হৃদস্পন্দন

  • Home


  • Download

  • Social

  • Feature







     ⍜ রূপক চট্টোপাধ্যায়🔸রানিবাঁধ,বাঁকুড়া🔸



আমি তোমার তর্জনীর কাছে নয়
এই  জোৎস্না ভেজা বর্ণমালার কাছে
নতজানু নিয়মই মুগ্ধ পরিব্রাজক !

ক্ষয়িষ্ণু ফুসফুসের ভেতর 
শত ময়ূরীর শ্রাবণ সঞ্চার আমি জানি। 
লঘু হয়ে আসে চন্দ্র চোখের নীচে 
আঁধার উপত্যকা পেরিয়ে
সকালের খামে মোড়া 
ধানক্ষেতের চিঠির আমিই কুয়াশা পিওন ! 

তোমার খেয়াল খুশির সন্ধি প্রস্তাব ছিঁড়ে 
এ সমুদ্র আমায় যে উচ্চারণ শিখিয়েছে 
আমি তার সব ঢেউ মাখা বুকের নাচনে
কবীরের দোঁহা মুখর মিনার তুলেছি ! 

আমি তো উড়ান বালক, বাউণ্ডুলে 
দুপুর থেকে চাতক তৃষ্ণা মেখে
ঘরে ফিরে লিখে ফেলি
হ্রদ আর হৃদয় কাহিনী ! 

উপেক্ষিত নৌকা ভ্রমণ নিয়ে
আমার চলে যাওয়া জলে
যে মরুরেখা এঁকে যাবো। জানি
তুমি হয়তো কোনোদিন সজল চুমুকে
খুলে দেখবে মেঘ চিঠির পাতায় বৃষ্টি বুনন। 




          ⍚ সুদীপ ঘোষাল🔸খাজুরডিহি, বর্ধমান🔸



Change Is the only constant in the world.    

আমরা চার বন্ধু।  রমেন, জীবন, বিশু আর আমি।যেখানেই যেতাম একসাথে থাকতাম। বিশু ছিলো আমাদের দলের অলিখিত নেতা।  নেতা তো এমনি এমনি হয় না।  তার কাজ,দল চালানোর কৌশল তাকে নেতা বানিয়েছিলো। একদিন দুপুর বেলায় সে আমাদের ডাক দিলো তার বাঁশি বাজিয়ে।  বাঁশির ডাক শুনেই মন চঞ্চল হয়ে উঠতো। ঠিক যেনো রাধার পোড়া বাঁশির ডাক।  চুপি চুপি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে বটতলায়।আমাদের মিলন অফিস ছিলো এই বটতলা।চারজন ছুটে চলে যেতাম মাঠে।সেখানে বিশুবলতো, দাড়া কয়েকটা তাল কাঁকড়া ধরি ।ভেজে খাওয়া যাবে।
বলেই হাত ভরে দিলো সোজা ধানের জমির গর্তে।  একটা মাগুর ধরেছি, বলেই মাথা টিপে হাত বের করতেই দেখা গেলো মাছ নয়একটা বড় কালো কেউটে সাপ।  বিশু সাপটাকে সাঁ সাঁ করে ঘুরিয়ে সহজেই ছুঁড়ে দিলো দূরে। তারপর তাল কাঁকড়া ধরে ভেজে খাওয়া হলো মাঠে। ভাজার সমস্ত সরঞ্জাম বিশু লুকিয়ে রাখতো একটা পোড়ো বাড়িতে। সাঁতার কাটতে যেতাম নতুন পুকুরে। একবার ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলাম তার প্রখর বুদ্ধির জোরে।  মাথার চুল ধরে টেনে তুলেছিলো ডাঙায়।
গ্রীষ্ম অবকাশে বট গাছের ডালে পা ভাঁজ করে বাদুড়ঝোলা খেলতাম বিশুর নেতৃত্বে।তারপর ঝোল ঝাপটি।  উঁচু ডাল থেকে লাফিয়ে পড়তাম খড়ের গাদায়।  এসব খেলা বিশুর আবিষ্কার।  তারপর সন্ধ্যা হলেই গ্রামের বদমাশ লোকটিকে ভয় দেখাত বিশু।  সুদখোর সুরেশ মহাজন বটগাছের ডাল থেকে শুনলো, কি রে বেটা খুব তো চলেছিস হনহনিয়ে। আয় তোকে গাছে ঝোলাই।  সুদখোর অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।  তারপর থেকে ও পথে যেত না মহাজন। সাদা চুলো গান্ধিবুড়িকে রোজ সন্ধ্যাবেলা নিজের মুড়ি খাইয়ে আসতো অতি আদরে। বিশু বলতো, আমি তো রাতে খাবো। বুড়ির কেউ নেই,  আমি আছি তো।  শ্রদ্ধায় মাথা নত হত নেতার হাসিতে। 
একবার বন্যার সময় স্কুল যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন আমাদের নেতা।  কোথাও সাঁতার জল কোথাও বুক অবধি জল। একটা সাপ বিশুর হাতে জড়িয়ে ধরেছে।  বিশু এক ঝটকায় ঝেরে ফেলে দিলো সাপটা। স্কুল আমাদের যেতেই হবে।  সাঁতার কাটতে কাটতে আমাদের সে কি উল্লাস।  যে কোনো কঠিন কাজের সামনাসামনি বুক চিতিয়ে সমাধান করার মতো মানসিকতা বিশুর ছিলো।  সে সামনে আর আমরা চলেছি তার পিছুপিছু।  শেষ অবধি পৌঁছে গেলাম স্কুল।  হেড মাষ্টারমশাই খুব বাহবা দিলেন স্কুলে আসার জন্য।  তিনি বললেন, ইচ্ছা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
টিফিনের সময় ছুটি হয়ে গেলো।  আসার সময় একটা নৌকো পাওয়া গেলো।  মাঝি বললেন, আমার বয়স হয়েছে আমি একা অতদূর নৌকা বাইতে পারবো নি বাবু। তাছাড়া আমার এখনও খাওয়া হয় নি।
বিশু সঙ্গে সঙ্গে নিজের টিফিন বের করে দিলো। আমরাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো টিফিন বের করে দিলাম।  মাঝি ভাই বললেন, এসো সবাই এক হয়ে খেয়ে লি।  তারপর নৌকার কান্ডারি হলো বিশু। আর আমরা সবাই মুড়ি মাখিয়ে খেতে শুরু করলাম।  মাঝি ভাই ও বিশু খেলো।  ধীরে ধীরে পৌঁছে গেলাম গ্রামে। মাঝি ভাইকে পারিশ্রমিক দিয়ে বিদায় জানালাম।
পরের দিন রবিবার। রঙিন সকাল।  আকাশে মেঘের আনাগোনা। কাশের কারসাজি নদীর তীর জুড়ে।  বন্যার জল নেমে গিয়েছে। পুজো পুজো ভাব। বিশু কাশফুলের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। কয়েকদিন হলো তাকে দেখা যাচ্ছে না।  
আমি ঘুরতে ঘুরতে পুজো বাড়ির ঠাকুর দেখতে গেলাম। সেখানে দেখি বিশু হাতে কাদা মেখে শিল্পীকে সাহায্য করছে।  তিন দিন ধরে এখানেই তার ডেরা।এখন তার মনে বাজছে ঢাকের ঢ্যামকুড়াকুড়। মন মন্দিরে তার দুর্গা গ্রামদেশ ছাড়িয়ে অভাবি বাতাসে বাতাসে। পুজো বাড়িতে আমাকে দেখেও কোনো কথা না বলে হাঁটতে হাঁটতে বাইরে চলে গেলো।
আমি জানি সে এখন চাল, ডাল নিয়ে সর্দার বুড়িকে রেঁধে খাওয়াবে।  সে বলে, ওর যে কেউ নেই। ও খাবে কি?  
বিশুর বাবা বছরে একবার বাড়ি আসেন। তিনি ভারতীয় সৈন্য বিভাগে কাজ করেন। বাড়িতে এলেই বিশুর হাতে হাতখরচ বাবদ তিনি বেশ কিছু টাকা দিয়ে যান। সেই টাকা বিশু লোকের উপকারে কাজে লাগায়।
বড়ো অবাক হয়ে ভাবি, ছোটো বয়সে এতবড় মন সে পেল কোথা থেকে?

স্কুলের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় আমাদের চার বন্ধুর বাড়ির গার্জেনরা শলা পরামর্শ করে হোষ্টেলে থাকার কথা বললেন।  দায়িত্ব নিলো বিশু।  কিন্তু হেড মাষ্টারমশাই বললেন, সেশনের মাঝে হোষ্টেল পাবি না।  ঘর ভাড়া নিয়ে চারজনে থাক।  পরীক্ষা এসে গেছে।  কাছাকাছি থাকিস তিনটি মাস।  রেজাল্ট ভালো হবে।
ঘুরে ঘুরে অবশেষে ভাড়া ঘর পেলাম। কিন্তু বাড়িওয়ালার পাশের প্রতিবেশি বললেন, সাবধান ওই বাড়িতে ভূত আছে। আমরা ভয় পেয়ে তিনজনে বলে উঠলাম, তাহলে অন্য ঘর দেখি চল।
বিশু বললো, টাকা দেওয়া হয়ে গেছে।  ভূতের বাড়িতেই থাকবো।  বিশু যখন সঙ্গে আছে, ভয় কি তোদের।
তার অভয় বাণী ভরসা করে আমরা মাল পত্তর নিয়ে ঢুকে পড়লাম লড়াইয়ের কোর্টে।  ক্যাপটেন বিশু বাড়িটা এক চক্কর পাক দিয়ে হাতে একটা লাঠি নিয়ে বললো, চলে আয় ভূতের বাচ্চা। আমরা ওর সাহস দেখে অবাক হতাম। রমেন বলে উঠলো, ভূতের শেষ দেখে ছাড়বো।জীবনের মরণের ভয় একটু বেশি।সে কাঁপা গলায় বলে উঠলো, যদি গলা টিপে ধরে ভূত। বিশু বললো,  ভয় নেই, আমি একাই একশো।  তোর কিছু হবে না। হলে আমার হবে।
এই বাড়ির নিচু তলায় কিছু অসামাজিক লোকের কাজকর্ম বিশু এক সপ্তাহের মধ্যেই টের পেয়ে গেলো। তারাই এই ভূতের ভয় দেখায়। একদিন জীবন বাথরুম গেছে এমন সময় নাকি সুরে একজন বলে উঠলো, এঁখান থেকে পাঁলা। ঘাড় মটকে দেবো। আবার একদিন রমেন ভয় পেলো।ঠিক সেই বাথরুমে। বিশু তদন্ত করে দেখলো বাথরুমের ভেন্টিলেটার ভেঙ্গে একটা সরু দড়ি ঢোকানো হয়েছে।  বাইরে গিয়ে দেখলো দড়িটা নিচের ঘরের বারান্দায় শেষ হয়েছে।  বাথরুমে ভাঙ্গা কাঁচে টান পরলে বিকট আওয়াজ হয়।  আর মুখ বাড়িয়ে মুখোশ পড়ে নাকি সুরের কথায় সকলেই ভয় পাবে। বিশু বললো সবাই তৈরি থাকিস। আজ রাতেই ভূত ধরবো।
আজ আর কেউ স্কুল গেলাম না।  একটা উত্তেজনা রাতে জাগিয়ে রেখেছে।  এবার সেই বিকট শব্দ। বিশু বাঘের মতো লাফিয়ে লাঠি হাতে নিচের তলায় গিয়ে জলজ্যান্ত ভূতের পাছায় লাঠির আঘাতে ভূতকে কাবু করে ফেললো।  ভূত বাবাজি জোড় হাতে বলছে, ছেড়ে দাও বাবা আমি আর ওসব করবো না।  ভূতের সঙ্গীরা সব পালিয়েছে, আমাদের হাতে লাঠি দেখে।  বিশু বললো, যাও, যেখানে বিশু আছে সেখানে চালাকি করার চেষ্টা কোরো না।বিপদে পড়বে।
তারপর থেকে আর কোনোদিন ভূতের উপদ্রব হয়নি সেই বাড়িতে।
বিশুর বাহাদুরি দেখেই আমরা সাহসী হয়ে উঠেছিলাম। বিশুর সঙ্গে আমরা বেরোলে সকলের চোখেমুখে একটা সাহসের,শান্তির ছাপ ফুটে উঠতো। পাড়ার কোনো মানুষ বিপদে পরলে বিপদের বন্ধু এই টাইগার বিশুকেই স্মরণ করতো। তার সঙ্গে আমরা তো থাকতাম অবশ্যই। রমেন, জীবন,বিশু,আমি একবার বন্যার সময় নৌকা করে মানুষের খাবার জোগাড় করতে চড়খী গ্রামে গিয়েছিলাম। হেলিকপ্টার থেকে চিড়ের বস্তা,গুড়ের বস্তা ফেলছে চড়খীর ব্রীজে যার আসল নাম কাশীরাম দাস সেতু। সেখান থেকে আমরা চিড়ে, গুড়ের পাটালি নৌকায় তুললাম। রমেন পেটুক। বললো, একটু টেষ্ট করলে হয় না। বিশু বললো, এখন এটা সকলের সম্পত্তি।  যা হবে সকলের সামনে হবে। কেউ হাত দিবি না। এখন তাড়াতাড়ি চল। বান বাড়ছে। বিশু দাঁড় টানে আর আমরা সবাই সাহায্য করে নৌকা ও খাবার নিয়ে চলে এলাম নতুন পুকুরের পাড়ে। সেখানে বাড়ি বাড়ি সকলকে সমানভাবে খাবার ভাগ করে দিলো বিশু। তারপর আমরা বাড়ি এসে  জীবনের মায়ের হাতের রান্না, গরম খিচুড়ি আর পেঁপের তরকারি খেলাম।  অমৃতের স্বাদ। বিশু বললো, কাকীমা অনেক পেঁপে গাছ পড়ে গেছে বন্যার স্রোতে। আমরা আপনাকে অনেক পেঁপে এনে দেবো। সেবার বন্যায় পেঁপে, গ্রামের লোকের প্রাণ বাঁচিয়েছিলো। আমাদের গ্রাম অজয় নদীর ধারে।  গ্রামগুলিও খুব নীচুস্থানে অবস্থিত।  নদীর নাব্যতা বা গভীরতা অল্প। ফলে বন্যা প্রায় প্রতি বছর দেখা দিয়ে যেতো। জল যখন কমে যেতো তখন তোতনের মা ও পাড়ার মা বোনেরা মাঠে মাছ ধরার জন্য যেতো। নানারকমের শাক, ঢোল কলমি, শুশুনি তুলতো।  খুব ভালো লাগতো নানারকমের মাছ ভাজা খেতে। আমি দেখলাম,
তোতনের মা মাঠ থেকে দুই তিন রকমের শাক তুলেছে। ওরা ভিটামিন বোঝে না, শরীরচর্চ্চাও বোঝে না।  ওরা জানে খাটবো, রোজগার করবো আর খাবো পেট ভরে। মাঠেই পাওয়া যেতো বেশির ভাগ শাক, সব্জী। 
খলসে ও আরও নানারকমের মাছ মাঠের জলে সাঁতার কেটে বেড়াতো। 
বেলে, তে চোখো,চ্যাঙ,ছিঙুরি,গচিমাছ ছাড়াও ছোটো কাঁকড়া, তাল কাঁকড়া পাওয়া যেতো।গর্তে হাত ঢুকিয়ে বিশু অনেকবার তাল কাঁকড়া বের করে আমাদের দেখিয়েছে। 
পাঁকাল,গুঁতে,কৈ,মাগুর,ল্যাটা প্রভৃতি অসংখ্য মাছ।বিত্তি পেতে দিতো স্রোতের মুখে।
বিশু বলছে, খাল কেটে মাঝখানে বিত্তি পেতে জল যাওয়ার নালা কেটে দিতো। মাছ লাফিয়ে ওই গর্তে পড়তো। টানা জাল,পাতা জাল দিয়ে মাছ ধরতো। এখন তোতনের মায়ের জায়গায বৌমা মাঠে যায়। কিন্তু কৃষিকাজে সার, ওষুধ প্রয়োগ করার ফলে সেইসব মাছ ইতিহাসের পাতায় চলে গেছে। শাকপাতাও পায় না মা বোনেরা। এখন সব বাজারমুখী।।  তখন শাক আঁচলে করে নিয়ে গিয়ে বাউরীবউ মুড়ি নিয় আসতো চাষি বাড়ি থেকে। মাঠের টাটকা শাক সবাই নিতো জলের দরে।  আজ আর টাটকা কিছু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশুর কথা একশো শতাংশ সত্য। এখন আমরা বড় হয়ে গেছি।  কিন্তু, স্বর্ণ যুগের সেইসব স্মৃতি মনের মণিকোঠায়
চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
বিশুর কথা ভোলা যায় না। স্কুলের বন্ধু হলেও হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরদিনের মতো ঠাঁই করে নিয়েছে সে। জোর করে কারও হৃদয় দখল করা য়ায় না। তার জন্য নীল আকাশের মতো হৃদয়ের প্রসারতা চাই। বললো,অনুপম। অনুপম তার দলবল নিয়ে স্কুল থেকে ছাত্রদের ও ছাত্রীদের পুরী বেড়াতে নিয়ে গিয়ে ছিলো। অনুপম জনপ্রিয় ভালো গৃহশিক্ষক। একটা ঘর ভাড়া করেছিলো শহরে। অনুপমের বয়স বত্রিশ বছর। ছাত্রদের বলতো,স্যার বলবি না। ওসব ভালো লাগে না। দাদা বলবি বা নাম ধরেও ডাকতে পারিস। অন্তরের ভালো লাগা বা শ্রদ্ধা থাকলেই অনেক। যদি তোদের মধ্যে একটা হৃদয়ে জায়গা হয় আমার সেটাই যথেষ্ট। গুঁতিয়ে হরিনাম হয় না রে। সামনে ভক্তি আর পেছনে গালাগালি। পছন্দ করি না কাকা।
ছাত্রদের মধ্যে বিশু খুব ডানপিটে ছেলে। অনুপম দাদা বাথরুমে গেলেই তার আলনায় ঝোলানো জামার পকেট থেকে সিগারেট বের করে খেতো। অনুপম জানতো। কিছু বলতো না। পড়ানোর সময় বলতো,সিগারেট খেলে ক্যানসার হয়, ধর্ষণ করলে ফাঁসি হয়। তবু কিছু মানুষ এগুলো ভুলে যায়। সাবধান। শুধু পড়াশোনা নয়। মানুষ হতে হবে।
বিশু পুরী বেড়ানোর দলে ক্যাপটেন। অনুপম ছেলে মেয়েদের দেখাশোনার দায়িত্ব বিশুর ওপর দিয়েছে। তাদের জন্য জান দিতেও পিছুপা হবে না বিশু,একথা সবাই জানে।
ট্রেনের সিট খুঁজে সবাই উঠে বসলো জগন্নাথ এক্সপ্রেস। ঠিক পরের দিন দশটার সময় পৌঁছে গেলো পুরী হোটেলে। সেখানে একটা সুন্দর ফুলের বাগানে তারা অনেক ছবি তুললো। রবি একটা ফুল তুলেছে। গোলাপ। হোটেলের মালকিন ডেকে পাঠালেন স্যারকে। বললেন,হাজার টাকা ফাইন দিতে হবে। যারা ফুলের মর্যাদা দিতে জানে না, গুণীজনের মান দিতে জানে না, তাদের শাস্তি হওয়ায় উচিত। স্যার অগতির গতি বিশুকে ডেকে পাঠালেন। বিশু এসেই ম্যাডামকে বললো,ম্যাডাম আমাদের দলে একটি ছেলে ভুল করেছে। ভুল তো মানুষের হয়। কিন্তু আপনি তার থেকে বড়ো ভুল করতে চলেছেন।
------ কি রকম ভুল?
---- আপনি গোলাপের চারায় পিঁপড়ের সারি দেখেছেন?
-----কই না তো?
-----আমি কিন্তু প্রথমেই দেখেছি, এবং সকালবেলা দোকান থেকে গ্যামাক্সিন পাউডার কিনে এনেছি। পিঁপড়ে মারার বিষ।
--- দেখলে আমিও আনতাম। দিন ছিটিয়ে দিন। একবেলাতে মরে যাবে।
----হ্যাঁ,আপনার ফাইন কতো?
-----না,না আর দিতে হবে না। ফুল যে ভালোবাসে। তা ব্যাথা বোঝে, আমি তাকে শ্রদ্ধা করি।
এমনি কত সমস্যা যে বিশু চুটকিতে সমাধান করে দিতো তার ইয়ত্তা নাই। নুলিয়াদের সঙ্গে সমুদ্রে স্নান করতো। সে যেনো সমুদ্রের সন্তান। কত সখ্য জলের সঙ্গে। ভাসিয়ে রাখতো তাকে মায়ের আদরে। ঝুলু,মিলু জিজ্ঞেস করতো, আমরা কেন ওর মতো হতে পারি না। ম্যাডাম বলেছিলেন,ওসব মন কোটিতে গুটি। ওসব মনের তল পেতে গেলে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে হবে ওর হৃদয় রঙে।
তারপর আমরা ফিরে এসেছিলাম। আমরা প্রত্যেকে উপহার দিয়েছিলাম আমাদের প্রাণের বিশুকে। দুদিন পরে দেখলাম ও সব উপহার বিলিয়ে দিচ্ছে বায়েনপাড়ার বন্ধুদের।
বিশু ও আমরা তখন, বিল্বেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার বন্ধু ছিল অনেক। তার মধ্যে সর্দার ছিলো বিশু। এখন যার কথা বলবো তার নাম অলক।বাড়ি তার কোমডাঙ্গা। স্কুলে যত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো তার প্রধান দায়ীত্বে থাকত আমাদের দলের প্রধান বিশু। আর কান টানলেই মাথা আসে। হাত বাড়ালেই বন্ধুদল হাজির। বিশু মানেই আমরা সবাই। আমাদের বন্ধুরা এই পরোপকারী নির্ভিক নেতার ভক্ত।

স্কুলে ঠিক হলো এবার রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠান হবে সন্ধ্যাবেলায়। নাটক,আবৃত্তি,গান সব হবে। হষ্টেলের ছেলেরা বললো,বিশুদা তোমাকে থাকতে হবেই।বিশু বন্ধুদের কথা ভেবে বললো,আমাদের বাড়ি অনেকদূর।প্রায় চার ক্রোশ দূরে।হেঁটে আমরা যাওয়া আসা করি
দিনেরবেলা বলে সম্ভব।
মাষ্টারমশাই বললেন,বিশু তুমি আর তোমার দলবল থাকবে। তোমাদের ছাড়া অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। প্রয়োজনে রাতটা হষ্টেলে কাটাবে।
বিশু বললো,তাই হবে স্যর। অসুবিধা হবে না। তবে রাতে থাকা যাবে না।
----কেন? কি এমন রাজকাজ আছে তোমার?

----স্যার,আমার গ্রামের ডোম পাড়ার তিন বুড়ির কাছে আমি রাতে থাকি। তাদের সুবিধার জন্য রাতে আমি কোথাও থাকি না।

মাষ্টারমশাই বিশুকে চেনেন, জানেন।চোখের জল আড়াল করে বললেন,বেশ তাই হবে।

তারপর চলে এলো ২৫শে বৈশাখ। দিনের বেলা বলা হলো সকলের বাড়িতে। দুপুরে ঘুমিয়ে নিলাম সবাই।তারপর সকলকে সঙ্গে করে বিশু চললো স্কুলে।কোমডাঙ্গার অলক চলে এলো আমাদের সঙ্গে। আলপথে হেঁটে চলে এলাম কাঙরা গাবা। সেখানে একটা কাঁদর।তার পাশে একটা ঝুড়ি নামা বটগাছ।দিনের বেলাতেই জায়গাটা অন্ধকার। বিশু বললো আমি রাতে ফিরবো। তোরা হষ্টেলে থেকে যেতে পারিস। আমি বললাম,না আমরা সবাই বাড়ি ফিরবো। বিশু বললো,তাই হবে।

তারপর কাঁদর পেরিয়ে চলে এলাম হেঁটে স্কুলে। তারপর কাজ শুরু হলো। বিশু ঘোষকের ভূমিকায়।বড় সুন্দর অনুষ্ঠান পরিচালনা করে বিশু। প্রথমে লীলা উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করলো,আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে"। তার  পর সভাপতি নির্বাচন।প্রদীপ প্রজ্জ্বলন,প্রধান অতিথি বরণ হলো।সকলে কবিগুরুর গলায় মালা দিলেন। তাঁর সম্বন্ধে দু চার কথা বললেন। 
আমি বললাম,সভাপতি নির্বাচন আগে করলে হত না। বিশু বললো,জানি সব জানি। তবে কি জানিস,আমার প্রিয় কবির জন্মদিনে গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো করার মত তাঁকে আগে বরণ করলাম। বাংলার মাষ্টারমশাই বললেন,তুই বিশু যাই করিস আমাদের ভালো লাগে। চালিয়ে যা।তারপর নাটক হতে হতে রাত দশটা বেজে গেলো।বিশু তাড়াতাড়ি স্যারের হাতে দায়িত্ব দিয়ে আমাদের কাছে চলে এলো। হষ্টেলে খাওয়া হলো। তারপর বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ির উদ্দ্যেশে।

আমরা দুটো হ্যারিকেন এনেছিলাম।রতন বললো,বিশু হ্যারিকেন দুটো জ্বালিয়ে নি। বিশু বললো,অনেকটা পথ। দুটো হ্যারিকেন একসাথে জ্বালাস না। একটা হলেই হবে। আমি সামনে থাকবো। আর সাপ খোপ আছে। সবাই পা ফেলবি পরিষ্কার জায়গায়।
তারপর বিশু সামনে আর আমরা পিছনে। বেশ দ্রুত হাঁটছি আমরা। খিড়কি পুকুর,বটতলার মাঠ,তেমাথার মাঠ পেরিয়ে আমরা চলে এলাম কাঙরা গাবায়। এখানে একটা কাঁদর আছে। ছোটো নদীর মত। এবার পার হতে হবে। আমরা গামছা পড়ছি এমন সময় দেখলাম অলক প্যান্ট জামা পরেই জলে নামছে। বিশু বললো,অলক তুই সাঁতার জানিস না। পাকামি করিস না।
বিশু ছুটে গিয়ে অলককে ধরতে গেলো আর সঙ্গে সঙ্গেই এক বিকট হাসি অলকের মুখে। যে অলক সাত চরে রা কাড়ে না সেই অলক ভূতুড়ে হাসি হাসতে হাসতে কাঁদরের জলের উপর দিয়ে হেঁটে পার হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি বললাম,বিশু অলক কই? বিশু বললো,এই কাঙরা গাবায় ভূত আছে। এসব তার কাসাজি। শুনে রতন ও আমি বু বু করতে লাগলাম ভয়ে। বিশু বললো,চল ওপাড়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাই। আমরা কাঁপতে কাঁপতে জল পার হয়ে ছুটে চলে গেলাম অনেক দূরে। বিশু বললো,হ্যারিকেন দুটো ফেলে এসেছি। চল নিয়ে আসি। আমরা বললাম,বিশু তোর পায়ে পড়ি বাড়ি চল। হ্যারিকেন চুলোয় যাক।

তারপর বিশু ও আমরা অলকের বাড়ি গেলাম। বাড়ি যেতেই ওর বাবা বাইরে এলেন। বিশু বললো,কাকু অলক ফিরেছে। কাকু বললেন,না তো।সে কোথায় গেলো। বিশু সব ঘটনা খুলে বললো।কাকু বললেন,চলো আমরা সবাই থানায় যাই। সেখানে একটা খবর দেওয়া দরকার। আমি জানি কাঙরা গাবায় তেনারা থাকেন। রাতে তোমাদের যাওয়া ঠিক হয় নাই গো।

থানায় মেজবাবু সব শুনে বললেন,কাল সকাল অবধি অপেক্ষা করুন। দেখা যাক লাশ পেলেই সব বোঝা যাবে।
বিশু বললো,ও মরে নি। হাওয়ায় উড়ে গেছে। মেজবাবু বললেন,ঠিক আছে। সব কথাই শুনে রাখলাম। দেখা যাক এটা নিশি ভূতের কাজ কি না?
থানা থেকে বেড়িয়ে আমরা সবাই অলকের বাড়িতে থাকলাম আর বিশু চলে গেলো তার নিজের কাজে।ও বললো,সকালবেলা আমি আপনার বাড়ি চলে আসবো কাকু। আপনি চিন্তা করবেন না। নিশি ভূত কাউকে প্রাণে মারে না।
এই বলে সে চলে গেলো ডোম পাড়ার বুড়িমার কাছে।
কাকু বললেন,বিশু ঠিক বলেছে। আমার অলক ঠিক ফিরে আসবে।
তখন কোনো মোবাইল ছিলো না। ল্যান্ড ফোন দু একটা বাড়িতে ছিলো। বিশু সকলের বাড়ি গিয়ে বলেছিলো,ওরা সবাই অলকের বাড়িতে আছে।কাল দুপুরের খাবারের নিমন্ত্রণ করেছেন কাকু।বিকেলে সবাই চলে আসবে।

আমরা সবাই রাত জেগে গল্প করে কাটিয়ে দিলাম। অলকের বাবা লিকার চা করে খাওয়ালেন। ধীরে ধীরে পূব আকাশে সূর্য উঠলো।সব ভয় সরে গিয়ে আলো ফুটে উঠলো।

সবাই আমরা উৎকন্ঠা নিয়ে বসে আছি। কখন আসবে বিশু। ঠিক সকাল দশটায় পুলিশের গাড়ি চলে এলো গ্রামে। আমরা সবাই অবাক হয়ে দেখলাম পুলিশের গাড়ি থেকে নামছে অলক। এর মধ্যে বিশুও হন্ত দন্ত হয়ে আমাদের কাছে এসে বললো,যাক কাকু, অলক এসে গেছে। মেজবাবু কাকুকে বললেন,এটাই আপনার ছেলে অলক তো?
---- হ্যাঁ স্যার।
----আমাদের থানার আশেপাশে ঘুরতে দেখে ওকে নিয়ে এলাম। আমাদের স্থির বিশ্বাস ছিলো এটা অলক। ওর মুখে সব কিছু শুনলে বুঝতে পারবেন ওর সমস্যা। যাই হোক, আমরা আসি।
পুলিশের গাড়ি চলে গেলো। প্রায় দুঘন্টা হলো অলক ঘুমিয়ে আছে। দুপুর একটায় ওর ঘুম ভাঙ্গলো।বিশু জিজ্ঞাসা করলো,তোর কি হয়েছিলো বল তো অলক?
অলক বলতে শুরু করলো তার অলৌকিক কাহিনী।

সে বললো,আমরা সবাই যখন কাঙরা গাবায় কাঁদর পার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখনই আমাকে খনা গলায় নিশি ভূতটা বললো,কি রে তোর বাড়ি গিয়ে ডাকলাম। সাড়া পেলুম না। তাই গন্ধ পেয়ে এখানে এলাম। চল আমার সঙ্গে তোকে হাওড়া ব্রীজ দেখিয়ে আনি। আমি বললাম,এই রাতে বন্ধুদের ছেড়ে আমি হাওড়া যাবো না। নিশিটা বললো,যা বলবো শুনবি।তা না হলে উঁচু থেকে ফেলে দেবো।আমি আর ভয়ে কথা বলিনি। নিশি আমাকে উড়িয়ে নিয়ে গেলো হাওড়া ব্রীজে। আমি ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম। তারপর যখন নিশিটা আমাকে নিচে নামালো তখন জ্ঞান এলো। নিশি বললো,কেমন লাগছে। কি খাবি বল। তারপর আবার বললো,গঙ্গার জলে সাঁতা কাটবি নাকি?
আমি বললাম,আমি সাঁতার জানি না।
নিশি বললো,আমি থাকলে ওসব কিছু দরকার হয় না। এই বলে আমাকে ওপর থেকে গঙ্গার বুকে ঝুপ করে ফেলে দিলো।তারপর জামাটা মুঠো করে পুুতুলের মত তুলে নিয়ে ওপরে এলো।আমি ভাবলাম, আমার জীবনের শেষ দিন আজকে। নিশি মনের কথা জানতে পেরে বললো,আমরা প্রাণে মারি না কাউকে। শুধু ঘুরে বেড়াই।কাজ করি। তারপর দিনের আলো ফুটতেই নিশিটা পালিয়ে গেলো।

আমি দেখলাম একজন ভদ্রলোক আমার হাতে একশো টাকা দিলেন। তিনি বললেন,তোমাকে দেখে তো ভালো ছেলে মনল হচ্চে।তা তুমি এখানে কেন?
আমি বললাম, আপনি বিশ্বাস করবেন না আমার কথা। আমাকে নিশি ভূতে এখানে এনেছে।
ভদ্রলোক বললেন,আমি বিশ্বাস করি। তুমি সাবধানে যাবে।
আমি বললাম,আমাকে কাটোয়ার ট্রেনে চাপিয়ে দেবেন।
ভদ্রলোক বললেন,নিশ্চয়। ভোর চারটে পাঁচের ট্রেনটা পাবে চলো।
আমি তার সাথে চলে গেলাম। তিনি বললেন,মর্নিং ওয়াকে এই পথেই আমার আসা যাওয়া। তাই তোমার সঙ্গে দেখা হলো। যাও আর কোথাও নাববে না। সোজা বাড়ি চলে যাও।
অলক বললো,বুঝলাম অনেক ভালো লোক কলকাতায় আছেন। তারপর ট্রেন থামলো থানার কাছের স্টেশনে। সেখান থেকেই পুলিশ আমাকে ধরে আর এখানে নিয়ে আসে।
অলক আবার বললো,আমি আরও একটু ঘুমোবো। কাকু বললেন,ভাত খেয়ে নে। অলক বললো,পরে খাবো।
অলক খেলো না বলে বিশু ও আমরা না খেয়ে চলে এলাম। কাকু আর জোর করেন নি।  

ছোটো থেকে বড়ো  হলো।সত্যি কি বড় হলো।
বন্ধুর বলতো ওর বয়স বেড়েছে,মনটা কিন্তু শিশুর মতো রয়ে গেছে। ছোটোবেলায় কেউটে সাপ ধরা,গঙ্গা সাঁতার কেটে পেরোনো,গ্রামে গিয়ে ভূত ধরা সব মনে পরে বন্ধুদের। বাউড়ি বৌকে নিজের খাবার দিয়ে দিতো বিশু। সেই বিশু আজ নিজে একমুঠো খাওয়ার জন্য ছাত্র পড়ায়।বিয়ে করেছে সে।একটা কন্যা সন্তান হয়েছে।তারা গ্রামের বাড়িতে বড়দার কাছে থাকে।বড়দাকে মাসে পাঁচশো টাকা দিয়ে আসে।বিশু বাসা ভাড়া করে থাকে শহরে।একটা বোতল আর বিছানা তার সম্পত্তি।খাওয়াটা বেড়ার সস্তার হোটেলে সেরে নেয়। একটা ট্রেনের যাত্রীর মত তার জীবন।তবু তার মনে আনন্দের অভাব ছিলো না। আনন্দের ফেরিওয়ালা সে।কারও কোনো অসুবিধা হলেই তার ডাক পড়তো আগে।এবার বিশু চললো গঙ্গার ধারে নীলুদার আশ্রমে। নীলুদা বললেন,ওই তো সামান্য রোজগার। নিজেই সব খেয়ে নিলে পরিবারকে খাওয়াবি কি?
বিশু বললো,দাদা,তোমার ঘাড়ে বোঝা হয়ে যাবো আমি।তুমি সাধক মানুষ।তোমার অসুবিধা হবে না তো? নীলুদা বললেন,আমি ওসব বুঝি না।যদি আমি খেতে পাই। তোরও একমুঠো হবে।যা ওপরের ঘরে যা। রাত হোলো।বিশুর ঘুম আসে না,গঙ্গার ধারে ওপাড়ে মরা মানুষ পুড়ছে।শবদেহের পোড়া গন্ধ ভেসে আসছে।হঠাৎ বিশু শুনতে পেলো,কিঁ রেঁ,ভয় পাঁচ্ছিস? বিশু তাড়াতাড়ি নীচে নেমে এলো।নীলুদা বললেন,কি রে ঘুম আসছে না? এই নে খা। তারপর গিয়ে শুয়ে পড়।মোরোব্বা খেয়ে ঠাকুরকে প্রণাম জানিয়ে বিশু শুয়ে পড়লো।ঘুম ভাঙ্গলো একদম সকালে। সকালে হরিনাম শুনলো।মন্দিরের সিঁড়িতে জল দিয়ে ধুয়ে ফুল রাখলো।তারপর চলে গেলো ছাত্র পড়াতে।সেখানে চা বিস্কুট খেলো
পরপর বারোটা অবধি ছাত্র পড়াতো।যেসব ছাত্ররা স্কুলে যেতো না,তারা ফোন করে ডেকে নিতো বিশু মাষ্টারকে। ছাত্রদের সঙ্গ তার ভালো লাগতো।তবে দু একটি বাড়িতে ছাত্রের অভিভাবক বসে থাকতেন। পড়ানো পরখ করতেন। তারওপরই মাষ্টারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করতো।একবার এক বড়লোকের বাড়িতে মালকিনের ধমকে সে অপমানিত হয়ে পড়ানো ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলো।কারণ,ছাত্র প্রথম স্থান অধিকার করতে পারে নি।বিশু বলেছিলো,এবার পারেনি,আসছে বার পারবে নিশ্চয়।মহিলা বলেছিলেন,সরকারি চাকরি পাবে না,সেকেন্ড হলে। ফার্ষ্ট হতে হবে। আমি অন্য মাষ্টার দেখবো।বিশু ছেড়ে দিয়েছিলো পড়ানোটা।তারপর এলো সুখবর।নীলুদা বললেন,তুই মায়ের সেবা করে যা। মা তোকে দেখবেন।সত্যি,মা দেখেছিলেন।জীবনের কঠিন সময়ে মা সত্যিই একটা পার্শ্বশিক্ষকের চাকরী পাইয়ে দিয়েছিলেন। বিশুর ভাই খবর পাঠালো,দাদা গ্রামের স্কুলে দু হাজার টাকায় পার্শ্ব শিক্ষক নেবে। তুমি আ্যপ্লাই করো।বিশু পেয়ে গিয়েছিলো চাকরীটা।টিউশানির থেকে ভালো।মাইনে কম হলেও নিশ্চয়তা আছে।বিশু বন্ধুদের বললো।বন্ধুরা বললো,তুই সকলকে সাহায্য করিস। তোর কোনোদিন অভাব হবে না। মানুষের আশীর্বাদ তোর সঙ্গে আছে। তারপর নীলুদার আশীর্বাদে বিশুর নিজস্ব বাড়ি হোলো।আর বাসা বাড়ি নয়।নিজের বাড়িতে নিয়ে এলো মেয়ে আর বৌকে।  চারদিকে বাঁশের বেড়া। কাছেই একটা গরীব পাড়া আর একটা পুকুর।সাপের রাজত্ব।সেখানে ঘর বাঁধলো বিশু। একবার রাতে বিরাট এক গোখরো ঢুকে পড়লো বিশুর ঘরে।ফণা তুলে ফোঁস ফোঁস করছে সাপটা।মশারির ভেতরে বৌ আর ঘুমন্ত কন্যা। বিশু এক হাতে লাঠি নিয়ে ফণা চেপে ধরলো সাপটার। আর অন্য হাতে সাপের লেজ ধরে ঝুলিয়ে নিয়ে এলো বাইরে।
তারপর বনের ভিতর ছেড়ে দিলো সাপটা। রাত হলেই তার উঠোন দিয়ে চলাচল করতো নানারকম সাপ।ডোমনা চিতি,শাঁখামুটি,চন্দ্রবোড়া,গোখরো কিছুই বাদ ছিলো না। সকলে বলতো মাঝমাঠে বাড়ি করলে ওইরকমই হয়। বিশু কি করে বোঝাবে,সে প্রকৃতির সন্তান। এই বন,জঙ্গল,সাপ তার বড় প্রিয়। সে সবাইকে নিয়ে আনন্দে থাকতে চায় না। কিন্তু মানুষ, সবাইতো আর সমান হয় না। প্রতিবেশিদের একজন তাকে শিক্ষা দিতে চায়,গাড়ি,বাড়ি আর নারী, ভেবেচিন্তে নিতে হয়। বড় নিষ্ঠুর কিছু মানুষ। গাড়ি,বাড়ি জড় পদার্থের সঙ্গে মায়ের তুলনা করে।বিড়বিড় করে সে। মনে ভাবে,আমি বিশু, আমার সামনে যা তা কথা বলে পার পেয়ে যায় এখন মানুষ।কিন্তু জানে না,এই বিশু ওদের শায়েস্তা করতে পারে এক মিনিটে।কিন্তু সময় বড় বিচারক।সে আজ বিশুকে কঠিন লড়াইয়ে নামিয়ে দিয়েছে। জীবনে টিকে থাকার লড়াই। এই যুদ্ধে ক্রোধের জায়গা নেই। ক্রোধকে জয় করার লড়াইয়ে জিততে হবে। তবেই হবে তার জয়।
সে এখন তার বাড়িতে অনেক ফুল গাছ লাগায়।আর অনেক ফুলের মাঝে সে সহজ হয়ে যায়।
ভাটফুল,ঢোল কলমি,পাহাড়ি কলমি র ফুলের ঘ্রাণে, প্রাণে ভারতবর্ষের নির্মল সুন্দর গন্ধ ভেসে ওঠে।সুবাসে মন মাতোয়ারা। বসন্তের রঙ বাহারি ফুলের গানে হৃদয় দুলে ওঠে বিশুর।
ফল গাছের মাঝে বসে সে ভাবে পুরোনো দিনের কথা। সে জানে, change is the only constant in the world.
বিশু ভাবছে পুরোনো দিনের কথা, শীতকালে বন্ধুরা গোল হয়ে বসতাম।মাঝখানে জ্বলতো আগুন। পাতা চোতা কুড়িয়ে দিতাম আগুনে। আগুন নিভতো না। সেই আগুনে সেঁকে নিতাম হাত পা। আবার বাড়িতে গিয়ে মায়ের রান্নাঘরে মাটির তৈরি উনুনে সেঁকে নিতাম শীতল হাত,পা। মা সরজুগুলি,পিঠে বানাতেন। উনুনের ধারে বসে নলেন গুড়ের সঙ্গে আয়েস করে খেতাম। পায়েস খেতাম শেষ পাতে। রকমারি খাবারের সুগন্ধে মৌ মৌ করতো মায়ের হেঁসেল ঘর। পালো, বলে একরকমের খাবার মা বানাতেন যত্ন করে। সকালে উঠেই পালো খেয়ে ভুরিভোজ সারতাম। তারপর পিঠে রোদ লাগিয়ে  সরব পড়া। বোঝার থেকে চিৎকার হতো বেশি। আনন্দ পেতাম সরব পড়ার প্রতিযোগিতায়। পাশের বাড়ির বন্ধুদের সরব পাঠের আওয়াজ পেলেই,ততোধিক জোরে শুরু করতাম পাঠ। স্কুলে গিয়ে তার আলোচনা হতো ক্লাসে। আরও জোরে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিযোগিতা চলতো মাসের পর মাস। কোনো দুঃখ,কষ্ট আমাদের মনে রেখাপাত করতে পারতো না। জীবনের আনন্দ ছড়ানো থাকতো ধুলো জোড়া  পথে। এই ধুলো,মাটির সুগন্ধ আমাদের ভারতবর্ষের প্রাণ।
বিশু ভাবে,জন্মালাম মানুষ হয়ে অথচ মানুষের কিছু করতে পারলাম না,এই শোকে বিশু মনে মনে কাঁদে।
 বিশুর তার বন্ধু অলকেশকে ভোলে নি ।সে বিশুর খুব প্রিয় ছিলো। অলকেশ শান্ত ভদ্র ছেলে।লেখাপড়ায় খুব ভালো।পরোপকারী।ভালো চাকরী করে। তার ভাই নিখিলেশ আরও ভালো চাকরী করে।বাবা পেনশন ভোগী।অলকেশের কাছেই বাবা,মা থাকেন।তারও এক কন্যা। আর আছে তার স্ত্রী।সেও স্কুল শিক্ষিকা।এই অবধি সব ভালো।হঠাৎ মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়লো।ধনেপ্রাণে মারার রোগ।পৃথিবীটা অলকেশের কাছে বড় শূণ্য হয়ে ঘুরতে লাগলো।জীবন অর্থহীন মনে হোলো।মাসে দুলক্ষ টাকা খরচ। তাহলে কিছুদিন মাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে। এখন কোন দিকে যাবে অলকেশ।সব আয় এক করেও তো মাসে দুলক্ষ হবে না। অলকেশের মা বললেন, আমাকে বাড়ি নিয়ে চ।আমার কিছুই হয় নি।মনের জোরের কাছে ক্যান্সার হেরে গেলো...
আজ দশ বছর পরেও অলকেশের মা জীবিত।
বিশুর মুখে সত্য ঘটনা শুনতাম গল্প শোনার আগ্রহে। একবার বিশু তার মামার বাড়ি নিয়ে গেলো আমাদের।বিলের ধারে বনভোজনের জন্য বসেছি।এমন সময়ে,মুর্শিদাবাদের বিলে সত্তরজন লোক নিয়ে বাসটি জলে পরলো সেদিন ঠিক সেই সময়ে বিলের পাড়ে এসেছিলো প্রকৃতির সন্তান বিশু।তার মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে,বন্ধুদের নিয়ে।
বাসটা জলে পরা মাত্র পাড়ে বাঁধা নৌকো খুলে মাঝিকে পাঠালো মাঝ বিলে। আর নিজে ডুব সাঁতারে প্রায় তিরিশ ফুট নিচে নেমে তুলে আনলো প্রাণ। আবার ডুব দিলো। এইভাবে প্রায় দশজনের প্রাণ বাঁচালো বিশু।নৌকায় তুলে, নিয়ে এলো বিলের পাড়ে। তাদের মধ্যে একজন মারা গেলো। আর বাকি নয়জনকে পাঠিয়ে দিলো হাসপাতালে।
জনতা রেগে আগুন ধরিয়ে দিলো আর একটি বাসে।
বিশু বললো,এসো আমরা সবাই প্রাণ বাঁচাই। আগুন ধরিয়ে কোনো সুরাহা হবে না। তার কথায় কাজ হলো। সবাই একত্রে বাঁচালো আরও প্রাণ। আর বাকি মানুষগুলো মরে ভাসতে থকলো চোখের সামনে,মরা মাছের মতো। বিশুর চোখ থেকে কয়েকফোঁটা জল পরলো শান্ত বিলের জলে। জলের ভাষা পড়তে জানে বিশু। সে শুনতে পেলো,একটা পাগল বলছে, আমার তো অপরাধ নেই। শান্ত বুকে আছাড় মেরে মানুষ মারার দল টাকার লোভে আইন মানে না।রাস্তায় চলার নিয়ম জানে না।  তবু তোমাকে আমি শ্রদ্ধা জানাই বিশু।তুমি প্রকৃতির  সন্তান। এই পাগলটা বিশুকে খুব ভালোবাসতো।সে তাকে বলতো,তুই আমার ভগবান বিশু...

বিশু বলতো, ভগবান নই, আমি মানুষ।মানুষের জন্য তাই আমার হৃদয় কাঁদে।

বিশুর বয়স বাড়ছে আমাদের বয়সের তালে তালে। কিন্তু তার মনের বয়স বাড়েনি আমাদের মতো। কোনো বাচ্চাকে রাস্তায় দেখলে কোলে তুলে আদর করা, কুকুর ছানা দেখলে কোলে নেওয়া এখনও তার প্রিয় সখ। তার স্পর্শে সেজন ধন্য হয়ে যেতো।
বিশু এখন দু একটা গান লেখে। আবার নিজের কন্ঠে গায়। তার গাওয়া গানে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে । 



         𒄶 স্বপনকুমার বিজলী🔸দক্ষিণ ২৪ পরগনা🔸



রিমঝিম সুর তুলে
ছোট নদী চলে দুলে
গিয়ে যেই বসি কূলে
সিলেবাস যাই ভুলে ।

তালপাতা ঘেরা ঘরে
নদী যেন গান ধরে
পরিযায়ী কত চরে
সব খুশি এসে ভরে ।

বাবা গেলে দূর হাটে
ছুটে যাই নদী ঘাটে
বই খাতা থাকে মাঠে
ডিঙি বেয়ে দিন কাটে ।

আকাশের বুক চিরে
তারা যেই ফোটে ধীরে
সাঁঝ নামে নদী তীরে
আমি ঘরে আসি ফিরে ।





               ⍚ জয়ন্তী দেবনাথ🔸কলকাতা🔸


পুরো জানালা জুড়ে তুমি...

মিহি করে টুকরো করেছি একে                                         
কোনো ফাঁকে যদি আসে বাইরের টুকরো চাঁদোয়া

হাতে হাত আর কতটুকুই বা     
হাত ছাড়লেই ছড়িয়ে পড়ো তুমি                                         
বাতাসের মতো                         
কোন মিলি মাইক্রন স্থানও ফাঁকা থাকে না                         
স্বপ্নেতেও হানাদারী                           
কি এক বিচিত্র প্রেম তোমায় জুড়ে                                                                               

চাঁদের আলো বলে নিঠুর                                                       
আমি তাকে মাখতে চাই না         

কেমন করে পারি                                               
পুরো জানালা জুড়ে তুমি                             
বাতাসের মতো ছড়িয়ে...
                ----------------------------------------
     




  ⍚ আলিমন নেছা মনি🔸দিনাজপুর, বাংলাদেশ🔸



আমার একটা দেহ আছে,
যে দেহে প্রাণ,ক্ষুধা, সঙ্গম ছাড়া আর কিছু থাকে না।
তবে এখন দেহটি নিস্তব্ধ আর বধির!
কেউ ইশারায় শিস দিলেও তাড়না জাগে না।
দেহটা বিবশ হয়ে গেছে, দেয়ালবন্দি স্মৃতির আয়নায়
যেটাকে চাইলেও ভাঙতে পারি না।
এমন একটা দেহ নিয়ে চলাফেরা করি, রাজপথ ঘুরি
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় আমার!
মানবিকতার করুণা করার জন্য কেউ আসে না।
ছটফটে মরি, জ্যান্ত মাছের মতো-
বড় বড় চোখ ফ্যাল ফ্যাল তাকায়ে দেখে
প্রাণ বের হতে চেয়েও বের হয় না।
অথচ দেহটা গণতন্ত্রের কথা বলে,ফ্যাসিবাদী
কবিতা শোনায়,
দীর্ঘদিন ব্যাপি -
অবরুদ্ধ হওয়া মানুষের গান গায়, ন্যায় বিচারের দাবীতে পথে পথে কাঁদে,
জগতের কোন মানুষ তা দেখে না।
একটা অন্ধকার,একটা অনিশ্চয়তা,একটা আশংকা, একটা লকডাউন,একটা ভাইরাস,দেহটাকে হত্যা করে চলেছে,
দেহটা আর কোনদিন গণতান্ত্রিক হতে পারবে না।



       ⍜ আবদুস সালাম🔸রঘুনাথগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ🔸



স্থির দুদন্ড ভাবার সময় নেই
আমন্ত্রনহীন দ্বীপে শিকড় হীন বসবাস
বিবেকের পলেস্তারা খসে পড়লে
আত্মিক সংকট মাথা চাড়া দেয়
স্বার্থমগ্নতা লব্ধ হাহাকার বাজে সর্বত্র
হাস‍্যকর উত্তোরণ ডানা মেলে
মহাবিশ্বের উঠোন জুড়ে শুধুই অন্ধকার
দিন যায় বিষাদে
নিত্য নতুন ঢেউ ওঠে অমানবিক বারান্দায়
মুক্তির আন্দোলন ডুগডুগি বাজায়
আত্মিক অবমাননার নৌকোয় যৌনতা পাল তোলে
সামুদ্রিক উচ্ছাস ক‍্যামেরা বন্দী হয়।




    ⍜ দেবব্রত রায়🔹হাজরাপাড়া, বাঁকুড়া🔹



🍂গতকাল



মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে রফিকুল,মধুমিতা,সনত,অলোকেশ আমরা সবাই পুণ্যতোয়ার তীরে অঝোরে ভিজলাম! আমাদের সাথে নিরবে ভিজেছিল বট অশ্বত্থ নিম আর, হরিতকীর জঙগল ! বুড়িভৈরবীর শ্মশান, আমাদের ইস্কুল, ফুটবলমাঠ, আদিগন্ত চরাচর জলসই হতেই, ঘাসের আশ্রয় থেকে ফড়িং, উবুইয়ের দল উদ্বাস্তুর মতোই বেরিয়ে এসেছিল,খোলা আকাশের নীচে! যেন একটা দীর্ঘ মন্বন্তরের পর  ভোজের উৎসবে রবাহূত কাক,শালিকের দল 'রাক্কুসে' খানসেনাদের মতোই,ঝাপিয়ে পড়েছিল সেইসব নরম শরীরের দখল নিতে ! বিরানব্বইয়েও পোক্ত সুরবালা বলেছিল, দ্যাশ থিইক্যা পলাইয়া আসনের সময় বিধম্মীগো হাতে ধম্ম খোয়াইলাও, পুণ্যতোয়ার ছোঁয়ায় তেঁহাদের হগগলেরই গোলোকপ্রাপ্তি হইসে ! 
                 
আমার" স্বদেশী " ছোট কাকা শুনে  বলেছিলেন, জানি না,এইযে গুচ্ছশেকড়ের শরীর জুড়ে কতশত ভালোলাগা, অভিমান,গলা বুজে আসা- ব্যাথা লেপ্টে রয়েছে...
তারা কী,এসবকিছুই বাসি কাপড়ের মতো ফেলে রেখে মাধ্যাকর্ষণের চেয়েও একটি তীব্র টান পার হয়ে গোলোকধামে পৌঁছোতে পারে ! 
        
যে বয়সটা আমাদের অনেককিছুই জানার জন্য যথেষ্ট নয় ,ঠিক সে-বয়সেই,মধুমিতা,অলোকেশের ছোড়দি, ফুলপিসি,আমার রাঙা কাকীমাকে প্রজাপতির মতো একটি রঙিন ডানামেলা জীবন বাকী রেখেই অজানা গোলোকধামে কেন চলে যেতে হয় ! 
আমাদের  এই পাখিগ্রাম, ফুটবলমাঠ, পুণ্যতোয়া,  বট, অশ্বত্থ, নিম, হরিতকী জঙগলের চেয়েও কি সুন্দর সুরবালার গোলোকধাম! সেখানে কি শুধুই , ভাঁড়ে ভাঁড়ে অমৃত সাজানো থাকে, নৃত্যগীত আর, তুলতুলে-নরম পালকের বিছানায় অফুরান-আনন্দ শরীর জড়িয়ে থাকে মায়ের ওমের মতো! মধুমিতার মৌমাছি-নৃত্যের চেয়েও কি ভালো নাচে ওখানের মেয়েরা !  
গতকাল আমাদের কাদামাখা ফ্রক প্যান্ট-শার্টগুলো পুণ্যতোয়ার স্রোতে জড়াজড়ি করে হুটোপুটি আর,ডুব সাঁতারের কাছেই শিখেছিল,এর চেয়ে সুখ আর কিছুতেই নেই !     

 

🍂 আজ 

              

বুধবার  মধুমিতার বিয়ে! অলোকেশ যাবে না। ওর রেস্তোর অভাব! ( না-কী,অন্যকিছু!) রফিকুল বাংলাদেশের কবিতা মেলায়! সনতের সঙ্গে আমাদের কারোরই আর যোগাযোগ নেই! ও এখন কুলিটিলায় ফুলটুসির ঘরে রাত্রি কাটায়! আমি ব্যারাকপুরে...... 
অনেকদিন পর একটা মৃত্যুর খবর পেয়ে পুণ্যতোয়ার তীরে এসে দাঁড়ালাম! সনতের নিভে যাওয়া চিতা দায়হীন আবর্জনার মতোই ভেসে গেছে রাক্ষুসি নদীর স্রোতে ! বৃক্ষহীন,ফসলহীন এই ভূমি, বৃষ্টিরোহিত এই আকাশ, পুণ্যতোয়ারও যেন কোনো দায় নেই একসময়ের দুরন্ত ফুটবলার সনতের প্রতিটি আত্মহত্যাকে স্মরণে রাখার!
          
নির্জন দুপুরে পুণ্যতোয়ার পাড়ে এসে দাঁড়াতেই, নজরে পড়লো , কয়েকটা কুকুর আর, কাকের দঙগল যেন কীসের মীমাংসা নিয়ে  ভীষণ ক্রুদ্ধ !  মনে হলো,ওরা বিদ্রোহী সনতের মৃত্যুবিষয়ক আলোচনায় বট নিম অশ্বত্থ আর,পুণ্যতোয়ার এই অবহেলার  বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ-সভা ডাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে  ! 
সেই সোরগোল থেকে অনেকটাই দূরে ,আটপৌরে একটি মেয়েকে দেখলাম ঘাটের কিনারায় উদাস তাকিয়ে  আছে বহু দূরে বিন্দুর মতো ধীরেধীরে একটি নৌকার হারিয়ে যাওয়া লক্ষ্য করে! কেন জানি না, আমার মনে হলো ,এই মেয়েটিই সনতের ফুলটুসি ! আমি পাড় থেকে  ওর পাশ দিয়েই ঘাটে নেমে এলাম ! কিন্তু, মুহূর্তের জন্য  মেয়েটি আমার দিকে ফিরেও দেখলো না! আমি সেই বিষন্ন রঙের মেয়েটির ছায়া এড়িয়ে পুণ্যতোয়ার জলে নামতেই বুঝলাম,আমার মাথার উপরের ঘোলাটে আকাশ, এই পুণ্যতোয়া আমাদের নয়! মৃত শালিকের মতোই বিষন্ন দুপুরের এই আলো,পুণ্যতোয়ার এই ভীরু স্রোতকে আমি  চিনি না !   



🍂 আগামীকাল 



সময়ের সাথে সাথে পুণ্যতোয়া তার ডেনসিটি  হারিয়ে  ক্রমশ অসারেই বেড়েছে! আমাদের স্কুল, খেলার মাঠ, ভৈরবির শ্মশান, আমাদের পাখিগ্রাম, সবকিছু গ্রাস করে একটা  পাইথনের মতোই ভরা পেট নিয়ে পড়ে আছে পুণ্যতোয়া নামের একটি পৃথুলা নদী ! এক সময়ের A4-সুন্দরী এখন যেন আ অল ডিভারিং ওল্ড লেডি ! রিসেন্টলি আমাদের শুধু  নামের গ্রামখানি পরিবর্তনের ঝোড়ো হাওয়ার গতিতে একটি রয়্যাল সিটি হয়ে উঠছে! যেন স্পিডোমিটারের সর্বোচ্চ ইনডেক্স ছুঁয়ে বিল্ডআপ করেছে  করপোরেট অ্যাপার্টমেন্টগুলো ! এয়াররুটগুলোকেও তথষ্ট রেখে নিত্যনতুন  মাথা তুলেছে জায়গান্টিক টাওয়ারস !এসব দেখলেই মনে হয়, যেন সুরসাধনার মাঝে বুলডোজার, ক্রেন, জেসিবি  যন্ত্র-অসুরের রুড ইনভেসন !এ যেন সবকিছু লয় করার জন্যই অরণ্য-প্রকৃতির বিরুদ্ধে  প্রলয়ছন্দের একটা অসহ্য বিদ্রোহপনা  ! এখানে রাত্রিহীন টাওয়ারের মাথায় চাঁদ ওঠে লোহার তাওয়ার মতোই !চব্বিশঘন্টা নিজের চামড়ার ছেঁচকি পোড়া দুর্গন্ধ সহ্য করেও মানুষ  তার নাশারন্ধ্রের  বিশেষ গুণটির জন্যেই বোধহয়, আজও কোনোক্রম বেঁচেবর্তে আছে নইলে,এই পুঁতিময়দুর্গন্ধে সে কবেই নিজেকে হত্যা করতো ! এখানে ক্লান্তির মুহূর্তে  আর ক্লোরোফিলের আশ্বাসটুকুও পাওয়া যায় না কারণ, এখানে কোনো গাছপালা নেই ! যেহেতু, গাছপালায়-ই নেই তাই, এখানে কোনো পাখিও নেই! পাখিদের সুর হীন,ক্লোরোফিল হীন একটা আনপ্রোডাক্টিভ ল্যান্ডের বাসিন্দা আমরা !                             
                
আমার বাড়ি থেকে একটি ওয়াকিং ডিস্টেন্সে "আনন্দি কফি শপ"! সেখানে মাঝেমধ্যেই প্রোফেসর সাংভি-র সঙ্গে দেখা হলে আমাদের গল্প হয়। আমি খবর নিই তার নী-ট্রান্সপ্লান্টের বিষয়ে।সেও জিজ্ঞেস করে, আমার এনজিওগ্রামের খবর কী ?   



       𒄰 ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়🔸কলকাতা🔸



রোদ্দুরের হাত আল্পনা দিয়ে যায়
বিবর্ণ চিলেকোঠায়--
চিলেকোঠার ঘরের ধূসর চালচিত্রের ;
এক অমূল্য রত্ন নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা,
অনেকদিন থেকে তল্লাসির জন্য কয়েকজোড়া চোখ -
চিলেকোঠার ঘরে অনেকের আনাগোনা
সকাল থেকে সন্ধ্যা হয়, আবার রাত পেরিয়ে ভোর
মেলেনা হারিয়ে যাওয়া অনেককিছু
চিলেকোঠায় ঘরে সব হারানো জিনিসপত্রের সন্ধান পাওয়া যায়,
সবার দৃষ্টিতে অন্ধত্বর পরোয়ানা
চারতলার অন্ধ কুটুরিতে
তাই আজ রোদ্দুরের হাত এসেছে
ছাদের গা জড়িয়ে থাকা তেজপাতা গাছের উপর 
তার হাত
রোদ্দুরের আলতো আদরে মাঝেমাঝে হেসে উঠছে সে
খিলখিল হাসি ছড়িয়ে পড়েছে সেগুন আর বাতাবির সারা মুখে
অনেকদিন পর এক অচেনা রোদ্দুর
যাকে একেবারেই অন্যরকম মনে হয় -
চিলেকোঠার ঘরে এত আলো কেউ আগে কখনো দেখেনি।
আলোর স্বয়ম্বরে, হারানো, কতদিনের লুকিয়ে থাকা রত্নটা উঁকি দিয়েছে একমুখ হাসি নিয়ে।।
   


                  ⍚ নিত্যানন্দ দত্ত🔸পূর্ব বর্ধমান🔸



প্রতি হত্যার শেষে চুপ হয় প্রতিটি আঘাত 
বিকেলের মৃত্যুতে যেরকম নির্ঘুম রাত 

পাখির কামড় থেকে খসে পড়ে মৃতপ্রায় মাছ 
ছাইদানি ভ'রে গেলে মাথানিচু অপরাধী আঁচ 

যেমন কেকের পাশে নিভে আসে আলোর নরম 
তার অপমানভারে গলে গলে পড়ে থাকে মোম 

নদীও হিংস্র হলে ভেসে যায় খড়কুটো গ্রাম 
সব অপরাধবোধে আমি আজ অস্ত্র নামালাম 

তবু তো নিরস্ত্র নই, হিংসা কি চির অবনত?
প্রতিটি আঘাত জানে, হত্যাটি আইন সম্মত ... 


             𒄰 চৈতালি নাগ🔸সুত্রাগড়,নদীয়া🔸




লকডাউনের আগে ছোট একটা কোচিং সেন্টারে পড়াতো অনিমেষ, মাসের শেষে যৎসামান্য আয়ই তুলে দিত বাবা মায়ের হাতে। মা বাবা ছোট একটা বোন আর সে এই তাদের ছোট সংসার, মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে অনিমেষ, দু চোখে এখনো অনেক স্বপ্নপূরণ বাকি তাঁর, একটা ভালো চাকরি পেয়ে মা বাবার পাশে দাঁড়াতে হবে,ছোট বোনটার একটা ভালো বিয়ে দিতে হবে, ইত্যাদি হাজারো রকমের স্বপ্ন ।ছোট বোনটার যত আবদার তার কাছে ,আগে সন্ধেবেলায় বেরোলো কিছু না কিছু না আনলেই একেবারে চিৎ কার করে রেগে বাড়ি মাথায় করতো। বড়ো ভালো বাসে সে তার দাদাভাই কে।
কিন্তু আজ ক'দিন ধরে লক ডাউন চলাতে কোচিং সেন্টারটাকে ছুটি দিতে হয়েছে ওদের, এ মাসের মাইনেটাও হয়তো পাবে না, কি করে চাইবে ওই কচি কচি মুখগুলোর কাছ থেকে, ওদের অবস্থা ও তো অনিমেষের মতোই তথৈবচ। নিস্তব্ধতা যেন শুধু বাইরে নয় ভেতরেও গ্ৰাস করেছে সবাইকে,মা বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারেনা অনিমেষ, একটা ভয়, অনিশ্চয়তা আতঙ্কের ছবি যেন ফুটে ওঠে ওদের মুখে, অথচ জোর করে একটা প্রসন্নতার হাসি বজায় রাখার চেষ্টা করে সবসময়,এটা যে নেহাতি অনিমেষকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য সেটা বুঝতে বাকি থাকেনা অনিমেষের।
বোনটাও আজকাল আর কোনো আবদার করেনা, শুধু বেরোনোর সময় মুখে একগাল হাসি নিয়ে বলে"আজ আর যেন কিছু আনিস না দাদা পেট পুরো ভর্তি,উফফ কাকিমা পুরো পেট ভরে খাইয়ে দিয়েছেন জানিস তো, কিছুতেই কোন কথা শুনলেই না"।  বোনের বন্ধু শিল্পা ওর বাবা সরকারি অফিস চাকরি করে , ফেরার সময় রোজ কিছু না কিছু নিয়ে আসে মেয়ের জন্য। কিন্তু অনিমেষ বোঝে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা হাসি, উভয়ই যে সহোদর সহোদরা। তবে ওর বোনের পেট না ভরলেও অনিমেষের দু চোখ ভরে যায় নোনা জলে।

তবে না হার মানেনি অনিমেষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে নিজের মতো করে, যে হাতে এতদিন কলম ছিল সেখানে ঠাঁই পেয়েছে দাড়িপাল্লা। রোজ সকালে বাড়ির পাশের বস্তিটা পেরিয়ে বড় রাস্তার ধারে বাজার বিক্রি করতে শুরু করেছে অনিমেষ, সঙ্কুচিত হয়নি, লজ্জিত হতে দেয়নি তাকে তার শিক্ষা। ছোটবেলা থেকেই বস্তির এই রাস্তা টার সাথে পরিচিত সে, সকল থেকে রাত পর্যন্ত বস্তির যে নানা রকম নিজস্ব ছন্দ আছে তা ও আজ নিশ্চুপ, শুধু একটানা একটা বিষন্নতার সুর বেজে চলেছে নিরন্তর।বস্তির রাস্তাটা এমনিতে শুনশান হলেও বস্তির একটা ঘর থেকে প্রায় যেতে আসতে একটি শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় অনিমেষ, শিশু টির মা কোলে নিয়ে একফালি বারান্দায় পায়চারী করে আর কান্না থামানোর চেষ্টা করে। অনিমেষ যেতে আসতে প্রায় এ ঘটনা দেখতে পায়, মনে মনে কৌতুহল হলেও কোনদিন কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করলেও একদিন এক প্রৌঢ় ভদ্রলোকের কাছ থেকে জানতে পারে ,শিশুটির বাবা ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে আটকে পড়েছে আজ কদিন হলো, মা লোকের বাড়ি কাজ করে সোনারপুরের ওদিকে,ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় কদিন ধরে তাও বন্ধ ঘরে যা জমানো ছিল বা ত্রাণ সামগ্রীর জিনিস ও প্রায় শেষের মুখে,তাই দুধের বদলে মোটা চালের ভাতের ফ্যান খাইয়েই প্রবোধ দেয়ার চেষ্টা করছে সে শিশু টিকে।

বেশ কয়েকদিন এইভাবে চলার পর কিছু টাকা আসে অনিমেষের হাতে, সেদিন তাই বাড়ি ফেরার পথে আসতে আসতে ই ঠিক করে নিয়ে ছিল আজ হাতে করে কিছু একটা নিয়ে যাবে বোনের জন্য, আর বাকি টাকাটা তুলে দেবে বাবা মায়ের হাতে, অনেকদিন পর তাদের সেই হাসি মাখা মুখটা আবার দেখতে পাবে।  চকলেট খেতে খুব ভালো বাসে ছোট বোনটা, রাস্তার ধারে অধেক দরজা খোলা একটা মুদির দোকানে ঢোকে চকলেট কেনার জন্য, 

"হ্যাঁ বলুন দাদা , কি নেবেন"?
প্রশ্ন টা শুনে যেন সম্বিত ফেরে অনিমেষের।" আরে বলুন বলুন তাড়াতাড়ি আমাকে আবার দোকান বন্ধ করতে হবে। যা কদিন ধরপাকড় শুরু হয়েছে। সব সারলে বাঁচা যায়, উফফ ,রাধে রাধে। বলুন বলুন"।  
"আজ্ঞে ইয়ে মানে একটা....একটু গুঁড়ো দুধ দিনতো।"
সমস্ত দ্বিধা ত্যাগ করে পর্দা সরিয়ে ঢুকে পড়ে ছিল বস্তির সেই একচিলতে ঘরে । হঠাৎ আগন্তুকের আগমনে থতমত হয়ে মহিলা বলে ওঠে  "আপনি"?
"আর কতক্ষন না খাইয়ে রাখবেন বাচ্চা টিকে নিন এটুকু খাইয়ে দিন , কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে দুধের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিয়ে ছিল শিশুটির মায়ের দিকে।
"কিন্তু"  
"না কিন্তু করবেন না দিদি ,আপনার নিজের ভাই দিলে নিতেন না? ধরে নিন না আপনার আরেক ভাই দিলে"।
কোনো কথা বলতে পারেনি অনিমেষের নতুন দিদি শুধু দু'চোখ দিয়ে অসময়ের শ্রাবণের ধারা গড়িয়ে পড়ে ছিল তার।  
এমনি সময় তুমি এলে ভাই তোমাকে যে কিছু....
 "না না আজ আর কিছু খাবো না দিদি, আজ আসি অন্য একদিন এসে পেটভরে খেয়ে যাবো , কথা দিলাম,"।
" আসবে তো?"
নিশ্চয়ই আসবো।"

"তাহলে সামনের মাসেই তোমাকে একবার আসতে হবে ভাই । সামনের মাসে খোকার মুখে ভাত দেব। বেশি কিছু না সামান্য কিছুই আয়োজন করবো।ভাত শাক তরকারি আর পায়েস। ওই দিন তোমাকে এসে কিন্তু একটু পায়েস খেয়ে যেতে ই হবে ভাই।,"

"খোকার বাবাও ততদিনে চলে আসবে নিশ্চয়। শুনেছি সরকার থেকে নাকি বাইরে থেকে শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা করেছে। খোকার বাবা আমার হাতের তৈরি পায়েস খেতে খুব ভালো বাসে।"
"নিশ্চয় আসবে দিদি। আর আমিও আসবো তোমার খোকার মুখে ভাতে পায়েস খেতে।"  কথাটা বলতে বলতে গলাটা ধরে আসে অনিমেষের, ছুটে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে, পেছন থেকে শুনতে পায় তাহলে ওই দিন
"আসবো দিদি....নিশ্চয়ই আসবো....চিৎকার করে বলতে থাকে অনিমেষ। পিছনে ফিরে দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে তার দিদি , চোখ দুটো অন্ধকারে ও চিকচিক করছে।

না সেদিন বেশি পয়সা ছিলো না অনিমেষের কাছে তাই কোনো নামি কোম্পানির বেবিফুড নিয়ে যেতে পারেনি তার ভাগ্নের জন্য । নিয়ে যেতে পারেনি তার বোনের বড্ডো প্রিয় চকলেটটা ও; শুধু তার এই দিদি র মধ্যেই দেখতে পেয়ে ছিল তার বোন কে; হয়ে উঠে ছিল তাদের আত্মার আত্মজন।

          সেদিন সেই নিস্তব্ধ নিরালা রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সর্ব শক্তি মান ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা করে ছিল অনিমেষ..." হে ভগবান সারা জীবনে আমার সমস্ত পুণ্যের বিনিময়ে এই অনাহারে,অর্ধাহারে থাকা মানুষ গুলোর দু চোখের স্বপ্ন আশা যেন পূর্নতা পায়, পৃথিবী আবার ফিরে পাক নিজের ছন্দ" । 



              𒄶 হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়🔸দুর্গাপুর🔸


আমি না মারলেও সে আমাকে মেরে ফেলবে স‍্যার...
ছাত্রের কথায় আতঙ্ক,চোখে মুখে উদ্বেগ
মাষ্টারমশায়ের--

কথাটা কতটা সত্যি তার চেয়ে বেশী কেউ জানে না, 
শৌর্য বীর্য কোনো ব‍্যাপার না
শুধু এক ভয়াল অনিবার্যতা মনে পড়ে গেল
বাম হাতে পুজো দিতে বাধ‍্য হয়েছিলেন
চাদ সদাগর,হরিশচন্দ্র শৈব‍্যার ঘটনা সকলের জানা
কোনো এক বিশেষ মুহূর্তে কবি প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত বলতে বাধ্য হয়েছিলেন--
একজন কবি যখন নিচু হয়ে জুতোর ফিতে বাধেন তখনও তিনি কবি...
কীভাবে কথা শুরু করবেন
বুঝতে পারছিলেন না সেই মাষ্টারমশাই
ছাত্রটির মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন
সারাজীবন অধ‍্যয়ন আর অধ‍্যাপনা করে
যা পারিনি বুঝতে
তুমি তাই আজ আমায় বোঝালে
আজ থেকে তুমিই আমার গুরু,আমার শিক্ষক
তারপর বিড়বিড় করতে করতে
চলে গেলেন ক্লাসের বাইরে
বাতাস বলল কে যে ঠিক কখন কার শিক্ষক
হয়ে যায় এই সত্য এখনও অনির্ণেয়...



           📚 সুমিতা চক্রবর্তী🔸বেলুর,হাওড়া🔸




অলস দুপুরে বসে বসে খবরের কাগজের পাতা উল্টে যাচ্ছিলো জয়া, কিছু পড়ছিলো না । কাগজ খুললেই তো একগাদা ধর্ষণের খবর - ভালো লাগেনা জয়ার, খুব কষ্ট হয় । তাই খুব একটা মন দিয়ে খবর পড়েনা জয়া | কিন্তু তবুও একটা খবরে হঠাৎ চোখ আটকে গেলো । খবর টা ঐ ধর্ষণেরই, কিন্তু ঘটনাটা ঘটেছে ওদের আবাসনের কাছেই। এবার নড়েচড়ে বসল জয়া আর এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলল খবরটা - একটা আট বছরের মেয়েকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে সারারাত ধর্ষণ...ভোর রাতে প্রাণহীন দেহটা ফেলে যায় রেল লাইনের ধারে...পুলিশ এসে...আর পড়তে পারেনা জয়া, দুহাতে মুখ ঢাকে।  মনের ভেতর থেকে স্মৃতি গুলো বেরিয়ে আসতে থাকে হু হু করে...                                                                      

আজ একটুর জন্য আটটা পঞ্চাশের ট্রেনটা মিস হয়ে গেছে জয়ার - নির্ঘাত স্কুলে লেট হবে,ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে গেছিল জয়া। হঠাৎ শুনলো "একটা টাকা দাওনা গো,বড্ডো খিদে পেয়েছে "
- জয়া তাকিয়ে দেখলো একটা আট নয় বছরের মেয়ে ওর কচি হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছে জয়ার সামনে।মেয়েটার গায়ে ময়লা ছেড়া ফ্রক,এক মাথা লাল চুলে ঘেরা মুখ খানা ভারী নিষ্পাপ !দেখে কেমন মায়া হলো জয়ার, বলল "এক টাকায় কি পাবি,ওতে কি খিদে মিটবে?"জয়া ব্যাগ থেকে দশ টাকার একটা নোট বার করে দেয় মেয়েটাকে। মুহূর্তে খুশির ঝিলিক খেলে গেলো মেয়েটার চোখে। টাকাটা হাতে মুঠো করেই ছুট লাগালো একরাশ ধুলো উড়িয়ে।                                                       

তারপর থেকে রোজ স্টেশন এ এলেই মেয়েটা জয়ার কাছে এসে দাঁড়াতো জয়া দু টাকা, পাঁচ টাকা যাহোক দিতো। জয়া কে রোজই ট্রেন ধরে স্কুল যেতে হয়।ও একটা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা।একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে মেয়েটার বাড়ি গেলো জয়া । ও শুনেছিলো মেয়েটার নাম চাপা আর ও থাকে ওদেরই আবাসনের কাছে রেল লাইনের ধারে একটা ঝুপড়ি তে, ওর মায়ের সাথে । চাপার মা জয়ার কাছে অনুযোগ করলো " ওর বাপ্ টা মরার পর থেকে লোকের বাড়ি কাজ নিয়েছি, চাপাকে দেখার সময় পাই না। ওকে খিচুড়ি স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলাম, সেখানে যায়না। দিদিমনি, তুমি আমার মেয়েটাকে একটু দেখো " জয়া বলল " চাপা কে আমার ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দিও,আমি ওকে পড়াব " জয়া এমনিতে টিউশন করায় না।তবে ওর স্কুলের কিছু গরিব ছেলে মেয়ে পড়তে আসে ওর কাছে বিনা খরচাতে | চাপা ও ওদের সঙ্গে আসতে শুরু করলো।জয়ার শাশুড়ি আপত্তি করেছিল " এসব বস্তির মেয়েকে ঘরে ঢোকানো কেন? "জয়ার স্বামী তন্ময় অবশ্য মায়ের কথায় কোনো উত্তর দেয়নি, নীরবে স্ত্রী কেই সমর্থন করে। দশ বছরের বিবাহিত জীবনে ওদের কোনো সন্তান আসেনি। আর অফিসের ব্যস্ততায় কতো টুকু বা সময় দিতে পারে জয়াকে।তন্ময় জানে জয়া ওর স্কুল আর নানা পরোপকার নিয়ে ডুবে থাকে। থাকুক না, মনে মনে ভাবে তন্ময়, ওর বেশ গর্ব হয় স্ত্রীকে নিয়ে। অফিসে ও জয়ার কথা বলেছিলো কয়েকজন কে । শুনে একজন কলিগ বলেছিলো "বাহ্ ! এতো ভালো উদ্যোগ, 
তোমার স্ত্রী কে বলো আমাদের একটা এনজিও আছে - 
ওখানে জয়েন করতে। ওরা দুস্থ মেয়েদের জন্য খুব ভালো কাজ করছে। "                                                                      

কয়েক মাস বেশ আসছিলো চাপা, অল্প দিনে শিখে ও ফেলেছিল অনেক কিছু। কিন্তু হঠাৎ ই একদিন আসা বন্ধ করে দিল। ওর কোনো খবর না পেয়ে জয়া আর একবার গেছিল ওদের ঝুপড়িতে। দেখলো ওদের ঘরে কেউ নেই । পাশের ঘরে একটা বৌ বলল " দুদিনের জ্বরে হঠাৎ করে চাপার মা মারা গেলো। তারপর থেকে চাপা যেন কেমন হয়ে গেছে - কারোর সাথে কথা বলেনা, সারাদিন কোথায় ঘুরে বেড়ায়। " তারপর কেটে গেছে বেশ কয়েক মাস। চাপা কে আর দেখতে পায়নি জয়া। আর স্কুলে পরীক্ষা চলছিল - তাতেই খুব ব্যস্ত ছিল। তাই আর খোঁজ নেওয়া হয়নি চাপার। ধীরে ধীরে চাপার স্মৃতি ঝাঁপসা হয়ে যাচ্ছিল জয়ার মন থেকে। তারপর আজকে চাপার এই খবর পেলো !                                                                           
রাতে বাড়ি ফিরে তন্ময় জয়া কে বলল " আজকের খবরের কাগজ টা পড়েছো?তোমার চাপা কে..." 
জয়া কান্নায় ভেঙে পরে বলল "চাপার মা মারা যাবার পরে যদি আমরা ওকে একটু আগলে রাখতাম !
 " তন্ময় সান্তনা দেয় "ওরকম কত চাপাই তো হারিয়ে যায়! " জয়া তাকায় স্বামীর দিকে,বলে "সব চাপা কে হারিয়ে যেতে দেবোনা। তোমার কলিগ যে এনজিও টার কথা বলেছিলো, আমি ওখানে কাজ করবো।তাহলে কিছু চাপাকে তো গাইড করতে পারব।কি তুমি রাজী তো? " তন্ময় জয়ার হাতটা ধরে বলে " তোমার সব ভালো কাজে আমি তোমার পাশেই আছি। "





           ⍜ মৃন্ময় মাজী🔸রাজাবাঁধ পাড়া,পুরুলিয়া🔸



বাড়ির ধারে
ডোবার পাশে
কোলা ব্যাঙের নৌকা ভাসে।

তবলা ডুবি
সেতার বাঁশী
হরেক রকম উচ্চ হাসি।

সোনার ঢোলে
পাগল পারা
কুনো বাজায় তানপুরা।

হার-মোনিকা
খোকার হাতে
গঙ্গা ফড়িং জুটল তাতে।

ওদিক থেকে
ময়না পাখি
উঁচিয়ে গলা বেবাক আঁখি।

নতুন গলা
ধরল গান
সপ্ত সুরে বাড়ল মান।


            𒄶সোমনাথ বেনিয়া🔸উত্তর ২৪ পরগনা🔸



মাথায় ঘন চুল, কলাবিনুনি, লাল ফিতে
আহা, প্রিয় মুখে, হারায় দৃষ্টিলিপি
তপ্ত হৃৎপিণ্ড, উজ্জ্বল আলোর বলয়
শিরায় ছোটে রক্তকণিকার সহবাস
হাত বাড়ালে নিজের অধিকার তুচ্ছ
শুধু আদর, নাভিফুলে গন্ধ, কেমন আতর?
সিঁথিতে সিঁদুর, আয়ু ব‍্যাকুল,ধূসর খবর



        ⍚ মোহনা মজুমদার🔸গড়িয়া,কলকাতা🔸



তোমার অবহেলার মাঝেই আমার অন্তরঙ্গ সুখ
আমাদের মাঝের ওই অবিচ্ছেদ্য সংযোগ
আজ ঘনীভূত বাষ্প,
তা কর্পূর হয়ে উবে গেছে
আমার মুঠোয় ওদের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল
তাই ওদের উড়তে দিলাম।
উড়তে উড়তে ওরা গিয়ে পড়লো সিক্তার বুকে।
আবার কোথাও একমুঠো স্বপ্নের আভাস
আর কোথাও ভেঙে খানখান কাচের মালা
আমি শুধু দূর থেকে হাসলাম
এতোই তবে ঠুনকো ছিল মালা গাথা।।
তোমার আমার মাঝে দূরত্ব আজ যোজন ক্রোশ
তবু আমরা মুখোমুখি হই রোজ,
এক সমান্তরাল রেখার এপার ওপারে দাঁড়িয়ে আমরা রোজ যুদ্ধে নামি।
আবার কখনও মনে হয় আমি তোমার জীবনের ওই পরিধির মধ্যে ঢুকে পরেছি,
তোমার আমায় না চাওয়া
অতিক্রম করেই আমি এসেছি
তাই হয়তো শুধু ঘুরপাক খেতে খেতে
আছরে পরছি তোমার দুয়ারে।
কত মেঘ জমে,বৃষ্টি আসে
তবে তা শুধু আমারই গন্ডির মধ্যেই
ওই বৃষ্টি তোমায় ভেজায় না
ভেজাতে পারেনা ওই বরফের পাহাড়।
যুদ্ধ তবে কিসের?
প্রত‍্যাশার সাথে অপেক্ষার ?

       

               🔰সত্যজিৎ রজক🔸কলকাতা🔸


   

অখেয়ালেই গাঢ় মতান্তরের ভেতর জমে উঠছে এক পার্থক্যের ভীত
আপাতত খেয়াল করতে পারছি না বা খেয়াল করার চেষ্টাও করছি না। 

এই সব সম্পর্ক গুলির নাম রেখেছি ধুলোবালি,
যেটা সারা গায়ে ছড়িয়ে রাখার সাধ্যমতো চেষ্টা করে চলেছি !

ক্ষতচিহ্ন গুলির নাম রেখেছি আপাত দৃষ্টিকোণ

প্রত্যেকটা রোদ্দুর খুব লঘু করে সম্পর্ক বানানোর চেষ্টা করছে ,
সময়কে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। 

অতঃপর বিপক্ষের  সমুদ্র সম্পর্কে মোহিনী বাঁশি বেজে ওঠে রোজ
আর আড়ালে অর্থাৎ দরজার কোণে কোনো এক ঊর্মিলা বিরহিনী 

আযুগ বনবাসের অপেক্ষায় অশ্রুমোচন করে চলেছে

                         
            ꩜ পাভেল ঘোষ🔸শক্তিগড়,পূর্ব বর্ধমান🔸



গত বছরে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ঘটেছিল রোহমর্ষক ঘটনাটা।তারিখ মনে না থাকলেও বারটা বিলক্ষণ মনে আছে...। 'শনিবার'।বাড়িতে নিরামিষের বাঁধা দিন। মায়ের হাতে ডাল পোস্ত জমিয়ে খেয়ে রওনা দিয়েছিলাম ছোড়দির বাড়ি।সেদিনেই স্কুলে ছুটি পড়বে কালীপূজা উপলক্ষে। তাই আগে থেকে প্ল্যান প্রোগ্রাম করে নিয়েছি। বাড়ি থেকে স্কুল হয়ে সোজা হাওড়া স্টেশন। যদিও ট্রেন সেই রাত আটটায়। বোম্বে মেল।রায়পুর গেলে এই ট্রেনটা আমার বাঁধা। 
বহুদিন ছোড়দির হাতে ভাইফোঁটা  নিই না। মাস তিনেক আগে একদিন ফোনে বলেছিলাম ছোড়দিকে.. "এবার কালিপুজোয় তোকে একটা সারপ্রাইজ দেবো..!" জলের মতো নব্বই দিন কোথা দিয়ে যে চলে গেল,বুঝতেই পারি নি।
পৌনে সাতটার মধ্যে হাওড়ায় ঢুকে পড়লাম। লাগেজ বিশেষ নেই। দিন তিনেকের সফর। ভাইফোঁটা নিয়েই ফিরে আসা। যাওয়ার দিনেই আসার দিন নিয়ে চিন্তা। ফেরার দিন স্কুলে যেতে পারবো তো? তিনদিনে কমপক্ষে গোটা পনেরো আইটেম। একটাই ভয়,পেট খারাপের।
টু টায়ার এসিতে লোয়ার বার্থটা আমার ছিল। নম্বর মনে নেই। মিথ্যে বলবো না। 
ঠিক কাঁটায় কাঁটায় আটটায় দিলো ট্রেনটা ছেড়ে । এক রাতের জার্নি। পরের দিন ন'টার মধ্যেই রায়পুর। ট্রেন থেকে নেমেই টুবুলদার হাসি মুখে আপ্যায়ন..."আরে এসো,এসো। কেমন আছো?সব ঠিক তো?"
এই হার্দিক টানে প্রায় প্রতি বছরই রায়পুর ছুটে যাই। চিন্তার জগৎ ছেড়ে কদিন নিশ্চিন্তে হাত পা ছুড়ে 
শুধু ল্যাদ খাওয়া।ওঃ.. কি শান্তি।
"এটা আপনার সিট?" এক ভদ্রমহিলার ডাকে মাথা উঁচু করে সায় দিলাম।
"হ্যাঁ.. কেন বলুন তো?"
"আমি আসলে ভুল করে পাশের বগিতে উঠে পড়েছিলাম।
আপনার উপরের দুটো সিট আমাদের।"
ভদ্রমহিলা বেশ সুশ্রী। দেখলেই একটা সম্ভ্রম জাগে। মা দুর্গার মতো মুখের ধরন।কিন্তু চোখে অপার স্নিগ্ধতা। গাঢ় করে কাজল দেওয়া টানা টানা চোখ। 
উঠে দাঁড়ালাম।হয়তো মুগ্ধতায়।
"বেশ তো..। আসুন না। আপনি কি একা?"
"না,না..আমার হাসবেন্ড আর মেয়ে আছে সঙ্গে।"
"ও...আচ্ছা।"
"একটা রিকোয়েস্ট ছিলো ভাই.." বাঁ দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি এক দীর্ঘদেহী সুঠাম ভদ্রলোক। কোলে বছর তিনেকের একটা কিউট বাচ্ছা।সত্যি এত নিখুঁত দর্শন শিশু আমি খুব কম দেখেছি। মনে হয় কোনো চিত্রকর এঁকে প্রাণ দিয়েছে জাদুকাঠির ছোঁয়ায়।
"বলুন..." আমি হাসিমুখে বলতেই উনি বললেন,"আপনার যদি কোনো অসুবিধা না থাকে,আপনার লোয়ার বার্থটা যদি আমাদের...."
"না না কোনো অসুবিধা নেই। আমি আপারে চলে যাচ্ছি.."

সাড়ে ন'টার মধ্যে খেয়ে নিলাম।ট্রেনে একা 
কোথাও গেলে দুটো রুটি, আলুভাজা আর 
একটা মিষ্টি..ব্যাস।আমার খাওয়া শেষ।
"আপনার হয়েছে ভাই...আমরা তাহলে এবার 
একটু খেতে বসবো..।"
ভদ্রলোকের কথা শুনেই আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম।   হাসিমুখে বললাম ,"অবশ্যই।"
কখন ট্রেনটা থেমে গেছে খেয়াল করিনি। জানলা থেকে পুরি সবজি করে একটা হাঁক শুনলাম।  উঁকি মেরে দেখি খড়গপুর। আমার সিটে বসে থাকা ভদ্রলোকটি মুখে এক খন্ড রুটি নিয়ে পড়িমরি করে উঠে পড়লেন।
"কোথায় যাবেন?" আমি জিজ্ঞাসা করতেই উনি বললেন,"জল নেই,আনতে হবে.."
"মিনিট দশেক দাঁড়াবে। ধীরে সুস্থে যান।"আমার ছোট্ট পরামর্শ ওনার কানে পৌছালো না।
উনি পায়ে যেমন তেমন করে চটিটা গলিয়ে প্রায় ছুট লাগলেন। ওনার শিশু কন্যাটি বাবার যাওয়ার ভঙ্গী দেখে খিল খিল করে হেসে উঠলো। আমি মুচকি হেসে ঠোঁটের উপর তর্জনী রেখে চুপ করতে বললাম ওকে। সঙ্গে সঙ্গে জিভ বার করে আমায় ভেংচি কেটে মুখটা  নিলো ঘুরিয়ে।ও আর আমিই শুধু বুঝলাম। সত্যি এজন্যই বলে,শিশুর মধ্যে দেবতারা বাস করেন।
কিছুক্ষন পর দুটো দু লিটারের বোতল নিয়ে ভদ্রলোক ফিরে এলেন।
"আমাকে একটু বসতে দাও..আর পারছি না..." আমি বার্থে ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওনার কথা শুনে চকিতে সরে এলাম। সিটে বসে উনি এমন হাঁপাতে লাগলেন,মনে হলো,প্রাণটা বুঝি এবার বেরিয়ে যাবে।
"মৌসুমী জলটা দাও..!"  কথা বলতে গিয়ে  ওনার চোখদুটো ঠেলে বেরিয়ে আসছে মনে হলো।
সঙ্গে সঙ্গে সিটের উপর থাকা জলের বোতলটা ওনার স্ত্রী এগিয়ে দিতেই চাতকের মতো এক নিঃশ্বাসে জল খেতে লাগলেন। ওনার স্ত্রীর চিন্তাক্লিষ্ট মুখটা আমার নজর এড়ালো না।
"সামান্য জল আনতে গিয়ে উনি এমন হাঁপিয়ে গেলেন?" ভদ্রমহিলার দিকে ফিসফিস করে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলাম।
উনি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন। মুখে টুঁ শব্দটিও করলেন না। বুঝলাম সমস্যাটা আজকের নয়।
ট্রেনটা ছাড়তেই ওনারা ডিনার শুরু করলেন।কিন্তু  ডিশে কচুরি,আচার,চানাচুর,তেলে টইটুম্বুর 
ডিমের কালিয়া দেখে একটু অবাকই হলাম। 
যিনি সামান্য জল আনতে গিয়ে এমন হাঁপিয়ে ওঠেন,তার এমন খাওয়া দাওয়া..! 
"আপনি বসুন,আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি..."
ভদ্রলোক হাসিমুখে তেলমাখা হাত দিয়ে আমায় বসতে সম্মোধন করলেন।
"বসছি..কিন্তু একটা কথা..."
"বলুন.."
"আপনার নামটা জানা হয় নি..যদি কিছু না মনে করেন.."
"শান্তনু..শান্তনু সেন।"
"আমি অনিরুদ্ধ.." নিজের পরিচয় দিতেই উনি বললেন,
"আমি আসি..ঘুমাবেন না। জমিয়ে কিছুক্ষন আড্ডা মারবো কিন্তু।"
এত প্রাণোচ্ছল মানুষটা..! বেশ লাগলো আলাপ করে..।
উনি চলে যেতেই ভদ্রমহিলাকে বললাম,"
আচ্ছা ...কিছু যদি না মনে করেন,একটা কথা জিজ্ঞাসা করি?"
"বলুন.." এতক্ষন পর উনি একটু হাসলেন।
"শান্তনুবাবুর কি কোনো সমস্যা আছে..?" আমার 
এই বদ অভ্যাসটা বরাবরের। এই জনসমুদ্রে নুড়ি পাথর কুড়িয়ে পেলে সেটা খুঁটিয়ে না দেখলে 
আমার যেন ভিতরে কেমন একটা অস্বস্তি হয়।
আসলে কত মানুষের কত বিচিত্র জীবন কাহিনী..!বাইরে কারোর সঙ্গে আলাপ হলেই মনে হয়,
ছোট গল্প পড়ছি।
"কেন বলুন তো?" কিছুক্ষন চুপ করে উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন।
মুখে চোখে বিরক্তি বোধ নয়,একটু চিন্তিত হয়ে গেলেন.. বুঝলাম।
"আসলে খড়গপুরে..."
"সমস্যাটা আজকের নয়.."
"তাই নাকি? কত দিনের?"
"আমাদের বিয়ে হয়েছে ,তা প্রায় আট বছর হবে..। তখন থেকেই দেখছি..."
"কি দেখছেন?"  আমার তর সইলো না।
"ওর প্রচন্ড নাক ডাকার অভ্যাস।"
"সেতো আমারও অল্পবিস্তর আছে..।"
"ওর নাক ডাকাটা একটু অন্যরকম। প্রথম দু এক বছর আমি ওর পাশে ঘুমাতে পারতাম না। 
এত গর্জন। ডাক্তার  দেখিয়েছে অনেকবার।কিন্তু কোনো সুরাহা হয় নি।ওকে বললেই বলতো,
তুমি আমার পাশে না শুলেই তো পারো।
বুঝতে পারতাম,ও আনইজি ফিল করছে।"
মৌসুমী সেন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে চললেন...।আমার চোখের পলক পড়া বন্ধ হয়ে গেল। হাঁ করে গিলতে লাগলাম।উনি থামতেই নিজের অজান্তে 
মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল,"তারপর..?"
"এইভাবে জলের মতো কটা বছর কিভাবে যে কেটে গেলো বুঝতেই পারি নি। মাম্মাম আসার পর ওকে নিয়ে ব্যস্ততায় ওর সমস্যাটা প্রায় ভুলতে বসেছিলাম।আত্মীয়স্বজনরা ওর নাক ডাকা নিয়ে কত হাসাহাসি করেছে..!আমি মুখ বুজে সহ্য করেছি। কিন্তু নিজের হাসবেন্ড বলে বলছি না..এমন সহজ ও দরাজ মনের মানুষ সত্যি পৃথিবীতে বিরল। ওর সঙ্গে আপনি দুদিন মিশলে না ভালোবেসে থাকতেই পারবেন না।"
"এখন কি অন্য কোনো সমস্যা..?" 
আমার প্রশ্নের উত্তরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনি আবার শুরু করলেন,"আগে নাক ডাকার আওয়াজে একটা স্বাভাবিকত্ব ছিল...বুঝলেন? কিন্তু মাস তিনেক আগে একদিন রাতে নাক ডাকার মাঝে 'ঘড় ঘড়' করে একটা অতিরিক্ত আওয়াজ কানে আসতেই ওর পাল্স রেট চেক করলাম। 
"বেশি না কম?"
"অনেক বেশি..প্রায় একশো দশ। আমি কালবিলম্ব না করে দিদিকে ফোন করলাম। দিদি আমার রায়পুরে থাকে।জামাইবাবু ডাক্তার। আগে দিল্লি এইমসে ছিলেন। মাস তিনেক রায়পুরে ট্রান্সফার হয়েছেন। হার্টের বড় ডাক্তার।"
"দিদি কি বললেন?"
"দিদি নয়,সেই রাতে জামাইবাবু ফোনটা ধরলেন। সব খুলে বলতেই উনি বললেন,'শান্তনুকে একবার নিয়ে আসতে।' ও কিছুতেই রাজী হচ্ছিল না জানেন। অফিসের ছুটির  অজুহাত। অনেক কষ্টে এবার রাজী করিয়েছি....."
"রায়পুরে আমারও দিদির বাড়ি...."
"তাই নাকি? বাঃ...খাসা খবর। ভাই ফোঁটার দিন হাজির হবো। দিদিকে বলে রাখবেন..।"
শান্তনুবাবু একগাল হেসে বলতেই আমি একটু চমকে উঠলাম। মন দিয়ে শুনছি,তাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছি বুঝতে পারলাম।
"অবশ্যই। যাবেন কিন্তু। আমি দিদিকে বলে রাখবো.."  আমার কথায় খুশী হয়ে আমার হাতটা ধরে ফেললেন শান্তনুবাবু।
এমন প্রাণচঞ্চল মানুষ সত্যি আমি কম দেখেছি। 
ওনার চোখে চোখ রেখে বললাম,"ভাইফোঁটার 
দিন তাহলে দেখা হচ্ছে..."
পরের স্টেশন টাটানগর। আজকের দিনের শেষ স্টেশন। আমি উপরের বার্থে উঠে পড়লাম। আবিরের 'হর হর ব্যোমকেশ' সিনেমাটা দেখতে দেখতে রাতটা ভালোই কাটবে।
বাবা দিদির বাড়ি থেকে ঘুরে গিয়ে গল্প করতেন আমাকে,নিঝুম রাতে ট্রেনে গেলে মনে হয়..
একটা আস্ত অজগরের পেটের ভিতর শুয়ে আছি..
বুঝলি?এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে 'ঘুমেশ্বর' ঘাড়ের উপর চেপে বসেছে...
টের পাই নি।

গভীর রাতে আচমকা ঘুমটা গেল ভেঙে। বুঝলাম,কেউ আমার পা ধরে জাগানোর চেষ্টা করে চলেছেন। চোখ খুলতেই দেখি মৌসুমী সেন। ওনার চোখ দিয়ে জলের ধারা গাল বেয়ে নেমে চলেছে স্রোতের মতো। অথচ মুখে কোনো শব্দ নেই। আমি ধড়মড় করে উঠে পড়লাম। আমার চঞ্চলতা দেখে উনি ডান হাতের তর্জনী  নিজের ঠোঁটে বসিয়ে আমাকে শান্ত হতে বললেন।
"কি হয়েছে?" আমি ডান হাতের ইশারায় ওনাকে বোঝাতে চাইলাম।
"আপনি নীচে নামুন প্লিজ..." ওনার করজোড় মুখে অনুরোধের ভাষাটা আমার বুঝে নিতে অসুবিধা হলো না।
নীচে নামতেই উনি আমার কানের কাছে মুখটা 
নিয়ে এসে কাঁপা গলায় অস্ফুট স্বরে বললেন,
"ও আ..র নে..ই !"
শুনেই মাথাটা ঘুরে গেল বুঝতে পারলাম। সামনে একটা রড ধরে নিজেকে সামলে নিলাম। চোখের জলে আবছা হয়ে যাওয়া দৃষ্টিতে দেখলাম শান্তনুবাবুকে। নিশ্চিন্তে ঘুমের দেশে চলে যাওয়া একটা মুখ। শান্ত...মুখে যেন সন্ধ্যার সেই হারিয়ে যাওয়া হাসিটা লেগে আছে তখনো নিবিড়ভাবে। আদরের পাপার বুকে তখনো নিশ্চিন্তে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে মাম্মাম। হে ঈশ্বর..জীবনে এমন দৃশ্যও আমাকে দেখতে হলো। বুকের মধ্যে কান্নার একটা জোয়ার এলো। সামলে নিলাম নিজেকে।
"মাম্মামকে আপনি খুব আস্তে ওর কাছ থেকে তুলে নিন। সাবধান..ও যেন জেগে না যায়। এই মুহূর্তে বিষয়টা জানাজানি হলে বিপদে পড়ে যাবো। আমি রায়পুরে দিদিকে ফোন করছি। ও নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করবে। ততক্ষণ...."
আর কিছু বলতে পারলেন না মৌসুমী সেন। মুখের মধ্যে ওড়নার অংশ গুঁজে দিয়ে জোর করে সুনামির মতো বেরিয়ে আসা কান্নাকে থামালেন। প্রকৃতিকে হয়তো এইজন্যই মেয়েদের সাথে তুলনা করা হয়। শত দুঃখেও অবিচল,অনড়।
ট্রেনটা হঠাৎ থেমে গেলো। রাত জেগে অপেক্ষা করা কোনো স্টেশন এলো হয়তো। ট্রেনের চাকার আওয়াজটা মনে হলো  থেমে গেলো শোকে বিকট শব্দ করে।
মাম্মামের ডান হাতের কচি মুঠোয় তখনো আটকে আছে শান্তনুবাবুর কলারের অংশ।আমি খুব 
সাবধানে ওকে ওর পাপার বুক থেকে তুলে নিলাম।মিডল সিটটায় ওকে শোয়াতে যাবো..এমন সময় মৌসুমী সেন বলে উঠলেন,"ওকে ওর পাপার মতো করে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকুন,না হলে ও জেগে যাবে.. সবে পৌনে চারটে বাজে। এখনো অনেক পথ..!"
আমি সম্মোহিতের মতো ওনার কথা অনুসরণ করলাম।
আমরা শুধু দুটো প্রাণী নিদ্রাহীন প্রতিটা কঠিন মুহূর্ত পা ফেলে ফেলে যেন এগুতে লাগলাম এক বিষন্ন সকালের দিকে।
শত চেষ্টা করেও ভুলতে পারি নি সেই অভিশপ্ত রাতের কথা। এক আনন্দঘন সন্ধ্যা দুর্যোগের ঘন কালো মেঘে আবৃত হয়ে কিভাবে রূপান্তরিত হয়েছিল বিষাদভরা সকালে ..তার স্মৃতি আজও টাটকা আমার কাছে...!
       














              📚 অসিকার রহমান🔸বীরভূম🔸


কালো চামড়ার মানুষ বলে খুন করলে ফ্লয়েডকে
                 যুগে যুগে সাদা চামড়ার মানুষগুলো
                            থুতু ফেলে চাটাতে চায় ধুলো
ভীষণ শীতে নিজেকে নেয় কালো চামড়ায় সেঁকে

তবু তাদের রাগ পড়ে না, নেই কোনো অনুতাপ
           এ রাগের কী যুক্তি আছে তাও জানে না
                  পশুরাও ভালো জানে,রঙ বিচারে                     পশুপক্ষী মানুষজন ঘেন্না করা পাপ

সাদা কালোয় মিল হতে কি মরতে হবে আরও
             দেশে দেশে প্রতিবাদ আন্দোলনের ঢেউ
    আর কত চাই ফ্লয়েড, মোলায়েজ বেনজামিন?

            অগ্নিদহনে শেষ হয়ে যাক বর্ণ অভিশাপ।
                 ------------------------------------

* জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে মনে রেখে লিখিত ।


꩜ তৈমুর খান🔸বীরভূম🔸




শব্দ জানে


এই শোকতাপ সতত শূন্যতা

শব্দে রাখি, শব্দের ভেতর ঘুমায়

নিঃশব্দ কাতরতা


একটি যুগের ঢেউ, দিনযাপনের মুহূর্ত

যে ইতিহাস লেখা হয় না

যে ভূগোলে শুধুই দেহবাদ


সব সিঁড়ি এখানেই

ঘুরে ঘুরে ওঠা যায়

অথবা ঘুরে ঘুরে নেমে আসা যায়

ফুলে ফসলে ভরা হাসি কান্নার ফুল

শূন্যের ভেতর ফুটে ওঠে ঝরে যায়


আলো আঁধারে হিজিবিজি

চেতনার মাঠে প্রেমের দেবতা নেমে আসে

বিষাদের মালা পরে আসি তার কাছে

শব্দ জানে, শব্দই জানে

কত অভিমান

যা কখনও লেখা হয় না, ছোঁয়া হয় না সমস্ত জীবনে




বিবাহ


ঘরে ঘরে বেজে উঠছে শাঁখ
শ্রাবণ সন্ধ্যায় আমার বিবাহ হল
মেঘকুমারীর সাথে
জলে জলে সঙ্গম ছয়লাপ

চারিদিকে শব্দ ছড়িয়ে যায়
সন্ধ্যামাখা শব্দের আলোতে
মেঘের সংলাপ ঝরে বৃষ্টির ফোঁটায়
আমাকে ভেজাতে আসে মেঘকুমারীরা

অবলীলা এখানে পড়ে থাকে
জাগরণে ঘুমের বাতাস বয়ে যায়
শ্রাবণবিছানা জুড়ে জলীয় বিলাস
আমাকেও উষ্ণ করে আসঙ্গ লিপ্সায়






আরশিনগরের পাখি


আরশিনগরে কত চাঁদ ডুবে যায়
বাঁশি থেমে যায়
কত রাধা ফিরে যায় বাড়ি
কৃষ্ণের দেখা নেই , অথচ কথা ছিল

কত কথা থাকে
কথারা গাছ হয় অবশেষে
কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে পাতাদের উৎসর্গ করে
শ্রাবণের জলে ধুয়ে নেয় মুখ

আরশিনগরে মানুষ থাকে না ?
ভেসে বেড়ায় শুধু মানুষের ছায়া
ছায়ারা পাখির মতো

খুঁটে খুঁটে খায় মায়া....









নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

  • আগস্ট (3)
  • জুলাই (22)
  • জুন (8)
  • নভেম্বর (15)
  • অক্টোবর (5)
  • সেপ্টেম্বর (81)
  • আগস্ট (66)
  • জুলাই (55)
  • জুন (56)
  • মে (57)
  • এপ্রিল (46)
  • মার্চ (15)
  • জানুয়ারী (14)
  • ডিসেম্বর (73)
  • নভেম্বর (103)
  • অক্টোবর (97)
  • সেপ্টেম্বর (101)
  • আগস্ট (120)
  • জুলাই (88)
  • জুন (76)
  • মে (63)
  • এপ্রিল (11)

🔴বিজ্ঞপ্তি:

পাঁচ মাসের বিরতি কাটিয়ে আবার ও ফিরছি আমরা। খুব শীগ্রই আসছে আমাদের প্রত্যাবর্তন সংখ্যা।

অনুসরণ করুণ

এক মাসের সর্বাধিক পঠিত পোস্টগুলি:

  • শেষ শোকসংগীত ~ গোবিন্দ মোদকের কবিতা
  • দুটি কবিতায় ~ গৌতম কুমার গুপ্ত
  • ব্রাত্য ~ বিদ্যুৎ মিশ্র'র কবিতা
  • দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প
  • আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা
  • গুচ্ছ কবিতায় ~ অসীম মালিক
  • সুমিত রায়ের গল্প
  • সে প্রেম পবিত্র~ প্রেমাংশু শ্রাবণের কবিতা
  • সুব্রত মাইতির কবিতা
  • তিনটি কবিতায় ~ রাগীব আবিদ রাতুল

বিষয়সমূহ

  • Poetry speaks 2
  • অণু কথারা 21
  • আবার গল্পের দেশে 8
  • উৎসব সংখ্যা ১৪২৭ 90
  • একুশে কবিতা প্রতিযোগিতা ২০২১ 22
  • এবং নিবন্ধ 3
  • কবিতা যাপন 170
  • কবিতার দখিনা দুয়ার 35
  • কিশলয় সংখ্যা ১৪২৭ 67
  • খোলা চিঠিদের ডাকবাক্স 1
  • গল্পের দেশে 17
  • ছড়ার ভুবন 7
  • জমকালো রবিবার ২ 29
  • জমকালো রবিবার সংখ্যা ১ 21
  • জমকালো রবিবার ৩ 49
  • জমকালো রবিবার ৪ 56
  • জমকালো রবিবার ৫ 28
  • জমকালো রবিবার ৬ 38
  • দৈনিক কবিতা যাপন 19
  • দৈনিক গল্পের দেশে 2
  • দৈনিক প্রবন্ধমালা 1
  • ধারাবাহিক উপন্যাস 3
  • ধারাবাহিক স্মৃতি আলেখ্য 2
  • পোয়েট্রি স্পিকস 5
  • প্রতিদিনের সংখ্যা 218
  • প্রত্যাবর্তন সংখ্যা 33
  • প্রবন্ধমালা 8
  • বিশেষ ভ্রমণ সংখ্যা 10
  • বিশেষ সংখ্যা: আমার প্রিয় শিক্ষক 33
  • বিশেষ সংখ্যা: স্বাধীনতা ও যুবসমাজ 10
  • ভ্রমণ ডায়েরি 1
  • মুক্তগদ্যের কথামালা 5
  • রম্যরচনা 2
  • শীত সংখ্যা ~ ১৪২৭ 60

Advertisement

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

মোট পাঠক সংখ্যা

লেখা পাঠাবার নিয়মাবলী:

১. শুধুমাত্র কবিতা, মুক্তগদ্য অথবা অণুগল্প পাঠাবেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য বিষয়ক লেখা সম্পূর্ণ আমন্ত্রিত। ২. লাইনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ৩. লেখা মেইল বডিতে টাইপ করে পাঠাবেন। ৪. লেখা মৌলিক ও অপ্রকাশিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্য কোনো ব্লগ, ওয়েবজিন অথবা প্রিন্টিং মিডিয়ায় প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ৫. মেইলে আপনার লেখাটি সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত, কথাটি উল্লেখ করবেন। ৬. লেখার সাথে আবশ্যিক ভাবে এক কপি ছবি ও সংক্ষিপ্ত ঠিকানা পাঠাবেন।  ৭. লেখা নির্বাচিত হলে এক মাসের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে। এক মাসের মধ্যে কোনো উত্তর না এলে লেখাটি অমনোনীত ধরে নিতে হবে। ৮. আপনার লেখাটি প্রকাশ পেলে তার লিঙ্ক শেয়ার করাটা আপনার আবশ্যিক কর্তব্য। আশাকরি কথাটি আপনারা মেনে চলবেন। আমাদের মেইল- hridspondonmag@gmail.com
blogger-disqus-facebook

শান্তনু শ্রেষ্ঠা, সম্পাদক

আমার ফটো
পূর্ব বর্ধমান, India
আমার সম্পূর্ণ প্রোফাইল দেখুন

সাম্প্রতিক প্রশংসিত লেখা:

সুজিত রেজের কবিতা

সুজিত রেজের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

চন্দ্রানী গুহ রায়ের কবিতা

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

দাহ ~ পাভেল ঘোষের ছোটগল্প

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

আঁচল ~ অভিনন্দন মাইতির কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

কবি সুধাংশুরঞ্জন সাহার কবিতা

হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন

© হৃদস্পন্দন ম্যাগাজিন। শান্তনু শ্রেষ্ঠা কর্তৃৃক পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে প্রকাশিত।

Designed by OddThemes | Distributed by Gooyaabi Templates