোনায় বসতে বসতে বললাম, আসিফ, কাজ আছে। রাজি থাকলে বল।
- আপনার কাজ, আর আমি রাজি হবো না তা কি হয়! আপনার কাজ করতে পারলে হাত পাকা হয় ভাইজান। কাজটা কি?
- বাগুইহাটির অশ্বিনীনগর এলাকাটা আজ ঘুরে এলাম। বেশ কয়েকটা বাড়ি দেখে এসেছি। তোকে আজ ওখানে গিয়ে বাড়িগুলো আবার দেখে আসতে হবে। তারপর একটা জবরদস্ত প্ল্যান বানাতে হবে। ফাইনাল চকআউট আমি করবো। রাত ২‍টোয় ঢুকবো। আধ ঘন্টার অপরেশন। আমি আর তুমি, আর কেউ না। যা হবে ফিপটি ফিপটি। রাজি?
- ভাইজান, এখনই তো যেতে ইচ্ছা করছে। আপনি শুধু বাড়িগুলো আমার এঁকে বুঝিয়ে দিন কোথায় আছে। বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।
আসিফের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমি পৌঁছালাম আমার বাড়িতে। যদিও এটাকে বাড়ি বলা যায় কি? ৭ বছর বয়সে মা মারা যাওয়ার পর আমার বাবা অবশ্য দ্বিতীয় বিয়ে করেনি। কাগজের মিলে কাজ করে আমায় পড়িয়েছে। বাবা যখন মারা যায় তখন আমি বি এ পড়ছি। ইচ্ছে ছিল একটা কাজ করে জীবনটা চালিয়ে নেবো। কিন্তু সেটা হয়নি। কলেজে পড়াকালিন আমি টিউশনি করে পেট চালাতাম। এরকমই একদিন এক ছাত্রের বাড়িতে আমার সামনে টাকার বান্ডিল পড়েছিল। লোভ সামলাতে পারিনি। ছাত্রের মাথায় বাড়ি মেরে তাকে অজ্ঞান করে আমি টাকা নিয়ে চম্পট দিলাম। ভেবেছিলাম সেই রাতেই কলকাতা ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে ঐ টাকা দিয়ে একটা নতুন জীবন শুরু করবো। তবে আমায় পুলিশ ধরে ফেলে হাওড়া স্টেশনে। জেল হয় ৯ মাসের। এরপর আমি আর থামিনি। কখনও চুরি, কখনও ছিনতাই করতে করতে এমনভাবে নেশা শুরু হয় যে আজও বেরিয়ে আসতে পারিনি।
তবে তিতলী নামের মেয়েটি নিজের নাম সঠিক বলেনি আমি জানি। পাসপোর্টে আমি ওর নাম দেখেছি। মেয়েটির নাম রুপা। রুপা মিত্র। হোটেল রিসেপশনে মেয়েটি ঐ নামেই রেজেস্ট্রি করেছে। এছাড়াও ঐ সময় আড় চোখে ওর পাসপোর্টে আমি ওর আসল নামটাও দেখে নিয়ে‍‌ছি। তবে মেয়েটি আমার নকল নাম কেন বললো! ১০০ ডলার প্রতি সপ্তাহে অফারটা ভালো। মেয়েটির কি তাহলে অন্য কোনো মতলব আছে? থাকলে থাকুক। আমার কোমরে সবসময় একটা ইস্পাতের যন্ত্র আছে। গাইডের মতো সামান্য কাজে ১০০ ডলার সপ্তাহে পাওয়ার লোভটা না থাকলে আজকে সকালে মেয়েটির ঘরে যখন ছিলাম আমি তাকে খালাস করে দিতাম। যে ১০০ ডলার সপ্তাহে দিতে পারে তার কাছে কত পরিমান ক্যাশ থাকতে পারে সেটা আমি ছাড়া আর কেই বা বুঝবে।
বিকেল ৪টের সময় আমি বেলটিপে দাঁড়িয়ে আছি। মহুর্তে দরজা খুলল তিতলী। হ্যাঁ আমি ওকে তিতলী বলেই ডাকবো যতক্ষন না সে‍‌ নিজের নামটা নিজের মুখে স্বীকার করে। তিতলী আমায় অবাক হয়ে দেখছে, কেন জানি না। সে বললো, ভিতরে আসুন।
আমি ভিতরে ঢুকে একটা সোফায় বসলাম। তিতলী বললো, চা খাবেন?
আমি বললাম, হলে ভালো হয়। তবে আশাকরি চায়ের টাকা আমার পারিশ্রমিক থেকে কেটে নেওয়া হবে না?
তিতলি খিলখিল করে হেসে উঠলো। মেয়েটি যে কতটা শিশুসুলভ তা ওর হাসিতে বুঝতে পারছিলাম। তিতলী আজকেও একটা লাল জিন্স আর কালো টি-শার্ট পরে আছে।
কিছুক্ষন পর বেয়ারা চা দিয়ে গেল। চা খেতে খেতে তিতলী বললো, আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই, যদি কিছু মনে না করেন।
আমি কোনো জবাব দেওয়ার আগেই তিতলী বললো, আপনি পুরোনো কাপর পড়েই চলে এসেছেন!
আমি বললাম, আমার বেশি কাপড় নেই ম্যাডাম।
তিতলী আঁতকে উঠলো, একি আমায় ম্যাডাম বলছেন কেন?
- আপনি আমায় মাইনে দেবেন তাই ম্যাডাম বলছি।
- না বলবেন না। আপনি আমার নামধরে ডাকবেন।
- ও রূপা।
তিতলি মানে রূপা এখন চুপচাপ। তার চা খাওয়া থেমে গেছে। মাথা নিচু করে সে বলল, জানি না কেন নিজের নামটা ভুল বলেছি আপনাকে। আমি নিজের অজান্তেই মুখ ফসকে বলেছিলাম। আমি লজ্জিত।
আমি চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে বললাম, চলুন আর দেরি করা যাবে না। আমরা বেরোই।
                                       
চার

আমরা বিকেল ৫টা নাগাদ এসে পৌঁছালাম খিদিরপুর হাড়কাটা গলির সামনে। রূপা সেই গলির দুধারে তাকিয়ে আমায় প্রশ্ন করল, শঙ্কু, রাস্তার পাশে এই মেয়েগুলো অদ্ভুদভাবে সেজে দাঁড়িয়ে আছে কেন?
আমি বললাম, এটা একটি রেডলাইট এরিয়া। এর সবাই পতিতাবৃত্তি করে।
রুপা চোখ বড় করে বললো, O my God! আপনি আমায় এখানে এনে খুব ভাল করেছেন। এদের কারোর সাথে আমি কথা বলতে চাই। এদের করোর সাথে আমার একটা ইন্টারভিউ-র ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন?
আমি বললাম, এখানকার কো‍‌নো মেয়ের সাথে আমার তেমন পরিচয় নেই। তবে আপনাকে জানিয়ে রাখা ভালো যে এই রাস্তার পাশের পাড়াতেই আমি থাকি। ওখানে আমার বাড়ি। সবিতা বলে আমি একজনকে চিনি, তার সাথে আমি আপনার ইন্টারভিউ করিয়ে দিতে পারি।
দুধারের রাস্তা দেখতে দেখতে আমরা সবিতার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। সবিতার একতলার বাড়ির ঠিক পাশের বাড়িতেই আমি থা‍‌কি। সবিতা স্বগর্বে পতিতাবৃত্তি করে। তার স্বামী এই এলাকার এক মস্ত মস্তান। তাই এলাকার লোকজন সবিতাকে এড়িয়ে চলে।
সবিতার ভারি দেহ আর সর্ষের মতো চোখের প্রতি আমার কোনো মোহ নেই। তবে আজ থেকে বছর তিনেক আগে আমার টাইফয়েড হয়েছিল। তিনদিন জ্বরে অজ্ঞান হয়ে ছিলাম। তারপর যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখি আমার মাথার সামনে সবিতা বসে। পরে জানতে পারি নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে সবিতা তিনদিন ধরে আমার সেবা করে গেছে। কেন করেছে জানি না। জানতে চাইওনি কোনোদিন। তবে এই ঘটনার পর থেকেই সবিতার সাথে আমার একপ্রকার পরিচয়হীন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ঘরে কোনো ভাল খাবার হলে সবিতা আমার ঘরে দিয়ে যায়। আমি হঠাৎ পুলিশের হাতে পড়লে সবিতা ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। এই তিন বছরে সবিতা কোনোদিন আমায় পাপ নজরে দেখেনি। তবে এক বর্ষার দুপুরে ওর ঘরে হঠাৎ আমার হাত টেনে ধরেছিল। বিড় বিড় করে বলেছিল, তুই কি কিছুই বুঝিস না শঙ্কু?
আমি উত্তর দিইনি। শুধু কোমরে চিমটি কেটে পালিয়ে গেছিলাম। ঐ শেষবার। তারপর আর কোনোদিন সবিতা আমার পাশে আসেনি ঠিক যতটা পা‍‌শে এসে ফুল ছোঁয়া যায়।
দরজার কড়া নাড়ানোর শব্দে সবিতা দরজা খুললো, নাভির নিচে কাপড়পরা অবস্থায় সে বলল, কি ব্যাপার শঙ্কু, এ কে?
আমি বললাম, এ একজন লেখক। বিদেশ থেকে এসেছে একটি বই লেখার জন্য। তোমার ইন্টারভিউ নেবে।
বুক ফুলিয়ে হাসতে হাসতে সবিতা বললো, ভেতরে আয়।
রূপা সব দেখছিল, সে কিছুই বলছিল না।
সবিতার সেগুনকাঠের খাটে বসতে বসতে আমি বললাম, একটা চা দাও। গলা শুকিয়ে গেছে।
দিচ্ছি, তোর বিলেতি অতিথি কি খাবে? কফি? 
আমি রূপার দিকে তাকালাম। রূপা বললো, আমি কিছু খাবো না। আপনি একটু আমার সামনে বসুন। আমি কিছু প্রশ্ন করব আপনাকে, তারপর চলে যাবো। আমার হাতে সময় খুব কম।
সবিতা ভুরু কুঁচকে বললো, আপনি সবিতার ঘরে এসেছেন ম্যাডাম। একটু বসুন। এখানে তাড়াতাড়ি কোনো কাজ হয় না। অপেক্ষা করতে হয়।
সবিতার ইন্টারভিউ পর্ব চলল প্রায় এক ঘণ্টা। এই এক ঘণ্টা জুড়ে রূপা কি কি প্রশ্ন করেছিল আমার সেদিকে মন ছিল না। আমি খাটের এক কোনো বসে চা খেতে খেতে সাদা চাদরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আর ভাবছিলাম পতিতার খাটে এরকম সাদা চাদর ঠিক মানায় না।
এই চাদরের রঙ হবে লাল বা অন্য কিছু। সাদা নয়। আমার মনে পড়ে এক বর্ষার দুপুরের কথা, সেদিন সবিতা আমায় ডে‍কেছিল। সে বেশ আয়োজন করে খিচুড়ি বানিয়েছিল। আমি কাঁসার থালায় খিচুড়ি খাচ্ছিলাম। আর সবিতা আনমোনা হয়ে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিল। 
হঠাৎ সে নিজের মনেই বলতে থাকে, জানিস শঙ্কু আমি ছোটবেলায় খুব ভালো গান করতাম। হারমোনিয়াম বাজাতেন আমার বাবা। তিনি আমায় সরগম শিখিয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল বড় হয় গান করবো। কিন্তু সেসব কিছুই হলো না। জানিস, আমি কোনোদিন 'স্নো' মাখতাম না। মা বলতো, মুখে কিছু না মাখলে মেয়েদের মানায় না। আমি ঠোঁট উল্টে জবাব দিতাম, আমাকে এমনিতেই দেখতে ভালো। স্নো মেখে কি হবে?
খিচুড়ি পর্ব শেষ হতে হতে সবিতা আরও অনেককিছু বলেছিল। আমার সেদিকে কান ছিল না। মাঝে মা‍‌ঝে নিজেকে খুব নিষ্ঠুর মনে হয় আমার। সবিতা সব কথা শেষ হওয়ার পর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোর খাওয়া হয়ে গেছে? পান খাবি?
কতটা সহজভাবে মানুষটা আমায় আপন করে নিয়েছে। আমিই হয়ত স্বার্থপর'ই হয়ে থাকলাম। কি হত যদি একটু পাশাপাশি যেতাম সবিতার। গত বছরের পুজোতে যে পাঞ্জাবিটা সে আমায় দিয়েছিল তা পরে যখন সবিতার সামনে এসে দাঁড়ালাম সে কিছু সময়ের জন্য কেমন যেন নিষ্পলক হয়ে গেছিল। কি যেন খুঁজছিল আমার দিকে তাকিয়ে। সেই রাতে ঠাকুর দেখে ফেরার পথে আমি তো নিজের ইচ্ছাতেই সবিতার বুকে হাত দিয়েছিলাম। অন্ধকার রাস্তার দুদিকে কেউ ছিল না। সবিতা বড় বড় শ্বাস ছেড়ে বলল, আজ রাতটা আমার বাড়িতে থেকে যা।
আমি থাকিনি। ওর দেহের প্রতি আমার লোভ নেই। তাও কেন ঘুরেফিরে ওর কালো চামড়া আমায় টানে! ওর স্বামী মাসে এক দুবার আসে। রাজনৈতিক পালাবদলের পর এখন ওর স্বামী পুলিশের থেকে পালিয়ে বেড়ায়। সবিতার কোনো ছেলেমেয়ে নেই। আর হয়ত হবেও না। এই নিয়ে ওকে একবার আমি প্রশ্ন করেছিলাম। সবিতা বলেছিল, এই রোজগারে ছেলেমেয়ে কিভাবে মানুষ করবো? ওর(সবিতার স্বামী) কোনো ঠিক নেই। কবে শুনব পুলিশ এনকাউন্টার করেছে। তখন ছেলেমেয়েকে নিয়ে রাস্তায় বসতে হবে।
আমি বলি, কেন! তোমার তো বয়স আছে, আরেকবার বিয়ে করে নিও।
বুকের পাহাড় ফুলিয়ে হাসতে হাসতে সবিতা বলে, তুই করবি আমায় বিয়ে তখন ?
                    (ক্রমশ)

  গল্পকার কৌশিক দে       
               শরৎ বোস রোড, কলকাতা 









 
সুখবোধ

নান্দনিক বর্ণমালা
নিমিত্ত সুখের অধীন
এ দিনের কেশভার বড় মর্মন্তুদ
রোদের নির্ভিক উৎকৃষ্টে মধুর হতে চায়
হৃদ, বেদ কত মধুর
নিরাভরণ ঔদ্ধত্যে
          তোমার স্রোতস্বিনী.....

ওগো কেশভার
আমার বিরস দিনের বিরল কাজ নন্দন রচনা কর-

শুষ্কতা

রুক্ষ পাথুরে মাটি লাগিয়েছিল চারাগাছ
বরাদ্দ ছিল যথেষ্ট জল সঞ্চিত যত সার
রাজার তর সয় না তাকে নিয়ে
তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে তার

রাজা বেরিয়েছেন বাগান পর্যবেক্ষনে
ঘুরতে ঘুরতে সেই সব কচি গাছের সামনে
সোহাগ স্পর্শে আহ্লাদে আটখানা
বুকের ভিতর লাফিয়ে লাফিয়ে

একসময় ছাড়িয়ে গেল তাঁর মাথা
হাসি বদলে এল করুন কান্না
এ গাছে নেই ফুল, ফল, পাতা

শুধু কাঁটা সর্বস্ব, বিশ্ব ছায় কাঁটাফলে, আর কিছু না

শৈশব

তোমরা দেখতেই পাওনা আমার মাথার ভেতর
যখন তখন ঢুকে পড়ে আস্ত এক অমানুষ
রাত্রির নিবিড় ঠোঁটে আমার ধমনী ও শিরা উপশিরায়
     ঢেলে দেয় তমসার স্রোত
     খুন না করে হয়ে উঠি খুনি
     ধর্ষণ না করেও ধর্ষক
     দু-চোখে শ্বাপদের এল জ্বেলে পড়তে থাকি
     অন্ধকার অধ্যায় লেখা
     নিহতের কান্নায় উথলে ওঠে হৃদয়

     ভয়াল অরণ্যের পথে যেতে যেতে
     পূর্ণ হয় বুক
     রাত্রির শেষে জড়িয়ে ধরি নিজস্ব শৈশব!


 কবি পাপড়ি দাস সরকার
       ৪১/৫ রজনী মুখার্জী রোড, কলকাতা 

 
         আসা যাওয়া   


রাতের পৃথিবী দেখার মজাই আলাদা। কোনো এক কবি বলে গেছেন, 'পৃথিবীর যদি আসল সৌন্দর্য দেখতে হয় তবে রাতের পৃথিবী দেখো।'
আ‍‌মি অবশ্য রাতের পৃথিবী দেখার সাথে সাথে কোন বাড়ির দরজায় কোন তালা লেগে আছে সেটাও দেখি। আর এরকম আমি করে আসছি বিগত পাঁচ বছর ধরে। আগে আমি কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়াতাম তবে ওখানে এখন পুলিশের টহল অনেক বেশি তাই আমার পছন্দ এখন মফঃস্বলের রাস্তা। দেখতে শুনতে বেশ ভালো বলে হঠাৎ পুলিশের সামনে পড়লে তেমন অসুবিধা হয় না। কথায় আছে, যে চোর তার শরীর লুকিয়ে রাখে সমাজের থেকে সে সবচেয়ে বেশি সাফল্য লাভ করে। আমিও এই সাফল্য লাভ করে আসছি বিগত পাঁচ বছর ধরে।
শহু‍‌রে ফ্ল্যাটবাড়ি আমার ভালো লাগেনা। সেখানে প্রধান গেট থেকে শুরু করে শিরা, উপশিরার মতো দরজা। তার উপর ইন্টারলক্‌ সিস্টেম। এর থেকে কথিত কলকাতার বাইরের বাড়িগুলো ভাল। কারণ এখানে বাড়ির দরজায় তালা ঝোলে। বাড়ির মালিক রাতে দরজায় তালা দিয়ে ভাবে সে অত্যন্ত নিরাপদ। কারণ তালা কোম্পানিগুলো বলে থাকে তাদের তালা হল ' ইউনিভার্সাল কি 'বিশিষ্ট। অর্থাৎ সেই তালা খোলার জন্য যে চাবি তা এই পৃথিবী তথা মহাবিশ্বে একটাই তৈরী হয়েছে। কিন্তু বেচারারা জানে না যে আমার মতো ডাকাতরা চাবি নিয়ে বেশি মাথা ঘামায় না। আমরা যেটা করি সেটা হল, তালার হাতলে অ্যাসিড ফেলে তা গলিয়ে দিই। একে বলে বাইপাস মেথড। এই বিদ্যা আমায় শিখিয়েছিল প্রেডিসেন্সি জে‍‌লে আমার উস্তাদ রাখিবুল খাঁ। এই অ্যা‍‌সিডের নাম কি আমি জানি না। তবে এই অ্যাসিড তালার হাতলে পড়লে মাখনের মতো তালা গলে যায়। যদিও এই অ্যাসিডের নাম জানার অনেক চেষ্টাই আমি করেছিলাম।
পার্কসার্কাসের রেললাইনের ঝুপড়িতে একডাকে চে‍‌নে আসিফ কালিককে অ্যাসিড দাদা বলে। এর কারণ তার কাছেই একমাত্র এই অ্যাসিড পাওয়া যায়। যার দাম এক লিটার আড়াই হাজার টাকা। আসিফ ভাইকে প্রশ্ন করেছিলাম, তবে সে উত্তর দয়েছিল, ভাইজান, নাম জানি না। খিদিরপুর ডকে মাল আসে। আমি নিয়ে আসি। আমিও এর নাম কো‍‌নোদিন জানতে চাইনি। তবে এখন এই অ্যাসিডের কাস্টমার অনেক।
এরপর থেকে আমি আসিফের কাছে যতবার গেছি সে কখনও নাইট্রিক, কখনও সালফিউরিক, আবার একবার বললো এই অ্যাসিড আমেরিকার এক বৈজ্ঞানিক গুপ্তভাবে তৈরী করেছে। তার নাম অনুসারে এই অ্যাসিডের নাম আর্মাড। মানুষ যখন অন্তরীক্ষে যায় রকেটে চেপে তখন তাদের এই অ্যাসিড দেওয়া হয়। প্রয়োজনে তারা ইস্পাতের মতো ধাতুও এই অ্যাসিড দিয়ে গলিয়ে দিতে পারে।
আমি আজ ঘুরলাম বাগুইহাটির অশ্বিনীনগর অঞ্চলে। বেশ কয়েকটি বাড়ি চিহ্নিত করে রাখলাম। বেশিরভাগ বাড়িতেই একটা করে তালা ঝুলছে। কিন্তু এরপর আমার এই বাড়িগুলোতে নজর রাখতে হবে। বাড়িতে কজন থাকে। কুকুর আছে কি না, বাড়ির লোক ব্যবসা করে নাকি চাকরি। এরপর আমায় আমার গ্রুপকে খবর দিতে হবে। আমি প্রতিটি অপরেশনে নতুন ছেলেদের নিয়ে কাজ করি। আমার গ্রুপে থাকে আমি ছাড়া আর দুজন। আমি ছেলে তুলি চাঁদনি বা পার্কসার্কাস থেকে। গ্রুপে বেশি ছেলে নিলে মুস্কিল। এতে সমস্যা বাড়ে। অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্টের মতো ব্যাপার।
আজ রাতের মতো আমার কাজ শেষ। এখন ভোর ৫টা বাজে। আমি বাসে করে এসে নামলাম এয়ারপোর্টের সামনের একটা মাঠে। এখানে হরির চায়ের দোকানে দুকাপ চা খাবো। তারপর সোজা বাড়ি।
হরির চায়ের দোকানে সারারাত চা পাওয়া যায়। আমায় দেখা মাত্র হরি হাসতে হাসতে বললো, দাদার আজ মনে হয় অনেক দেরি হয়ে গেল। অফিসে কাজ ছিল বুঝি!
আমি হ্যাঁসূচক মাথা নাড়িয়ে হরির বেঞ্চিতে বসে চা খেতে লাগলাম।
কিছু সময়ের পর দেখলাম এসটি মেয়ে একটি বড় ট্রলি ব্যাগ নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। আমি কিছু বোঝার আগেই বললো, আমায় একটা সাহায্য করবেন? বেশ কিছুক্ষণ ধরে হাত দেখাচ্ছি একটাও ট্যাক্সি দাঁড়াচ্ছে না। আমায় একটা ট্যাক্সি ঠিক করে দেবেন?
আমি উদাসভাবে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম, কোথায় যাবেন?
মেয়েটি বললো, এসপ্ল্যানেড। পিয়ারলেস হোটেলে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। হাত দেখাতেই একটা হলুদ ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো আমাদের সামনে।
মেয়েটির মুখ দেখে মনো হলো সে কিছুটা অবাক হয়ে গেছে। বিড়বিড় করে সে বললো, অদ্ভুদ ব্যাপার তো !
দরজা খু‍‌লে ট্যাক্সি‍‌তে ব্যাগ তুলে মেয়েটি বললো, ইয়ে মানে আপনাকে আমি লিফ্ট দিতে পারলে খুশি হবো।
আ‍‌মি চা শেষ করে বললাম, আমার এখন বিশেষ কাজ নেই। চলুন আপনার সাথেই যাওয়া যাক। চাঁদনিতে আমার একজনের বাড়িতে যাওয়ার আছে।
                                           
দুই

আমরা এখন ট্যাক্সিতে। আমার পাশে সেই মেয়েটি বসে আছে। মেয়েটির বয়স আঠাশ থেকে তিরিশের মধ্যে। গায়ের রঙ নদীর মতো স্বচ্ছ। কোঁকড়ানো চুল, পরনে টি শার্ট আর জিন্স। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটি বেশ চটপটে। কিন্তু মেয়েটা একটু ভাবুক প্রকৃতির। ট্যাক্সিতে ওঠার পর প্রায় ৫ মিনিট কেটে গেছে সে একটাও কথা বলেনি। হঠাৎ সে নিজের চিন্তার জগৎ থেকে উঠে এসে বলল, মাফ করবেন, আমি মাঝে মাঝে একটু চুপচাপ থাকি।
আমি বললাম, এতে মাফ দাওয়ার কিছু হয়নি; আমিও মাঝে মাঝে চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি। নিজেকে মানুষ কোনো গভীর চিন্তার মধ্যে রাখলে চুপচাপ হয়ে যায়।
মেয়েটি বলল, অদ্ভুদ ব্যাপার, আমি সত্যিই একট বিষয় নিয়ে গম্ভীর চিন্তায় ছিলাম।
- কি ব্যাপার?
- সেটি পরে বলবো। আপনি এত ভোরে কি অফিস যাচ্ছেন না ফিরছেন?
- আমি ফিরছি।
- কিছু মনে না করলে আমি কি জানতে পারি আপনি কি করেন? কোনো অসুবিধা থাকলে বলতে হবে না।
আমি মৃদু হেসে জবাব দিলাম, আমি পার্ট টাইমে একটা কাজ করি। নাইট টিউটি।
মেয়েটি বলল, দেখুন কান্ড, এতক্ষন হয়ে গেল আমার নামটাই আপনাকে বলা হয়নি। আমার নাম তিতলী। আপনার নাম কি?
- আমার নাম শঙ্কর, তবে আমায় অনেকে শঙ্কু বলেও ডাকে।
- শঙ্কু নামটাই ভাল লাগল। যাইহোক, আপনাকে আমি আমার সম্বন্ধে কিছু বলি। আমার আরও একটি সাহায্যের দরকার। মনে হচ্ছে আপনি আমায় সেই সাহায্যটাও করতে পারবেন।
আমি নিজেকে ট্যাক্সির সিটে হেলিয়ে দিয়ে হাই তুলতে তুলতে বললাম, বলুন।
তিতলী বলে চলল, পাঁচ বছর বয়সে আমার মা মারা যায়। তারপর আমার বাবা আমায় এখান থেকে নিয়ে ইংল্যান্ড চলে যায়। আমি ওখান থেকেই পড়াশুনো করি। বর্তমানে আমি পদার্থবিদ্যায় Ph. D করেছি।
আমি কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকালাম তিতলীর দিকে। ভাবলাম, এত সুন্দর মেয়ে পদাথবিদ্যা নিয়ে কেন পড়াশুনা কর‍‌লো। একে তো সাহিত্য নিয়ে পড়া উচিত। পদার্থবিদ্যা বা অংকের মানুষগুলো হবে চোয়ার ভাঙা, রোগা-প্যাটকা, চোখে হাই পাওয়ার চশমা। কোনো দিক থেকেই এই মেয়েকে পদার্থবিদ্যার মানুষ বলে মানাচ্ছে না।
তিতলী আমায় বলল, আমি কলকাতায় এসেছি একটি বই লিখতে। পদার্থবিদ্যার পাশাপাশি আমি লেখালেখিও করি। আমার বহু লেখা লন্ডনের পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। যে বইটি আমি এবার লিখবো আমি তার নাম দিয়েছি কলকাতা এক মায়াবী নগরি। নামটা কেমন লাগল আপনার?
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, বেশ সুন্দর হয়েছে। কি সাহায্য দরকার সেটা বলুন।
তিতলী বললো, হ্যাঁ, এবার সেটাই বলবো। কলকাতায় আমার জন্ম হলেও এই শহরের আমি কিছুই চিনি না। আর আমার বই লেখার জন্য আমায় এই শহর ঘুরে দেখতে হবে। এই শহরের আনাচে কানাচে কি ঘটছে তা জানতে হবে আর তাই আমার একজন গাইড দরকার। আমি তাকে সপ্তাহে ১০০ ডলার দেবো। এবার আপনি কি আমায় একজন গাইড জোগাড় করে দিতে পারবেন?
আমি পকেট থেকে একটা সিগারেট-এর প্যাকেট বের করলাম। তিতলী বললো, এখন সিগারেট খাবেন না। আগে আমার প্রশ্নের জবাব দিন।
আমি সিগারেটের প্যাকেট হাতের মধ্যে নাচাতে নাচাতে বললাম, ১০০ ডলার সপ্তাহে খারাপ অফার না। চাইলে আ‍‌মি আপনার গাইড হতে প্রস্তুত।
ভোরের আলার মতো মলিন হাসি দিয়ে তিতলী বললো, এতো আপনি আমার মনের কথা বললেন। আমিও এটাই ভাবছিলাম। আপনিই তা হলে আমার গাইড হবেন। তবে একটা কথা আরও বলার আছে।
আমি বললাম, আবার কি কথা! সিগারেট ধরাই এবার?
বিচলিত হয়ে তিতলী জবাব দি‍‌লো, না, আমি যখন বলবো তখন ধরাবেন। সিগারেটের ধোঁয়া আমায় গভীর চিন্তা করতে বাধ্য করে। আমি আবার চুপচাপ হয়ে যাবো। এবার শুনুন যে কথাটা বলার ছিল তা হলো, আপনার শনি-রবি ছুটি থাকবে। এবার প্রশ্ন করুন কেন?
- কেন?
- কারণ, ঐ দুটি দিন আমি কলকাতার বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে ঘুরবো। আমি সেসব জায়গায় থাকা মানুষগুলোকে অবজার্ভ করতে চাই। মানুষ যখন ভক্তি ভরে পুজো করে তখন তাদেরকে অবজার্ভ করার মধ্যে আমি আনন্দ খুঁজে পাই। আপনি যদি এসবের ক্ষেত্রে রাজি হয়ে থাকেন তাহলে জানান।
- আমি রাজি। এবার সিগারেট ধরাই?
- তাহলে আজ থেকেই আপনি কাজে‍‌ নিযুক্ত হলেন। কোনোদিন কাজে কামাই করলে সেদিনের টাকা পাবেন না। আমার হাতে সত্তর দিন সময় আছে। তারপর আমার ভিসা শেষ হয়ে যাবে। তাই আমার কাছে প্রতিটি দিন খুব ইম্পরটেন্ট। এবার আপনি সিগারেট ধরাতে পারেন।
আমার সিগারেট ধরানো হলো না। কারণ হোটেল পিয়ারলেস এসে গেছে। আমরা গাড়ি থেকে নামলাম। তিতলী গাড়ি থেকে নেমে সোজা হোটেলের ভিতরে ঢুকে যায়। আমিও তার পিছন পিছন হোটেলে ঢুকলাম। পিয়ারলেস হোটেলের ৮তলার ৪০৫ নম্বর রুমের সামনে গিয়ে তিতলী বললো, আপনি এখানে দাঁড়ান। আপনা‍‌কে আমার আরও কিছু বলার আছে। তিতলী ঘরে ঢুকে গেল। মিনিট পাঁচেক পর দরজা খুলে আমায় ভিতরে আসতে বললো। আমি ৪০৫ নম্বর রুমে ঢুকে একটি সোফায় বসলাম। তিতলীকে দেখলাম আমার মুখোমুখি বসতে। সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আপনাকে কাজে নেওয়া তো আমার হয়ে গেছে কিন্তু কাজ করার আগে আমার কিছু প্রশ্ন আছে।
আমি বললাম, বলুন।
- আপনার আমাকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই?
- নাহ্‌। মানুষকে নিয়ে আমি বেশি উৎসাহ দেখাই না। তবে একটি প্রশ্ন করতে চাই, ছোটবেলা থেকে বিদেশে থেকেও এত ভালো বাংলা কিভাবে বলেন?
- আপনার প্রশ্ন শুনে ভালো লাগলো। আপনি হয়ত জানেন না অবান্তর প্রশ্নের মধ্যে লুকিয়ে থাকে সৃষ্টির ‍‌ইতিহাস। আমার বাবা লন্ডনে যাওয়ার পরেও আমাদের বাড়িতে কঠোর নিয়ম করেছিলেন যে বাড়িতে সবাইকে বাংলায় কথা বলতে হবে। তাই আমি এবং আমার সৎ মা বাড়িতে বাংলায় কথা বলতাম। আপনাকে জানানো হয়নি যে আমার বাবা ইংল্যান্ডে গিয়ে দ্বিতীয়বার নিয়ে করেছিলেন, আমি জানি না আপনাকে আমি কেন এতসব বলছি, তবে কেন জানি আমার বলতে খুব ভালো লাগছে। আপনার আর কোনো প্রশ্ন আছে? থাকলে করতে পারেন।
- না এখন আর কোনো প্রশ্ন নেই। আমি কি তবে কাজে নিযুক্ত হলাম?
- ১০০% কাজে নিযুক্ত হলেন। আশাকরি আমার গাইড হিসেবে কাজ করে আপনার ভালো অভিজ্ঞতাই হবে। আমি এখন স্নান করে ঘুমাতে যাবো। আপনি আজ বিকেল ৪টে নাগাদ চলে আসবেন। আমরা তারপর বেরোবো।
আমি 'হ্যাঁ' বলে হোটেল থেকে বেরোলাম। সকাল সাতটা বাজে। এরপর চাঁদনি ঘুরে যেতে হবে। চোরাগলি বলে বিখ্যাত এলাকায় আসিফ বলে আমার এক পুরনো সঙ্গী আছে। আজ রাতে অশ্বিনীনগরে আমার দেখা পছন্দের বাড়িগুলো নিয়ে তার সাথে আলোচনা দরকার। ডাকাতির প্রাথমিক প্ল্যান আসিফের থেকে কেউ ভালো করতে পারে না। তারপর বাড়ি ফিরবো।
                      (ক্রমশ)


          গল্পকার কৌশিক দে
                    শরৎ বোস রোড, কলকাতা

 





         "ইতিহাসকুচি"

টেরাকোটা ঘোড়াটি বলে সেদিনের কথা।
হাহারব মাটি ঘামগন্ধ চাবুকের দাগ।
গোলাপ বাগিচার পাশে রেশমি ওড়না হাঁটে।
রম্যতার সুগন্ধি আতরবাস এখনো জড়ায়।
কবুতর সুখ।বিকেলের ধ্রুপদ-বৈঠকি রেশ
আলো-আঁধারি রাতের নাচঘরে থামে।
টুংটাং জাফরানি আলো।উদাসীন ঘোড়া
সব জানে।যুদ্ধের হিংস্র তাপ কল্প-কামানের
রূপকথা সুখ।অপরূপ মিথ্যার সুগন্ধ
প্রকৃত ফুলের চেয়ে কম নয়।কৌশল-কাব্য
দুর্বলের বাঁচার ছল।নৃতত্ত্বের পাশে অলৌকিক
নদীটি জানে হারানো সভ্যতার পাশে হাজারো
শুকনো না-য়ের মালা ঘুমিয়েছে পাথরের খাঁজে।


          কবি জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় 
                 গোপেশ্বরপল্লি,বাঁকুড়া 



শব্দ আসে কানে

আমি একা। নিঃসঙ্গ।
নিঃসঙ্গতায় বেশ ভালো আছি
দিনযাপনের শব্দ এড়িয়ে চলি।

কোন সাম্রাজ্যের উত্থান,
কোন সাম্রাজ্যের পতন হচ্ছে
তা আমার উপলক্ষ্য নয় 

ষড়যন্ত্রকারীরা এক সাম্রাজ্য ভেঙে
অন্য সাম্রাজ্য নির্মাণ করছে।

আমি শব্দ এড়িয়ে চলতে ভালোবাসি
কিন্তু ভাঙা আর নির্মাণের 
প্রচন্ড শব্দ আসে কানে...


              কবি শুভজিৎ দে
                              শাশপুর, বাঁকুড়া



                আজব সমস্যা

অফিস থেকে ফিরে দরজা খুলে ঘরে ঢুকে মাটিতে ব্যাগটা নামিয়ে সোফার ওপর ধপাস করে বসে পড়লাম। ঘর অন্ধকার। ভেতর থেকে আওয়াজও তো আসছেনা দেখছি! একটু অবাক লাগল আমার। বাবা গেল কোথায়? তাহলে কি চলেই গেল নাকি এবারের মত? ঘরগুলো ঘুরে দেখে নিশ্চিন্ত হলাম, যাক কেউ কোথাও নেই। মুখের ওপর বাবাকে চলে যাবার কথাটা বলতে হলোনা বলে একটু স্বস্তিই পেলাম আমি…হাজার হোক বাবা তো! এখন যে অবস্থাই হোক, মুখের ওপর চলে যেতে বলাটা তো আর ঠিক ভালো শোনায় না। ঘরগুলো ঘুরে আবার সোফায় এসে বসতেই একটা চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো মনের মধ্যে, এরকম ক'দিন পরপর বাবার এ বাড়িতে যাওয়া আসা যদি অব্যহত থাকে তাহলে তো ভারী চিন্তার বিষয়! আবার এসেও যে চুপচাপ নিজের ঘরে নিজের মত থাকবে তা তো না। হাঁকডাক করে বাড়ির লোকগুলোকে বিব্রত করতেই হবে ওনাকে। এই ধরুন না কেন গতকাল রাতের কথা…
     ড্রইংরুম থেকে উচ্চস্বরে ভেসে আসা টিভির আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেল আমার।খাটের ওপর উঠে বসে বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা নিয়ে দেখলাম, রাত্রি বারোটা বাজছে। রাতে একটু তাড়াতাড়িই খেয়ে শুয়ে পড়েছিলাম, ঘুমও এসে গেছিল প্রায় সাথেসাথেই। আর তাই এই কাঁচা ঘুমটা ভেঙে যাওয়ায় মাথাটা গরম হয়ে গেল। কোনো আক্কেল নেই নাকি বাবার? এই রাতবিরেতে এত জোরে টিভি চালাবার অর্থটা কী? হ্যাঁ, মানছি বাবার ইনসমনিয়া আছে। রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়েও ঘুম আসেনা। কিন্তু তাই বলে গাঁকগাঁক করে টিভি চালিয়ে দিতে হবে? একবার ভাবলাম বাবাকে গিয়ে বলি টিভিটা বন্ধ করতে, কিন্তু আবার মনে হল এই রাত্রিবেলা বাবার সাথে অযথা ঝামেলা করে কি লাভ! বাবাকে এখন কিছু বলতে গেলেই হয় হম্বিতম্বি করবে, আর নয়ত করুণ চোখে তাকিয়ে বলবে,"খোকা, এই বুড়ো মানুষটাকে এমনি করে বলিসনা রে। বুড়ো হওয়ার অনেক জ্বালা….." ইত্যাদি ইত্যাদি।
     গায়ে একটা চাদর ঢাকা দিয়ে খাটের ওপর আবার লম্বা হয়ে শুয়ে পাশবালিশটা চাপিয়ে দিলাম কানের ওপর। এসিটাকেও চালিয়ে দিলাম হাত বাড়িয়ে। শব্দটা এবারে একটু কম লাগছে কানে। ভাগ্যিস মৌ এখন বাড়িতে নেই! নইলে এক্ষুনি একটা দক্ষযজ্ঞ শুরু করে দিত ঘরের মধ্যে। বাবার এইসব উদ্ভট কার্যকলাপ মৌ মোটেও বরদাস্ত করতে পারেনা। আর ইদানিং তো বাবার উপস্থিতিই ওকে হাইপার করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর সেইসব কিছু মৌ উগড়ে দেয় আমার ওপর। আর আমার তো শিখণ্ডীর দশা, না বলতে পারি বাবাকে কিছু আর না মানতে পারি মৌকে।
     তা যা বলছিলাম, মৌ তো গেছে বাপের বাড়ি। এমনিতে অবশ্য তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ে রাগ,অভিমান করে ঘন ঘন বাপের বাড়ি পাড়ি দেবার অভ্যাস আছে মৌ-এর। তবে এবারের কারণটা কিঞ্চিৎ সিরিয়াস, এবং অবধারিতভাবে বাবা ঘটিত।
      দিন তিনেক আগে অফিস থেকে ফেরার পর আমি আর মৌ ঠিক করেছিলাম, দু'জনে মিলে একটু বেড়িয়ে আসবো। একসাথে অনেকদিন যাওয়াও হয়না কোথাও, তাই ইভিনিং শোয়ে একটা মুভি দেখে ডিনারটা নাহয় বাইরে থেকে করে আসবো। তা সেই উদ্দ্যেশ্যে মৌ তখন সাজগোজ করছে, প্রায় রেডি। শাড়ি পড়া শেষ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে ফিনিশিং টাচ দিচ্ছে; এমন সময়ে পাশের ঘর থেকে ভেসে এলো বাবার ডাক,"বউমা, মাথাটা বড্ড ধরেছে। কড়া করে এককাপ চা করে নিয়ে এসো তো। তারপর আমার এখানে বসে বেশ করে আমার মাথাটা একটু টিপে দিও"। বাবার এই আকস্মিক ডাকে প্রথমে খানিক হকচকিয়েই গেছিলাম। তারপরে সামলে উঠে মৌ-এর দিকে তাকিয়ে দেখি, ওর মুখটা কিরকম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। হাতের লিপস্টিকটা ঠক করে নামিয়ে রেখে একবার তাকালো আমার দিকে, আর একবার দেওয়ালের দিকে। তারপর দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠল," এসবের মানে কী শুনি? আমি আর এই বাড়িতে এক মূহুর্তও থাকবো না। তুমি থাকো তোমার বাবাকে নিয়ে। মুভিটা বরং তুমি ওনার সাথেই দেখো। আমি চললাম বাপের বাড়ি।তোমার মা তো দিব্যি বসে আছেন বোনের বাড়ি গিয়ে। অবশ্য এখানে থাকলে তোমার বাবার জ্বালায় অ্যাদ্দিনে ওনাকে পাগলাগারদে ঠাঁই নিতে হত মনে হয়।"
     আমি বার কয়েক আমতা আমতা করে "আহা ঠান্ডা হও", "বাপের বাড়ি যেওনা" এসব বলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু মৌ-এর রণরঙ্গিণী মূর্তির সামনে থই করতে পারলাম না বিশেষ। মৌ সেই পাড়ি দিল বাপের বাড়ী, ব্যাগপত্তর গুছিয়ে। আমি বাড়িতে বসে রইলাম একা, ভ্যাবলার মত। বাবাকে গিয়ে দু'টো কথা বলে আসতে পারলে ভালো হত, কিন্তু সেটা করা তো আবার আমার পক্ষে সম্ভব না। যতই হোক আর যেমনই হোক, বাবা তো!
     মৌ চলে যাবার পর একবার ভেবেছিলাম মা'কে একটা ফোন করি। কিন্তু এসব শুনলে মা আবার উল্টে চেঁচামেচি করে প্রেসার বাড়িয়ে ফেলবে। তাই সে চিন্তা বাদ দিলাম মাথা থেকে। এদিকে মৌ চলে যাওয়ায় আমি যতই অপ্রস্তুত হই না কেন, বাবা কিন্তু আছে দিব্যি খোশমেজাজে। হুকুম করে আমাকে দিয়েই চা বানিয়েছে। আবার রাতে বাবার জন্যে দোকান থেকে কিনে আনতে হয়েছে ফ্রাইড রাইস আর চিলি চিকেন। মৌ যে ঘটা করে সন্ধ্যায়  থেকে চলে গেছে সেকথা ভুলেই গেছে মনে হয়। এই এক বিচ্ছিরি রোগ আছে বাবার, ভুলে যাওয়া রোগ। অ্যাদ্দিন রোগটাকে খারাপই ভাবতাম, কিন্তু এখন দেখছি সুফলও আছে কিছু। সবকিছু ভুলে-টুলে গিয়ে ভালো থাকা যায় কিন্তু!
     রাতে শোবার আগে মৌ-কে ফোন করেছিলাম একটা। কিন্তু সে তো মুখের ওপর "বাবা যদ্দিন থাকবে আমি আর ওই বাড়ীর গণ্ডি ডিঙাবো না" বলে কট করে ফোনটা কেটে দিল। নাহ্, গলা শুনে মনে হল মৌ বেশ সিরিয়াস। এবার আমাকে কিছু একটা করতেই হবে….. বাবার সাথে মুখোমুখি বসে এই সমস্যার একটা মীমাংসা করতেই হবে। এই বাড়িতে বাবার হুটহাট হাজির হওয়াটা এবার কিছু একটা করে আটকাতেই হবে।
     গ্র্যান্ডফাদার ক্লক'টার ঢং, ঢং আওয়াজে চমক ভাঙলো আমার। ঘড়িতে দেখলাম ছ'টা বাজছে। বাড়ি  থেকে বাবার চলে যাবার কথাটা মৌকে জানাতে হবে আবার। সবচেয়ে ভালো হয় ওর বাপের বাড়ি গিয়ে ওকে নিয়ে আসতে পারলে, যাই ফ্রেশ হয়ে ওদের বাড়িই চলে যাই। খুশি হবে ও আমায় দেখলে।
     বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে ঘরে ঢুকলাম জামা চেঞ্জ করতে। তখনই চোখ চলে গেল পাশের দেওয়ালটার দিকে, বাবার ছবিতে টাঙানো মালাটা ফ্যানের হাওয়ায় দুলছে অনবরত। ছবিতে বাবার ভোলেভালা মুখটা দেখলে কেউ কি বিশ্বাস করবে বাবার কীর্তিকলাপের কথা? মাসদু'য়েক আগে গত হবার পর থেকে বাবা যেভাবে আমাদের নাকানিচোবানি খাইয়ে চলেছে, তা সত্যিই বেশ অভিনব!
     বেঁচে থাকতে বাবার ছিল আলজাইমার্স। হরদম ভুলে যেতেন সব কথা। তা বাবা তো শেষমেষ দেহত্যাগ করলেন, কিন্তু ভুলে যাওয়ার স্বভাবটা বাবাকে আর ত্যাগ করলনা! এখন বাবা মাঝেমধ্যে ভুলে যান উনি জীবিত, নাকি মৃত! আর তখনই ঘটে বিপত্তি। আগের অভ্যাস মত বাড়ীতে হাজির হয়ে শুরু করেন হাঁকডাক। আবার ওনার বর্তমান অবস্থায় এখানে আসাটা যে ঠিক না, সেটা মনে পড়ে গেলে চলেও যান হুট করে। এই কয়েক দিনে আমি কিছুটা মানিয়ে নিলেও মৌ একেবারেই হজম করতে পারেনা বিষয়টা। অবশ্য ওকেও তার জন্যে দোষ দেওয়া যায়না। বেঁচে থাকতে বাবাকে যতই ভালবাসিনা কেন, অশরীরী বাবার উপস্থিতি তো আর বিশেষ সুখপ্রদ হতে পারেনা। তাই না! বহু মাথা খাটিয়েও এই অদ্ভুতুড়ে সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় আমি অন্তত খুঁজে পাইনি...আপনাদের জানা থাকলে বলবেন কিন্তু অবশ্যই!!

        গল্পকার দেবলীনা ব্যানার্জী
                              টিকরহাট, পূর্ব বর্ধমান








উত্তম মাতাল

মাতাল উত্তম কুমারকে একদিন সিঁড়ির রেলিং ধরে ঝুঁকে
কারো সঙ্গে কথা বলতে দেখেছিলাম । হলের নাম চিত্রালয় ।
ছবির নাম মনে নেই । সিনেমা ভাঙার পর
হল ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় লক্ষ্য করেছিলাম- হলের সব সিঁড়ি এবং রেলিং তখনো মাতাল । পঞ্চাশটা বছর খরচ করে ফেলেছি একটাকার নোটের মত । মাতালও দেখেছি দেখেছি আরও অনেক । তাদের কারও তেমন নেশা দেখিনি, যা একজন থার্ডপার্সন সিঙ্গুলার নাম্বারকেও মাতাল করতে পারে ।

উত্তমবাবু সেদিন খুব রেগে রেগে কথা বলছিলেন ।
রাগের সময়ও কোনো মানুষকে এতো সুন্দর দেখায় ! যাকে ভৎসনা করছিলেন তিনি হয়তো সেই সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন ।
সেই ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী কে ছিলেন আমার মনে নেই। আমি তো সেদিন তাকে দেখিইনি । ছবির নাম মনে নেই । হয়তো তেমন ছবি কখনো তৈরিই হয়নি ।



টাইটানিকের রোজ

১৯১২ সালের ডুবে যাওয়া টাইটানিকের
এক সুন্দরী যাত্রী 
১৯৯৭ সালে রোজ নাম নিয়ে ফিরে আসে আমার কাছে 
জ্যাক নামে ডাকে আমাকে

এখনো সেই রোজ আসে রোজ রোজ 
আর আমি ডুবে আছি সমুদ্রের তলদেশে 

জেমস ক্যামেরন সাহেব তাকে পাঠিয়ে দেন 
অথচ তারই পরিকল্পনা অনুযায়ী
আমি রয়ে গেছি আটলান্টিকের তলায় 

উঠে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করছি 
আমার দিকে হাত বাড়িয়ে রেখেছে সুন্দরী রোজ 
একদিন না একদিন আমি উঠে আসবোই



তুলসী-ম্যাজিক


তুলসী চক্রবর্তীর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে পাঠকের 
সত্যজিৎ বাবুর পরশ পাথরটির কথা মনে করুন একবার 
মনে পড়ে যাবে সেই বিস্ফারিত,উজ্জ্বল,হতবাক চোখজোড়া 

পরশুরামের গল্পটিকে অনেকেই পরাবাস্তবতার গল্প বলেন
আমাদের দেখা তুলসী-ম্যাজিকটি কিন্তু ছিল
চূড়ান্ত বাস্তব এবং স্পর্শপাথর 

হয়তো এখন তাঁকে কেউ চিনতে পারবেন না
অত বড় বিশাল শরীর আর নেই 
বিস্ময়ের বিকল্প হয়ে ওঠা সেই চোখ 
কিংবা তাঁর উপস্থিতির চারদিকে আর টগবগ করে না স্ফূর্তি
হয়তো তিনি এখন একজন নিরীহ বাঙালি কবি 
সারাদিন উঠতে বসতে আহার করেন লাঞ্ছনা 


     কবি দিশারী মুখোপাধ্যায়
          দুর্গাপুর,পশ্চিম বর্ধমান 




"জমকালো রবিবার সংখ্যা ১" এর লেখকসূচি:

স্মৃতিচারণ: সিদ্ধার্থ সিংহ

স্মৃতি আলেখ্য:  ঋভু চট্টোপাধ্যায়

মুক্তগদ্য: অন্তরা দাঁ

কবিতা: দিশারী মুখোপাধ্যায়, হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজিত রেজ, সঞ্জয় চক্রবর্তী, স্বপন জায়দার, শৌভিক চ্যাটার্জী, সৌমিত্র শীল, সুনন্দ মণ্ডল এবং সৌমিত্র মজুমদার ।

ছোটগল্প: রিঙ্কি বোস সেন, সমাজ বসু, চয়ন কুমার রায়, সুমিতা চক্রবর্তী

প্রবন্ধ: শেখ আসমত, মধুমিতা রায় চৌধুরী, শৌভিক চ্যাটার্জী

চলচ্চিত্র আলোচনা: অভিষেক ঘোষ, দেবজিৎ সাহা


সম্পাদকীয়: 

 "For me, the human face is the most important subject of the cinema."
              -Ingmar Bergman

অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করবেন এই সংকটময়  পরিস্থিতিতে চলচ্চিত্র অর্থাৎ সিনেমা বিষয়ক সংখ্যার    প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? সেই দিক থেকে দেখতে গেলে      সিনেমা হয়তো রাতারাতি কোনো মিরাক্যাল ঘটিয়ে কোভিড সমস্যার সমাধান করতে পারবেনা কিন্তু
তাই বলে সিনেমার ভূমিকা কম হয়ে আসেনা। আসলে সিনেমা যে পর্দায় ভেসে ওঠা কিছু চলমান ছবির প্রদর্শনী ছাড়া ও আরো অনেক বেশি,এই সত্য আমরা অনেকেই মেনে নিতে পারিনা। শুধুই বিনোদন মাধ্যম হিসাবে দেখি সিনেমাকে।অনেকক্ষেত্রেই সিনেমার প্রভাবকে খাঁটো করেও দেখা হয়।তবু কবিতা,গান বা অন্যান্য সৃজনমূলক মাধ্যমের মতই সিনেমার ও গুরুত্ব অপরিসীম ।একথা জোর দিয়ে বলাই যায় যে একমাত্র  চলচ্চিত্রই সেই মাধ্যম যার সাথে আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে আরো বেশি করে মেলাতে পারি। আর এর মধ্যেই সিনেমার প্রকৃত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে । 

তবু আমাদের দুর্ভাগ্য যে বর্তমানে এই জনপ্রিয় মাধ্যমটিতে ও প্রচুর পরিমাণে বেনোজল ঢুকে গ্যাছে । শুধুমাত্র বক্স অফিসকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে এমন সব কুরুচিপূর্ণ সিনেমা বানানো হচ্ছে যা আমাদের তরুণ সমাজকে আরো বিপথে নিয়ে যাচ্ছে । তবু আমরা এটা কখনই অস্বীকার করতে পারিনা যে সিনেমা আমাদের মন,মানসিকতা এমনকি ব্যবহারের ও আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে।পরিশেষে একথা বলাই যায় সিনেমা আমাদের যা দিয়েছে এবং আমরা নিজেরা যা বিশ্বাস করি এই দুইয়ের মধ্যে যতদিন আমরা ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবো ততদিনই সিনেমা আশীর্বাদ হয়ে থেকে যাবে।

সিনেমা নিয়ে অনেক জ্ঞানের কথাই বলে ফেললাম । যার বেশিরভাগই আমি না লিখলেও আপনারা অধিকাংশই নিশ্চিতভাবে জানেন । ভালবাসা সকলকে যারা সময় নিয়ে এই লেখাটি পড়লেন। একমাত্র লেখাই হোক আমাদের পরমতম আশ্রয়স্থল । তাই এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে আপনার যারা কলমের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের সকলের জন্য হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে ভালবাসা ও শ্রদ্ধা। চলুন আমরা সবাই একই সাথে স্পন্দিত হই।গড়ে তুলি অক্ষর পরিবার।







         যন্ত্রণার গল্প  


আকাশের গায়ে ঝুলে থাকা লতাপাতা গুলো
তুলে এনে তুলসীতলার পাশের মাটিতে লাগালাম
সমান্তরাল গতিতে যৌবনের নির্যাস নিয়ে
মাটি কামড়ে বড়ো হতে থাকা কদুগাছের 
প্রেমে পড়ে যায় পরগাছাটি
বৃষ্টিভেজা পায়ে নূপুর পরিয়ে দেয়
এখন আমার সঙ্কোচ হয়
তুলসী তাকিয়ে থাকে ব্যাকুল হয়ে
অজস্র স্বপ্নের ভীড়ে মৃদু হাসিতে নোঙর ফেলে
স্থির দৃষ্টির বাহ্য দৃশ্যসুখ গায়ে মাখে
পাখির শিস ব্যালকনিতে ধাক্কা খায়
শিশির হতে চেয়ে ভোরের কাছে চিঠি লিখে
জংলী ফুলের সুবাসে পাগলি বৃষ্টি হাসে
অবুঝ প্রেমের হাঁটা পথে হাঁপিয়ে ওঠে
আকাশ সব দেখে লতাপাতাদের ফের কোলে নেয়
তখনি বুঝলাম আমি মৃতের দলে।



          কবি মাহামুদাল হাসান

                                রতনপুর,মুর্শিদাবাদ



"এক সিনেমাপ্রেমীর স্মৃতিকথা"


চন্দ্রভূষণবাবুর মধ্যম পুত্র সৌরাশিষ বড্ড একবগ্গা। তাকে সামলাতে মা-বাবাকে জোর হিমসিম খেতে হত। লোকে বলে, মেজো ছেলেরা একটু গোঁয়ার গোবিন্দ গোছের হয় ।ছেলেকে বাগে আনতে শাসনের পাশাপাশি এই সন্তানটির প্রতি মনের গভীরে একটা বিশেষ স্নেহরসের ফল্গুধারা নিঃশব্দে বয়ে যেত। এর মধ্যে একটা মনোবিজ্ঞান নিশ্চয়ই কাজ করে। না, এখনকার কথা নয় ।সৌরাশিষ এখন সত্তর ছুঁইছুঁই। বর্তমান কালের এক বা দুই সন্তানের জনক -জননীর পক্ষে এই অনুভূতির মাধুর্য উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। 
সৌরাশিষের ছোট থেকেই সিনেমাপ্রীতি প্রবল। গ্রামের ছেলে। মাত্র দ‌শবছর বয়সে একটা তথ্যচিত্র দেখেই সিনেমার প্রেমে পড়ে। তারপর থেকে সুযোগ পেলেই ঊনিশ পয়সা জোগাড় করে সিনেমা হলের দিকে ছুটত। অবশ্য সেকালে ছোটদের হাতে টাকা দূর অস্ত, পয়সাও তেমন কেউ একটা দিত না। সেটা শহরের কোন আত্মীয় বাড়ি গেলেই সম্ভব হত। কারণ সেখানে তো বাবার কঠোর শৃঙ্খলার আওতায় থাকতে  হত না । 
সেযুগে গ্রাম ও শহরের মধ্যে দ্রুতগতির মোটর, বাস ইত্যাদি যানবাহনের মাধ্যমে যোগাযোগ ছিলনা বললে অত্যুক্তি হয় না। বড়জোর কয়েকজনের এক -আধটা বাই সাইকেল ছিল। কাজেই শহরে যেতে হলে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার হাঁটা অথবা গো-যান ছিল ভরসা। 
সৌরাশিষ আর তার বন্ধুদের কাছে এটা এমন কোন দুরূহ বাধা ছিল না। ওর বয়স তখন চৌদ্দ। অ্যানুয়্যাল পরীক্ষা শেষ। চারবন্ধু পরিকল্পনা করল, বিষ্ণুপুরে সিনেমা দেখতে যাবে। সৌরাশিষ লুকোচুরির ধার ধারতো না। সকালেই ঘোঁতঘোঁত করে বাবাকে তাদের পরিকল্পনার কথা সবিশেষ জানিয়ে দিল। চন্দ্রভূষণবাবুও এককথায় তার আবেদন, না তার আগ্রহে জল ঢেলে দিলেন। 
'কে কে যাবে? কীভাবে যাবে? '
বন্ধুদের নাম জানিয়ে বলে, 'ট্রেনে যাবো। '
বাড়ি থেকে স্টেশন ছ'কিলোমিটার দূরে। 
'শীতের রাতে থাকবে কোথায়? ',
সৌরাশিষ বিজ্ঞের মতো বলে, 'সে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। '
চন্দ্রভূষণ হাসি চেপে গম্ভীর গলায় বিচারকের রায় দেবার মত বলেন, 'যাওয়া হবে না। '
'আমি যাবোই। '
'কেমন করে যাও দেখি। ' বলেই টেনে নিয়ে গিয়ে ওপরের একটা ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন। অফিসে যাওয়ার সময় স্ত্রীকে বলে গেলেন, 'আমি না ফেরা পর্যন্ত কেউ দরজা খুলবে না। '
সেদিন তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরলেন। স্ত্রী কে জিজ্ঞাসা করলেন, 'খেতে দিয়েছিলে? '
তাঁর স্ত্রী উদাস কণ্ঠে বলেন, 'কাকে খেতে দেব! '
'কেন, কি  হয়েছে? '
'যাও, ওপরে গিয়ে দেখে এসো। '
দ্রুত ওপরে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। দরজার হুড়কো দিয়ে জানালার একটা রড বাঁকানো। জানালার নীচে প্রতিবেশীর গোয়ালের খড়ের চাল। চন্দ্রভূষণণের আর কিছু বুঝতে বাকি থাকলো না। 
চারবন্ধু সিনেমা দেখে, একটা হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে স্টেশনে এসে হাজির হলো। ডিসেম্বর মাসের রাত। হুহু করে সূচ ফোটানো হিলহিলে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। শীতের পোশাক বলতে- গায়ে একটা সোয়েটার আর বাঁকুড়ার গুলিসূতোর চাদর। সারারাত প্লাটফর্মের কুলিদের সঙ্গে আগুন পোহায় ওরা। ভোরে ট্রেন। সবার পকেট হাতড়ে দুটো হাফ টিকিটের পয়সা জোগাড় হলো। 
ট্রেনে উঠেই এক ভদ্রলোকের সঙ্গে গল্পে জমে গেল সৌরাশিষ। অল্পসময়ের মধ্যে টিকিট চেকার এসে সৌরাশিষের কাছে টিকিট চাইতেই দুটো হাফ টিকিট ধরিয়ে দিল। টিকিট চেকার অবাক হয়ে বললেন, 'একি  তোমরা চারজন, অথচ দুটো হাফ টিকিট! তোমাদের হাফ টিকিটের বয়স‌ও তো পার হয়ে গেছে বাপধন। '
সৌরাশিষ স্মার্টলি বলে, 'দেখুন কাকু, আমাদের টিকিট কেনার টাকা ছিল না। রেল কম্পানিকে ফাঁকি দেবনা বলেই দুটো হাফ টিকিট কেটেছি। তা না হলে তো আমরা উইদাউট টিকিটেই যেতে পারতাম। '
'তাই নাকি! এতটুকু ছেলে, মুখে তো খ‌ই ফুটছে। রেল কম্পানিকে ফাঁকি তো তোমরা দিয়েছ‌ই। সেজন্য রেল পুলিশের হাতেই তুলে দেব। '
পাশের ভদ্রলোকটি এতক্ষণ রগড় দেখছিলেন। এবার টিটি'র কথায় বিরক্ত হয়ে বলে উঠলেন 'কী হচ্ছে ম‌শাই! কটা ভদ্রলোকের বাড়ির বাচ্চা ছেলে, পয়সা নেই বলে টিকিট কাটতে পারেনি। তাই বলে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন! ফাইনের টাকাটা আমি দিয়ে দিচ্ছি। কত দিতে হবে বলুন? '
টিটি গজগজ করতে করতে বলে ,'তার দরকার নেই। ওদের বলুন, ভবিষ্যতে এমন কাজ করলে বিপদে পড়বে। '
ওরা চারজন ফটাফট ভদ্রলোকের পায়ে হাত দিয়ে প্রনামটা সেরে ফেললে। 
তারপর বাড়ি ফেরার পর কী ধরনের অভ্যর্থনা পেয়েছিল সেটা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি। তবে কোন প্রকার শাসন‌ই সৌরাশিষকে সিনেমাপ্রীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনি। এই বয়সেও মাঝেমাঝে তাকে সিনেমা হলে দেখতে পাওয়া যায়।

গল্পকার চয়ন কুমার রায় 
                        টিকরহাট, পূর্ব বর্ধমান 
         



     দেখনদারী 
    
ছায়াছবি দেখে জাগে কতো শখ
হই "হিরো" সেজেগুজে,
তেল মাখা ছেড়ে শ্যাম্পু ঘষি তো
ক্রিম আনি খুঁজে খুঁজে !
নায়কের গায়ে অদ্ভুত জামা
প্যান্ট সরু নয় ঢলা...
সিনেমার ঢঙে গড়ি নিজেকে যে
পাল্টাই হাঁটাচলা।
স্টাইল আনি সে কথা বলাতেও
হাসি-কাঁদি সেই মতো,
উত্তম থেকে হালের যারা গো
কপি করি ক্রমাগত !
কিন্তু নকল করিনা কখনো
সিনেমার যেটা গল্প--
নিজের জীবনে মানিনা মোটেও
হোক সে অল্পস্বল্প,
স্বভাব করেছি কৃত্রিম শুধু
চটকদারীর ছোঁয়া
"হিরো" হওয়া সে-কি সহজ অতো গো
"জয়নগরের মোয়া !

           কবি সৌমিত্র মজুমদার
                            পূর্বাচল,উত্তর ২৪ পরগনা


    


          সিনেমার মতো

সায়রের উত্তাল তটভূমি জুড়ে সুরভিত কোনো গোলাপবাগান ।
বিশ্বাসী যে হৃদি, প্রেম-প্রেম আতরের উৎসে সহসা আবির্ভূত,
সত্যি না হলে, এ বাস্তব তার নিশ্চিত কল্পিত,
অন্ধকার ঘরে বসে দ্যাখা ঠিক সিনেমার মতো ।

মরুভূমি বুকে নিয়ে আজও জেগে আছে যে গর্বিত গতি হারানো নদীটি,
তার অভিমান, চাঁদামাছ থেকে রুপোলি কেড়েছে নির্দ্বিধায়,
যদিও অনিশ্চিত সেই রঙ অন্তর্জাত,
অন্ধকার ঘরে বসে দ্যাখা ঠিক সিনেমার মতো ।

বজ্রে আহত যে বিবস্বান, অস্তরাগের নিভন্ত আঁচে সেঁকে নেয় তার জ্বলন্ত গনগনে দেহ,
সবটাই মহড়ার শেষে উঠে আসা অভিনয় অক্লান্ত,
অন্ধকার ঘরে বসে দ্যাখা ঠিক সিনেমার মতো ।

শ্যাওলা জড়ানো বনেদি বাড়ির ছাদে, বৃষ্টির এক পশলায়,
দানা খুঁটে খাওয়া কপোত-কপোতীজোড় পুচ্ছ নাচায় ।
এখানে যে আহাম্মক, পুরোনো সেই অনুরাগ খুঁজে পায়,
তার একান্ত ইচ্ছের অপূর্ণ মেঘ ঘনায়িত,
অন্ধকার ঘরে বসে দ্যাখা ঠিক সিনেমার মতো ।

রাজছত্রের ভগ্নদশায়
ষড়যন্ত্রের জাল কেটে যে একদল বিদ্রোহী চ্যাঁচায় : "ইয়ে জো দহশতগর্দি হ্যায়, ইসকে পিছে বর্দি হ্যায়",
তাদেরও সমস্ত গোপন মনস্তত্ত্ব,
অন্ধকার ঘরে বসে দ্যাখা ঠিক সিনেমার মতো ।

           কবি সঞ্জয় চক্রবর্তী 
                         সল্টলেক, কলকাতা 





         "নিষিদ্ধ টুকটাক"

সিনেমা বিশেষ করে নিষিদ্ধ সিনেমার প্রতি মানুষের আগ্রহ অপরিসীম।এই সিনেমা দেখার বিভিন্ন অভিজ্ঞতার উপর ছোট ছোট কিছু অণু আলেখ্য লেখা হল।অনেকেই এর মধ্যে নিজেদেরও অভিজ্ঞতা খুঁজে পাবেন।বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ সবগুলিই শোনা কথার, ‘আমি’ একটা প্রকাশের মাধ্যম মাত্র ভিত্তিতে লেখা।

অণু আলেখ্য ১  

আমাদের স্কুল ছিল ঠিক টাউনশিপের মাঝখানে।স্টেশন ও বাজার দুটোর দূরত্বই প্রায় সমান।তবে বয়েস স্কুলের উঁচুক্লাসের ছেলেদের আড্ডা মারবার জায়গা ছিল শহরের প্রাণ কেন্দ্র সিটিসেন্টার।তখন ঘরে ঘরে এতটা কেবল টিভি বা স্মার্ট ফোন বা ওটিটি মাধ্যমের উৎপাত ছিল না।শহরটাতে এতো ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলও গজিয়ে ওঠেনি। ভালো ছেলে মেয়েরা অনেকেই বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করত। স্কুলে স্যার বা ম্যাডামরা দোষ করলে ছাত্র ছাত্রীদের রীতিমত লাঠিপেটা করতেন।স্বাভাবিক ভাবেই আমরাও খুব ভয় পেতাম।সিটিসেন্টারে দুটি সিনেমা হল ছিল।একটির নাম আলো, আরেকটির ছায়া।আলো সিনেমা হলটিতে পারিবারিক সিনেমা দেখানো হলেও ছায়া সিনেমা হলটিতে যে যে সিনেমা দেখানো হত তাদের পোস্টারে একটি ‘এ’ ছাপ থাকত। আর এই ছাপটিই আমাদের স্কুলের ছাত্রদের এক্কেবারে টেনে নিয়ে যেত।হেডস্যার প্রতিদিন নিয়ম করে প্রার্থনার সময় সবাইকে সতর্ক করলেও উঁচু ক্লাসের ছেলেরা কোন কান করত না।এমনকি সিনেমা হলের কোন এক কর্মীর সাথে  হেডস্যারের গোপন বোঝাপড়াও কোন কিছুতেই রাশ টানতে পারে নি।আমরা যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন ক্লাস টুয়েলভে তিনজন দাদা পড়ত যাদের অত্যাচারে স্কুলের সব স্যাররাই প্রায়ই অতিষ্ঠ থাকতেন।টুয়েলভে পড়লেও প্রায় ঐ তিনজন দাদাকে স্কুলের প্রার্থনার মাঠে কান ধরে হয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতাম অথবা কোন স্যারের হাতে মার খেতে দেখতাম।স্কুলে তিন জন স্যার ছিলেন, একজন ডি.ডি, একজন  জি.কে, আরেকজন পি.পি।এই তিনজন স্যারকে দেখতাম পালা করে ঐ তিন দাদাকে পেটাচ্ছেন।একদিন পূজার ছুটির আগে টিফিনের পর দেখলাম তিনজন স্যার ঐ তিন দাদাকে প্রার্থনার মাঠে দাঁড় করিয়ে খুব মারছেন।শুনলাম তিনজনের গার্ডিয়ান কল হয়েছে।সেদিন স্কুল খুব থমথমে ছিল।আমরা ক্লাসের মধ্যে ভয়ে কথা পর্যন্ত বলতে পারছিলাম না।কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারিনি।পরে শুনলাম তিনজন দাদা ঐ  ‘ছায়া’ সিনেমা হলে নিষিদ্ধ সিনেমা দেখতে গেছিল।হাফ টাইমে দেখে সামনে সিটে আমাদের স্কুলের ডিডি, পিপি ও জিকে তিনজন স্যারও বসে আছেন।এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। সিনেমা হল থেকে বেরোবার সময় একটা দাদা কোন এক স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,‘স্যার ভালো আছেন?’ বাকিটা ইতিহাস।

অণু আলেখ্য ২ 

সেই উনিশশো ছিয়াশি সাতাশি সাল।পাড়ায় পাড়ায় তখন ভিডিওর খুব রমরমা। হিন্দি বা বাংলা সিনেমা হল ছাড়াও ক্যাসেডের মাধ্যমে পাড়ায় পাড়ায় সিনেমা দেখানো হত।সেখানে দুপুরের দিকে এমনি নতুন হিন্দি বা বাংলা সিনেমা দেখানো হলেও রাতের দিকে সেই নিষিদ্ধ সিনেমা দেখানো হত কোন কোন দিন আবার দিনের বেলাতেও ঐ সব সিনেমা দেখাত।তখন গ্রামে থাকি, ক্লাস টু’তে।পাড়ায় একটি ভিডিও হল ছিল, আমরা সবাই বলতাম চঞ্চলদার ভিডিও হল। যদিও চঞ্চলদা সম্পর্কে আমার কাকা হতেন।প্রায় দিন শুনতাম চঞ্চলদার ভিডিও হলে পুলিশ এসেছে। বুঝতাম না ভিডিও হলে পুলিশ কেন আসবে? শীতকালের এক রবিবারে দুপুরের দিকে আমাদের খামার বাড়িতে বন্ধুদের সাথে খেলছি এমন সময় দেখি একটা কাকার বয়সি লোক খামারের পাঁচিল ডিঙিয়ে খামারের ভিতর ঢুকে পড়লেন।প্রথমে আমরাও একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম। কিছু সময় পরেই ভদ্রলোক নিজেই জানালেন, ‘ভয়ের কিছু নেই।পুলিশের তাড়া খেয়ে এখানে ঢুকে পড়েছি।’
–পুলিশের তাড়া! চোর নাকি?
আমাদের মধ্যে একটু যারা বয়সে বড় ছিল তারা জিজ্ঞেস করাতে ভদ্রলোক বললেন,‘না না আমি এই গ্রামের চাষা পাড়ার জামাই।’
কাদের জামাই সেটাও বললেন। কিন্তু তখন যেহেতু সবার কাছে ফোন ছিল না, তাই কোন কথাই যাচাই করা যায় নি।পরে শুনলাম এই জামাই বাবাজি নাকি  চঞ্চলের ভিডিও হলে আরো অনেকের সাথে নিষিদ্ধ সিনেমা দেখতে ঢুকেছিলেন।কেউ পুলিশকে খবর দিয়ে দিলে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। কিন্তু সেরকম কিছু না চেনার জন্য আচমকা আমাদের খামারের মধ্যে চলে আসেন।ও বলতে ভুলে গেছি,‘আমরা যাতে এই সব ঘটনা কাউকে না বলি তার ঘুষ হিসাবে ভদ্রলোক সেদিন আমাদের সবাইকে পাশের দোকান থেকে মিষ্টি কিনে খাইয়েছিলেন।’ 

অণু আলেখ্য ৩

তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। নিজেদেরর গ্রাম ছেড়ে এক বছর আগে থেকে বাবার চাকরি সূত্রে টাউনশিপে থাকতে শুরু করেছি।নিজেদের বাড়িতে দুর্গা ও কালি পূজা। প্রতি বছর পুজার অন্তত সাত দিন আগে থেকে বাড়িতে থাকতে হত।আমাদের নিজেদের একটা ঘর থাকলেও একটা কাকার ঘরেই উঠতাম,ও খাবার খেতাম। কাকার এক ছেলে ছিল।আমি ক্লাস সেভেন আর কাকার ছেলে ক্লাস এলেভেনে পড়ত। কিন্তু কোন কারণে আমাদের মধ্যে সেই অর্থে কোন বন্ধুত্ব ছিল না।সেই রকম বাড়ি গেছি, ঘটনা চক্রে সেইদিন কাকার শ্বশুর বাড়ি থেকেও কারা যেন এসেছিল। বাধ্য হয়ে সেদিন দাদার ঘরে শুতে হয়েছিল। দাদা কিন্তু ব্যাপারটাতে খুব একটা খুশি ছিল না। বার বার বিভিন্ন রকমের বাহানা করে আমি যাতে না শুই তার আপ্রাণ ব্যবস্থা করবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু প্রতিবার কাকিমার কাছে বকানি খাচ্ছিল।শেষ কালে দাদা কিছু না পেয়ে বলে উঠল,‘ঠিক আছে শুবি কিন্তু একটা কথা বলি রাতে আমি ভূতের সিনেমা দেখি, ভয় পেলে কিছু বলবি না।’
-ভয় পাবো কেন আমি তো সিনেমা দেখবোই না। আমি উত্তর দিলাম। রাতে ভূতের ভয়ে আগে আগেই শুয়ে ঘুমিয়ে গেলাম ।
হঠাৎ মাঝ রাতে কাকিমার চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে দেখি আমি যে বিছানাতে শুয়ে ছিলাম তার চারদিকে বড় বড় চাদর ঝোলানো রয়েছে।আমার ঘুম ভেঙে যাওয়া দেখে কাকিমা মাঝ রাতেই বলে,‘তুই আমার কাছেই শুবি চল।’ আমি কিছু না বুঝে গুটি গুটি পায়ে কাকিমার কাছেই চলে যাই। কয়েকবছর পরে আমার সাথে দাদার বন্ধুত্ব হলে সেই রাতের ঘটনা জানতে পারি। দাদা আমার বিছানার চারদিকে বড় চাদর টাঙিয়ে নিষিদ্ধ সিনেমা দেখছিল। হঠাৎ মাঝ রাতে বড় বাইরে পেয়ে যায়। টিভিটা কোন রকমে বন্ধ করেই বাথরুমে চলে যায়। ইতিমধ্যে কোন কারণে কাকিমারও ঘুম ভেঙে যায়। দাদার ঘরে ঢুকে ওরকম ভাবে বিছানার চারদিকে চাদর ঝোলানো দেখে চমকে ওঠে। কিছু একটা  বুঝে সোজা টিভি চালায়।তারপর বাকিটা এক্কেবারে ভূগোল হয়ে যায়। সে যাত্রায় আমি শুধু মাত্র ঘুমিয়ে থাকবার জন্যেই একটা বড় কলঙ্ক থেকে বেঁচে যাই।

        গল্পকার ঋভু চট্টোপাধ্যায় 
                              দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান 




"সিনেম্যাটিক ম্যাজিকের বালিকা"

আরে ওই, ওই কথাটা'ই বলছিলাম আর কী! ওই ধরুন গিয়ে বাড়ি'তে প্রথম টিভি, সে নয় নয় ক'রে মাধ্যমিকের আগে কোনো গপ্পো'ই নেই। পাশেই ছোটদাদু'র বাড়ি, মানে ঠাকুর্দা'র ভাই, তার বাড়িতে কালার টিভি! ওখানেই রামায়ণ, মহাভারতের হাতে-খড়ি, টিভি-সিরিয়াল আর কী ! 
শনিবার বিকালে বাংলা আর রোববার হিন্দি ফিল্ম। আর বুধবার সন্ধ্যেয় হতো চিত্রহার, হিন্দি ফিল্মে'র গান। পড়তে বসে সেকী কষ্ট মাইরি! তখন কিন্তু ফিল্ম রিলিজ করলো আর ধাঁ করে দিয়ে দিলো টিভি'তে, অমনি হতো না। স্টেশন বাজারে ভিডিও হল ছিলো একখানা, কি পোস্টার বাওয়া, দরমা'র দরজা হ'লে কী হয়!পোস্টারে'র চোটে পয়সা উঠে যেত মালিকে'র। 
তা যা বলছিলাম, আমাদের মানে ছোটোদের এসব দেখা'র কোন পারমিশন ছিল না, রামায়ণ মহাভারত বড়জোর টিপু সুলতান, ব্যস, কোটা শেষ, তাই ফিল্মের ওপর এক অদম্য টান অনুভব করতাম। ভিডিও হলে সিনেমা দেখা'র ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিল না, পড়া ছেড়ে উঠে দুদিন একটু চিত্রহারে'র দিকে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম বলে বাবা উঠোনের একধারে জড়ো করে রাখা বাখড়া দিয়ে বেদম পিটিয়েছিল। তবু,দখিনা বাতাস তো বয়েছে, মনও উচাটন, যত রঙিন ছবি, খবরে'র কাগজ থেকে কাঁচি দিয়ে কেটে জড়ো করেছি জীবনবিজ্ঞান বইয়ের ভাঁজে। আজ ভাবি ওই ব্যাঙে'র পৌষ্টিকতন্ত্র, আর মেন্ডেলের পর্যায়-সারনী'র থেকে আরও জ্যান্ত অনুভূতি অপেক্ষা করেছিল জীবনভর, সেদিন বুঝিনি। 'ম্যায়নে পেয়ার কিয়া' রিলিজ করেছে কিছুদিন আগেই, সলমন খান আর ভাগ্যশ্রী'র নিষ্পাপ এ্যাডোলেসেন্ট প্রেম, আন-এ্যাডাল্টারেটেড ফর্মে। পাড়া'র বিয়েবাড়ি, ছাদ্দ বাড়ি, ঘেঁটুপুজো মায় গুড়-পরবে অবধি বাজতে লাগলো "কবুতর যা যা যা..."  মনে'র কবুতর ততদিনে ডানা মেলেছে,এদিক-ওদিক, নেহাত বাড়িতে মার খাওয়ার ভয়ে, ভিডিওহলে'র দিকে করুণ চোখে তাকালে'ও, সাহস ক'রে যেতে পারিনি। সলমন খানের সেই বিখ্যাত গীটার হাতে ছবি দেখলেই, আহাহাহাহাহা...ভাগ্যশ্রী মনে হচ্ছে নিজেকে, যদিও তখনও বয়কাট, ঠাকুর'দার কড়া হুকুম চুল ছোট রাখতে হবে, অন্তত মাধ্যমিক অবধি। মানে চুলে সময় দেয়া যাবে না আর কী ! নারকেল তেল মেখে স্নান ক'রে বাঁদিকে সিঁথি কাটা মেয়েও তখন শ্যাম্পু করে করে চোখ লাল ক'রে ফেলেছে, ভাগ্যশ্রী এফেক্ট। সে'বার  সরস্বতীপুজোয় একখানা হলুদ শাড়ি পরে,ব্লাউজে অজস্র খাটো করা'র সেলাই, যত্রতত্র সেফটিপিন, সেই মাারকাটারি "...দিল দিবানা, বিন সজনা'সে মানে না ',কিন্তু মানাতে হচ্ছে জোর করে, ভালোলাগে !? 
কারণে-অকারণে তখন খোলা জানলা, বিকেল-বেলা'র ছাদ যেন রূপকথা, আর আমি সেই ভাগ্যশ্রী, অকাতরে প্রেমে পড়ে যাচ্ছি তখন, খোলা ছাদ, নীল আকাশ, চাঁদে'র রাত, নাম-না-জানা কোনো জংলীফুল, এমনকি কোনোদিন দেখা না হওয়া যুবকের সাথেও। বুকে'র মাঝে কেউ যেন হ্যান্ড-শাওয়ারে জল ছেটাচ্ছে, এমন শিরশিরানি। সবচেয়ে বেখেয়াল আমি'র ও সেকি পাগল-পাগল অবস্থা।তবু ফিল্ম'টা পুরো দেখিনি তখন, সেরকম এক রোববার, কালীপূজো'র দিন, বিকালে জমজমাট টিভি শো। কালীপূজো'য় এমনিতেই নিয়ম কিছু'টা শিথিল, অত কড়াকড়ি নেই, আমি সেই যে হাঁ ক'রে গিলতে আরম্ভ করলাম, এ্যড পর্যন্ত মুখস্থ হয়ে গেলো। শেষ হওয়ার পরও ঘোর রয়ে গেলো। রাতে খেতে ব'সে খাওয়া'য় মন নেই, ফুরফুর করছে সারা শরীর, হাল্কা, পালকে'র মত! এ্যানুয়েলে'র রেসাল্টে এসে পর্যন্ত ধাক্কা দিলো সল্লু, শালা চাঁট মারা'র মত এফেক্ট হলো! সংস্কৃত'য় প্রায় টপকে গেছিলাম আর কী, কোনোরকমে পাশ, উদোম ঝাড় খেলাম বাড়িতে। ততদিনে বইয়ের ফাঁক থেকে উদ্ধার হয়েছে সব এ্যাফ্রোডিসিয়াক ছবিটবি, বাজেয়াপ্ত হয়েছে সাধের রেডিওখানা, আর টিভি তো প্রায় নিষিদ্ধ বস্তু'র আওতায়। 

এই পরিনত বয়েসে এসে ভাবি, আজ আর কেউ আটকায় না, বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি মিলিয়ে অনেক ভালো ভালো সিনেমা দেখেছি। কিন্তু সেই অপরিনত কিশোরী মন যে আস্বাদ পেয়েছিল,একটি অগভীর, বানিজ্যিক, প্রেমের ছবি'তে, সেই স্বাদ সেই উন্মাদনা সে আর কোনো ছবি'তে পায় নি। সেই দেখাটুকু তার জীবনে ভালোলাগা ছেয়ে আশ্রয় দিয়েছে আরও অনেক টুকরো টুকরো ভালোলাগার, অবিশ্রান্ত নষ্ট্যালজিয়ার ঘূর্ণনে তার মনোজগৎ নবীকৃত হয় আজও, মূল্যহীন ছেলেমানুষী'র স্মৃতিকাতরতা আজও তার চুলপাকা বয়েসে'র সব গাম্ভীর্য উড়িয়ে বলে —মনে পড়ে?  মনে পড়ে কন্যে? 
এই পরিনত মনস্কতা আদতে কি ঠেলে দিলো বোধহীন পরিনতির দিকে অথবা ছদ্ম-অবিচলতায় মোড়া নিশ্চিত বাচালতা'র মধ্যে? কে জানে! ওগো অপরিনামদর্শী কমলকলি বালিকা মন, তুমি চিরন্তনের থেকেও ভালো গো !

                     অন্তরা দাঁ
                কাঁটাপুকুর,পূর্ব বর্ধমান















নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

  • আগস্ট (3)
  • জুলাই (22)
  • জুন (8)
  • নভেম্বর (15)
  • অক্টোবর (5)
  • সেপ্টেম্বর (81)
  • আগস্ট (66)
  • জুলাই (55)
  • জুন (56)
  • মে (57)
  • এপ্রিল (46)
  • মার্চ (15)
  • জানুয়ারী (14)
  • ডিসেম্বর (73)
  • নভেম্বর (103)
  • অক্টোবর (97)
  • সেপ্টেম্বর (101)
  • আগস্ট (120)
  • জুলাই (88)
  • জুন (76)
  • মে (63)
  • এপ্রিল (11)

🔴বিজ্ঞপ্তি:

পাঁচ মাসের বিরতি কাটিয়ে আবার ও ফিরছি আমরা। খুব শীগ্রই আসছে আমাদের প্রত্যাবর্তন সংখ্যা।

অনুসরণ করুণ

এক মাসের সর্বাধিক পঠিত পোস্টগুলি:

  • শেষ শোকসংগীত ~ গোবিন্দ মোদকের কবিতা
  • দুটি কবিতায় ~ গৌতম কুমার গুপ্ত
  • ব্রাত্য ~ বিদ্যুৎ মিশ্র'র কবিতা
  • দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প
  • আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা
  • গুচ্ছ কবিতায় ~ অসীম মালিক
  • সুমিত রায়ের গল্প
  • সে প্রেম পবিত্র~ প্রেমাংশু শ্রাবণের কবিতা
  • সুব্রত মাইতির কবিতা
  • তিনটি কবিতায় ~ রাগীব আবিদ রাতুল

বিষয়সমূহ

  • Poetry speaks 2
  • অণু কথারা 21
  • আবার গল্পের দেশে 8
  • উৎসব সংখ্যা ১৪২৭ 90
  • একুশে কবিতা প্রতিযোগিতা ২০২১ 22
  • এবং নিবন্ধ 3
  • কবিতা যাপন 170
  • কবিতার দখিনা দুয়ার 35
  • কিশলয় সংখ্যা ১৪২৭ 67
  • খোলা চিঠিদের ডাকবাক্স 1
  • গল্পের দেশে 17
  • ছড়ার ভুবন 7
  • জমকালো রবিবার ২ 29
  • জমকালো রবিবার সংখ্যা ১ 21
  • জমকালো রবিবার ৩ 49
  • জমকালো রবিবার ৪ 56
  • জমকালো রবিবার ৫ 28
  • জমকালো রবিবার ৬ 38
  • দৈনিক কবিতা যাপন 19
  • দৈনিক গল্পের দেশে 2
  • দৈনিক প্রবন্ধমালা 1
  • ধারাবাহিক উপন্যাস 3
  • ধারাবাহিক স্মৃতি আলেখ্য 2
  • পোয়েট্রি স্পিকস 5
  • প্রতিদিনের সংখ্যা 218
  • প্রত্যাবর্তন সংখ্যা 33
  • প্রবন্ধমালা 8
  • বিশেষ ভ্রমণ সংখ্যা 10
  • বিশেষ সংখ্যা: আমার প্রিয় শিক্ষক 33
  • বিশেষ সংখ্যা: স্বাধীনতা ও যুবসমাজ 10
  • ভ্রমণ ডায়েরি 1
  • মুক্তগদ্যের কথামালা 5
  • রম্যরচনা 2
  • শীত সংখ্যা ~ ১৪২৭ 60

Advertisement

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

মোট পাঠক সংখ্যা

লেখা পাঠাবার নিয়মাবলী:

১. শুধুমাত্র কবিতা, মুক্তগদ্য অথবা অণুগল্প পাঠাবেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য বিষয়ক লেখা সম্পূর্ণ আমন্ত্রিত। ২. লাইনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ৩. লেখা মেইল বডিতে টাইপ করে পাঠাবেন। ৪. লেখা মৌলিক ও অপ্রকাশিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্য কোনো ব্লগ, ওয়েবজিন অথবা প্রিন্টিং মিডিয়ায় প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ৫. মেইলে আপনার লেখাটি সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত, কথাটি উল্লেখ করবেন। ৬. লেখার সাথে আবশ্যিক ভাবে এক কপি ছবি ও সংক্ষিপ্ত ঠিকানা পাঠাবেন।  ৭. লেখা নির্বাচিত হলে এক মাসের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে। এক মাসের মধ্যে কোনো উত্তর না এলে লেখাটি অমনোনীত ধরে নিতে হবে। ৮. আপনার লেখাটি প্রকাশ পেলে তার লিঙ্ক শেয়ার করাটা আপনার আবশ্যিক কর্তব্য। আশাকরি কথাটি আপনারা মেনে চলবেন। আমাদের মেইল- hridspondonmag@gmail.com
blogger-disqus-facebook

শান্তনু শ্রেষ্ঠা, সম্পাদক

আমার ফটো
পূর্ব বর্ধমান, India
আমার সম্পূর্ণ প্রোফাইল দেখুন

সাম্প্রতিক প্রশংসিত লেখা:

সুজিত রেজের কবিতা

সুজিত রেজের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন

© হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন। শান্তনু শ্রেষ্ঠা কর্তৃৃক পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে প্রকাশিত।

Designed by OddThemes | Distributed by Gooyaabi Templates